নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কে আছো জোয়ান হওঁ আগুয়ান.।

যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার...

মোঃ ইমরান হোসাইন

আমি কেউ না...।।

মোঃ ইমরান হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন অতিমানবের গল্প.।!!!

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৩৭

গল্পের বই পড়ার হাতে খরি হয়েছিল বড়মামার কিনে দেয়া বিপ্রদাস বড়ুয়ার একটি শিশুতোষ গল্পের বইয়ের মাধ্যমে...!! এরপর একটু বড় হয়ে পড়া শুরু করলাম রাকিব হাসান এর তিন গোয়েন্দা সিরিজ। তখন বই কিনে পড়ার মত অবস্থা না থাকায় আমরা বন্ধুদের মধ্যে বই এক্সচেঞ্জ করে করে পরতাম, কি করতাম, আমি আমার একটি বই এক বন্ধুকে দিয়ে তার কাছ থেকে আর একটি বই নিতাম, তারপর সেই বইটি পড়া শেষ করে আবার আরেকজনকে সেই বইটি পরতে দিতাম, বিনিময়ে তার কাছ থেকে নিতাম আরও একটি বই...!!! তারপর সব বই পড়া সেশে আবার যার যার বই তার কাছে ফেরত দিয়ে দিতাম...!! এভাবে আমাদের বই পড়ুয়াদের একটি অনেক বড় নেটওয়ার্ক গড়ে উঠলো...!!!!

এভাবে বই এক্সচেঞ্জ এর মাধ্যমে একদিন হাতে এসে পড়ল হুমায়ুন আহমেদ এর ফিহা সমীকরণ বইটি...!!! তখনও আমি হুমায়ুন পড়া শুরু করিনি, তখন মাত্র ক্লাস সেভেনে পড়ি, তখন হুমায়ুন এর চেয়ে তিন গোয়েন্দা বেশি পছন্দ ছিল...!!! তো সেদিন কি করলাম, শান্ত আবার হুমায়ুন পড়ে জেনে, ওকে ফিহা সমীকরণ বইটি ধরিয়ে দিয়ে অর কাছ থেকে তিন গোয়েন্দার একটি ভলিউম (তিনটি উপন্যাস নিয়ে হত একটি ভলিউম) নিয়ে নিয়েছিলাম...!!! এভাবে একে একে ১৪৮টি তিন গোয়েন্দা পড়ে শেষ করে ফেললাম তাও প্রায় দুই বছরের মধ্যেই...!!! (তখন একটা শখ ছিল, যে বই পড়ে ফেলতাম, সেই বই এর লিস্ট করে ফেলতাম একটা প্যাড বইএ, এভাবে যত লেখকের যত বই পড়তাম সবারই লিস্ট হতে থাকল)। এর মধ্যে স্কুলে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হয়ে গেলাম...!! পরতে শুরু করলাম দেশ বিদেশের খ্যাতমান লেখকদের বই...!! তারও প্রায় দুই বছর পরে আমার হুমায়ুন আহমেদ এর সাথে পরিচয়...!!! বাবু নামে একটি ছেলে ছিল, ছোট ভাই কিন্তু বন্ধুর মত, তার বড় বন শিউলি আপু আমার মেজ ভাইয়ার বন্ধু ছিল, সেই আপু আবার প্রচুর হুমায়ুন পড়ত, তো সেই সুত্রে তার বাসা থেকে একদিন পাচটি হুমায়ুন আহমেদ এর বই নিয়ে এলাম, সেই থেকে শুরু...!!! হুমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল স্যারদের বই একই সাথে পড়া শুরু করেছিলাম...!! সেই সময়ে এইসব সোশ্যাল মিডিয়া গুলো ছিল না, ছিলনা সবার কাছে ফোন, সবার বাসায় কম্পিউটারও ছিলনা, আর তাই হয়তো সবাই বই এর মত এক দুর্লভ জিনিস এর সংস্পর্শে আসতে পেরেছিল...!!! অথচ বইয়ের চেয়ে এত মহান বস্তু যে পৃথিবীতে আর একটিও নেই তা এই প্রজন্মের অনেকেই বুঝবে না...!!!

বাবার একটি বড়দের লাইব্রেরি (কারন তখন সেই লাইব্রেরিতে আমাকে ছোট বলে ঢুকতে দিত না) এর কার্ড করা ছিল...!!! এরপর বাবার সিগ্নেচার নকল করে শিখে ফেললাম কিছুদিনের অক্লান্ত প্রচেস্টায়, তারপর সেই কার্ড দিয়ে নিয়মিত বই আনতে লাগলাম...!!! তখন প্রতিদিন তিনটি করে বই আনতাম, একটা হুমায়ুন, একটা জাফর ইকবাল, আর একটা আনতাম কমিক্স টিন্টিন এর বই...!! তারপর একরাতের মধ্যেই সবগুলো পরে ফেরত দিয়ে আবার নতুন তিনটা বই নিয়ে আসতাম...!!! সেই থেকেই শুরু তার সাথে এক পথচলার...!!!

এরপর তার জন্যে চিনে নিলাম তিন কিংবদন্তি পরস্পর বিরোধী চরিত্রের সাথে...!! লজিক (মিসির আলি), এন্টি লজিক (হিমু) ও একজন আদর্শ মানুষ (শুভ্র) চরিত্রের সাথে...!! সেই ছটবেলা থেকে অজস্র চরিত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেছে ক্রমাগত...!!!! আশেপাশের মানুষদের সম্পর্কে ভাবতে শুখিয়েছে, বুঝতে শিখিয়েছে...!! আর সবচেয়ে বড় যে ব্যাপার তাহল ভালবাসতে শিখিয়েছে সব মানুষকে...!!! তার লেখনীর সবচেয়ে বড় ব্যাপারটি ছিল এই যে, তিনি সবসময় খুব সাধারন মানুষদের নায়ক বানিয়েছেন...!!! খুব সাধারন মানুষদের মাঝে শুধু আবেগ আর ভালোবাসা দিয়ে তাদেরকে মহৎ করে দেখিয়েছেন পাঠকদের সামনে...!!!! তিনি দেখিয়েছেন, অনেক উচু তলার মানুষ, অনেক গুন সম্পন্ন মানুষ হলেই কেউ অসাধারণ হয়ে যায়না, অথচ খুব সাধারন একজন মানুষও শুধুমাত্র ভালোবাসা নামক বস্তুটির জোরে হয়ে জেতে পারে একজন অসাধারণ মানুষ...!!!! একই সাথে এটাও প্রমান করার চেস্টা করেছেন, এই ভালোবাসা শুধু প্রেমিকার জন্যে ভালোবাসা নয়, এই ভালোবাসা বন্ধুর জন্যে ভালোবাসা, এই ভালোবাসা ভাইবোনের জন্যে ভালোবাসা, এই ভালোবাসা নিতান্তই অপরিচিত কোন মানুষের জন্যে কোন ধরনের স্বার্থ ছাড়া ভালোবাসা...।!!! কোন প্রতিদান না চেয়ে, কোন স্বার্থ না ভেবে যে শুধুমাত্র মানুষ হিসেবে কাউকে ভালোবাসা যায় তার প্রমান তিনি দিয়ে গেছেন তার বইগুলোতে...!!! আমাদের কিংবা আমাদের আগের প্রজন্মের এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা বিষণ্ণ বেকেল বেলায় তার বই পরে গোপনে কাদেনি...!!! কিংবা নির্জন মাঝরাতে তার বই পরে অজথাই হেসে ওঠেনি...!!! কোন এক মন খারাপের দিনে তার বই পরে মন ভালো হয়ে ওঠেনি...!!! এমন কোন যুবক পাওয়া জেতনা যারা মনে মনে কখনও হিমু হতে চায়নি, কিংবা এমন কোন তরুনিও পাওয়া যেত না যারা কখনও রুপা হতে চায়নি...!!! আমার সৌভাগ্য আমার জন্ম হয়েছিল নব্বইএর দশকে।।!! আমার সৌভাগ্য হুমায়ুন আহমেদ এর মত এক মহান স্রস্টহার সাথে আমার কিংবা আমাদের পরিচয় হয়েছিল...।!!!! এখনও যখন কোন এক অলস দুপুর বেলায় মন খারাপ হয়, বুকশেলফ থেকে টেনে নেই তার একটি বই, সেই বই পড়তে পড়তে নিজের মন খারাপের কথা ভুলে জেয়ে বই এর চরিত্রের মন খারাপ প্রকট হয়ে ওঠে...!! এক একটা বই হয়তো তিন চার বার করে পড়া, কিন্তু তারপরেও প্রতিবারই যখন পড়ি, তখন আবেগটুকু সেই প্রথমবারের মত করেই ধরা দেয়, এমনি তার সৃষ্টি...!! ব্যাক্তি হুমায়ুন কেমন ছিলেন আমি জানিনা, আমি কোনদিন জানতেও চাইনি, আমি শুধু লেখক হুমায়ুনকে চিনি, আমি শুধু জানি লেখক হুমায়ুন এই পৃথিবীর মানুষ নন, তার মত লেখার খমতা এই পৃথিবীর মানুষের থাকতে পারে আমার মনে হয়না, তিনি একজনই, সমগ্র প্রিথিবি খুঁজে তার চেয়ে ভালো লেখক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে, কিন্তু তার মত লেখক আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না...।!!! আগে নিয়মিত একুশের বইমেলায় যেতাম শুধুই হুমায়ুন আহমেদ এর বই বেরুত বলে...।!!! হুমায়ুন আহমেদ চলে জাবার পরে শুধু আমি না, আরও অনেকেই এখন আর একুশে বইমেলার খবরও রাখে না আমি জানি...!!! যার এত ক্ষমতা, জিনি অসংখ্য চরিত্রের স্রস্টহা, জিনি চার থেকে পাচটি প্রজন্মকে ভালোবাসার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তিনি সাধারন মানুষ নন, তিনি একজন সত্যিকার অর্থে অতিমানব আর তার মৃত্যুও হতে পারে না...।!! তিনি অমর হয়ে আছেন লাখো পাঠকের মাঝে, থাকবেন সবসময়...।!!!

আজ হুমায়ুন আহমেদ এর মৃত্যু দিবসে তার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধ্যা...।!!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৫৯

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব সুন্দর হয়েছে লেখাটা।
হুমায়ূন আহমেদ আসলেই এক অনবদ্য লেখক। আমার বই পড়া শুরু তার লেখা বই পড়েই।

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:২০

মাদিহা মৌ বলেছেন: আমার বই পড়ার শুরুটা আপনার মতোই। তিন গোগোয়েন্দার মাধ্যমে। পড়তামও ঠিক এইভাবে শেয়ার করেই। তবে তিন গোয়েন্দার লেখকের নাম রাকিব হাসান নয়, রকিব হাসান।

লেখক হুমায়ূনকে নিয়ে নতুন করে আর কী বলব? কোন বিশেষণেই তাঁকে সঠিকভাবে বিশেষায়িত করা যাবে না। সত্যিই অসাধারণ ছিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.