নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে কিছু বলে ফেলা কিছুটা অসম্ভব ই !

িজলশািন্ত

নিজের সম্পর্কে কিছু বলে ফেলা কিছুটা অসম্ভব ই !

িজলশািন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

লক্ষ্মী পাখির শেষ আশ্রয়

১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:২৬

বারংবার উঁকি দেয়া একটি পাখি। পাখিটিকে আদর আদর করে বলতাম লক্ষ্মী পাখি। পাখিটির প্রচলিত নাম লক্ষ্মী-প্যাঁচা। আগের আমলে ‘প্যাঁচা’ না লিখে লেখা হতো ‘পেঁচা’।



কোনো এক সময় এদেশের প্রতিটি গ্রামেই ইঁদুর-শিকারি এ নিশাচর পাখিটির আনাগোনা ছিল। ফসলের খেতে আর গোলা-ঘরে ইঁদুরের উৎপাত দমিয়ে রাখতে লক্ষ্মী-প্যাঁচার জুড়ি ছিল না। তাই হাজার বছর আগে গাঁয়ের মানুষ পাখিটির নাম রেখেছিল ‘লক্ষ্মী’। পাখিটি ছিল লক্ষ্মীর দূত, লক্ষ্মী দেবীর বাহন। এই উপমহাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে লক্ষ্মী-প্যাঁচার কদর আরও বেশি। গুজরাটে লক্ষ্মী-প্যাঁচাকে সাক্ষাৎ দেবীর আসনেই বসানো হয়েছে। লক্ষ্মী-প্যাঁচার গুজরাটি নাম ‘রেবি দেবী’। লক্ষ্মী-প্যাঁচার ইংরেজি নাম বার্ন ওল (Barn Owl), অর্থাৎ গোলা-ঘরের প্যাঁচা। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘টাইটো অ্যালবা’ (Tyto alba) অর্থাৎ সাদা প্যাঁচা।





এদেশের গ্রামে কিন্তু সহজে এখন লক্ষ্মী-প্যাঁচা খুঁজে পাবেন না। অধিকাংশ গ্রাম থেকেই পাখিটি বিদায় নিয়েছে। গ্রাম থেকে এর তিরোধানের অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে একটা বড় কারণ ইরি ধানের জনপ্রিয়তা। ক্ষেতে পানি জমিয়ে ইরি চাষের প্রচলন হবার ফলে ফসলের জমিতে ইঁদুরের বংশ নিপাত হয়েছে। অন্যদিকে কৃষকের উদ্বৃত্ত ফসল পুরোনো দিনের বাঁশ, চাটাই ও মাটি দিয়ে গড়া গোলা-ঘরের বদলে পাকা গুদাম-ঘর ও সাইলোতে স্থান পাচ্ছে। এর ফলে গাঁয়ের ইঁদুরের চিকন স্বাস্থ্য মোটা ও সুন্দর করার সুযোগ কমে গেছে। গ্রামে আজ ইঁদুরের আকাল। গ্রামীণ জীবনযাত্রার এ পরিবর্তনগুলো আমাদের জন্য যতটা সুসংবাদ, লক্ষ্মী-প্যাঁচার জন্য ততটা নয়।লক্ষ বছর আগে লক্ষ্মী-প্যাঁচারা হয়তো আর সব প্যাঁচার মতো গাছের কোটরে কিংবা মাটির গর্তে বাস করত। তবে হাজার বছর ধরে মানুষের গোলা-ঘরে বাস করে এর ঠিকানা বদলে গেছে। মানুষের বসতবাড়ির অন্ধকার সিলিং এখন এর হোম অ্যাড্রেস। গাছে কী করে বাসা করতে হয় তা সম্ভবত পাখিটি পুরোপুরি ভুলে গেছে। মানুষের ঘরে স্থান না দিলে পৃথিবী থেকে এরা হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আবার তা নাও হতে পারে; টিকে থাকার ক্ষমতা এদের কম নয়। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশে এর বাস আছে। এককালে আমাদের দুশ্চিন্তা ছিল, গাঁয়ের পুরোনো হোম অ্যাড্রেসটা খোয়া যাওয়ার পর লক্ষ্মী-প্যাঁচারা অন্যত্র নতুন আবাস গড়ে নিতে পারছে কি!



বাংলাদেশের গ্রাম থেকে লক্ষ্মী-প্যাঁচা যে উৎখাত হয়ে যাচ্ছে তা আমরা লক্ষ্য করেছি বহুদিন আগেই। অনেক দিন ধরেই দেখছি, রাতে গ্রামের পথে হাঁটলে লক্ষ্মী-প্যাঁচার দেখা মেলে না। সাপের মতো ‘হিস-হিস’ শব্দে এর ডাকও আর কানে আসে না। গাঁয়ের মানুষ এখন আর আমাদের লক্ষ্মী-প্যাঁচার কোনো সন্ধান দিতে পারে না। অনেক নবীন চাষি কোনোদিন লক্ষ্মী-প্যাঁচা দেখে নি। লক্ষ্মী-প্যাঁচার কথা বললে তারা সাধারণত খুড়–লে-প্যাঁচার উল্লেখ করে। ছোট-খাট পোকামাকড় খেয়েই রাত কাটে বলে গাঁয়ে আজও এ প্যাঁচাটি টিকে আছে। লক্ষ্মী-প্যাঁচার দেখা পেয়েছে বলে যারা দাবি করে তাদের জেরা করলেই বুঝতে পারি তারা আসলে খুড়–লে-প্যাঁচা দেখেছেন।



গ্রাম থেকে উৎখাত হয়ে গেলেও ভাগ্যক্রমে শহরে-নগরে এখনও দু’একটি লক্ষ্মী-প্যাঁচার দেখা মেলে। সন্ধ্যাবেলা প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ানো কড়ই গাছে একটা লক্ষ্মী-প্যাঁচাকে প্রায়ই বসে থাকতে দেখা যায়। দেখে মনে হয় কাছেই কোথাও তার আবাস আছে। কিছু দিন আগে আমাদের এক বন্ধু জানিয়েছিলেন তার অফিসের এয়ারকন্ডিশনার সরিয়ে আনার পর কয়েকটি প্যাঁচার ছানা পাওয়া গেছে। আমরা সেখানে গিয়ে লক্ষ্মী-প্যাঁচার এক বিশাল সংসার দেখতে পেলাম। নানা বয়েসের সাতটি স্বাস্থ্যবান ছানা। দেখে আমাদের কোনো সন্দেহ থাকল না যে এই ভয়ংকর কংক্রিট-পুরীতেও লক্ষ্মী-প্যাঁচারা ভালোই টিকে থাকতে পারে।



জনবহুল শহর ও নগরই কি তাহলে লক্ষ্মীপ্যাঁচার নতুন ঠিকানা! গ্রাম থেকে ইঁদুর উৎখাত করা হয়েছে বলে অভিমান করলেও লক্ষ্মী-প্যাঁচারা তো শহরের বিরুদ্ধে সে অভিযোগ করতে পারে না। কারওয়ানবাজারের মতো আড়ত আর ডেমরার ভাগাড়ের মতো আবর্জনা-স্তূপই হয়তো এখন লক্ষ্মীপ্যাঁচার জন্য পর্যাপ্ত ইঁদুর আর ছুঁচো জোগান দিচ্ছে! ঢাকা নগরীর খোলা নর্দমা থেকে তো রাতে অনেক ছুঁচোর আওয়াজ শুনতে পাই। লক্ষ্মীপ্যাঁচারা গ্রাম ছাড়লেও তাই এখনও দেশ ছেড়ে যায় নি। আমাদের মতো এরাও এখন শহরবাসী হয়েছে। আমাদের মতোই শহরের ঝঞ্ঝাট আর দূষণ নিয়ে শত অভিযোগ মনে চেপে রেখে এই কংক্রিট-বস্তিতেই এরা গড়েছে এদের শেষ আশ্রয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.