![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যখন গ্রামে ছিলাম বৃষ্টি হলে ছাতা নিয়ে লুঙ্গি কাছা মেরে হাঁটতে বের হতাম । আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে একটা পিচের রাস্তা চলে গেছে। রাস্তার দুই পাশেই বিল ছিল।ঝুম বর্ষায় বিলের পানি একেবারে রাস্তার কিনার পর্যন্ত উঠে আসত।সেই পানিতে পা চালিয়ে রাস্তার কিনার দিয়ে হাঁটতে অদ্ভুদ আনন্দ পেতাম।বর্ষায় গ্রামের বিভিন্ন পুকুর ডুবে বিলে মাছ চলে আসত। অনেকে বৃষ্টির কারনে কাজে যেতে না পারা ক্ষতি পুষিয়ে নেবার জন্য জাল নিয়ে বিলে মাছ ধরতে আসত। আমার ও একটা জাল ছিল। কাউকে মাছ ধরতে দেখলে আমিও জাল নিয়ে আসতাম ভিজে ভিজে মাছ ধরার জন্য তবে খুব একটা মাছ পেতাম না। এত বড় বিলের ঠিক কোন জায়গায় জাল ফেললে মাছ পাওয়া যাবে এটা আমার মাথায় ধরত না।অন্যরা পানির নড়াচড়া দেখে বুঝত কোথায় জাল ফেলতে হবে। আমিও বেশ একটা বুঝি বুঝি ভাব নিয়ে তারা যে জায়গায় জাল ফেলত তার আশেপাশেই ফেলতাম।যদিও মাঝে মধ্যে দুই একটা মাছ ধরতে পারতাম কিন্তু তা বাসায় আনা হত না।বাসায় বিলের মাছ খায় না। আমি মাছ ধরতে পারলে তাদেরই লাভ এটা বুঝতে পেরে অন্যরা প্রায় আমাকে দেখাই দিতে কিভাবে পানি নড়লে কি মাছ হতে পারে। যারা পানির নড়াচড়া বুঝে কি মাছ বলে দিতে পারে তারা সুযোগ পেলে হয়ত বড় কিছু হতে পারত। কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতা এদের অনেককেই সেই সু্যোগ দেয় না।২০০৬ সালে এস এস সি পাশ করে চট্টগ্রাম আসলাম।এখানে বৃষ্টি হলে লুঙ্গি কাছা মেরে ছাতা হাতে বৃষ্টি বিলাসের সুযোগ নেই। ১০ মিনিট বৃষ্টি হলেই রাস্তাগুলো এক একটা নালা হয়ে যায়। তার পরেও বৃষ্টি হলে জানালার পাশে গিয়ে বসতাম। কানে হেডফোন লাগিয়ে এফ এম এ গান শুনতে শুনতে দুধের স্বাধ ঘোলে মিঠানোর চেষ্টা করতাম।এই এস সি পাশ করে চুয়েটে ভর্তি হলাম। ৬ মাস ছিলাম নর্থ হলে। এখানে কাটানো বর্ষাটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বর্ষা। তিন জনের রুমে থাকতাম আমি একা । আমার জানলার সাথে লাগানো একটা দেবদারু গাছ ছিল। বৃষ্টি হলেই দেয়ালে হেলাম দিয়ে দেবদারু গাছের বৃষ্টিতে ভিজা দেখতাম। সাথে কানে একান্ত আপন এফ এমের গান। বৃষ্টির সময় হলের বেশির ভাগ ছেলেই ঘুমাত আমি পারতাম না। মাঝে মাঝে ছাতা হাতে লুঙ্গি কাছা মেরে মাঠের চার পাশ ও ক্যাম্পাসে ঘুরে আসতাম। আর বেশি মন খারাপ থাকলে বৃষ্টির মধ্যে সাউথ হলের পুকুরে যেতাম। গোসল করে ভিজা লুঙ্গি আর গেঞ্জি পড়ে যখন হলে ফিরতাম তখন পেপার স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো ত্রি কোয়ার্টার পড়া লোকজন আমাকে দেখে হাসত।পরের বছর মেডিকেলে সুযোগ হলে এক রাশ স্মৃতি সঙ্গে করে অনেক সুন্দর সুন্দর বন্ধুত্ব ফেলে চলে আসি। নাসিরাবাদ হোস্টেলের বর্ষার কোন স্মৃতি মনে পড়ে না। মনে হয় তখন অনেক পড়ালেখা করতাম।মেইন হোস্টেলে একটা বর্ষা ভাল কেটেছে। এর পর থেকেই টানাপড়েন শুরু। বর্ষা শীত গ্রীষ্ম পৃথক করার সুযোগ হয় নি গত তিন বছর।টিকে আছি এখনো বিলুপ্ত হয়ে যায় নি এটা প্রমান করতে করতেই তিন টা বর্ষা কেটে গেছে। মেইন হোস্টেলে বর্ষাটা অন্য রকম সুন্দর।পাহাড় আর বৃষ্টি দুইটাই যাদের পছন্দ তাদের জন্য মেইন হোস্টেল স্বর্গ। বৃষ্টি হলেই ডাইনিং এর ছাদে চলে যেতাম কানে হেডফোন লাগিয়ে।ততদিন দিনে এফ এম এর নেশা হারিয়ে গেছে। হাতে তখন নকিয়া সি ফাইভ। প্রায় এক জি বি রবিন্দ্রসঙ্গীত ছিল মেমোরিতে। সাথে ফারুক ভাইয়ের থেকে নেয়া শুভমিতার অনেকগুলা গান। বৃষ্টি পাহাড় রবিন্দ্রসঙ্গীত একসাথে মিললে সুখী হওয়ার জন্য আর কি লাগে? কাল রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে, প্রফের ১০ দিন আগে প্রিন্সিপাল সারের এসেসমেন্ট নামক পেইন কবে শেষ হবে সেই টেনশেন এ খেয়াল করি নাই।রাত ১.৩০ এর ধিকে ঘুম ভেঙ্গে গেল বৃষ্টির শব্দে। এর পর থেকে জানালায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতেছি। ভিজার অনেক ইচ্ছে করতেছে সাহস হচ্ছে না ।যখনি বের হব চিন্তা করি শেষবার বৃষ্টিতে ভিজার কথা মনে পড়ে যায়। শেষবার বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম ২০১২ সালের বর্ষার কোন একদিন হাসপাতালের পিছনের রাস্তায়। সাথে আর একজন ছিল তবে সে ভিজে নি। সে বৃষ্টিতে ভিজা পছন্দ করত না।আমি ভিজতেছিলাম সে ছাতা হাতে পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমার হাতে একটা কদম ফুল ছিল। ডাইনিং এর পাশের গাছটা থেকে পাড়া। এর আগে অনেক বার পাড়লেও দিতে পারি নি। বৃষ্টিতে ভিজা অপছন্দ করা মেয়ে কদম ফুল পছন্দ করবে কিনা এই ভয়ে। আমি বৃষ্টিতে ভিজতেছিলাম সে না ভিজে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকলেও আমার মনে কোন প্রশ্ন জাগে নি। এখন বুঝি জাগা উচিত ছিল। মনের অমিলের কথা জীবনের উপন্যাস কবিতায় প্রকাশ পায় না, প্রকাশ পায় চলতি পথের এমন ছোটখাট অমিলে ।
২৪/০৬/২০১৫
রাতঃ ২.৩০
৩০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০২
জৈনেক অমানুষ বলেছেন: খুশি হলাম
২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
বর্ষা গিয়ে শরৎ এসে গেছে, েবার কিছু বলুন।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:০৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
ওকে, পড়লাম