![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
্মুক্ত চিন্তা হয়ে উঠতে পারে দেশ বদলের হাতিয়ার.................................।
১
-বউ কিছু টাকা দে
-নাই আমার কাছে,বেতন পাই নাই।
-আছে,তুই দে,আমি কালকেই দিয়ে দিব।
-নাই আমার কাছে,আমি কোথা থেকে দিব?
-দিবি না?দে…মাগী…দে বলছি…
-ও…মা…আ…আ…আ ……………
এমন ঘটনা রহিমার জীবনে এখন খুব পরিচিত একটা ঘটনা হয়ে গেছে।নেশাগ্রস্থ স্বামীকে নিয়ে একটা সংসার সামলানো কত কষ্টের এটা এখন রহিমা প্রতিনিয়তই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।সৃষ্টিকর্তার কাছে তার রোজ প্রার্থনা স্বামী যেন তার এই মরনব্যাধী নেশার পথ পরিহার করে।
২
আজ শুক্রবার!সাপ্তাহিক ছুটি।রহিমার অবসরের একমাত্র দিন।সুই,সুতার সাথে তার বেশ সখ্যতা।দিনের শুরু হয় সুই সুতা দিয়ে শেষও হয় সুই সুতা দিয়ে।মনের কোনে স্বপ্ন আকেন না স্বপ্ন আকেন সুই সুতা দিয়ে।আজ রহিমার অফিস বন্ধ।হুমম!রহিমা গার্মেন্টেসে চাকুরী করেন;রহিমারাও অফিস শব্দটি ব্যবহার করেন।হয়ত তাদের জন্য আলাদা কক্ষ নেই,এসি নেই,নেই হেলানো নরম কেদারা।না,তা ঠিক নয়!রহিমাদেরও অফিস কক্ষে চেয়ার আছে, টেবিল আছে, আছে কম্পিউটার।হুমম!আরাম নরম কেদারা নেই ঠিক, ছোট শক্ত একখানা চেয়ার বা বেঞ্চিতেই বসে আরাম খুজে বেড়ান,গ্লাসে ঢাকা বিশাল টেবিল নেই সামনে আছে সেলাই মেশিন সংযুক্ত একখানা টেবিল।এই সেলাই মেশিনটি-ই রহিমাদের কম্পিউটার,এই সেলাই মেশিনটি-ই রহিমাদের ল্যাপটপ।জমানো টাকা দিয়ে কিছুদিন আগে একটি সেলাইমেশিনও ক্রয় করেছেন নিজে।বাসায় ফিরে এসে সময় দেন ঐ মেশিনটাতে।মানুষের কাপড় সেলাই করে অতিরিক্ত কিছু আয় করে সচ্ছ্বল থাকার চেষ্টা করেন।
ভোরবেলা উঠেই গৃহস্থলির জমানো কাজগুলো সম্পাদনে নামেন।দুপুরের আগেই সব সমাপ্তি করেন।দুপুরের খাবার খেয়েই টিভির সামনে বসেন।সাদাকালো এই টেলিভিশনটি নিজের টাকাতেই কেনা।এই টেলিভিশনটি-ই তার বিনোদের একমাত্র খোরাক।
রাসেল কোন চাকুরি করেনা।মজুরি খাটে।কাজে গেলে টাকা পায়,না গেলে পায়না।ঠিকমত কাজে যায়না।কিন্তু এটা নিয়ে রহিমার মনে কোন দুঃখ নেই।রহিমাই এখন সম্পূর্ন সংসারের খরচ বহন করছে।বাসায় কাজের চাপও বাড়তে শুরু করেছে।কিন্তু সারাদিন কাজ করে এসে ঘরে বসে কাজ করা,শরীর ঠিকমত চলতে চায়না।দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরটা একটুখানি বিশ্রাম চায়।নিজের স্বচ্ছ্বলতার কথা ভেবে সেই ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে আবারো মেশিনে পা চালায়।এত পরিশ্রমেও তার বিন্দুমাত্র দুঃখ-কষ্ট বোধ হয়না।তার শুধু ইচ্ছে রাসেলটা যেন কুপথে না যায়।সারাদিন বাসায় বসে থাকুক,গৃহস্থলীর কাজে সাহায্য করুক বা না করুক।তবুও যেন খারাপ পথে না যায়।
বাসার চেয়েও রাসেলের বেশী সময় কাটে কোন এলাকার চিপা গলিতে জুয়ার আড্ডায়,নেশার আখড়ায়।নেশা করে অনেক রাত বাসায় ফিরে,কোন কোন রাত বাসায় ফেরেনা।বাসায় ফিরলেও কখনো অকারনেই নেশার ঘোরে রহিমাকে যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করে,গায়ে হাত উঠানো তো কিছুদিন একটা দৈনিক রুটিনের অংশই হয়ে গিয়েছিল।
নেশার টাকা না থাকলে ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করে দিত বলে রহিমা এখন আর টাকা চাইলে না করেনা।কাছে যা-ই থাকে দিয়ে দেয়।টাকা না থাকলে মার হজম করে তবুও বাসার কিছুতে হাত দিতে দেয়না রাসেলকে।নেশার টাকার জন্য কতবার যে বেদম প্রহার সহ্য করেছে রহিমা মনে নেই।
৩
-কই গেলে রহিমা।ভাত দাও,খিদে পেয়েছে।
-এইতো আসছি,বসেন।–বলিয়া রহিমা দৌড়ে চলে আসে হাতের কাজটি ফেলে রেখে।আজ তার খুব খুশি লাগছে।তার খুশির দিনগুলোর মধ্যে আজকে একটি দিন পার করছে সে।এমন দিন খুব কমই আসে।আজ রাসেল নিজেই সকালবেলা উঠে বাজারে গিয়েছে।ইদানীং বাজারে খুব সস্তায় ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে তবুও এখনো খাওয়া হয়নি।আজ রাসেল নিজের টাকায় ইলিশ মাছ কিনে এনেছে।না,ইলিশ মাছের কারনে নয়।আজ তার স্বামী তার সাথে প্রতিদিনকার মত কোন বৈরী আচরন করছেনা।আজ তার স্বামী পুরোপুরি দ্বায়িত্ববোধ সম্পূর্ন স্বামীর মতই আচরন করছে।কতদিন তার রাসেলকে এমন রূপে দেখেনি রহিমা।শেষ কবে যেন এমন রূপে রাসেলকে দেখা দিয়েছে!রহিমা ভাবতে থাকে।হুমম! রহিমার মনে পড়েছে সেই প্রায় একমাস হয়ে গেল।ঐ যে…সেদিন,যেদিন রাসেল ব্যাগভর্তি কেনাকাটা করে এনেছিল।অনেক বাজারের সাথে রহিমার জন্য একটা পোশাকও ছিল।রহিমা সেদিন খুশিতে আড়ালে কেদেছিল।সেদিন নামাজে সৃষ্টিকর্তার কাছে দু’হাত ভরে প্রার্থনা করেছিল আল্লাহ যেন তার স্বামীকে সকল বিপথগামীতা থেকে রক্ষা করে,বাজে পথে আর না নিয়ে যায়।তার স্ত্রী ভালোবাসায় যেন ভাঙ্গন না পড়ে,কোথাও হারিয়ে না যায়।
‘এই শোন!আজ কি তোমার সিনেমা না দেখলে চলবে?’
‘কেন?কি হয়েছে?’
‘মিরপুরে খালার বাসায় তো অনেকদিন যাওয়া হয়না’
‘হুমম!’
‘চল!আজ আমরা বিকেলে তাদের বাসায় বেড়াতে যাব’
রহিমার ভেতর আনন্দে হেসে উঠে।আনন্দে এতটাই উতফুলিত যে তার অনুভূতি ভাষাহীন হয়ে পড়েছে।আজ রাসেল নিজে আগ্রহী হয়ে বেড়াতে যাবার কথা বলছে।রহিমার আজ সত্যি বড় খুশির দিন।
রহিমা কিছু বলেনা,চুপ করে থাকে।কে জানে কতক্ষন স্থায়ী থাকবে রাসেলের এই সুবোধ ভাবটা।ভাত খেয়ে উঠেই যে আবার পূর্বাচরন করবেনা কে জানে।রহিমার খুব আনন্দ লাগছে কিন্তু ভয়ও হচ্ছে এই ভেবে যে হঠাত আবার কখন জানি পালটে যায় এই রূপ।
‘তোমাকে তো কখনো বাহিরে ঘুরতে নিয়ে যাইনা,তোমারও যাওয়া হয়না, সময় পেলে চিড়িয়াখানাটাও আজ ঘুরে আসা যাবে,কি বল?’
রহিমার বুকের ভেতরে অদ্ভুত রকমের ভয় কাজ করতে শুরু করেছে।রাসেল যদি আবার আগের রুপে ফিরে যায়!এই রাসেলটা এমন থাকবেতো?
৩
সারাদিন ঘুরে এসে আজ দুজনে খুব ক্লান্ত।ক্লান্তি সত্ত্বেও রহিমা’র কাছে সেই ক্লান্তির ভারটুকু আজ নিস্তেজ,অনুভূতি হীন,রহিমা আজ বরং অনেক খুশি,এই ক্লান্তি নিয়েই খুশি,এতদিন ধরে রহিমা যেন এমন ক্লান্তি পাবার অপেক্ষায়ই ছিল।
রহিমা আর রাসেল শুয়ে আছে।ক্লান্তির ভারে দুজনে প্রায় নিশ্চুপ।হঠাত করে সমস্ত ঘর জুড়ে অন্ধকার নেমে আসলো।বিদ্যুত চলে গেল।রহিমা উঠে এসে মোমবাতি জ্বালাতে চাইলে রাসেল বারন করে উঠে।‘ধরাবার প্রয়োজন নেই,অন্ধকারটা ভালো লাগছে।’
রহিমার অন্ধকার ভালো লাগেনা,ভয় করে।খানিকবাদে উঠে এসে বাতায়ন খুলে দিল।
সঙ্গে সঙ্গে জোছনার আলো গড়িয়ে এল সমস্ত বিছানা জুড়ে সেই সঙ্গে সিক্ত সমীরন ছোয়া।রাসেল বোধহয় এরই মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে।
রহিমা বাহিরপানে তাকিয়ে রইল।দূর আকাশের ঐ চাদটাকে আজ অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।ঠিক সুকান্তের ঝলসানো রুটির মত।আজ বোধহয় পূর্নিমা।জোছনা রশ্মি অদ্ভুত কিরন ছড়াচ্ছে।রহিমা একটু ঘুরতেই জোছনা রশ্মি গিয়ে রাসেলের মুখে পড়ে।জোছনাকিরনে রাসেলের মুখটাও কেমন জ্বলজ্বল করছে।এক অদ্ভুত মায়াজাল তৈরী হয়েছে।রহিমা একবার দূর আকাশের চাদটির দিকে তাকায় আরেকবার রাসেলের মুখের পানে তাকায়।
রহিমার জোছনা খুব প্রিয়।ইচ্ছে করছে রাসেলকে এখনই তার স্বপ্নের কথা বলে দিবে।রাসেলের আখিপাতাদের বন্ধন দেখে মনে হচ্ছে রাসেল ঘুমোচ্ছে।থাক!সে ঘুমোচ্ছে যখন ঘুমোক,স্বপ্নের কথা বরং আরেকদিন বলবো।
রহিমার তবুও অনেক আনন্দ লাগছে,জোছনামাখা রাতে সে রাসেলকে সাথে পেয়েছে,ঘুমোচ্ছে তো কি হয়েছে,পাশে তো আছে!
ঘুমোন্ত অবস্থায় রাসেল খানিকটা কাপুনি দিয়ে উঠে।রহিমা তড়িগড়ি করে রাসেলের শরীরের উপর কাথাটা টেনে দেয়।
রহিমা চাদের দিকে তাকিয়ে আছে রাসেলের হঠাত এমন পরিবর্তনের কথা ভেবে ভেবে হেসে উঠছে খানিকবাদেই।সৃষ্টিকর্তার উপর আজ সে বেজায় খুশি।
রহিমার মনের সুখে ঐ দুরের মেঘগুলোও আজ কেমন করে গোল্লাছুট খেলায় মেতে উঠেছে।
‘তোমার কোনটা বেশি প্রিয়-মেঘ না জোছনা?’
‘আমার দুটোই প্রিয়’
‘আমার সবটুকু সাধ্য দিয়ে আমি একটি ছোট্ট বাড়ি বানাবো।–শুধু একটুকরো ছাদ আর একটি চিলেকোঠার জন্য।’
যে ছাদে দাঁড়িয়ে তুমি হাত বাড়িয়ে আকাশ ছুবে,মেঘ ছুবে,মন বাড়িয়ে চাদ ছুবে,বৃষ্টি জলে নেচে উঠবে,জোছনার আলোয় মন হারাবে,…,…,…
‘তুমি কেমন করে বুঝতে পারলে আমার স্বপ্ন?আমি এটাই ভাবছি?’
‘যে চাদের আলোর বসে স্বপ্ন বুনছ,সে চাদেরকিরন যে আমাকেও ছুয়ে গেল,সেই জোছনাকিরনই আমার কানে বলে গেল’/
…………………………
………………………
‘কিরে মাগী হুনতাছসনা…তরে যে কখন থেইকা ডাকতাছি?দে,কিছু টাকা দে’
ঢিল ছুড়ে মারার মত করে পাশ থেকে নিজের ছোট্ট টাকার পার্সটি রাসেলের দিকে ছুড়ে মারে।আজ রহিমা বেতন পেয়েছে,পার্সটিতে বেতনের পুরো টাকাটাই রয়েছে।
রাসেল নেশার ঘোরে আছে।তার সমস্ত শরীর এখন নেশা গ্রহনের জন্য উম্মুখ হয়ে আছে,ছটফট শুরু হয়ে গেছে নেশার জন্য।রহিমার ছুড়ে মারা টাকার থলিটি কুড়ে নেয়।খুলে তাকাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় ভেতরে টাকা রয়েছে,গুনে দেখবার প্রয়োজন পড়লনা,যে নোটটি চোখে পড়েছে তা দিয়ে কিছুটা হলেও যে নেশা করা যাবে তা বুঝতে পেরছে।
রাসেল গড়গড় করে বেরিয়ে যায়।বাসা থেকে বের হয়েই হাটতে শুরু করে,গন্তব্য নেশার আখড়ায়।রহিমার টাকার পার্সটি খুলে সমস্ত টাকা বের করে গুনতে শুরু করে।একেবারে ঠিক চারহাজার পাচশত টাকাই রয়েছে।হুমম!রহিমা প্রতিমাসে এ টাকাই বেতন পায়।রাসেল স্থির হয়ে দাড়ায়।নেশার আখড়ায় গেলে এ টাকা থেকে একটি টাকাও ফিরবেনা।
নেশার ব্যাকুলতা যখন সমস্ত রন্ধ্রে রন্ধ্রে,শিরা উপশিরায় ঝড় বইয়ে চলে তখন একমাত্র নেশার উপকরন ছাড়া বাকি সব কিছুই গৌন হয়ে যায়।বিবেক সেখানে জয়ী হতে পারেনা,নেশার কাছে হার মানে মনুষ্যত্ব,হেরে যায় সকল মানবিকতা।রাসেল পিছু ফেরেনা আবার সামনেই হাটা ধরে।
এ মাসের বাসা ভাড়া দেয়া হয়নি,মাসের প্রায় পুরোটাই এখনো বাকি,পুরো মাস চুলো জ্বালিয়ে রাখা যাবেনা কি হবে সৃষ্টিকর্তা জানেন,সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন!বেতনের পুরো টাকাটাই যে রাসেল নিয়ে গেছে।এ টাকা ফিরবে কিনা তারও কোন নিশ্চয়তা নেই,নেশাখোরের হাতে একবার টাকা উঠিয়ে দিলে তা ফেরত পাওয়াটা সৌভাগ্য ছাড়া কিছুই নয়।কী আশ্চর্য যেখানে রাসেলের প্রতি রহিমার প্রচন্ড রাগ হওয়ার কথা,ঘৃনা জন্মানোর কথা অথচ রহিমা কিনা এখনো রাসেলের চিন্তায় মগ্ন।টাকা নিয়ে তার চিন্তা নেই চিন্তা স্বামীকে নিয়ে,কোথায় আছে?কেমন আছে?কোন গলিতে জিপটে বসে নেশা করছে?আবার অন্য কোন সমস্যা হয়নি তো?সে কি আবার ফিরবে বাসায়,মাতাল কিংবা ভালো অবস্থায়??রহিমা অপেক্ষায় থাকে।
স্বামী সংসার ছেড়ে গেলে মানুষ মন্দ বলবে,সমাজ ভালো চোখে দেখবেনা,যত কষ্টই হোক এ সংসার ছেড়ে রহিমা কোথাও যাবেনা।রহিমার মনে মনে এখনো স্বপ্ন দেখে রাসেলকে নিয়ে।তার বিশ্বাস কোন একদিন এই রাসেল সুস্থ জগতে ফিরবেই।ভঙ্গুর এই সংসারটা একদিন হেসে উঠবেই।সুস্থ রাসেলটা অনেক অনেক ভালো,তার মনটা ভীষন সুন্দর,রহিমাকে খুশি করতে তার চেষ্টার অন্ত্য থাকেনা,সে নিশ্চয়ই একদিন একখানা ছোট্ট বাড়ি বানাবে,তাতে একটা ছোট্ট একটুকু খোলা ছাদ থাকবে,একসাথে দুজনে জোছনা মাখবে গায়ে,প্রান ভরে বৃষ্টিতে ভিজবে……
রহিমা সব ভুলে কাজে মন দেয়,সেলাইমেশিনের চাকা ঘুরাতে থাকে।বেচে থাকার সংগ্রামে নিজেকে একজন লড়াকু সংগ্রামীর পরিচয় দিয়ে আবার ঝাপিয়ে পড়ে জীবন যুদ্ধে।
ঘড়ির কাটা টিক টিক করে ক্রমাগতই স্থান পরিবর্তন করে চলেছে।সেই সাথে রাতের পরিধিও বেড়ে চলেছে।কখন যে সেলাইমেশিনে মাথা গুজে ঘুমিয়ে পড়েছেন মনে নেই।সকালবেলা অফিসে যেতে হবে।দেরি করে গেলে সেদিনের বেতনের কিছু অংশ কাটা হয়।পরে ওভারটাইম করে পুষিয়ে দিতে হয়।
হঠাৎ দরজার ঠক ঠক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় রহিমার।চোখ মেলে সেলাইমেশিনের সামনেই নিজেকে আবিষ্কার করেন।ঐ তো ডাক শোনা গেছে।মাতালটার বুঝি এখন আসার সময় হয়েছে!রাসেল দরজায় হাত দিয়ে আঘাত করছে আর শব্দ করছে-
-রহিমা…এই রহিমা…দরজাটা খো……ল…
-রহিমা দেরি না করে জলদি উঠে দরজাটা খুলে দেয়,জানে একটু দেরি হলেই চিতকার শুরু করবে,চিতকারে আশেপাশের মানুষদের ঘুম ভেঙ্গে যাবে,অশ্লীল ভাষায় গাল শুরু করবে,গায়ে হাত উঠাবে।যদিও এখনো যে উঠাবেনা তার নিশ্চয়তা নেই।দরজা ভেদ করে ঢুকতেই মেঝেতে পড়ে যায় রাসেল।আজ বোধহয় একটু বেশী খেয়ে ফেলেছে,তাই ভারসাম্যটা ধরে রাখতে পারছেনা।রহিমা নাড়াতে পারেনা,তবুও কোনভাবে টানা হেচড়া করে বিছানায় শুইয়ে দেয়।রাসেলের স্বাভাবিক জ্ঞান নেই,অচেতনের মত পড়ে আছে।চোখ দুটো বুজে আসছে।জোর করে খাওয়ানোর চেয়ে এই মুহুর্তে রাসেলের ঘুমানোই উত্তম।একটুখানি ঘুমের পর রাসেলের ভালো লাগবে।তখন খিদে পেলে নিজেই খেয়ে নিবে।ভাতের প্লেটখানা মাথার পাশে চেয়ারে রেখে রহিমাও ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে অফিসে যেতে হবে।
রহিমা পানি এনে নিজ হাতে পা টা ধুইয়ে দেয়।গামছা দিয়ে পায়ের পানি মুছে দিয়ে একখানা কাথা গায়ের উপরে টেনে দেয়।
বাঙ্গালী বধুরা অধিক স্বামীভক্ত হয়।অর্থ-প্রাচুর্য্যের চেয়ে কখনো কখনো তারা শুধু স্বামীর আদর ভালবাসা পেলেই নিজেদের সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করে।স্বামীর কাছ থেকে একটুখানি সহানুভুতি পাওয়াকে নিজেদের চরম সৌভাগ্য মনে করে।রাসেলের মত স্বামী নিয়ে যেসব বধুরা সংসার করছে, স্বামীর কাছে তাদের চাওয়ার বেশী কিছু থাকেনা কেবলমাত্র একটু সহানুভূতি আর আদর-ভালবাসা ছাড়া।যে স্বামী দিনের পর দিন ঘন্টার পর ঘন্টা নেশার সাথে বাস করছে সে স্বামীকে ত্যাগ না করে সব সহ্য করে এখনো সংসার টিকিয়ে রাখার ধৈর্য্য কেবলমাত্র বাঙ্গালী বধুদেরই থাকতে পারে।
১৭মার্চ,২০১৪;ঢাকা।
২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১৬
মোঃজাহিদুল হাসান (রাশেদ) বলেছেন: ধন্যবাদ..........!!!!!!!!!!!!
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:২১
সোহানী বলেছেন: ভালো লেগেছে............