![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সমাজ ও পরিবারের ভুমিকা
☀☀☀☀☀☀☀☀☀☀ মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন খান
আজ থেকে ৪০ বছর আগে ও আমরা সন্ত্রাস শব্দটির সাথে তেমন পরিচিত ছিলাম না। বিশেষ করে ধর্মীয় উম্মাদনায় আকৃষ্ট সন্ত্রাসকেই বলছি যা আজ সারা বিশ্বের শান্তি প্রিয় মানুষকে মারাত্মক হুমকির মুখে জিম্মি করে রেখেছে। মুসলমান নামধারী কতিপয় বিপথগামী যুবকদের আধিক্য যেখানে প্রবল। কিছুদিন পূর্বে ও ধারনা করা হতো দরিদ্র ঘরের মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্ররাই এদিকে ঝুঁকছে। গত ক’দিন আগের ঢাকাস্থ গুলশানের ঘটনা আমদের সে ধারনা পাল্টে দিয়েছে, কারন এতে অংশ গ্রহণকারীরা কেউ মাদ্রাসার ছাত্র নয় এবং দরিদ্র ঘরের সন্তান ও নয়। তারা সকলেই বিত্তবান বাপের আদরের দুলাল এবং ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত। আজ আমাদের ভাববার সময় এসেছে আমাদের সন্তানেরা কেন বিপথগামী হচ্ছে! কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়। আমি আমার দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি নিয়ে আমার ভাবনা তুলে ধরতে চেষ্টা করবো।
সন্ত্রাসের প্রকারভেদঃ
আমি প্রথমেই সন্ত্রাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিতে চাই। প্রথমতঃ পারিবারিক সন্ত্রাস, দ্বিতীয়তঃ সামাজিক সন্ত্রাস, তৃতীয়তঃ রাজনৈতিক সন্ত্রাস, চতুর্থতঃ ভেজাল সন্ত্রাস, পঞ্চমতঃ ধর্মীয় সন্ত্রাস।
পারিবারিক সন্ত্রাসঃ-
✍✍✍✍✍✍✍✍✍
মুলত সন্ত্রাসের প্রথম বীজটি অঙ্কুরিত হয় শৈশবে পারিবারিক সন্ত্রাসের মাধ্যমে। আপনার আদরের সন্তানটি আচার আচরণে শৈশব থেকে যখন কৈশোরে পা রাখছে, একটু একটু স্বাধীনচেতা মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। যে কোন বিষয়ে নিজের জেদকে বাস্তবায়নের জন্যে মরিয়া হয়ে উঠে। মা বাবার অতি আদর এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি মা বাবার অনাকৃষ্টতা তখন তাকে বেপরোয়া করে তোলে। একজন সৎ মানবের জীবনটা এখান থেকেই শুরু হয়। বর্তমানে আধুনিক সভ্য সমাজে ধর্মীয় শিক্ষাকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়না। সকাল বেলা মক্তবে পাঠানোর পরিবর্তে আর্থিকভাবে সচ্ছল মা বাবা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে কে জি স্কুলে পাঠাতে পছন্দ করেন। কচি মনের বালকেরা ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের মন মানসিকতা গড়ে উঠে পাশ্চাত্য আদলে, ধর্মবিমুখ ও স্বেচ্ছাচারী। উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি,যেমন ধরুন আপনার সন্তানটি যে কোন একটি বিষয় নিয়ে জেদ করে বসলো যা তার এই বয়সে শোভনীয় নহে অথবা তার এ জেদ পূরণ করা আপনার সামর্থ্যের বাইরে। ধরুন, হাটি হাটি পা পা করা আপনার সন্তানটি আপনার হাতের দামী মোবাইলটার জন্য জেদ করে বসলো। আপনি নিশ্চিন্তে তার আবদার পূরণ করে আদরের দুলালকে আনন্দে লাফাতে দেখে নিজে ও মুচকি হাসছেন। কিন্তু একটি বার ও ভেবে দেখলেন না, আপনার শখের মোবাইলটি কত দাম দিয়ে কেনা, এবং কচি শিশুটির কাছে এটির কোন মুল্য আছে কিনা! তার কাছে এটি একটি খেলনা মাত্র। শিশুসুলভ আচরণে মোবাইলটি দূরে ছুঁড়ে মেরে কিংবা পানিতে ফেলে দিয়ে মুহূর্তে আপনার কয়েক হাজার টাকা মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে। আর যদি তা না ও করে মোবাইলের তীক্ষ্ণ রশ্মি তার চোখের দৃষ্টি শক্তির ক্ষতি করতে পারে। ভাববার প্রয়োজনের কাছে আপনার সন্তানের আনন্দটাই আপনার কাছে যখন প্রাধান্য পায়, তখন আপনি নিজের অজান্তেই শিশুটিকে ক্ষতির একটি ধাপে আরোহণের সুযোগ করে দিলেন। আর আপনি তার ক্ষতির দিকটা ভেবেচিন্তে মোবাইলটি দিতে অস্বীকার করলেন বা লুকিয়ে নিতে চেষ্টা করলেন, তখন কচি শিশুটি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কাঁদতে শুরু করলো, অথবা জেদ করে অশোভনীয় আচরণ করতে শুরু করলো। আপনি তার জেদের কাছে হার মেনে তার হাতে কাঙ্খিত বস্তুটি তুলে দিলেন, অমনি সে খুশী হয়ে সেটি হাতে নিয়ে খেলতে চলে গেলো। সন্তানের খুশিতে আপনি ও বেজায় খুশী। কিন্তু একটি বার কি ভেবে দেখেছেন, তার এ জেদ একদিন তাকে বেপরোয়া করে তুলতে পারে। একদিন দু’দিন তিনদিন সে যদি এভাবে সব বিষয়ে জেদ করতে থাকে, আপনাকে সতর্ক হতে হবে। তাকে বুঝিয়ে বা কৌশলে অন্য মনস্ক করে এ রকম জেদ করা থেকে বিরত রাখতে হবে নতুবা আপনার ঘরেই জন্ম নেবে এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ। কৈশোরে পা দেওয়া সন্তানটি যে কোন বিষয় নিয়ে আপনার আর এক সন্তানের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। আপনি ন্যায় অন্যায় না ভেবে মমতার আধিক্যতা হেতু তার প্রতিপক্ষকে সমর্থন দিলেন। তার কচি মনে আপনার প্রতি অবজ্ঞা ও ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করলো আর তাতেই অঙ্কুরিত হলো এক সন্ত্রাসী মনের যা পরিণত হয়ে একদিন আপনার বংশের কলঙ্ক হতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে আপনাকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে, সকল সন্তানদের ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক একই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে এবং তাদের বিরোধ আপনাকে সতর্কতার সাথে নিস্পন্ন করতে হবে। নতুবা তিলে তিলে জমে উঠা ক্ষোভ একদিন পরিণত হয়ে আপনার ধ্বংস ডেকে আনবে। পাঠশালায় যাবার নাম করে অসৎ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে একদিন সে সন্ত্রাসের পাঠশালায় ভর্তি হয়ে যেতে পারে। আপনাকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বাড়ির অন্য ছেলেটির সাথে বিবাদে জড়িয়ে মার খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে এসে নালিশ করলো, অমুক আমাকে মেরেছে। আপনি প্রথমে জানতে হবে কেন মেরেছে! আপনার সন্তানের দোষ ত্রুটি বিবেচনা না করে এক লাফে আপনার সন্তানের প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে বেরিয়ে পড়লেন, তাহলে আর কথা নেই আপনার পরিবার থেকে একজন সন্ত্রাসীর আগমন আমি নিশ্চিত দেখতে পাচ্ছি। আধুনিক যুগের সবচাইতে ক্ষতিকর পরশটা আপনার সন্তানকে আচ্ছন্ন করছে কিনা, যেমন সারাদিন টিভিতে হরর মুভি দেখা, ফেসবুকে কিংবা ইউ টিউবে কি করছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর অপব্যবহার করছে কিনা তা আপনাকে সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করতে হবে, নতুবা আপনার পরিবার হতে তৈরী হবে একজন সন্ত্রাসী যার জন্য আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন।
সামাজিক সন্ত্রাসঃ
✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
একটি পাড়ার কয়েকটি ছেলে সন্ধ্যার পর বাড়ীর সামনে বড় পুকুরটির পারে কিংবা ঘাটে বসে আড্ডা দিচ্ছে, মসজিদ থেকে ফেরার পথে মুরব্বীর কানে তাদের ফুসফাস শব্দ এলে ডাক দিয়ে বললেন, কে ওখানে? নামাজে না গিয়ে আড্ডা দিচ্ছো! ভয়ে সবাই পালিয়ে যেতে দৌড় দিলো। এটা হয়তো চল্লিশ বছর আগের দৃশ্য। আর আজকের দৃশ্যটা ভিন্ন। চাচা আমরা বলে দুঃসাহসী একজন জবাব দিলো। পাড়ার বয়োবৃদ্ধ লোকটি স্বরের উচ্চতা শুনেই বিপদ আঁচ করতে পেরে নিজের সম্মানটুকু বাঁচাতে কেটে পড়লেন। দুঃসাহসী তরুণদের সাহস বেড়ে গিয়ে একটি সন্ত্রাসী দলের জন্ম নিলো। একদিন তারাই সমাজটাকে কলুষিত করে তুলবে। ধরুন, মুরব্বী সাহস করে এগিয়ে গেলেন প্রতিবাদ করতে, অমনি দুঃসাহসী তরুণটি বয়োবৃদ্ধ লোকটির কোন প্রকার সম্মানের তোয়াক্কা না করে বলে ফেললো, আপনার কাজ আপনি করেন আমরা সময় হলে পড়বো। চড়া মেজাজের লোকটি ধৈর্য হারিয়ে ছেলেটিকে একটি থাপ্পড় দিতে উদ্যত হলে অন্য তরুণরা প্রতিরোধে এগিয়ে এলো। বয়স্ক লোকটি কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে ফিরে আসলেন। পরদিন তরুণটার পিতাকে নালিশ করলেন ছেলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে। পিতার উত্তর, ঠিকই তো বলেছে, আপনি মুরব্বী মানুষ ঐ সব নিয়ে ঝামেলায় জড়াবেন না। কিন্তু সে পিতাটি একবার কি ভেবে দেখেছে, সে নিজেই সমাজে একজন নতুন সন্ত্রাসীর জন্ম দিলো। আগের দিনের সামাজিক সেতুবন্ধন ফিরিয়ে আনতে পারলেই শুধু সামাজিক সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব। সামাজিকভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করতে পারলে, বখাটে তরুণকে সামাজিক বিধিবিধানের আওতায় নিয়ন্ত্রন করতে পারলে, তরুণদের মনে সঠিক ধর্মীয় অনুভুতি সৃষ্টি করতে পারলে, উগ্র ধর্মীয় দলে যোগদান থেকে নিজ সন্তানকে বিরত রাখতে পারলেই শুধু সামাজিক সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব।
রাজনৈতিক সন্ত্রাসঃ
✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
রাজনৈতিকভাবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মুলতঃ রাজনৈতিক সন্ত্রাসের জন্ম। ক্ষমতা দখল, রাজনৈতিক পরিচয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জন করা, প্রতিপক্ষকে গায়েল করার জন্য দলীয় ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলার মাধ্যমে সমাজে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটছে। এর মধ্যে নামধারী ইসলামী দলগুলো ও বাদ যায়নি, কারন তাদের আদর্শ সঠিক ইসলামী রূপরেখার উপর প্রতিস্টিত নয়। তাদের লক্ষ্য ক্ষমতা দখল ও গায়ের জোরে আধিপত্য বিস্তার করা। এ বিষয়ে পরবর্তী অনুচ্ছেদে আলোচনা করার প্রয়াস পাব। আমরা আগে দেখেছি নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী কিছু রাজনৈতিক দল ক্যাডার বাহিনী গঠন করে চোরাগুপ্তা হামলার মাধ্যমে নিজেদের অস্থিত্ব প্রকাশ করতো। তাদের চিহ্নিত করা সহজ ছিল এবং সমাজে তাদের তেমন প্রভাব ছিলনা বলে ক্ষতির পরিমাণ ও কম ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কিছু বিভক্ত দল তৎকালীন সরকারের সাথে বিরোধকে কেন্দ্র করে মাঝে মাঝে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায়। তাদের লক্ষ্য রাজনৈতিক দলকে কোণঠাসা করা। সাধারণ নাগরিক এতে তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হতোনা। ধীরে ধীরে সমাজের পটপরিবর্তন হতে থাকে। সমাজের অন্ধ গলির কীটগুলো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে থাকলো। অন্যদিকে স্বাধীনতা বিরোধী নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধন পেয়ে প্রকাশ্যে তাদের প্রতিপক্ষ বধের খেলায় মেতে উঠলো। প্রথমে নামাজ শিক্ষার দোহাই দিয়ে কোমলমতি তরুণদের দলে ভিড়াতে থাকে। ঘন ঘন বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে তাদের মগজ ধোলাই করতে থাকে। ইসলামের নামে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় একদল সশস্ত্র ক্যাডার, যারা পুন্যের কাজ মনে করে হত্যাকাণ্ড সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষাবৃত্তির নামে আর্থিক সহায়তা তরুণদের আরো আকৃষ্ট করে তোলে। এভাবে জন্ম হয় আজকের রাজনৈতিক সন্ত্রাস। এটা নির্মূলে রাজনৈতিক নেতাদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে তেমনি আলেম সমাজের ভুমিকা ও কোন অংশে কম নয়। বাস্তব সত্য হচ্ছে আমাদের সমাজে আলেমদের গুরুত্ব বেশী হলে ও ক্ষমতা কিন্তু সমাজের বিত্তশালীদের হাতে বন্দী। সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি যিনি রাজনৈতিক পরিচয় বহন করেন তার ছেলের বিরুদ্ধে কিছু বলা তাদের পক্ষে অসম্ভব কারন চাকরি ও জীবন দুটোই যাবার ভয়। অধিকাংশ মসজিদ মাদ্রাসায় বিত্তশালী ও বেনামাজীদের দ্বারা কমিটি গঠিত হয়। যার ফলে ইমাম সাহেব অসহায় দন্তহীন বাঘের ন্যায় অর্থ উপার্জন করার লক্ষ্য নিয়েই দিনাতিপাত করেন। আজকের সমাজের বুদ্ধিজীবীরা অনুধাবন করতে পেরেছেন বলে মনে হয় সন্ত্রাস নির্মূলে আলেম সমাজের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কি করে আলেম সমাজ ভুমিকা রাখতে পারে সে ব্যাপারে কারো কোন চিন্তা ভাবনা আছে বলে মনে হয়না। আলেম সমাজ তখনই ভুমিকা রাখতে পারবে যখন তিনি সমাজপতিদের সমর্থন লাভ করবেন। সমাজ সংস্কারের মাধ্যমেই শুধু সন্ত্রাস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ভেজাল সন্ত্রাসঃ
✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
বাজারে আজকাল ভেজাল ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়না। অতি লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্যে যে পরিমাণ ভেজাল রাসায়নিক দ্রব্যাদি প্রয়োগ করছেন তা এক প্রকার জীবনঘাতী সন্ত্রাস। এসব ভেজাল মিশ্রিত খদ্যদ্রব্য খেয়ে মানুষ ধীরে ধীরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগতে ভগতে অর্থকড়ি হারিয়ে মৃত্যু বরণ করছে। গুলি দিয়ে কয়েক সেকেন্ডে হত্যার চাইতে এটা আরো জঘন্যতম বর্বর সন্ত্রাস। এ সন্ত্রাস নির্মূল করতে হলে ভোক্তাদের যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি সরকারের ভুমিকা তথা আইন প্রয়োগে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার পর্যবেক্ষণে আরো সক্রিয় ভুমিকা নিতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারকে ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে বাজারে বাজারে শক্তিশালী ভেজাল প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে প্রতিটি বাজারে ভেজাল পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ধর্মীয় সন্ত্রাসঃ
✍✍✍✍✍✍✍✍
বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মতবিরোধের কারনে বিভিন্ন সময় কিছু কিছু ধর্মীয় সন্ত্রাসের ঘটনা ইতিহাসের পাতায় স্থান পেলে ও আমরা কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় সেদিকে যাবনা। ইসলামের ইতিহাসের প্রারম্ভিক যুগ থেকে আমরা শুরু করতে চাই। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর শাহাদাতের মধ্য দিয়ে হত্যাকাণ্ড বা সন্ত্রাস প্রতিস্টা লাভ করে। ৬৪৪ সালে হযরত ওমর (রাঃ) একজন পার্সিয়ানের হাতে শহীদ হন। ফিরোজ নাহাও্য়ান্দি ওরফে আবু লুলু নামক একজন পার্সিয়ান দাস তার মুনিব মুগিরার বিরুদ্ধে খলিফার দরবারে অতিরিক্ত কর ধার্য করার অভিযোগ করে। মুগিরার উত্তর সন্তোষজনক হওয়ায় খলিফা রায় দেন যে পিরুজের উপর ধার্য করা কর ন্যায্য।এতে ফিরোজ ক্ষুদ্ধ হয়ে খলিফাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। ফজরের নামাজের ইমামতি করার সময় ফিরোজ ধারালো অস্ত্র দিয়ে খলিফাকে কয়েকবার আঘাত করে এবং সে আঘাতের কারনে তিনদিন পর খলিফা শাহাদাত প্রাপ্ত হন। হযরত ওসমান (রাঃ) এর শাহাদাত এ সন্ত্রাসকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। হযরত আলী (রাঃ) ও ইমাম হাসান (রাঃ) এর শাহাদাতের মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধ হতে থাকে। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইনের (রাঃ) শাহাদাত সন্ত্রাসকে রাজনৈতিক সমর্থনের মাধ্যমে প্রতিস্টিত করে। উভয় বাহিনী ছিল মুসলিম কিন্তু আদর্শের পার্থক্য রাজতখতের প্রচণ্ড শক্তির কাছে সেদিন সত্যের মূর্তপ্রতিক নবী দৌহিত্র প্রাণ বিসর্জন দিয়ে সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করেছিলেন। খারেজি,রাফেজি ও শিয়ারা নিজ নিজ মনগড়া মতবাদ প্রচারের মাধ্যমে মুসলিম সমাজকে বিভ্রান্ত করে ধর্মীয় সন্ত্রাস স্থায়ীভাবে প্রতিস্টিত করে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে ওহাবিজম নামে নতুন এক ধর্মীয় সন্ত্রাসের আবির্ভাব ঘটে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে বিরুদ্ধাচরণকারীদের ব্যাপকভাবে হত্যা করে এবং এ হত্যাযজ্ঞকে তারা পুন্যের কাজ মনে করতে থাকে। তাদের অনুসারীদের হত্যাকাণ্ডে উৎসাহী করে তোলে। বিংশ শতাব্দীতে পাকিস্তানে জন্ম নেয় আর এক ধর্মীয় সন্ত্রাস। মাওদুদির মনগড়া মতবাদকে প্রতিস্টিত করতে তারা আশ্রয় নেয় গুপ্তহত্যা সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম। জন্মভূমি পাকিস্তানে তেমন সাফল্য লাভ করতে না পারলে ও বাংলাদেশে কতিপয় রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে তারা শক্ত ঘাঁটি গড়তে সমর্থ হয়। ধর্মের নামে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে তাদের সমালোচকদের কোণঠাসা করে রাখে। সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে সমর্থ হয় তেমনি সুললিত কণ্ঠের বক্তাদের দ্বারা ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে সাধারণ মুসলিম জনগনের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। মিডিয়ায় তাদের সরব পদচারনা এবং গোয়েবলস থিওরী প্রয়োগের মাধ্যমে তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুব সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। গত কয়েক বছর ধরে আহলে হাদিস নামে নতুন এক ধর্মীয় সন্ত্রাসের উদ্ভব হয়েছে। ইসলামের সঠিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত এসব ধর্মান্ধরা নিজেদের মতাদর্শের সমালোচকদের হত্যায় সংঘবদ্ধ আক্রমণ পরিচালনার মাধ্যমে বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করে চলেছে। সারা বিশ্বে আজ শান্তির ধর্ম ইসলামকে কলুষিত করছে। পেট্রো-ডলারের একাংশ তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আর্থিকভাবে শক্তিশালী ভিত গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে তারা ইসলাম কায়েমের নামে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। আজ ইসলামের সঠিক আদর্শ ও মূল্যবোধ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন। আলেম সমাজ এ ধর্মীয় সন্ত্রাসকে রুখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। মিডিয়ার সহযোগিতা না পেলে আলেম সমাজের পক্ষে জোর প্রচারনা চালানো অসম্ভব। আলেম নামধারী যে সকল ব্যক্তি মিডিয়াতে তাদের মতবাদ প্রচারে ব্যস্ত, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের অনুস্টান প্রচার বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে সকল মতাবলম্বীদের নিয়ে সরকারী উদ্যোগে বিতর্ক আলোচনার মাধ্যমে ইসলামের সঠিক রূপরেখা চিহ্নিত করে ধর্ম ব্যবসায়ীদের উৎখাত করতে হবে। তাহলেই ফিরে আসবে বিশ্বময় শান্তি আর প্রতিস্টিত হবে শান্তির ধর্ম ইসলাম।
এত কষ্ট করে লিখাটা পড়ার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ ॥
Md Jalaluddin Khan
©somewhere in net ltd.