নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনো মোর মেঘের সংগে!

জিন্নুরাইন

আমি গান লিখি আপনার সুখে তুমি কেন আসি দাঁড়াও সুমুখে?

জিন্নুরাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলিংগেন, জার্মানী থেকে ফিরে (২)

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৫৬

কলন বন বিমানবন্দর থেকে জলিংগেন এর পথে গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে, সাকী রাস্তার পাশে এক শহর দেখিয়ে বললেন এখানে এক শহরে এসেছিলেন চাচাত ভাইয়ের সাথে, বাসস্থানের জন্য। বাসস্থানের অবস্থা দেখে মন খুব খারাপ হয়েছিল কিন্তু ওখানে আর থাকা হয় নি। ফেরার পথে বাসের মধ্যে এক বাংলদেশী, চাচাত ভাইয়ের পরিচিত, তিনি নিজেই সাকীর সাথে পরিচয় করে তার শহরে নিয়ে কাজ দিলেন আর বাসস্থানের ও ব্যাবস্থা করলেন। সেই থেকেই জীবনের জার্মানী অধ্যায়ের সূচনা।



এই যে পাশের শহর তার নাম “লেভারকুজেন” এই শহরটি জার্মানীর “উত্তর রাইন-ওয়েস্টফিলিয়া” প্রদেশের অন্তর্গত। এই লেভারকুজেন শহরে বিখ্যাত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি “বায়ার” এর প্রধান কার্য্যালয় এবং কারখানা। বায়ার কোম্পানিই এসপিরিন, হিরোইন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও আরও অন্যান্য ঔষধ প্রথম বাজারজাত করেছিল। এই শহরের লোকসংখ্যা ১,৬১,০০০ আর বায়ারে কর্মী সংখ্যা ১,১০,০০০। তাই বলতে গেলে পুরো শহরাটাই বায়ারের দখলে।



কলন-বন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, জার্মানীর চতুর্থ বৃহত্তম শহর “কলন” এবং পশ্চিম জার্মানীর প্রাক্তন রাজধানী “বন” শহরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে প্রধানত উভয় শহরের যাত্রীদের সেবা প্রদান করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এখানে প্রথমে একটি মিলিটারি ঘাটি যা পরে ১৯৫১ সালে উপযুক্ত রানওয়ে তৈরি করে সাধারণ যাত্রীদের পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ধীরে ধীরে বিমানন্দরকে সম্প্রসারণ করে বর্তমানে ২ টি টার্মিনালের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করা হয়েছে।



আমি “বন” সম্পর্কে জানতে চাইলাম, তিনি জানালেন “বন বর্তমানে জার্মানীর ফেডারেল শহর। রাইন নদীর তীরে গড়ে উঠা ব্যাস্ত এই নগরীতে তিন লক্ষের অধিক মানুষ বাস করে। জার্মানীর অন্যতম প্রাচীন এই শহর রোমান সাম্রাজ্যে গোড়াপত্তন হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাইন নদীর তীরে অবস্থিতিতির কারণে সামরিক গুরুত্ব পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাজী বাহিনীর পরাজয়ের পর এই অঞ্চল ব্রিটিশ দখলে আসে। ১৯৪৯ সালে এই “বন” নগরী প্রকৃত অর্থে পশ্চিম জার্মানীর রাজধানীর মর্য্যাদা পায় যদিও আইনতঃ সর্বদাই বার্লিন ছিল জার্মানীর রাজধানী। ১৯৯০ সালে দুই জার্মানী একীভূত হয়ে যাবার পর পুনরায় বার্লিন একীভূত জার্মানীর পূর্ণাংগ রাজধানীর আসনে অধিষ্ঠিত হয়। বন যখন রাজধানী ছিল তখন কৌতুক করে বনকে “সরকারী গ্রাম কিংবা ফেডারেল ভিলেজ” এবং “যোগ্য রাতের জীবন ছাড়া সরকারী রাজধানী কিংবা ফেডারেল ভিলেজ উইদাউট নাইটলাইফ ওয়ার্দি অফ দা নেইম” হিসেবে আখ্যায়িত করা হত। বর্তমানে যদিও এটি আর রাজধানী নয় তবে এখানে বেশ কয়েকটি সরকারী দফতর থাকায় ফেডারেল নগরী হিসাবে পরিগণিত। বন নগরীর আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে যে বিশ্ববিখ্যাত সুর-স্রষ্ঠা “লুডউইগ ভ্যান বিথভেন” এই শহরেরই বাজারের পাশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যদিও তার সংগীত জীবনের মূল সময় কাটে ভিয়েনা শহরে।



এবারে আমাদের গল্প শৈশবের দিনগুলোতে ফিরে গেল, যখন সিলেটে আম্বরখানা পাঠশালায় পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে সহপাঠী হলাম আমরা। সেদিনের সেই স্কুলের তর্জার বেড়া ছিল ভাঙ্গা, সেই বেড়ার ফাঁক দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতাম আমরা অনেকেই। শিক্ষকরা ছিলেন খুব আন্তরিক কিন্তু কঠিন। অনেকের হাতেই লম্বা বেত থাকত। উল্টোপাল্টা কিছু হলেই সপাং করে পিঠে এসে চেপে বসত। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী স্যার ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক ও পিতৃসম। স্কুলের পড়া লেখার ফাঁকে তিনি ছাত্রদের সকল সুযোগ সুবিধার খবর নিতেন। পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য তিনি একটা বিশেষ গ্রুপ তৈরি করে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। আমার হাতের লিখা সুন্দর আর তার প্রশংসা করে তিনি সিলেটের জেলা প্রশাসক সাহেবকে দেখিয়ে বলেছিলেন দেখেন ত আমার এই ছেলের হাতের লিখা কত সুন্দর! আমাদের পড়া লিখার খবর নিতে তিনি আমাদের প্রত্যকের বাসায় যেতেন, কখনো কখনো গোপনে। একদিন আমি জানালায় খট শট শুনে ভয় পেয়ে দেখি হেড মাস্টার স্যার। কি যে ভয়াবহ অবস্থা! ভিতরে ঢুকে কুশল বিনিময়ের পর পড়া লিখার খবর নিলেন। আমার অভিভাবক তখন ছিলেন আমার দাদা, উনার সাথে অনেক গল্প করে চা-নাস্তা করে তারপর বিদায় নিলেন। সাকী একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা ব্যাক্ত করলেন। বারী স্যার সাকীর বাসায়ও গিয়ে তার পড়ালেখার খবরাখবর নিতেন। সেই বারী স্যার আজ আর নেই। আমরা উভয়ে স্যারের আত্নার মাঘফেরাত কামনা করলাম। বাংলাদেশে আজ কি আর সেই বারী স্যারের মত আন্তরিক আর নিষ্ঠাবান শিক্ষক পাওয়া যাবে? মূল্যবোধের অবক্ষয় আজ সমাজে ব্যাধি হিসাবে দেখা দিয়েছে। অর্থ কিংবা অন্য স্বার্থ ছাড়া কোনপ্রকার ঐচ্ছিক কিংবা সেবামূলক কাজ কজন আর করে?



বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থায় এখন বিরাট নেতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। তখন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ই ছিল শিক্ষার মূল কেন্দ্র। তখন সিলেটে বলতে গেলে কোন প্রাইভেট বিদ্যায়তন ছিলনা। তাই সকল শ্রেণীর শিক্ষা ব্যাবস্থা ছিল এই পাঠশালা ভিত্তিক। ধীরে ধীরে বিবর্তন হয়েছে অনেক। সরকারী শিক্ষার পাশাপাশি প্রাইভেট শিক্ষা ব্যাবস্থা সারা সমাজে শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে। যার ফলে সরকারী শিক্ষাঙ্গনের অবস্থা আজ দুর্দশাগ্রস্থ। ভাল শিক্ষকরা অতিরিক্ত অর্থ প্রাপ্তির জন্য প্রাইভেট শিক্ষার প্রতি ঝুঁকেছেন। আজ সরকারী পাঠশালাতে ছাত্র হিসাবে নিম্নবিত্তরা তাদের সন্তান প্রেরণ করেন। যার ফলে শ্রেণী বৈষম্য আরো শক্ত ভিত্তি পেয়েছে, নিম্নবিত্তের শিক্ষাব্যাবস্থা সংকুচিত আর মানহীন হয়ে পড়েছে। একদিকে সরকারী শিক্ষার দৈন্যদশা, প্রাইভেট শিক্ষা ব্যাবস্থার রমরমা ব্যাবসা আর তার সাথে প্রাচীন মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থা ধীরে ধীরে জাতিকে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে দিয়েছে। একটি শ্রেণী আজ ইংরেজিতে কথা বলতে পছন্দ করে আর অন্য শ্রেণী বাংলায় কথা বলে হীনমন্যতায় ভুগে আর তৃতীয় শ্রেণী কথা বলতে চায় আরবি কিংবা হিন্দি ভাষায়। একটি শ্রেণী শাড়ী-লুঙ্গী পরে অন্য শ্রেণী পরে পেন্ট-শার্ট আর অপর শ্রেণীর পোশাক হচ্ছে পায়জামা, কোর্তা আর টুপি। এই যে ত্রিধা বিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা তা জাতির ভবিষ্যৎ কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেটা ভেবে যদি একটা সার্বজনীন ও আধুনিক শিক্ষা ব্যাবস্থা উপহার দেয়া যেত তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রচণ্ড উপকৃত হতে পারত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.