![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জ্যামের মধ্যে বাসে থাকাটা যে কী বিরক্তকর ! অসহ্য গরম । আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময় চলছে অথচ বৃষ্টির নাম নিশানাও নেই ।জামাটা ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে । বাস ভর্তি মানুষগুলো এক হয়ে যেন অক্সিজেনগুলো সব খেয়ে ফেলছে ।
গাদাগাদি করে ভর্তি বাসটির সামনের সিটে বসে আছে তমাল ।সিটে বসেও শান্তি নেই । সামনের লোকগুলো বারবার এসে তার গায়ের উপর পড়ছে । একদম গা ঘেষে আছে একজন বৃদ্ধ , বোঝাই যাচ্ছে গরমে কাহিল হয়ে পড়েছে । যখনই বাস একটু থামছে , বৃদ্ধ প্রতিবারই তমালের গায়ের উপর পড়ছে । তমালতো মহাবিরক্ত ।
এই যে চাচা মিয়া ! সোজা হয়ে দাড়াতে পারেন না ? বারবার গায়ে এসে পড়ছেন যে । কর্কশ স্বরেই বলল তমাল । বুড়ো হেসে বললো , বাপ, দেখোনা কত ভিড় ? আমি কি আর ইচ্ছা করে গায়ে পড়ি ?
অতসত বুঝি না । আপনি সোজা হয়ে দাড়ান । সোজা কথা শুনিয়ে দিল তমাল ।
মেজাজটা এমনিতেই গরম তার আজ । বেশ কদিন থেকেই মনটা খারপ । আজ বাসা থেকে চুড়ান্ত ঝগড়া করে এসেছে । কবে থেকে বাবাকে বলে আসছে একটা কম্পিউটার কিনে দেয়ার জন্য । কিন্তু ওকে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না । ওর বন্ধুদের সবার পিসি , ল্যাপটপ ,স্মার্টফোন আছে । আর ওর কিছু নেই । সেদিনওতো ওর বন্ধু জুয়েল এসে ওকে দেখাল দেখ দেখ বাবা বিদেশ থেকে আমার জন্য একটা GALAXY S4 পাঠাইছে । কি সুন্দর দেখতে ! উফ আর ভাবতে পারছে না ও । এসব ভাবলেই ওর চোখ দিয়ে পানি চলে আসে । এই ভরদুপুরে তাই রাগ করে বাড়ি থেকে চলে এসেছে ।
পাশের সিটে বসা লোকটা উঠে যেতেই আরেকজন বসলো । বেশ সুন্দর দেখতে । তার থেকে পাচ ছয় বছরের বড় হবে । সুন্দর করে মোবাইলে নিচু স্বরে কথা বলছে । বেশ ভালো লাগলো তমালের ।
আবার কেউ একজন গায়ে পড়ল ওর । তাকিয়ে দেখলো সেই বুড়োটাই । কি হলো চাচা ? বারবার বলছি , তারপরও আপনি গায়ে এসে পড়ছেন ?
বাবা ! এটা পাবলিক বাস, এমন হতেই পারে । তোমার সমস্যা হলে প্রাইভেট কিনা নাও ।
কথাগুলো শুনে কান গরম হয়ে গেল তমালের । কড়া করে কিছু বলতে যাবে এমন সময় খেয়াল করল পাশে বসা ছেলেটা উঠে দাড়ালো । সে বৃদ্ধকে বললো, বাবা! আপনি এখানে বসুন ।
না না আমি সামনেই নামবো । বৃদ্ধ আপত্তি জানায় ।
তবুও বসেন, আপনি নামলে পরে আমি বসবো । আমিতো ছোট দাড়িয়ে যেতে কস্টো হবে না । উঠে বসতে দিল বৃদ্ধকে ।
ঘটনায় আস্চর্য হয়ে গেলো তমাল । এতো বোকাও কেউ হয় নাকি আবার । এখনতো ওকে সারা রাস্তা দাড়িয়ে যেতে হবে ।
বাসের গতি বেড়েছে । জানালাটা দিয়ে বাতাস আসছে । একটু ভালো লাগছে তমালের ।
খুব গরম তাই না ? কোথায় থাকো বাবা ?
হঠাত্ জিজ্ঞেস করল বৃদ্ধটি । তার দিকে তাকাতে সংকোচ হলো তমালের ।
- বললো, মণিপুর ।
- পড়াশোনা ?
- ক্লাস নাইন ।
- তা একা একা কোথায় যাচ্ছ ?
চিন্তায় পড়ে গেলো । কি বলবে এখন ?
-এইতো রমনা পার্কে একজনের সাথে দেখা করতে ।
হঠাত্ উঠে দাড়াল বৃদ্ধ । এখানেই নামবে । যাক বাবা বাচা গেলো । মিথ্যে বলাও কতো কঠিন ।
বৃদ্ধ উঠে যেতেই খালি সিটে সে ছেলেটি বসলো । বাস এখনও থেমে আছে । সামনে আবার বিশাল জ্যাম লেগে গেছে ।
- কি নাম ভাইয়া তোমার ? কথা বলে উঠলো পাশের ছেলেটি ।
- তমাল ।
মণিপুর স্কুলে পড়ো তাই না ? আমি সব শুনেছি । আমি শুভ । বুয়েটে পড়ি । তো এই ভর দুপুরে রমনা যেয়ে কি করবে ?
আবার বিপদে পড়লো তমাল । বানিয়ে কথা বলা খুবি কঠিন ।
- এমনি ঘুরতে একটু ।
- আমিও ঐ দিকেই যাবো । ইন্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট এ । একটি অনুষ্ঠানে ।
- আচ্ছা ভাইয়া । একটা কথা বলি । আপনি ঐ লোকটিকে সিট ছেড়ে দিলেন কেনো ? সে যদি আরো দুরে যেতো তবে আপনারতো দাড়িয়ে থাকতে হতো পুরো রাস্তা ।
- দুর ! এটা কোন ব্যাপার হলো । ঐ লোকটির স্থানে যদি তোমার বাবা কিংবা দাদা থাকতো তবে ? তুমি আরামসে সিটে বসে যাচ্ছো আর সে গরমে কস্টে যাচ্ছে । এটা দেথে তখন কি করতে ?
ভাবনার দরজায় টোকা পড়লো তমালের ।
- তাকে বসতে বলতাম । আব্বুকে দাড়িয়ে রেখে বসা যায় নাকি ? এতে বেয়াদবি হতো না ?
একদম ঠিক বলেছো । ওই লোকটাও তো কারও আব্বু বা কারো দাদু । তার অনেক বয়স আর এখনও আমার তো অনেক শক্তি আছে , একটু কস্ট করলে কিছুই হবে না । তুমি যদি কাউকে সম্মান করো তবে তুমি যখন বৃদ্ধ হবে তখন তুমি নিজেও সম্মান পাবে না , বিপদে কাউকে কাছে পাবে না ।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকে তমাল । ইস ! কেন লোকটির সাথে খারাপ ব্যাবহার করলো সে ?
হু ঠিক বলেছেন । আসলে আমি কখনে এভাবে ভাবি নি । কেন জানি ভালো লেগে যায় শুভকে । আরো অনেক ব্যাপারে কথা হতে থাকে ওদের ।
আর নিজের করা ভুলগুলি সব বুজতে পারে তমাল । হঠাত্ করে মনে পড়ে ওর মার কথা । ওকে খুজে না পেয়ে এতক্ষণেতো অনেক টেনশন করছে বাবা মা ।
হঠাত্ করে নিজের উপর খুব অপরাধবোধ জেখে উঠে তমালের। ছেলে বেলা থেকেতো আর ওর কোন আবদার অপূর্ণ রাখে নি বাবা মা । শুধু পারিবারিক টানাপোড়নের কারণে কম্পিউটারটা দিতে একটু দেরি হচ্ছিলো । ঐটাও সামনের মাসেই পেয়ে যাবে । আর ও বাবা মার সাথে কিরকম ব্যাবহারটাই না করলো । নিজে প্রতিজ্ঞা করলো আজ গিয়েই বাবা মার কাছে ক্ষমা চাইবে । এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে তমালের চোখে পানি এসে পড়লো টের পেলো না ।
তমালের চোখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠে শুভ, তমাল তুমি কাদছো ?
চোখের কোণ মুছে হেসে দিল তমাল, না না, ভাইয়া । এই চোখে যেনো কি পড়লো । এ কিছুনা এখনি ঠিক হয়ে যাবে । চলুন রমনা এসে গেছে ।
চলো , আমার সাথে যাবে ? ঐখানে একটা নাটক হবে । নাম 'নতুন জীবনের গল্প' । দেখলে ভালো লাগবে ।
হু, আনমনে সাড়া দেয় তমাল । তারওতো একটা নতুন জীবন দরকার । যেখানে কোন ভুল থাকবে না ।
এভাবে নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর তমাল সম্মোহিতের মতো চলতে থাকে হঠাত্ দেখা হওয়া একটি সুন্দর ছেলেটির সাথে । আগের তমাল হয়ে নয় , নতুন বদলে যাওয়া দ্যুতি ছড়ানো এক নতুন তমাল হয়ে । । ।
২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪৮
সেকেলে ভূত বলেছেন: এইতো পুরোটা দিলাম
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৬
অবনি মণি বলেছেন: তারপর ?