![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সারাদিন ভার্সিটি শেষ করে সন্ধ্যার পর আমি একটা টিউশনি করি । মেয়েটির নাম আনিশা । একটু বেশি চঞ্চল । কখন কি বলে বসে তার ইয়াত্তা নেই । ওর বড় বোন ফারিয়া ।অবশ্য আমি তাকে এখনো দেখিনি । শুনেছি ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে । আমি এবার থার্ড ইয়ারে উঠলাম । মানে ২ ইয়ার জুনিয়র ।
আনিশার মা খুব জেদী ও বদরাগী । কন্ঠ শুনেই এটা বুজা যায় ।
প্রথম দেখায় ভালোবাসা জিনিসটা আমার অসহ্য লাগে । কাউকে দেখলাম আর ভালোবেসে ফেললাম এতই সস্তা ? তারপরও এই সস্তা ব্যাপারটাই আমার সাথে ঘটল ।
আনিশাকে পড়ানোর ৫ম দিন আমি ফারিয়াকে প্রথম দেখলাম । যেন একটা উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণ । কি এক ঘোরে আমি কিছুক্ষণ আবিষ্ট রইলাম । দেখব না দেখব করেও অনেকখানি দেখলাম । সবচেয়ে তীব্র চোখের দৃষ্টি ।
হূশ ফিরে পেয়ে ভাবলাম ছিঃ ! কী কুত্সিত আমি । জ্ঞান হবার পর যে শুধু কষ্ট আর দারিদ্রতার যাতাকলে পিস্ট হওয়া ছাড়া আর কিছু ভাবিনি সে আজ কি ভাবছে এসব ভালোবাসার কথা । তাহলে কি আমি প্রেমে পড়েছি ?? নাহ কি ভাবছি এসব আমি ।
রাতে আমি যা চিন্তা করি তাতে অপ্রাসঙ্গিক ভাবে চলে আসে ফারিয়া । আমার জীবনের গহীন অন্ধকারকেও আজ হার মানাচ্ছে ফারিয়া ।বহুকস্টে ফারিয়াকে ভুলে থাকতে চেস্টা করলাম । ফিরে পেলাম জীবনের কষ্টকর চেতনা । আমাকে কি ভালোবাসলে চলবে ? আমার কি আভিজাত্য আছে ? টাকা আছে ? এতো বিসর্জন দিয়েছি সারাজীবন তাই ভালোবাসাকেও বিসর্জন দেয়াও খুব কষ্টকর হবেনা আমার জন্য ।
চার পাচ মাস কেটে গেল এভাবে । সহজেই চোখকে আটকে রাখি যখন ফারিয়া আসে সামনে । আমার কেনো যেন মনে হয় খুব কষ্টে আছে মেয়েটি । সেদিন আনিশাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ওদের বাবা বিদেশ থাকেন । ওর মা বড়লোকেল এক ছেলের সঙে ফারিয়ার বিয়ে ঠিক করেছে । কিন্তু ফারিয়ার এতে মত নেই কোনো । বিয়ের কথা শুনে বুকের ভেতর ধক করে উঠলো । বুজলাম আমার ধারনাটাই অনেকাংশে ঠিক , সুখে নেই আমার প্রিয়া ।
গ্রাম থেকে ইতিমধ্যে খবর এলো ছোটবোনটা এসেছে যৌতুকের টাকা নিতে । শশ্বুরবাড়ি থেকে পাঠিয়েছে । বিশ হাজার টাকা নিয়ে ফিরতে হবে । আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম এ খবর শুনে । তারা কি রকম করে এ রকম করতে পারে আমাদের সাথে ।
এখন এ মুহূর্তে আমি টাকা কোথায় পাই । খেয়ে না খেয়ে যেখানে আমার মাস পার করতে হয় সেখানে বিশ হাজার টাকা ! চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করলাম । পৃথিবীটা অনেক ছোট ছোট লাগছিলো ।আমার পরিচিতজনদের কাছে চাইলাম । কিন্তু তারা হতাশ করলো । আমি চিন্তায় পড়লাম টাকা কোথায় পাবো ?
অবশেষে ঠিক করলাম ছাত্রীর মায়ের কাছে তিন চার মাসের অগ্রিম চাইব । মুখে লজ্জা লাগছিলো তাই একটা চিঠি ধরিয়ে দিলাম ফারিয়ার হাতে চাচীকে দিতে। পরেরদিন অবাক হলাম এই মহিলা যাকে বদমেজাজী রাগী ভাবতাম সে ১৫হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলো বাসায় । সাথে একটা চিঠিও আছে । ব্যাস্ততার জন্য চিঠিটা আর পড়া হলো না ।
সন্ধ্যায় আনিশাকে পড়াতে গিয়ে চাচীর চেচামেচী শুনলাম । বুজলাম ফারিয়াকে কিছু বলছে ।
আনিশাকে ব্যাপার কি জানতে চাইলাম ।
'কাল আপার কানের দুল ছিলো , কিন্তু আজ তা খুজে পাচ্ছেনা তাই ।'
'তাই বলে ফারিয়ার সাথে এভাবে রাগারাগি করছে কেন ?'
'স্যার, আপনাকে একটা কথা বলি । আপা কিন্তু মায়ের নিজের মেয়ে না । ছোটবেলা মা আপাকে পালক এনেছিলো । তারপর আপার যখন পাচবছর বয়স তখন আস্চর্যজনকভাবে আমার জন্ম হয় । আপার জন্য আমার কস্ট হয় । আপা যে কতো ভালো কল্পনা করতে পারবেন না । আর একটা কথা , আপা কিন্তু আপনাকে খুব পছন্দ করে ।'
একথা শোনার পর আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার এল । আমার জীবনটা যেনো সিনেমার সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে ।
সেদিন আর আনিশাকে পড়ালাম না । আমার মন খারাপ হয়ে গেলো । চাচীর চিঠিটা খুললাম । চাচীর না ফারিয়ার চিঠি ।
ভাইয়া,
আপনার চিঠিটা পড়ে আমার মন অনেক খারাপ হয়ে গেলো ।আমি আমার মাকে ভালভাবেই চিনি ।সে টাকাটা কখনোই দিবেনা । তাই আমিই টাকাটা দিলাম । কাউকে কিছু বলার দরকার নাই । টাকটা পরে পারলে ফেরত দিয়ে দিয়েন । আপনি প্রতিদিন একটা নোংরা শার্ট পড়ে আমাদের বাসায় আসেন । এগুলা দেখে আমার খুব খারাপ লাগে । তাই এটাকা থেকে পারলে একটা ভালো শার্ট কিনে নিবেন ।
ইতি ফারিয়া
চিঠিটা আমি প্রায় একশবার পড়লাম । প্রত্যেকবার আবেগে আমার চোখ ভিজে উঠল । বুজতে পারলাম এ মেয়েকে ছাড়া আমার জীবন কাটানো সম্ভব না । জীবন যুদ্ধের মতো ভালোবাসার যুদ্ধেও আমার জয়ী হতে হবে ।
ফারিয়াকে আমার প্রস্তাব দিলাম ও রাজি । আমাদের মাঝে আনিশা মেয়েটা অনেক হেল্প করলো ।
ফারিয়াকে অনেক ভালোবাসি । অনেক । আমি যে এতো ভালোবসতে পারি তা জানতাম না ।
অবশেষে আমাদের ভালোবাসা সম্পূর্ণতা পেলো । ভালোবেসে আমার পরিবারের মতে ফারিয়ার মার অমতে আমাদের বিয়ে হল গত আগস্টে ।
আমরা একসাথেই থাকি ।এখন ১টার জায়গায় ৩টা প্রাইভেট পড়াই । ফারিয়া একটা প্রাইমারী স্কুলে জব করছে এখন । দুজনের কামাইয়ে বেশ ভালোই চলছে আমাদের টুনাটুনির সংসার ।জীবন যে এতো সুখের হয় তা আগে জানা ছিল না আমার । রাতে ফারিয়া আমার দুহাত শক্ত করে ধরে ঘুমায় । আমার জীবনটা বেশ ভালো কাটছে ।
রাতে আমার পাশে ঘুমায় ফারিয়া । আমি ওর নিশ্পাপ মুখ দেখি আর চিন্তা করি । মনে মনে ভাবি আমার হাতদুটোকে কোনদিন ছেড়োনা । তুমি কি জানো , আমি তোমাকে কত ভালোবাসি ।
I love you. I love you
উংসর্গঃ আমার ভ্যালেন্টাইন
২| ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:৩৮
সেকেলে ভূত বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৫৩
নীল আকাশ বলেছেন: অসাধারন।