![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হিজরি দ্বিতীয় সনের রমজান মাস। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ। ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সদ্য প্রতিস্টিত ইসলামী রাষ্ট্রের সামনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ। প্রিয়নবীর প্রেমের টানে মাতৃভূমি ছেড়ে আসা মুহাজিরদের পুনর্বাসন সহ শিশু রাষ্ট্রের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা সুনিশ্চিতকরণ অতি জরুরী হয়ে পড়েছিল। আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে একটি বানিজ্যবহর সিরিয়া থেকে মক্কা অভিমুখে ফিরছিল। গোপন সুত্রে জানা গেল এতে বিপুল অস্ত্র- শস্ত্র রয়েছে যা দিয়ে মদিনার ইসলামী রাষ্ট্র ধুলিস্মাৎ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে মক্কার অবিশ্বাসী অধিপতিরা। অনুগত ২৩৬ জন আনসার আর ৭৭ জন মুহাজিরদের সমন্বয়ে গঠিত হলো ৩১৩ প্রথম ইসলামী সামরিক ব্রিগেড। রসদ বলতে যা ছিলো ৩ টি ঘোড়া, ৭০ টি উট, ৬ টি যুদ্ধবর্ম এবং ৮ টি তরবারি।
তালহা ইবনে ওবাইদুল্লাহ ও সাঈদ ইবনে জায়েদ নামক দু’জনের অনুসন্ধানী দল শত্রুপক্ষের গতিবিধির সংবাদ সংগ্রহে অগ্রবর্তী অবস্থান থেকে ফিরে শাহেনশাহে মদিনার দরবারে রিপোর্ট করলেন, আবু সুফিয়ান ৩০ টি বাহনে বিপুল রসদ নিয়ে বদর প্রান্তরের কাছাকাছি এসে গেছে। ৮ই রমজান, আবু লুবাবা আনসারীকে মদিনার দায়িত্ব অর্পণ করে সুদক্ষ সমরনায়কের বেশে ৩১৩ ব্রিগেড সাথে নিয়ে এগিয়ে চললেন বদর প্রান্তরের দিকে। উদ্দেশ্য,আবু সুফিয়ানের বানিজ্যবহর হস্তগত করা। কারন এতে দু’টি লাভ, প্রথমতঃ আমদানিকৃত অস্ত্রভাণ্ডার মদিনা আক্রমণে ব্যবহার প্রতিরোধ করা, দ্বিতীয়তঃ বিপুল রসদ হস্তগত হলে মদিনার নতুন রাষ্ট্রের আর্থিক ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। আবু সুফিয়ান আগেই বদরে পৌঁছে বিজ্ঞ পদার্থবিদের মতো উস্ট্রের ত্যাজিতমল পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলো এ পথে ইয়াসরিবের উস্ট্রারোহীর আগমন ঘটেছে। বিপদ সমাসন্ন জেনে মক্কায় কোরাইশ অধিপতির কাছে সাহায্য প্রার্থনায় দুত পাঠালো আর গতিপথ পরিবর্তন করে মুসলিম বাহিনী বদরে আসার আগেই ভিন্ন পথে মক্কা যাত্রা করলো আবু সুফিয়ান।
আবু জেহেল, ওতবা, উমাইয়ার নেতৃত্বে ১০০০ মুশরিক বিগেড ১০০ অশ্বারোহী, ১৭০ উস্ট্রারোহী সমেত নর্তকী, বাদ্য-বাজনা ও বিপুল সমরাস্ত্র নিয়ে বদর প্রান্তরে। আবু সুফিয়ানের নিরাপদে মক্কা প্রত্যাবর্তনের সংবাদ পাবার পর ও আবু জেহেল মুসলিম নিধনে বদ্ধপরিকর।
অনুগামীদের নিয়ে পরামর্শ সভা বসল মদিনার রাজ দরবারে। কেউ বললো আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নই, কেউ বললো আমরা আবু সুফিয়ানকে আক্রমণ করে তার সাথে থাকা সম্পদ নিয়ে আসব।
মিকদাদ ইবনে আমর (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর নবী! আমরা আপনাকে বনী ইসরাইলের মতো বলবনা, (তারা তাদের নবীকে বলেছিল, ফাজহাব আন্তা ওয়া রাব্বুকা ফাকা-তিলা ইন্না হা-হুনা কা-ইদুন, অর্থাৎ তুমি এবং তোমার প্রভু যাও যুদ্ধ কর, আমরা এখানে বসিয়া থাকিব।) বরং আমরা আপনার সাথী হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হব। আপনাকে রাসুল হিসেবে প্রেরণকারীর শপথ! আপনি যদি আমাদের বুরগে এমাদ পর্যন্ত নিয়ে যান আমরা সহাস্য বদনে যুদ্ধ করতে করতে আপনার অনুগামী হব। সেনাপতি মুচকি হেসে দোয়া করলেন বিশ্বস্ত সৈনিকের জন্য। সাআদ ইবনে মুআয (রাঃ) বিশ্বস্ততার দৃঢ়তায় বক্তব্য রাখলেন। হযরত ওমরের (রাঃ) জ্বালাময়ী ভাষণ মুসলিম বাহিনীকে উজ্জীবিত করে তুললো। যাত্রা শুরু হলো বদর অভিমুখে।
বদরে পৌঁছে মুসলিম বাহিনী দেখলো বিশাল শত্রুবাহিনী সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়েছে। পানি তাদের দখলে। বালুকাময় মরু প্রান্তরের দিকে ৩১৩ ব্রিগেড অবস্থান নিলো। খেজুরের ঢাল পালা দিয়ে আরীশা নামে সেনা কমান্ড স্থাপিত হলো। বিশ্বস্ত সহচর আবু বকর (রাঃ) আরীশার দায়িত্বে সেনাপতির পাশে রইলেন। সেনাপতি মহান প্রভুর সাহায্য প্রার্থনায় মস্তকাবনত হয়ে কাঁদতে লাগলেন। তিনি বললেন, হে আমার আল্লাহ! তুমি যদি এ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাস্ত করো, তাহলে ভুপৃষ্টে তোমার ইবাদতকারী আর কেউ থাকবেনা। দয়াময় প্রভু বদরের প্রান্তরে মুসলমানদের বিজয়গাঁথা নিয়ে জিবরীলকে পাঠালেন। সুসংবাদ পেয়ে সেনাপতি চললেন মাঠ পরিদর্শনে। সুদক্ষ সেনাপতি ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে বললেন,এখানে আবু জেহেলের লাশ পড়ে থাকবে, এখানে উতবা, এখানে উমাইয়ার লাশ তোমরা দেখতে পাবে। সাথীরা সাথে সাথে চিহ্ন দিয়ে যাচ্ছিল আর নবীজির ভবিষ্যৎবাণী শ্রবনে উৎফুল্ল হচ্ছিল।
সেনাপতির নির্দেশে সকলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন। সাওয়াদ ইবনে আযীয়া (রাঃ) আদেশ অমান্যের ভঙ্গিতে সারি ভেঙ্গে সামনে এগিয়ে দাঁড়ালেন। সহসা সেনাপতির হাতের ছড়ি সাওয়াদের বুকে চপাট করে আঘাত হানলো। বললেন, হে সাওয়াদ! কাতার সোজা করে দাঁড়াও। সদাহাস্য সাওয়াদ মলিন বদনে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (দঃ)! আপনি আমায় কষ্ট দিলেন যে! আদালত আপনার হাতে, আমি ইনসাফ চাই, আমি কিসাস চাই। প্রিয়নবী নিজের বক্ষ উম্মুক্ত করে বললেন, হে সাওয়াদ, তুমি কিসাস গ্রহণ কর। সাথে সাথে সাওয়াদ আনন্দে লাফিয়ে নবীজির বুকে একটি চুম্বন দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। নবীজি বললেন, তুমি এমন করছো কেন? সাওয়াদ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ যে আমার অন্তিম মুহূর্ত। আমি যে শহীদ হতে এসেছি। আমার অন্তিম ইচ্ছা ছিল বিদায় বেলায় আপনার পবিত্র শরীরকে স্পর্শ করি। আমায় ক্ষমা করুন দয়াময়! সকলেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন প্রেমিক ও প্রেমাস্পদের মিলনমুহূর্তের অপরূপ দৃশ্যের পানে। নবীজি দোয়া করলেন সাওয়াদের জন্য, আর সাওয়াদ জীবনের অমুল্য রতন গায়ে মেখে সারিতে দাঁড়িয়ে গেলেন বাধ্য সৈনিকের মতো।
উতবা, অলীদ সহ তিনজন এগিয়ে এলেন সম্মুখ সমরে। আউফ, মুআয ও আব্দুল্লাহ নামে তিন আনসার সৈনিক এগিয়ে গেলেন তাদের মোকাবিলায়। আনসার জেনে তারা বললো, আমরা আমাদের স্বগোত্রীয়দের সাথে লড়তে চাই। সেনাপতি নির্দেশ দিলেন ওবায়েদ, হামযা ও আলীকে অগ্রসর হতে। কাল বিলম্ব না করে আশি বছরের ওবায়েদ ইবনে হারেছ এগিয়ে গেলেন। আলী ও হামযা দুজনকে ধরাশায়ী করে ফেলেছেন আর ওবায়েদ লড়ে যাচ্ছিলেন প্রাণপণে। পরপর দু’টি আঘাতে অঝোরে রক্ত ঝরতে ঝরতে ওবায়েদ যখন ক্লান্ত, হামযা ও আলী তাঁকে প্রিয়নবীর কাছে নিয়ে এলেন। তিনি নবীজির কাছে জানতে চাইলেন, আমি কি শহীদ? উত্তরে নবীজি বললেন, হাঁ তুমি শহীদ। ওবায়েদ ইবনে হারেছের শাহাদাত বিলম্বিত হচ্ছিল বলে তিনি শাহাদাতের সুরা পানে উদ্গ্রীব ছিলেন, তাই এ কথা জানতে চাইলেন।
আফরার দুই শিশুপুত্র মুআওয়ায ও মাআয তরবারি হাতে যুদ্ধের ময়দানে পায়চারী করছিল শত্রু নিধনের আশায়। তারা দু’ভাই যুদ্ধযাত্রায় আগ্রহ প্রকাশ করলে নবীজি নিষেধ করলেন। দু’জনেই বারবার মিনতি জানাতে লাগলো। বড় ভাইকে অনুমতি দেয়া হলে ছোট ভাই বললো, আমি শক্তি সামর্থ্যে বড় ভাইয়ের চাইতে কম কিসের! হযরত আমাকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। দু’জনে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলো। ছোট ভাই বড় ভাইয়ের কানে কানে ফিসফিস করে বললো, ভাই! যেদিন শুনেছি আবু জেহেল আমার প্রিয়নবীকে গালি দিয়েছে, সেদিন থেকে শপথ নিয়েছি সুযোগ পেলে আমি নিজ হস্তে দুশমনে রাসুলকে (দঃ) নিধন করবো। ভাই! জানতে পেরেছি এ যুদ্ধে আবু জেহেল এসেছে,আমাকে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করোনা। বড় ভাইকে পরাস্ত করে দুজনই যুদ্ধযাত্রার অনুমতি পায়। বশে পেয়ে মাআযের তরবারি গর্জে উঠলো। ঘোড়ায় সওয়ার আবু জেহেল মুহূর্তে দু’পা কর্তিত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আবু জেহেল তনয় ইকরামা দৌড়ে এসে মাআযের বাহুতে সজোরে আঘাত করলো। মাআযের কব্জি কেটে চামড়ার সাথে ঝুলতে লাগলো। যুদ্ধ চালাতে কষ্ট হচ্ছে দেখে মাআয ঝুলন্ত হাতটি নিজেই দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন। মুআওয়ায এসে তরবারির দ্বিতীয় আঘাতে আবু জেহেলের দেহ নিঃসার করে দিলো। কর্তিত হাত সহ দু’ভাই আরীশে অবস্থানরত প্রিয়নবীর কাছে গেলেন এবং আবু জেহেলকে হত্যার সুসংবাদ দিলেন। নবীজি পবিত্র মুখের লালা কর্তিত হস্তে লাগিয়ে দিলে মাআয নিরাময় লাভ করলেন, সুবহানাল্লাহ!
হযরত আলী (রাঃ) বলেন, যুদ্ধ করতে করতে আমি মাঝে মাঝে আরীশে এসে নুরনবীর চেহারা মোবারক দেখে যেতাম। যতবার এসেছি, আমি দেখেছি তিনি সিজদায় বলছেন, “ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুমু বিরাহমাতিকা আস্তাগিসু” হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী তোমার রহমতের ফরিয়াদ করছি।
আরীশে প্রার্থনারত নবীজি হঠাৎ তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেন। জাগ্রত হয়ে হাসিমুখে আবু বকরকে (রাঃ) বললেন, হে আবু বকর! আল্লাহর রহমত এসেছে। অশ্বারোহী জিব্রাইল তার অশ্বের লাগাম হাতে উপস্থিত হয়েছেন। হযরত আরীশ থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে সকলকে উৎসাহ দিতে থাকলেন। উভয় দল মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত। হযরত এক মুষ্টি বালি নিয়ে শত্রুপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করলেন। কাফিরদের নাকে মুখে বালি প্রবেশ করতে থাকলো আর কেউ কেউ মুসলমানদের হাতে বন্দী হতে শুরু করলো। আল্লাহ পাক কোরআনে পাকে এরশাদ করেন, “ওয়ামা রামাইতা ইজ রামাইতা ওয়া লাকিন্নাল্লাহা রামা” এবং তুমি যখন নিক্ষেপ করেছিলে, তখন তুমি নিক্ষেপ কর নাই, আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন। উকাশার হাতের তরবারি ভেঙ্গে গেলে তিনি প্রিয়নবীর কাছে এলেন এবং একটি তরবারি চাইলেন। হযরত একটি কাঠের লাকড়ী হাতে দিয়ে বললেন, এটি দিয়ে যুদ্ধ করো। কাষ্টখণ্ডটি উকাশার হাতে আসতেই সেটি শক্ত লোহার তরবারিতে পরিণত হলো আর উকাশা সেটি নিয়েই যুদ্ধে গমন করলো। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, একজন আনসার যোদ্ধা এক কাফিরের পিছু ধাওয়া করতে করতে যখন সন্নিকটে এসে তরবারি উঠালেন আঘাত করতে, তিনি বেত্রাঘাতের আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং “আকদিম হায়জুম” বলে কার যেন নির্দেশ শুনতে পেলেন। তিনি দেখলেন আঘাতের আগেই কাফিরের মস্তক মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে। হায়জুম হচ্ছে জিব্রাইল ের ঘোড়ার নাম। জিবরীল আমীন তার ঘোড়াকে ঐ সাহাবীর ঘোড়ার আগে অগ্রসর হবার নির্দেশ দিচ্ছিলেন। এক থেকে পাঁচ হাজার অশ্বারোহী ফেরেস্তা সেদিন বদর প্রান্তরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সুরা আনফালের ৯ নং আয়াতে এক হাজার, সুরা আলে ইমরানের ১২৪ নং আয়াতে তিন হাজার এবং সুরা আলে ইমরানের ১২৫ নং আয়াতে পাঁচ হাজার ফেরেস্তার আগমনের কথা বলা হয়েছে।
বদর যুদ্ধের পরিসমাপ্তিতে দেখা গেলো মুসলমানদের ১৪ জন শাহাদাত বরণ করেছেন। কাফিরদের ৭০ জন নিহত আর ৭০ জন বন্দী হয়েছে। বাকীরা পলায়ন করে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেছে। যুদ্ধ বন্দীদের মধ্যে হজরতের চাচা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, চাচাতো ভাই আকিল ইবনে আবু তালিব ও ছিলেন। যুদ্ধ বন্দীদের অনেককেই মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। আব্বাসকে যখন বন্দী অবস্থায় সামরিক আদালতে আনা হলো এবং মুক্তিপণ প্রদানের আদেশ দেয়া হলো, তিনি বললেন, আমার সাথে বিশ আউকিয়া স্বর্ণমুদ্রা ছিল যা মুসলিম বাহিনী গ্রহণ করেছে, তা মুক্তিপণ হিসেবে গণ্য করা হোক, কারন আমার কাছে আর কোন অর্থ নেই। আপনি কি চান আপনার চাচা মানুষের কাছে হাত পাতুক! রাসুলে পাক (দঃ) বললেন, আপনি যখন মক্কা থেকে বেরিয়ে আসেন তখন আপনার স্ত্রী উম্মুল ফযল এর নিকট যে স্বর্ণভাণ্ডার গচ্ছিত রেখে এসেছেন তাহলে সেগুলো কোথায়? আব্বাস বললেন, আপনি সেগুলোর খবর কি করে জানলেন? উত্তরে নবীজি বললেন, আমার প্রতিপালক আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। আব্বাস বলে উঠলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি সত্য নবী। এ খবর আমি ও আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতোনা।
অতি কৃশকায় দুর্বল দেহের আবুল ইয়াসার বিশাল দেহ ও অদম্য শক্তির অধিকারী আব্বাসকে সেদিন বন্দী করেছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, আমি যখন আব্বাসকে ধরতে পিছু ধাওয়া করতে করতে এগিয়ে যাই, কাছে গিয়ে দেখি তিনি হাত পা বাঁধা অবস্থায় রয়েছেন এবং আমি একজনকে আমার সাহায্যকারী হিসেবে দেখতে পাই। আব্বাসকে জিজ্ঞেস করা হলে কৃশকায় আবুল ইয়াসার তোমাকে কিভাবে বন্দী করলো? আব্বাস বলেন, বন্দী করার সময় আমি তো তাঁকে খন্দমাহ পাহাড়ের সমান দেখেছি।
যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে রাসুল করীম (দঃ) সাহাবাদের মতামত জানতে চাইলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দিতে মত দিলেন। তিনি বললেন, হয়তঃ আল্লাহ পাক তাদের তাওবার সুযোগ দান করবেন এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করবেন। মুক্তিপণ মুসলমানদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে পারে। হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, এদের হত্যা করা উচিৎ। কারন এরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন করেছে। আর আল্লাহ তো আপনাকে সম্পদের মুখাপেক্ষী করেননি। নবীজি আবু বকরের মত গ্রহণ করে বললেন, হে আবু বকর! তোমার অবস্থা নবী ইব্রাহিমের (আঃ) মতো। তিনি বলেছিলেন, “ফামান তাবিআনী ফাইন্নাহু মিন্নী,ওয়ামান আছানী ফাইন্নাকা গাফুরুর রাহীম” যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হবে (হে আল্লাহ) তুমি তো (তার জন্য) দয়াময় ও ক্ষমাশীল। হযরত ওমরকে (রাঃ) উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার অবস্থা নুহ (আঃ) নবীর মতো। তিনি বলেছিলেন, “লা তাজার আলাল আরদি মিনাল কাফিরীনা দাইয়ারা” হে আল্লাহ! কোন কাফিরকে এ ভূখণ্ডে অবশিষ্ট রেখোনা।
রমজানের শেষ তারিখ বদরের যুদ্ধের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়। যায়েদ ইবনে হারেসাকে মুসলমানদের বিজয় সংবাদ জানাতে মদিনায় পাঠালেন। তিনি মদিনায় পৌঁছে দেখতে পেলেন রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা রোকাইয়াকে (রাঃ) দাফন করে লোকজন ঘরে ফিরছেন।
সাহাবীদের মধ্যে বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সাহাবীদের মর্যাদা সর্বোচ্চ। ৩০৫ জন সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিলে ও আরো ৮ জন বিভিন্ন কারনে এ যুদ্ধের অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বদর যুদ্ধে আমরা দেখতে পাই, এক সফল সমরনায়ককে যার সমর কৌশল নিয়ে আজো বিশ্বের বিভিন্ন সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্টানে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। আমরা দেখলাম, সত্যের উপর প্রতিষ্টিত একদল ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীর দুর্দান্ত মনোবল ও সেনানায়কের প্রতি অবিচল আস্থা। সামনে বিশাল সশস্ত্র বাহিনী দেখে ও যারা বিচলিত নন। আমরা দেখেছি মানবিক পেশীশক্তি ও দম্ভ বিধাতার অনুগত বাহিনীর কাছে পরাভূত। আমরা দেখেছি নবীপ্রেমের সমুজ্জল দৃষ্টান্ত। তাই আজ বদর দিবসে আমরা বলিষ্ট কণ্ঠে শপথ নিতে চাই, আমরা অসত্যের কাছে মাথা নত করবোনা। আমরা এগিয়ে যাবো নবীপ্রেমের উদাহরণ সৃষ্টি করতে বদরের অনুসারী হয়ে।
১৫/০৬/২০১৬ ইংরেজি
©somewhere in net ltd.