নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাজীর গরু গোয়ালে নেই কিতাবে আছে!

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। বিচিত্র এই দেশ, সেলুকাস! চোরের মা'র বড় গলা!!

জুলকারনাইনসাবাহ

অধ্যাপক এবং এডভোকেট। আইন, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক বিষয়ে পড়তে, জানতে ও লিখতে এবং অন্যের সাথে শেয়ার করতে ভালোলাগে।

জুলকারনাইনসাবাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষা এখন শুধু ব্যবসায় এবং এক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতার সীমা কতটুকু!!

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৬



স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির হাজার হাজার টাকার সেসন ফি এবং ভর্তি ফি কী জিনিস এবং কোন আইনে তা আদায় করা বৈধ, কেউ বলবেন কি??



কোনো নতুন স্কুলে আপনার সন্তানকে ভর্তি করতে গেলেই কিংবা একই স্কুলে একক্লাশ পাশ করে নতুন ক্লাশে উঠলেও এতো হাজার টাকা সেসন চার্জ, এতো হাজার টাকা ভর্তি ফি এবং জানুয়ারি মাসের বেতনসহ মোট এতো হাজার টাকা দিতেই হবে আপনাকে!! একেক স্কুলে এর পরিমান একেকরকম, তবে মিনিমাম ৬/৭ থেকে ১০/২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। অনেক স্কুলে আবার ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করেও প্রচুর টাকার ডোনেশনের নামে ঘুষ দিয়েই তবে ভর্তি করতে হয়। আসাদগেটের প্রিপেটরী স্কুলসহ নামী-দামী অনেক স্কুলে এই ডাকাতি চলছেই। ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করাই যেখানে কঠিন, সেখানে প্রিপারেটরী স্কুলে আমার ৩য় শ্রেণীর সন্তানটির জন্য ডোনেশন নামের ঘূষের পরিমাণ মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে আমি তাকে ভর্তি করতে পারিনি!



কিছুদিন আগে সরকার মিরপুরের মনিপুরী স্কুলসহ অনেক স্কুলকেই এধরণের বাড়তি গৃহীত টাকা ফেরত দিতে বললেও অনেকেই ফেরত দিয়েছে, কেউ কেউ ফেরত না দেয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের শাস্তি দেয়ার কথাও শুনেছি। কতটুকু সত্য জানিনে। ২০১২ সালে কাটাবনের ওয়েস্টার্ন কলেজে ফরম ফিলাপ বাবদ দুইহাজার নির্ধারিত থাকলেও কোচিঙয়ের নামে মোট ৮হজার টাকা করে শত শত ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে। আমিসহ অনেকেই এর প্রতিবাদ করলে এমনকি আমি শিক্ষাবোর্ড, মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন এবং সঠিক তদন্ত রিপোর্ট পেশের ব্যবস্থা করলেও এমনকি শিক্ষাবোর্ড সেই কলেজের পাঠদান বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা আমাকে জানালেও শেষে কিছুই হয়নি কলেজটির। শুনেছি একজন সরকারী এমপি'র দাপটে বাড়তি টাকা আর কেউই ফেরত পায়নি।



আমরাও স্কুল-কলেজে পড়েছি, তখনও সেসন চার্জ হিসেবে আমরা নগণ্য পরিমাণ টাকা দিতাম। কিন্তু তার বিস্তারিত বিবরণ প্রদত্ত রসিদেও লেখা থাকতো যেমনঃ ভর্তি, খেলাধুলা, পাঠাগার, মিলাদ, ল্যাবরেটরি, স্কুল-কলেজ উন্নয়ন ফি ইত্যাদির নামে গৃহীত টাকার খাতগুলো বাস্তবে ছিলোও এবং তা যৌক্তিকও মনে হতো। কিন্তু এখন মাঠ-খেলাধুলা, পাঠগারের বইপড়ার সুবিধাদি তো দূরে থাক, কোনো কারণ ও যুক্তি ছাড়াই স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সাধ্যাতিরিক্ত টাকা আদায় করে ছাড়ছে, তাও যে যেমন পারছে তেমনই খেয়াল খুশীমত ডাকাতি করছে। কোন কোন স্কুল-কলেজের রসিদে সেসন চার্জের খাতের উল্লেখ থাকলেও তা আমাদের ছাত্রছাত্রীরা কখনোই ভোগ করতে পারেনা। ফলে এ টাকা আদায়ের কোনোই অধিকার নেই এসব প্রতিষ্ঠানের। অথচ আমরা যারা সন্তানের লেখাপড়ার মর্যাদা বুঝি, তারা নিরুপায় হয়েই সন্তানদের স্বার্থেই গলাকাটার জন্য নিজেকে অবাধে সপে দিচ্ছি এই ডাকাতরূপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে!!



এব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশ নেই বলে তা ইচ্ছেমত আদায় করাও সম্পূর্ণ অবৈধই বলা যায়। কিন্তু সরকার কী করছে এসব ডাকাতদের হাত থেকে নিরীহ অভিভাবকদের বাচাতে!! সরকার শুধু ক্ষমতার পেছনেই ছুটছে কিন্তু আমাদের কান্নার আওয়াজ তার কানে পৌছেই না! বিরোধীদলের অবস্থাও একই। তাহলে আমরা যাব কোথায়?



ঢাকার নুরজাহান রোডের গার্লস স্কুলসহ আরো একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাশের টেস্টিমনিয়াল এবং সনদপত্র নিতেও ২০০/৩০০ করে টাকা দিতে হয়েছে আমার সন্তানকে। আবার অন্য স্কুল ও কলেজে এ বাবদ কোন টাকাই নেয়া হয়নি। মানে কী দাঁড়ালো, কোন আইনই নেই সনদ ও টেস্টিমনিয়ালের জন্য টাকা নেয়ার জন্য। তারা মগের মুলুকের মত সব ক্ষেত্রে এমন ডাকাতি করলেও সরকারের কোন ভূমিকাই নেই এসব প্রতিরোধে। কিন্তু কেনো?



ফল কী দাঁড়াচ্ছে, অনেক ছাত্রছাত্রী হাজার হাজার টাকার সেসন চার্জ, ভর্তি ফি দিতে না পারায় অকালে ঝরে পড়ছে! আমার অভিজ্ঞতামতে, আমার নিজের কয়েকজন ভাইপো/ভাইঝিসহ অনেক পরিচিত গরীব ছাত্রছাত্রী ক্লাশ নাইনেই উঠতে পারেনি এতো টাকার অভাবে। আমি তাদের অনেকেরই পড়াশোনার খরচ চালানোর আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ঝরেপড়ারোধ করতে পারিনি, যা আমার জন্য বিরাট এক ট্রাজেডি আরকি?



আর আমার বর্তমান আয় মাসিক ২০হাজার টাকা হলেও ৪টি সন্তানকে এবার স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটিতে ভরতি করাতে খরচ হয়েছে ৫০হাজারের ওপর। বাকী টাকা কে দিলো বা কোথায় পেলাম-- হ্যাঁ অনেক কষ্টেই হাওলাদ নিতে বাধ্য হয়েছি। তাহলে আমাদের খাওয়া-পরার অবস্থাটা ভাবুন একবার। সারা মাস কিভাবে চলি! আমি ঢাকায় থেকেও আমার ৪ সন্তানকে একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে পারছিনে শুধু আর্থিক কারণেই। যেখানে বেতন কম কম খরচ সেখানেই খুঁজে খুঁজে তাদের ভর্তি করেছি পড়ার মান আর খুজিনি? এটাই কি আমাদের ভাগ্য হবার কথা ছিলো পাকিস্তানীদের হাত থেকে মুক্তি পাবার পরও!! ৩য় শ্রেণীর সন্তানটিকে অন্তত একটা ইংলিশ মিডিয়াম না হোক ইংলিশ ভার্সনে পড়াতে চেয়েও পারিনি। অথচ সরকার ইংলিশ মিডিয়াম/ভার্সনকে ছেড়ে দিয়েছে একতরফাভাবে বেসরকারীখাতে, যারা স্রেফ ডাকাত। কেনো সরকারীভাবে ইংলিশ মিডিয়াম বা ভার্সন কি করা যায়না? এখানেও কি তবে বাণিজ্য চলে নাকি???



তাহলে, যারা দিন আনে দিন খায় তারা কী করবে সরকারের শুধু বিনামূল্যের বোর্ডের বই পেয়ে, যদি হাজার হাজার টাকার সেসন চার্জ ও ভর্তি ফি দিতেই না পারে!! তাই দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক বা ৫মশ্রেণী পর্যন্তই আজকাল গরিবদুঃখীদের সন্তানদের দৌড়। ক্লাশ সিক্সে অধিকাংশই পড়তে পারছেনা---যা সার্বজনীন শিক্ষার বেহাল দশারই প্রমাণ দিচ্ছে।



এখন মেডিকেলে বা ভার্সিটিতে আমাদের মত মধ্যবিত্ত ও গরীবদের সন্তান পড়ানোই আকাশ কুসুম কল্পনামাত্র! সরকারী মেডিকেলে বা ভার্সিটিতে অধ্যয়ন ফি চালানো গেলেও বেসরকারীতে অসম্ভব সেটা? সেখানে ২/৩ লাখ থেকে ২০/২৫ লাখ টকা পর্যন্ত লাগে, ভাবতে পারেন? আমার সন্তানকে আমি ছোটকাল থেকেই ডাক্তারী পড়াব বললেও ভর্তি পরীক্ষায় সরকারী কোটায় চান্স না পাওয়ায় সে আশা তার পূরণ হলনা বলে সে ভেঙ্গে পড়েছে যে, আর পড়বেই না। শেষে তাকে বিকল্প লাইনেই পড়তে রাজী করালাম যার সামর্থও আমার নেই।



সেখানে টাকার দাবীর পরিমাণ আরো বেশী। সেই সন্তান অতীশ দীপঙ্কর সাইন্স এণ্ড টেকনোলজি ভার্সিটিতে টেক্টাইল ইঞ্জিনিয়াং এ ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তারা ভর্তি ফিই নিয়েছে ১২,৫০০/= এবং ১২ সেমিস্টারের জন্য প্রতি ৪মাস পর পর কিস্তি দিতে হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে সর্বমোট প্রায় সোয়া ৫ লাখ টাকা!



আমি মনে করি, আমার মতো সাধারন মানুষদের এমন জীবন-মরন সমস্যার সমাধান সরকার যদি করতে না পারে, তবে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার দাবী করার যৌক্তিক কারণ দেখিনে আমি। আর শুধু অর্থাভাবেই ব্যাপক হারে ছাত্রছাত্রী ঝরেপড়াও রোধ করা যাবেনা আদৌ।



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩০

শাহ আলম বাদশাহ বলেছেন: অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনসচেতনতামূলক পোস্ট। দেখলাম এই পোস্ট সোনারবাংলাদেশ ও আমার বর্ণমালা ব্লগে স্টিকি হয়েছে। এখানেও এটি স্টিকি হলে জনসচেতনতা বাড়বে।

আমিও এমন ভুক্তভোগী, এ ব্যাপারে গণ আন্দোলন গরে তোলা উচিত আমাদের। লেখককে ধন্যাবাদ

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০

জুলকারনাইনসাবাহ বলেছেন: আাপনাকে অনেক ধন্যবাদ, পোস্টিকে স্টিকি করার প্রস্তাব দেয়ায়।
হ্যাঁ, এসবি ও আমার বর্ণমালায় আমার এই পোস্ট পড়েছেন বলেছেন বলে আবারও কৃতজ্ঞতা জানাই।

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪

রুম্মান৯৯ বলেছেন: পোস্টটি আমারও পছন্দ হয়েছে, এটিতে শিক্ষাক্ষেত্রে ভূক্তভোগীদের মনের কথা বলা হয়েছে। পোস্টটি স্টিকি করলে ভালো হবে।

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২

জুলকারনাইনসাবাহ বলেছেন: আাপনাকেও ধন্যবাদ। তবে এটি স্টিকি করার না করার দায়িত্ব মডারেশন প্যানেলের, তারা যদি এটিকে যোগ্য ভাবে স্টিকি করতেও পারে।

৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭

শয়ন কুমার বলেছেন: শিক্ষা এখন শুধু ব্যবসায় এবং এক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতার সীমা কতটুকু??

এক্ষেত্রে সরকারের কাজের পরিধির একটা উদাহরন দিচ্ছি :

শিক্ষকদের প্রায় দুই দশকের আন্দোলন সংগ্রামের পর লক্ষাধিক শিক্ষকের চাকরী জাতীয়করণ হল । জাতির প্রথম সোপান কিন্তু এই শিক্ষকরাই। এদের মনে খুশী আসলে আমাদের ভাল লাগে, জাতির উপকার হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যার্থতার নজিরের মাঝে এই সরকারের পঞ্চম বর্ষের এমনকি পুরো মেয়াদকালের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ যুগান্তকারী কাজ এটি । প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের দাবির চূড়ান্ত বাস্তবায়ন হলো।১৯৭২ এর পর এত বড় জাতীয়করণ আর এই দেশে হয়নি। ১৯৯১ সন থেকে শিক্ষকের প্রানের দাবি এই সরকারের আমলেই পূর্ণতা পেল। সরকারকে ধন্যবাদ।প্রধানমন্ত্রীর গতকালের ঘোষণার মধ্য দিয়ে মূলত প্রাথমিক স্তরে 'বেসরকারি' বলে আর কিছু রইলো না। নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত, আবেদনকৃত, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সব ধরনের বিদ্যালয়ের
দায়দায়িত্ব সরকার নিয়ে নিল। কেবল ব্যক্তি মালিকানাধীন গুটিকয়েক কিন্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম ও প্রি-ক্যাডেট স্কুল এর আওতায় থাকছে না। শিক্ষকদের টানা দুই দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল হিসেবে জাতীয়করণের এ মাহেন্দ্রক্ষণে দেশের লাখো শিক্ষক পরিবারে এখন বইছে আনন্দ আর উল্লাসের ফল্গুধারা।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩২

জুলকারনাইনসাবাহ বলেছেন: আপনার সাথে এ ব্যপারে সহমত হলেও আরেক গ্রুপ শিক্ষককে যে, গ্যাস বোমা মেরে আর লাঠিপেটা করে নাজেহাল করা হলো---এটা কী জিনিস!!

হলমারকের নামে ৪/৫ হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়ে নাকি এই শিক্ষকদের বছরে মাত্র ২০ কোটি টাকার দাবী পূরণ করা অসম্ভব এ সরকারের কাছে???

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.