![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- এই যে শোনেন,
- জী বলেন
- আপনি কি হাসতে পারেন না? আপনার প্রত্যেকটা ফটোতেই অমন গোমড়া মুখো কেন?
উহু আমি হাসি না, হাসতে পারি না আমি।
- এখন থেকে হাসবেন বুঝলেন, হাসলে অনেক সুন্দর লাগে আপনাকে । আর রাক্ষসের মত দাত বের
করে হাসবেন না প্লিজ, মুচকি হাসি দিবেন। ঠিক আছে???
- এক্সকিউজ মি! আমার হাসবো না কাদবো এটা নিয়ে কে গবেষণা করতে বলছে তোমাকে, যাও গিয়াপড়তে বসো এক্সাম সামনে তোমার।
- [ কান্নার ইমো ]
- [ সীন নো রিপ্লাই]
আস্তে করে লগ আউট বাটন চেপে বের হয়ে গেলাম ফেসবুক থেকে। মেজাজটাই খারাপ করে দিল মেয়েটা। উফফ না আর ভাললাগতাছে না। যাই রাস্তা থেকে ঘুরে আসি একটু, চা এর সাথে সিগারেট ফুকার অভ্যাসটা ঝেকে বসেছে আজকাল। এতরাত হয়ে গেছে তারপরও আজ এত মানুষ কেন রাস্তায়, এখন তো দেখি শান্তিমত খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখাও বন্ধ হয়ে যাবে আমার। কোনরকম গলাটা একটু গরম করে আবার রুমের পথে পা বাড়ালাম, প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করতেছে। রুমে গিয়েই ঘুমের গহীন রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং !!!
এ অসময়ে আবার কে ফোন দিলো? উফফফ ! কাস্টমার কেয়ার এর ফোন, শালারা ফোন দেয়ার আর টাইম পায় না। মনে মনে মোবাইল অপারেটরদের চৌদ্দগুস্টি উদ্ধার করলাম।
কটা বাজে? মাত্র ৬টা বাজতে আরো ৩ মিনিট বাকি। কি করি এখন, ক্লাসতো সাড়ে ৮টায়। এখনতো ঘুমও আসবে না। কি আর করা ফেসবুকে লগিন করলাম।
লগিন করেই চক্ষু চড়কগাছ, আমার নোটিফিকেশন এর বারটা বাজাইলো আবার কেডা !! ক্লিক করে দেখলাম একটাই নাম শুধু “জলপরী” । এমন কোন স্ট্যাটাস নাই ফটো নাই যে জলপরী লাইক দেয় নাই। উফফফ এই মেয়ের সমস্যা কি ? কালকে না ঝাড়ি দিলাম। এর কি কোন কাজ নাই আর? আরে বাবা তুই জলপরী তো এখানে কি আমার কাছে? নদী বা সমুদ্রে গেলেইতো পারিস।
যা হোক নরমানবের মন তো তাই জলপরীর প্রোফাইল থেকে একটু ঢু মেরে আসলাম।
মেয়েটা দেখতে বেশ। প্রোফাইলের ছবিটি দেখে বোঝা যায়, সে দীর্ঘাঙ্গিনী, নির্মেদ, মোটামোটি লম্বাও বটে। তার হাসিটিও তার আত্বাকেই ধারণ করে আছে। নিবাসও দেখি আমার সাথেই; রাজশাহীতে। প্রোফাইল দেখে তো ফেইক মনে হচ্ছে না। যাইহোক মেয়েটা কে একটু টোকা দিয়ে দেখা দরকার। লিখলাম, ‘ এ গোমড়ামুখো নরমানবের কাছ থেকে জলপরী কে জানাই সকালের শুভেচ্ছা’।
অপর পাশ থেক উত্তর আসতে সময় লাগলো দশ মিনিট, ‘আপনি গোমড়া মুখো থাকবেন না আর, বুঝলেন’
- কেনো আমার হাসিমুখ দিয়ে আপনার কাজ কি শুনি?
- আসলে গোমড়ামুখো মানুষ আমি পছন্দ করি না, আর দেখেছি, যারা মন খুলে হাসতে জানে না তারা এ অক্ষরের জগতেও হাসি লিখতে পারে না। হাসতে জানা মানুষ নিরাপদ মনে হয়।
এবার নির্ভার মনে লিখলাম, ‘ঘটনা কি? কে গো তুমি?’
- আমি নওশিন ।
সেই থেক শুরু হয়। কথার স্রোত থামে না, তার সাথে থামে না আমার হাসির স্রোত। সত্যিই মেয়েটার সাথে থাকলে কখনো গোমড়ামুখো থাক সম্ভব না। নওশিন হাসতে পারে বলেই বোধহয় আমাকে হাসাতে পারে। সময় গড়িয়ে চলে আর ওর সাথে আমার আলাপ আস্তে আস্তে সরু খাল ধরে কীর্তনখোলায় এসে পড়ে।
তেমনি একদিন চিরদিনের মতই কথা হচ্ছিলো তার সাথে
- এই যে শোনেন,
- জি বলো।
- আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?
- কেনো? এখন কি আমার সাথে কথা বলছো না?
- না মানে আপনার নম্বর টা একটু দেয়া যাবে কি? এখন একটু কথা বলি।
- এখন তো কথা বলা যাবে না, নম্বর দিতেছি কিন্তু পরে কথা বলবো ঠিক আছে?
- ঠিক আছে তবে পরেই নম্বর দিয়েন।
- বাহহহহ ইন্টারেস্টিং তো, ঠিক আছে এখনি কল দাও নম্বর দিচ্ছি।
এইতো সেদিন এই যে কদিন আগে ঐ দিনিতো তাকে প্রথম শুনলাম। আগে জানতাম যে মেয়েরা একটু সুন্দরী হয় তাদের গলার স্বর টা সাধারণত কোকিলের মত হয় না। কিন্তু আজকে সে ভুল ধারনা টাও ভেঙে গেলো। তার সবচেয়ে বড় অশ্রটাই তো তার কণ্ঠ; সে যতটা না দীর্ঘাঙ্গিনী, যতটা না সুকেশিনী, যতটা না সুতন্দ্রী, তার চেয়েও শত শত গুন বেশি সুকণ্ঠীনি।
সারাক্ষণ ধরে তাকে শুধু শুনেই গেলাম, মেয়েটা যা বকতে পারে না! আমাকে একটু বলার সুযোগও দিল না সে, বোকার মত শুধু সারাক্ষণ শুনেই গেলাম, শুনে যেতেই থাকলাম। এভাবে যদি কেউ বলতে পারে তাহলে তো আমার সারাজীবনও বোকার মত শুনে যেতে কোন দ্বিধা নাই। আমি তার একটা নাম দিয়েছিলাম (WATER GIRL), এই নামেই সেভ করেছিলাম। সে যে একদম জলের মতো নিষ্পাপ, জলের মতো সহজ সরল।
আগেতো সম্পর্কটা ফেসবুক পর্যন্ত ছিলো, এখন তা চ্যাটলিস্টের গণ্ডি পার করে ফোন পর্যন্ত গড়ালো। প্রতিদিন ই সে আমাকে ফোন দিতো, আমার মত কাকের গলাটা শুনে যে সে কি মজা পেত বুঝতাম না, তবুও তার কথা শুনেই যেতাম; এরকম কিছু শোনার কপাল এর আগে কখনো হয়নি তো তাই মনোযোগ সহকারেই শুনতাম। মেয়েটার বাসা নাকি আমার ভার্সিটির পাশেই, প্রতিদিন প্রাইভেট পড়তেও নাকি ভার্সিটিতেই আসে। আমি ভাবি কত কাছে আমরা দুজন অথচ তবুও কত দুরত্ব মাঝে থাকে তাই না??
একদিনের কথা বলি, রুটিন এর টানা ৩টা ক্লাস আর একটা এক্সট্রা ল্যাব ক্লাস করে ক্লান্ত বদন নিয়ে যখন দেহটা বিছানায় এলিয়ে দিলাম, তখন মনে হলো যে সারাদিন গেল ফোনটা একটু হাতে নিয়ে দেখা হলো না। তাই দ্রুত বের করলাম, বের করেই দেখি WATER GIRL এর কাছ থেকে ২৬ টা কল এসেছে।
উফফ মনে মনে ঘাবড়ে গেলাম, এই টাইমে আবার ফোনেও ব্যালেন্স নাই কি যে করি। তাই বাধ্য হয়ে ফেসবুকেই নক করা লাগলো।
- কি ব্যাপার, এত খোজ খবর নেয়া হইতেছে যে?
- আপনাকে যে অনেক কিছু বলার আছেহ, এই যে শোনেন?
- জী বলেন।
- আমি না আজকে একটা ছেলেক দেখে ক্রাশ খাইছি, মনে হয় ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। মাত্র ৩০সেকেন্ড এর জন্য ওকে দেখেছি, সেই তখন থেকেই ও আমার সময়টা থামিয়ে দিয়েছে।
- কি? কাকে দেখছো? [কথাটা শোনার পরই হঠাত করে কেনো জানি আমার ভালোবাসার বসন্তে ভরা বাগানে হঠাৎ করে কালো মেঘের বর্ষন শুরু হলো, মনে হচ্ছিলো জীবনের মুল্যবান সম্পদ হারিয়ে গেলো]
- হুম, দেখেছি ওকে। তালগাছ একটা, জানেন কতদিন ওর অপেক্ষায় ছিলাম, আর ওর মুচকি হাসি টা যে কত্ত সুইট না, একদম পুরা গুলুগুলু। জানেন ওকে দেখামাত্র লজ্জায় ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছি, আপনি জানেনই তো আমার লজ্জা একটু বেশিই। কখন থেকে আপনাকে বলবো এটা আর আপনি আস্তা মানুষ কোন খোজ খবরই নাই। কোথায় ছিলেন এতক্ষন?
- না আসলে ব্যাস্ত ছিলাম, আমার শরীর টা ভালো লাগছে না পরে কথা হবে।
খুব বেশি অস্বস্তি লাগতাছ, কেনো এমন লাগতাছে। ফেসবুক থেকে বের হয়ে যাবো?
নাহহ আইডি ডিএকটিভ করে দেই, সবকিছুই অসহ্য লাগতাছে।
শরীর টা ক্লান্ত ছিল, এমনি ঘুমে ঢলে পরলাম।
ঘুটঘুটে অন্ধকার, একঘুমে একদম রাত হয়ে গেছে। উঠতে মন চাচ্ছিলো না, বিছানায় বসেই ভাবতে লাগলাম কি ঘটে চলছে?
আচ্ছা কে ঐ মেয়ে, কেনো এর জন্য আমার এত টান? ওতো আমার প্রেমিকাও না। তাহলে কেন এমন লাগছে আমার? আজ জীবনে প্রথম হিংসে হচ্ছে। সহ্য করতে পারতেছি না ঐ ছেলেটাকে, সামনে পেলে এখন খুন করতাম।
ছিহ কি বাজে চিন্তা করতেছি আমি মনে মনে, আচ্ছা এমন কেন হচ্ছে আমার? আমি কি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম? জলপরীর প্রেমে? এজন্যই কি ওর জন্য এত আকুল লাগতেছে আজ আমার। মনে হচ্ছে আমার ভালোবাসা কে হারিয়ে ফেললাম, শুরু হবার আগেই তা শেষ হয়ে গেলো। হ্যা ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি, আমারও ভালোবাসা দেখোত। কাওকে ভালোবেসেও তাকে কখনো বলতে পারবো না মনের কথাগুলো, মনের সবকথাগুলো মনেই রেখে দিতে হবে আজীবন। কারণ সে তো আজ অন্য কারো হয়ে গেছে তাই না!
কয়টা বাজে দেখার জন্য ফোনটা হাতে নিলাম। সাড়ে ১০টা বেজে গেছে, WATER GIRL আবারো ফোন দিতে দিতে হয়রান হয়ে গেছে, উফ ওর সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবুও বন্ধু হিসেবে কথা বলতেই হবে। এবার আমিই ফোন দিলাম ওকে,
- হ্যালো, কি খবর তোমার?
- ভালো না, আপনি কোথায় ছিলেন এতক্ষন?
- এইত ঘুম দিয়ে উঠলাম।
- এই যে শোনেন,
- হুম, বলো।
- আপনি দাড়িগুলা একটু কেটে আসবেন এর পর থেকে বুঝলেন। আর চুল এর কি অবস্থা করছেন এগুলা হুম? ২দিন পরপর শ্যাম্পু করবেন বুঝলেন।
- অ্যাঁ !
- আর হে, ঐ জলপাই রঙ এর টিশার্ট টা আর পরবেন না বুঝলেন। কেমন গাঞ্জাখোরের মতো লাগতেছিলো আজকে জানেন? এভাবে আমার সামনে আসলে চলবে না বুঝলেন
- আমাকে কখন দেখলা??? [চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে আছি]
- শোনেন, আপনার হাসিটা এত সুন্দর কেন হুম? এত সুন্দর হাসি নিয়ে কেউ এমন এত গোমড়ামুখে পিক দেয়?
- কি বলতেছ এগুলা হুম?
- ঠিকি বলতেছি, শোনেন আপনার চোখগুলা কি একটু লুকিয়ে রাখতে পারবেন?? জানেন, আপনার প্রেমে পরে গেছি আজ, এই মায়াবী চোখ আর মনকাড়া হাসিটা কি আমার জন্য রাখবেন? কাউকে দিতে পারবো না আমি এগুলা, সত্যি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে। আমাকে আপনার করে নিন না?
- নিতে পারি তবে ২টা শর্ত আছে যে,
- কি শর্ত?
- এক, প্রতিদিন কানে ঠোট লাগিয়ে বলতে হবে ভালোবাসি তোমায় , আর এ হাসি হাসি মুখটা কখনো কাদাবে না বুঝলা? এ হাসিটা আজ থেকে তোমার করে দিলাম, একে সামলানোর দায়িত্বও তোমার বুঝলা?
- হুম সারাজীবন রাখবো, ভালোবাসবেন তো আমাকে?
- হুম, ভালোবাসি তো তোমায় অনেক বেশি, সারাজীবন ভালোবাসবো।
তারপর একদিন এর কথা,
আজ ৮ তারিখ, আগস্টের ৮ তারিখ। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি টেবিলটায়। সামনে বসে আছে একটা মেয়ে। লালশাড়িতে বেশ মানিয়েছে মেয়েটাকে, যদিও শাড়ি পরায় একদম আনাড়ী বুঝাই যাচ্ছে। তবে এর নামটা তো জলপরী আর এমনে এমনেই হয় নাই। সত্যিই কোন সাগর কন্যা এসে মনে হয় আমার সামনে বসে আছে। মেয়েটা যে এত লাজুক তা আগে বুঝতে পারি নি, আধঘন্টা পার হয়ে গেল এভাবে অথচ একটু কথা বলবে কি চোখ তুলে একটু তাকায়ওনি। লালশাড়ি পরা জলকন্যা টা তো লজ্জায় লাল হয়ে আছে।
কি আর করা আমারই তাই আমিই তার চিবুক ধরে মুখটা টেনে তুললাম। এই প্রথম তার চোখে চোখ রেখে বললাম, এই যে শুনো, আজকে কানে কানে ঠোট রেখে বলবে না যে ভালোবাসো আমায়?
‘যাহ দুস্টো, এখনো কি তোমার বোঝা হলো না যে কত্ত ভালোবাসি তোমায়, হ্যা অনেক ভালোবাসি যে তোমায়’- অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ভেঙে আমার কাছে আসলো আমার সেই WATER GIRL ।
এভাবেই ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষগুলো ভালোবাসার কাছে আসে তাদেরকে ভালোবেসে। আর এভাবেই চলতে থাকে আমাদের টোনাটুনির ভালোবাসার গল্প।
(সমাপ্ত)
©somewhere in net ltd.