![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দৃষ্টি ভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে♠
বঙ্গবন্ধু শব্দের আগে-পরে অন্য কোনো বিশেষণ যোগ করতে হয় না। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু রয়েছে তাঁর অমর কীর্তি। এ দেশের কোটি কোটি মানুষ তাঁকে অন্তর থেকে ভালোবাসে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পেছনে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং কয়েক কোটি মানুষের নানা ধরনের ত্যাগ রয়েছে। এই পথযাত্রায় সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক ও নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জাতির পিতা। এটা কেউই ভুলতে পারে না। তাঁর রেখে যাওয়া দলটি কিংবা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীর বাড়াবাড়ি যা-ই থাকুক না কেন, বঙ্গবন্ধু স্থান করে নিয়েছেন এসব কিছুর ঊর্ধ্বে।
ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, এমনটা কিন্তু আমরা ভারতের ক্ষেত্রেও লক্ষ করি। গান্ধীজির অহিংস নীতির সমালোচক ছিলেন এবং এখনো আছেন কিছু লোক। তাঁর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের ফাঁসি হওয়ার দিনটিকে একটি প্রভাবশালী সংগঠন শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে। তবে আপামর ভারতবাসীর কাছে গান্ধীজির অবস্থান অম্লান। ঠিক বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান দলমত, জাতি-ধর্ম ও শ্রেণি বিভাজনের ঊর্ধ্বে। এটাকে আড়াল করার প্রচেষ্টা চলেছিল দীর্ঘ ২১ বছর। কিন্তু দেয়াল ভেঙে মহাপরাক্রমে জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অশরীরী বঙ্গবন্ধু। মানুষ তাঁকে আপন ভাবে, সম্মান করে ও ভালোও বাসে। কিন্তু ভয় পায় না। এ সহজ-সরল অবস্থানটিতে সময়ে সময়ে বিপত্তি ঘটায় কিছু সুবিধাবাদী অত্যুৎসাহী মানুষ। তাদের কূটকৌশল পুঁজি করে বঙ্গবন্ধুকে। তারা সময়ে সময়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি অজুহাত হিসেবে নিয়ে তাদের কৌশল চরিতার্থ করতে চায়। ছবি ভেঙেছে, পুড়িয়েছে, বিকৃত করেছে ইত্যাদি অজুহাতে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয় কাউকে কাউকে। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কুচক্রী এরূপ অপকর্ম করে না, তা-ও নয়। তাদের ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া অসংগত নয়। তবে এই গভীর আবেগকে পুঁজি করে কাউকে অকারণে বিব্রত, অপদস্থ করার প্রচেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এমনই এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরগুনা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারিক সালমন এখন সারা দেশে আলোচিত নাম। অভিযোগ আনা হয়, বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনওর দায়িত্ব পালনকালে তিনি স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আমন্ত্রণপত্রে জাতির জনকের ছবি বিকৃত ও অবমাননা করেছেন। মামলার বাদী জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এবং বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি। সমন হয় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তবে ইউএনও সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কাজটি করেছেন বলে মামলা পরিচালনার আগে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে সরকারের মঞ্জুরি নেওয়া হয়নি। তিনি হাজির হন আদালতে। হাজতে অন্তরীণের আদেশ হওয়ার পর তাঁকে পুলিশ টেনেহিঁচড়ে কোর্ট–হাজতে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। পালিয়ে যাওয়ার লোক নন। অবশ্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ঘটনাটি সঠিক নয় বলে দাবি করেছে। তদুপরি তারা এই ইউএনও অবিচারের শিকার হয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে। তাঁর জামিন নামঞ্জুর করা হয়নি বলে একটি বক্তব্য আসছে। তবে গণমাধ্যমে পরিবেশিত তথ্যানুসারে হাজতিদের রেজিস্টারে তাঁর নাম রয়েছে।
যাহোক, এসব ঘটনা সংক্ষুব্ধ করেছে শুধু তাঁকে নয়, তাঁর সব সহকর্মীসহ অনেক সচেতন ব্যক্তিকে। আমন্ত্রণপত্রে ছাপা বঙ্গবন্ধুর ছবিটি তাঁর জন্মদিনে শিশুদের একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাওয়া। এঁকেছে পঞ্চম শ্রেণিতে পাঠরত এক শিক্ষার্থী। কাঁচা হাতের আঁকা। তবে আদৌ বিকৃত নয় এমন কথা বলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। সরকারি দল আওয়ামী লীগ মামলার বাদী তাদের এই জেলা নেতাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি। ইতিমধ্যে বাদী মামলা প্রত্যাহার করেছেন। বরিশাল ও বরগুনার ডিসিকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য করা হয়েছে প্রত্যাহার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠন করেছে একটি তদন্ত কমিটি। আইন মন্ত্রণালয়ও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করেছে সুপ্রিম কোর্টে। সংশ্লিষ্ট ইউএনও দাবি করছেন, এই উপজেলায় কর্মরত থাকাকালে তাঁর নকলবিরোধী অভিযানে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির আঁতে ঘা লেগেছে। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোবাইল কোর্টের দণ্ডাদেশে। সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ থাকার জন্য অন্যায় দাবির কাছে মাথা নত করেননি। এ ধরনের কর্মকর্তারা স্বার্থান্বেষী মহলের সম্মিলিত প্রয়াসে কখনো-বা আকস্মিক বিপদে পড়েন। তবে তারিক সালমনকে ভাগ্যবান বলব। অতি অল্প সময়েই বিষয়টি সরকারপ্রধানের নজরে গেছে। তিনি এই কর্মকর্তার সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন। ব্যথিত হয়েছেন তাঁর দলের একজন স্থানীয় নেতার ভূমিকায়।
এখানে আলোচনার বিষয় বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকার অধিকার সবার আছে। আর সব ছবি এক রকম বা মানসম্মতও হবে না। আর অসৎ উদ্দেশ্যে তা করা না হলে এসব নিয়ে দোষ ধরা যৌক্তিক নয়। তাহলে সৃজনশীলতা থাকবে না। একটি ভিন্ন ধাঁচের কিছু হলেই যদি মানহানির মামলা ঠুকে দেওয়া হয়, তবে তো সবাই সরকার অনুমোদিত একটিমাত্র ছবির ওপরই নির্ভর করবে। এতে সৃষ্টি হতে পারে একটি জড় অবস্থা। স্বতঃস্ফূর্ততা যেখানে থাকবে না, সেখানে সৃজনশীলতা আশা করা অমূলক। সে ক্ষেত্রে ভালোবাসার বঙ্গবন্ধুকে করে ফেলা হবে ভয়ের একজন মানুষ।
সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সাবধানী হতে হবে, এতে কোনো ভিন্নমত নেই। তাদের কাজকর্ম বা আচরণের কোনো নেতিবাচক দিক শুধু নিজেদের নয়, সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করে। আর সে সাবধানী কিন্তু রক্ষণশীল হওয়া নয়। কিছু লোক কাজ করেন না সমালোচনা এড়াতে। তাঁরা থাকেন অনেকটা স্থবির। তাঁরা প্রশাসন বা সমাজের জন্য কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন না। সেরূপ ভূমিকা রাখতে হলে ঝুঁকি আছে জেনেই কাজ করতে হবে। আর সৎ, দক্ষ ও পরিশীলিত কর্মকর্তারা এ ধরনের ঝুঁকির মধ্যেই কাজ করেন। তাঁরাই গতির সৃষ্টি করেন রাষ্ট্রযন্ত্রে। দুষ্টের দমনেও তাঁরা উদ্যমী ভূমিকা নেন। অবশ্য তাঁদের দমিয়ে দিতে সব প্রচেষ্টা নেয় সুযোগসন্ধানী মহল। এরা ছিল, আছে ও থাকবে। তার মধ্যেই কাজ করতে হবে, যাঁরা কাজ করার কথা তাঁদের।
তবে সরকারি দলের নীতিনির্ধারকদের কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। বঙ্গবন্ধু নামটি সবার প্রিয়। ঘাতকের গুলি তাঁকে আমাদের মধ্য থেকে কেড়ে নিলেও তাঁর চেতনা বিরাজমান। নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে ভালোভাবে তুলে ধরার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। তারই একটি নিয়েছিলেন ইউএনও গাজী তারিক সালমন। কিন্তু তিনি আকস্মিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। অবশ্য এ বিপর্যয় তাঁর অবস্থানকে করেছে আরও মজবুত। তবে সবার ভাগ্যে সব সময় এমনটা জোটে না। এ ধরনের অভিযোগ তুলে অকুস্থলে হেনস্তা থেকে অনেক কিছু হয়। ফলে বঙ্গবন্ধু-চর্চায় অতিসতর্ক থাকতে চান অনেকেই। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। প্রজন্মান্তরে বঙ্গবন্ধু-চর্চা আরও প্রসারিত হবে, এ প্রত্যাশা রয়েছে। ভীতি সৃষ্টি করার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে তা বিঘ্নিত হবে।
©somewhere in net ltd.