![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাঁয় বন্ধু! আমি হাসিখুশি একজন তরুণ। হাসতে ও হাসাতে ভালোবাসি। লেখতে ভালোবাসি। ভালোবাসি মানুষের সেবা করতে।
হিজরতের ইতিহাস
ঘটনা-১
যখনই তাঁকে কুরাইশরা দেখতে পেত, তখনই তাঁকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিত। তাঁকে শিরক করতে বাধ্য করত। কিন্তু তিনি ছিলেন তাওহীদের উপর অটল, কখনই শিরক করতেন না। মক্কার কাফেররা তাই তাঁকে মক্কার উত্তপ্ত বালুর মধ্যে লোহার বর্ম পড়িয়ে প্রখর রৌদ্রের নিচে দাঁড় করিয়ে রাখত। তাঁর দেহ থেকে ঘাম বেড়িয়ে লোহার উত্তপ্ত বর্ম ঠান্ডা হয়ে যেত, তবুও তাঁর ঈমান দুর্বল হতো না।
তাঁর এত পাকাপোক্ত ঈমান দেখে একবার আবু জাহল বিরক্ত হয়ে তাঁকে গালি দিতে দিতে তাঁর লজ্জাস্থানে বল্লম দিয়ে এত মারাত্মক ভাবে আঘাত করে যে, তিনি শহীদ হয়ে যান। তাঁকে ইসলামের প্রথম নারী শহীদ বলা হয়। তিনি হলেন হযরত সুমাইয়্যা (রা)। (ইসতিয়াব. ২য় খন্ড. পৃঃ ৭৬০)
ঘটনা-২
মুসলমান হওয়ার কারণে তাঁকে লোহার পোশাক পড়িয়ে প্রচন্ড রোদেও নিচে ফেলে রাখা হত। উত্তপ্ত বালুর উপর শোয়ায় রাখা হত। এসব নির্যাতনে তাঁর কোমড়ের গোস্ত পর্যন্ত গলে, খসে পড়েছিল।
তিনি একজন মহিলার দাস ছিলেন, সে মহিলা শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে লোহা গরম করে তার মাথায় সে লোহা দিয়ে বিভিন্নভানে শাস্তি দিত। নির্যাতন ভোগকারী এ সাহাবা হলেন হযরত খাব্বাব বিন আরাত (রা)। (দ্রঃ-হায়াতুস সাহাবা)
মহানবী (সা) সহ সে সময়ে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে সকল সাহাবাকেই অমানুষিক নির্যাতন করা হত।
এ নির্যাতন থেকে মুসলমানদের রক্ষার জন্য মহান আল্লাহর নির্দেশে নবী (সা) সাহাবাদের প্রথমে আবিসিনিয়ায়, পরে মদীনায় হিজরতের নির্দেশ দেন। এবং তিনি নিজে আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর (১২ রবিউল আউয়াল) রাতে মদীনায় হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। (দ্রঃ- ইসলামী বিশ্বকোষ, ইফা)
হিজরী সাল প্রবর্তন
এরপর বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে মুসলমানদের দিন অতিবাহিত হচ্ছিল। আস্তে আস্তে মুসলমানদের সোনালী দিন ও আসছিল।
সোনালী দিনের ধারাবাহিকতায় নবুওতের অষ্টম বছর মুসলমানগণ মক্কা বিজয় করেন।
এরপর মুসলমানদের জীবনে সুখ ও শান্তি বিরাজ করছিল। এরই মাঝে রাসূল (সা) এর ওফাত হয়। আবু বকর (রা) খলীফা নিযুক্ত হন, এবং কিছুদিন পর তারও ইন্তেকাল হয়ে যায়। এরপর হযরত ওমর (রা) ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে খলীফা নিযুক্ত হন।
খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করে একে একে বিশ্ব জুড়ে ইসলামের বিজয় নিশান উড়াতে থাকেন। এবং বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজও করতে থাকেন। (দ্রঃ-সাহাবা চরিত)
সে সময়ে আরবরা শুধু মাস গণনা করতেন। কিন্তু সাল গণনা করতেন না। এতে সরকারী কাজ সহ বিভিন্ন কাজে ঝামেলা হতে থাকে। কোন মাস কোন সালের তা বোঝার কোন উপায় ছিলনা। আর নিজস্ব সাল না থাকার কারণে শুধু মাসের নাম উল্লেখ করা ছাড়া কোনো বিকল্প পথ ছিল না। যথাযথভাবে তারিখ না লেখার কারণে বহু জটিলতা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রদেশের শাসনকর্তাদের কাছে পত্রাদি ও ফরমানাদিতে শুধু মাসের উল্লেখ থাকায় কোন বছরের মাস তা নির্ধারণ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে আবু মুসা আশয়ারি (রা.) কর্তৃক খলিফা ওমরের (রা.) দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি একটি নিজস্ব সাল উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা ভীষণভাবে অনুধাবন করলেন। তিনি হজরত উসমান (রা.) ও হজরত আলীসহ (রা.) বিশিষ্ট কয়েকজন সাহাবির কাছে নতুন সালের ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন। হজরত আলীর (রা.) পরামর্শে হিজরতের বছরকে নতুন সাল গণনার শুরু ধরে ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে মহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জমাদিউল আওয়াল, জমাদিউস সানি, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ—এই ১২ মাস নিয়ে হিজরি সাল প্রবর্তিত হয়।
হিজরতের ঘটনা রবিউল আউয়াল মাসে ঘটলেও আরবদের প্রচলিত মাস গণনার নিয়ম অনুসারে সফরে আউয়াল বা সফর মাসের প্রথম তারিখকেই হিজরি সালের শুরু হিসেবে স্থির করা হয়। (দ্রঃ- ইসলামী বিশ্ব কোষ)
হিজরি সাল প্রবর্তন ওমর (রা) এর এক অমর কীর্তি। আর এই হিজরি সালের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার হৃদয় বিদারক ও ঐতিহাসিক স্মৃতি।
৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিজরি সাল প্রবর্তিত হওয়ার এক বছরের মাথায় তা আরব বণিকদের হাত ধরে ভারতবর্ষে এবং বাংলাদেশেও চলে আসে।
বাংলাদেশে তথা ভারত বর্ষে ইসলাম প্রচার অনেক আগে শুরু হলেও হিজরি সাল প্রবর্তনের বছর বা তার পরের বছর এখানে সক্রিয়ভাবে ইসলাম প্রচার ও প্রসার লাভ করতে থাকে। সাথে সাথে এসব দেশে স্বাভাবিকভাবে হিজরি সালের প্রচলনও শুরু হয়।
এবং সে সময় এই হিজরি সাল আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় সাল হিসেবেও গৃহিত হয়েছিল, যা ৫৫৬ বছর স্থায়ী ছিল। (দ্রঃ- ইসলামী বিশ্বকোষ, Islam in Contemporary South Asia)
মহররম শব্দের অর্থ
হিজরি নববর্ষের শুরুর মাস হচ্ছে মহররম, যার অর্থ হচ্ছে—হারামকৃত, নিষিদ্ধ ও পবিত্র।
আরব দেশে প্রাচীনকালে ১২টি মাসের মধ্যে সফর, রজব, জিলকদ, জিলহজ—এই চারটি মাসকে বলা হতো আল মহররম অর্থাৎ নিষিদ্ধ বা পবিত্র। এ চারটি মাসে আরবরা সব ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ, ঝগড়া-ফ্যাসাদ, মারামারি-খুনাখুনি থেকে বিরত থাকত, এ জন্যই এ মাস সমূহকে মহররম বলা হয়। (দ্রঃ- সূরা আল বাকারার ১৯৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যা)
মহররম যদিও নির্দিষট কোন মাসের নাম ছিলনা, কিন্তু পরবর্তীকালে আরবি মাসগুলোর প্রথম মাস সফরে আউয়ালকে মহররম নামে নামকরণ করা হয়।
হিজরি সালের গুরত্বপূর্ণ মাস ও দিন সমূহ
হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখকে বলা হয় আশুরা। এই আশুরা সৃষ্টির আদিকাল থেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী। যথাঃ-
১/আদম (আঃ)কে সৃষ্টি করা হয়েছে ১০ই মহররম।
২/ ১০ই মহররম আদম (আঃ) কে বেহেশতে প্রবেশ করানো হয়েছে ।
৩/ আশুরাতেই আদম (আ.) কে বেহেশত থেকে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছে।
৪/ আদম (আ.) এ তওবা কবুল করা হয় এই আশুরাতেই।
৫/ মা হাওয়া (আ.) এর সাথে আদম (আ.) পুনরায় সাক্ষাত হয় এই ১০ই মহররম।
৬/ আসমান-জমিন সৃষ্টি করা হয়েছে মহররম মাসেই।
৭/ আরবের জাহেলরাও মহররম মাসটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিত।
৮/ চাঁদ-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মাহাসাগর সৃষ্টি করা হয় এই মহররম মাসেই।
৯/ আশুরাতেই জন্ম গ্রহণ করেন ইব্রাহীম (আ.)।
১০/ আশুরাতেই হযরত মূসা (আ.) এবং আল্লাহপাকের মধ্যে কথোপকথোন হয়েছিল।
১১/ হযরত মূসা (আ.) এর উপর তৌরাত কিতাব নাজিল হয়েছিল এই আশুরাতেই।
১২/ আশুরাতেই মূসা (আ.) তার সাথীদের নিয়ে নীল নদ পার হন এবং ফেরাউন বাহিনী পানিতে ডুবে মরে।
১৩/ হযরত আইয়ুব (আ.) দীর্ঘ ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগের পর সুস্থ হয়ে উঠেন এই আশুরাতেই।
১৪/ হযরত সোলায়মান (আ.) পুনঃ বাদশাহী লাভ করেন আশুরাতেই।
১৫/ আশুরাতেই দাউদ (আ.) এর তওবা কবুল করা হয়।
১৬/ হযরত ইউছুফ (আ.) তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব (আ.) এর সাথে মিলিত হন এই আশুরাতেই।
১৭/ হযরত ইসা (আ.) জন্ম গ্রহণ করেন আশুরাতেই।
১৮/ হযরত ইসা (আ.) কে আল্লাহপাক সশরীরে আসমানে তুলে নেন এই আশুরাতেই।
১৯/ আশুরাতেই আল্লাহপাক হযরত ইদ্রিস (আ.) কে জীবিত করেন এবং তাকে জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয়।
২০/ হযরত নূহ (আ.) এর জাহাজ চল্লিশ দিন পর পাহাড়ের কিনারে ভিড়ে আশুরাতেই।
২১/ আশুরাতেই হযরত নূহ (আ.) জমিনে অবতরণ করেন।
২২/ আশুরাতেই উম্মতে মুহাম্মদীর গুনাহ মাফ হয়।
২৩/ জিব্রাইল (আ.) আশুরাতেই দুনিয়াতে আগমন করেন।
২৪/ আল্লাহপাক দুনিয়াতে প্রথমবার রহমত নাজিল করেন ও রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেন আশুরাতেই।
২৫/ হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে বের হয়ে আসেন আশুরাতেই।
এ সালের ৭ম মাস রজবে রাসুলুল্লাহ (সা) মেরাজে গমন করেন, রাসুলের (সা) মেরাজ গমনের সেই রাত আজ লাইলাতুল মেরাজ হিসেবে পরিচিত।
৮ম মাস শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে বলা হয় লাইলাতুল বরাত, যার অর্থ মুক্তির রজনী।
৯ম মাস শাওয়ালের ১ম তারিখ পালিত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর।
১২তম মাস যিলহজ মাসে মুসলমানরা হজ পালন করে থাকে, যা সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবার পালন করা ফরজ। ১০ জিলহজ বিশ্ব মুসলিম পালন করে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। (দ্রঃ- ইসলামী বিশ্বকোষ)
দুঃখ জনক ঘটনা
মহররম মাস অনেক তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার এ মাসটি অনেক দুঃখের ও একটি মাস। কারণ এ মাসে নবী (সা) এর নাতি হোসাইন (রা) কে পরিবার সহ ইয়াযিদ বাহিনী নির্মম ভাবে হত্যা করে।
(কেউ কেউ বলেছেন- ইয়াযিদ এ হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন না। সিমার এ ন্যাক্কার হত্যাকাণ্ডের মূল ব্যক্তি।) (দ্রঃ- কারবালার ইতিহাস)
তবে ইতিহাস যাই হোক , হত্যার ঘটনা অনেক কষ্টদায়ক।
আল্লাহ জান্নাতে তাদের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করুন। সেই দোয়াই করি।
আমার কথাঃ-
আমরা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করি। আমরা বাঙ্গালী জাতি, তাই আমরা আমাদের স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ নববর্ষ উদযাপন করি। অনেক চমৎকার একটা বিষয়।
ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে আমাদের (যারা মুসলিম) ধর্মীয় এবং জাতীয় কোন কল্যাণ নেই। বরং লজ্জার বিষয় যে, আমরা অন্যদের কালচারকে গ্রহণ করছি, এবং এ জন্য আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছি। আর থার্টি ফার্স্ট নাইটের নামে যে কি নোংরামি হয়, সে কথা না হয় নাই বললাম।
(আমরা যারা মুসলিম) আমাদের উচিৎ অনেক চমৎকার করে হিজরি নববর্ষ উদযাপন করা। যেহেতু আরব থেকে হিজরি সালের উৎপত্তি, তাই আরবীয় স্টাইলে জুব্বা, রুমাল ইত্যাদি পড়ে এ দিনকে সেলিব্রেট করা।
তবে রাসুল (সা) এর হিজরতের কারনেই যেহেতু হিজরি সালের উৎপত্তি। আর হিজরতের বিষয়টা অনেক কষ্টের ছিল। পাশাপাশি এ মাসে রাসুল দৌহিত্র হোসাইন (রা) এর শাহাদাত হয়েছে । এসব বিষয় মাথায় রেখে অন্যান্য প্রোগ্রামের পাশাপাশি আলোচনা সভা, দোয়া ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা আমাদের ধর্মীয় নববর্ষ উদযাপন করে, আমাদের কালচারকে আমাদেরই সমুন্নত করতে হবে।
©somewhere in net ltd.