![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিলেট থেকে দিরাইর একটি বহমান নদী, আব্দুল করিমের কালনী।
মাত্র দুপুর ৩ টা বেজে পনেরো মিনিট। সজীব অবসর দুপুরের টাইমটা বিছানায় শোয়ে কাঠাচ্ছিল, ঠিক তখনই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। সে কল রিসিভ করলে, শরিফের কণ্ঠ শোনতে পেলো। কিরে কি করিছ? নাহ এইতো শোয়ে আছি আর টিভি দেখছি তুই কই? সকালে ফোন দিলি না? সজীব উত্তর দিয়ে আবার প্রশ্ন করে। নাহ এইতো ঘুমিয়েছিলাম মাত্র উঠছি। তুই বের হয়ে আয় আমি তোর বাসার সামনে সি.এন,জি নিয়ে আসছি। একটু জলদি বের হইছ কাজ আছে। সজীব ওকে বলার পর লাইনটি কেঠে গেলো।
ফোনটি রেখে সজীব চিন্তা করে, সকালে অনেক্ষন সে শরিফের কলের অপেক্ষা করেছে। অপেক্ষা করার কারন শরিফ ফোন ব্যবহার করে না। এমনটি না যে সে অভাবে ফোন কিনতে পারছে না, সে তো প্রতিদিনই কম হলেও অর্ধহাজার টাকা উড়ায়। হঠাৎ করেই ঘটকালের একটি ছোট্র ঘটনা তার মনে পড়ে। গতকালও রোজাকার মতন তারা সন্ধার পর এমসি কলেজে দেখা করতে যায়। সেখানে আড্ডাস্থলে যথারিতি কানাই দা'র সাথেও দেখা হয়। আমার নতুন লোমিয়া সেট শরিফরে দিছিলাম গান শোনতে, তখনি কল আসলে ও ফোনটি আমায় দেয় রিসিভ করার জন্য। কমি কথা বলার পর জিঙ্গেস করে কে? প্রায়ই দেখছি আমার কল আসলে সে এই প্রশ্নটা করে। আমি বলি, রাহিনূর পিনিক নিতে আসছে। ও বললো, ও আচ্ছা। রাহিনূরের সাথে তার পরিচয় হয়েছে গতকাল। রাহিনূর সুনামগন্জের দিরাইর ছেলে এই কথাটা ওর মনে প্রভাব ফেলছে। আব্দুল করিমের দেশের লোক সে একবার বলেই ফেললো তারপর থেকেই তার যত্ন একটু বেশিই রাহিনুরের প্রতি বেড়ে যায়। এমনকি আজ তার আসার কারনটি সুস্পষ্টভাবে বলার পরও সে প্রতিক্রিয়া দেখায় নি। এইটা সে সব সময় করে না। যথারিতি আড্ডা শেষে ফিরে আসতে সময় আমাদের যাওয়ার পথেই ক্লাসরুমের ভিতরে জনি গান করছিল। কানাই দা দরজার ফোকরের ভেতর দিয়ে তার দিকে পিনিকের ভাব নিয়া থাকিয়ে দাড়িয়ে পড়েন। শরিফও তার সাথে দাড়িয়ে অবাক হয়ে জিঙ্গেস করে কে মানুষটা? কানাই দা কে। কানাই দা উত্তর না দিয়ে জনির দিকে নীরব দৃষ্টি নিয়ে থাকিয়ে জিঙ্গেস করেন কোন গান গাও? আমি এগিয়ে গিয়ে শরিফকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। শরিফ তখন রাহিনূরকে নিয়ে আবার ফিরতি পথে এগিয়ে গেছে, আমি ডাক দেওয়ায় পিছন ফিরে পরিচয় হতে আসে। জনি তাদের দেখে বলে, উয়াও দুইটা মাল নিয়ে আসলা আর পরিচয় না করিয়ে চলে যাচ্ছ বলে শরিফের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। শরিফ তখন গম্ভীর হয়ে হাতটা বাড়িয়ে দেয় আর বলে প্রথমেই মাল ডেকেইতো সবতা নষ্ট করে দিলেন। কানাই দা বলেন আরে শরিফ এতো সজীবের নাইকা, তুমি জান না। শরিফ কন্ঠে কিছুটা ঝাঝের সাথে জনি কে বলে, সজীব এতক্ষন বাঁশী বাজাচ্ছিল তোমার জন্য তুমি মোন নাই আর কথায় কথায় আমাকে নায়ক বলছো শেষেতো ও রাগ করবে। কথটাায় জনির দরে, তা বুঝা যায়। আমি পরিস্থিতি সামাল দিতে শরিফকে নিয়ে তারাহুরু বিদায় নেই। কানাই দা কাজ আছে বলে অন্যত্র চলে গেলে আমরা তিনজন গুঁড়ের চা খেতে রাস্তার পাশের টঙ্গি দোকানে যাই। এখানকার চাঁ-ও শরিফের বিষন পছন্দ। সে সবাইকে বলে গুঁড়ের সাথে দুধের মালাই দেওয়া চাঁ। অনেককে দাওয়াত দিয়েও নিয়ে আসে। চাঁ খাওয়ার ফাকে জনি সম্পর্কে অর সাথে কথা বলি। জনি হিজরা প্রকৃতির কিন্তু আমাকে বিষন সম্মান করে ও ভালো চোখে দেখে। কানাই দা ও আরো ওনেক আছে ওকে ব্যবহার করে। যা ঠিক নয়। সেও একাত্যতা প্রকাশ করে। তারও তাদের প্রতি সীমাহিন সম্মান। এসব ভাবতে ভাবতেই মোবাইলে আবারো অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। কল রিসিভ করতেই শরিফ বললো কিরে এখনও বের হইছত না? বললাম না কাজ আছে। তাড়াতাড়ি আয় আমি তোর বাসার নিচে সি.এন.জি নিয়ে। পাঁচ মিনিট বলেই সজীব ফোন রেখে তৈরি হতে গেলো।
১৬ ডিসেম্বর
আজকে শরিফের মন ভিষন ফুরফুরে। তার অন্যতম কারন আজ অর্থনীতি সবল তা সহজেই অনুমানযোগ্য। সি.এন.জিতে উঠার পর চালক কে এম.সি.কলেজের উদ্দেশ্যে যেতে বলে সজীব কে জীঙ্গেস করলো, জনিকে এখন কই পাওয়া যাবে? আজ ১৬ই ডিসেম্বর নিশ্চয় সে ফ্রি? না সালি আবার কারো সাথে শোইতে গেলো? দেখ তোর কানাই নাকি আবার ওরে র্যাপ করে। সজীব বললো র্যাপ করা লাগবে না মনে হয় ও আরো খোশি হবে। হা তাও ঠিক! আমার দুজনি হাসতে থাকি। সি.এন,জি চালক আমাদের পরিচিত পালসার। আমার কলেজ থেকে জনিকে নিয়ে সরাসরি ঘাটে। সেখানে শরিফ গোল্লার সাথে দেখা করে আসতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় নেয়। তারপর বিকাল যখন শেষটা জানান দিয়ে ঘোধলির রঙে হারিয়ে যাবে তেমনি এক সন্ধায় আমার সিলেট পর্যেটনের হোটেল পৌঁছি। সেখানে শরিফ জনিকে অর্ডার করতে বলে। সংগতই পর্যটনের সবাই আমাদের চেনে। প্রায়ই আমরা আড্ডা দেই বিকালে, সন্ধায়, রাতে পর্যটনের পার্কটাতে। এমনিতেই হঠাৎ করে তাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরেছি সাথে সাথে হোটেলের মানুষের একটু সচেতন খাতির যত্ন আর শরিফের উগ্র আচরনে বেচারি জনি বড়কে গেছে। অর্ডারি দিতে পারছে না বরং করুন চোখে একবার শরিফকে আর একবার আমাকে দেখছে। সঙ্গতই শরিফের পাগলাটে আচরন ওর কাছে ভয়ের লাগবেই। সজীবের বাল্যবন্ধু শরিফ সে জানে আসলে শরিফ ততটাই ভালো যথটা তাকে ভয়ঙ্কর মনে হয়। শরিফ হঠাৎ করে মুচকি হেসে পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বলে আজকের এই আয়োজনটা সম্পর্নই আমাদের নতুন বন্ধু জনির জন্য। খাবার পর পার্কে গিয়ে বলবো কারটা কারন পেঠে খোদা পাইছে ভিষর আমার আবার হোটেলের বাবুর্চি ছাড়া ঘড়ে বউ নেই আর আমাকে বউ কে দিবে যখন আমার সঙ্গ একজন হিজরার কাছেও ভয়ঙ্কর। দেখ ভাই জনি মুডটা আমার অফ করিছ না। ম্যানু না বুজলে সমস্যা নাই এই ওযেটার তুমি মুখে মুখে ওরে বুজিয়ে দাও খাবার তালিকা আর অর্ডার নিয়ে আস। পেটে ক্ষিদা পাইছে।
আমরা খাবার দাবার শেষ করে পার্কে বসে আছি। নির্জনে তিনজন। আমি বুজতে পারতেছি না মালটা খেতে শরিফ এতো সময় নিচ্ছে কেন? জনি মিয়াতো খাবার খেয়েই অস্থির। কি খাবার ছিলো না বলে বিলের দামটা বললেই যথেষ্ট। ১৩৮৯ টাকা! তাও সম্পুর্ন জনির অর্ডারে আর সেজন্য শরিফকে বরং খোশিই মনে হচ্ছে। শরিফ এখন বলতে শুরু করলো আজকে এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যটা ছিলো জনির জন্য। কারন জনি আমাদের এখন থেকে প্রিয় বন্ধু। আর জনিকে আমি কিছু কথা বলতে চাই। দেখো আমাকে হয়তো কেউ ভালোবাসে বা আমারি পছন্দের কেই আছে। তাই বলে কি আমারা বন্ধু হতে পারি না? কথাটাতে জনি কষ্ঠ পায় বুঝা যায়, সে বলে না, পারি না কিসের বন্ধু? আমি তোমাকে পছন্দ করি! শরিফ ঠান্ডা মাথায় বললো আচ্ছা। আমি হঠাৎ আকস্মিকতায় কিছুটা হতবম্ভ হয়ে যাই। শরিফ একটু দাড়াও বলে আমাকে নিয়ে আড়ালে মালের বোতল দিলো আর বললো খেয়ে বোতলটা ওর হাতে দিতে। সে খালি বোতল দুইটা হাতে নিয়ে জনিকে দিয়ে বললো লেবেলটা পড়ে দেখো। এখন আমার কথা মন দিয়ে শোন, আমাদের সমাযের মানুষের মধ্যে যে ভিবক্তিটা সেটা ধর্ম-অর্থ ও লিঙ্গের সাথে। আমি এডিক্ট তাই আমার কেউ নাই। আমি চাইলেও কাউকে ভালোবাসতে পারি না। যদি বাসতেই হয় আমাকে এডিকসন ছাড়তে হবে আর এডিকসন ছাড়লে আমি তোমার বন্ধুও হতে পারবো না। এখন তুমি খোশি আমার কেউ নাই জেনে, না আমার অসহায়ত্ব টের পেয়ে? জানো একটি কথা সত্যি - কিছু মানুষ শুধু নিজের ক্ষতিই করতে পারে অন্যের না। তাই তুমিও আমাকে বুঝ আমিও তোমাকে বুঝি। তোমার মতন আমার আরো অনেক বন্ধু আছে, যারা সত্যি আমায় শ্রদ্ধা করে এবং রাস্তায় পেলে লফিটও নেয়। জনি এবার সত্যি খোশি হয়, সে বলে আসলেই আমরা বন্ধু আর বন্ধু হলে আমায় মালও যোগার করে দিতে হবে। হাহাহা শরিফ হাসে আর বলে সেটা কোন ব্যাপরি না! তাই না বন্ধু সজীব? আমাদের দুশমনের অভাব আছে নাকি? সবকটারে জনিরে দিয়া রেপ করামো। হা হা হা আমিও হাসি। তখনি রাহিনূরের কল আসে। ফোন রিসিভ করে জিঙ্গেস করি কি ? পিনিক নিবা ?
শোনেন শোনেন শোনেন দিয়া মন। আহা শোনেন দিয়া মন। প্রথম শোনেন বট বৃক্ষের অতি গুপ্ত কথা প্যাঁচা আর প্যাঁচানী শুধু জানে সে বারতা আহা অতি গুপ্ত কথা। বট বৃক্ষের তলে একদিন ফুটিল জোছছনা রাএির নয়,অন্ধকার নয়,দিনের মুছছনা আহা ফুটিল জোছছনা। কালো কেজে বিজলি খেলে চক্ষে ঝড়ে পানি... কার ঘরনী কার বা কইন্যা কিছুই জানি না আহা চক্ষে ঝড়ে পানি। একা একা কে আসিল কে তুমি ললনা কে তোমাকে দুঃখ দিলো কে করে ছলনা আহা কে তুমি ললনা? আহা অতি গুপ্ত কথা।
©somewhere in net ltd.