নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
বন্ধুত্বঃ বিদ্যাসাগর এবং মাইকেল মধুসূদন দত্ত....
'বব টক পঠইল ত পঠইবন, ন পঠইল ভত পত মরণ"- ভাবছেন বানান ভুলে লিখেছি। না বানান ভুল লিখিনি- বর্ণমালা শেখা এক শিশু তার বাবাকে লেখা চিঠি! এটি একটি গল্পও হতে পারে।
১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর, বাংলা ১২২৭ সনের ১২ই আশ্বিন মঙ্গলবার, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের (তৎকালীন হুগলী) বীরসিংহ গ্রামের এক অজপাড়াগাঁর হত-দরিদ্র পরিবার বাস করত। তারা স্বামী-স্ত্রী এবং দুই সন্তান। স্ত্রী সন্তানদের রেখে গৃহকর্তা আয়-রোজগারের জন্য শহরে যায়। আর্থিক দুরাবস্থার জন্য বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য স্কুলে পাঠানো হয় নাই। তবে ঘরে তার মা কেন্দ্রিক পড়াশোনা করত। তবে মাও অক্ষর জ্ঞানের বেশি পড়াশোনা করতে পারিনি। তাই আ-কার, ই-কার, উ-কার ছাড়াই মা বাচ্চাদেরকে পড়াশোনা শিখিয়েছে। ওই শিক্ষা থেকেই ছেলে চিঠি লিখেছে তার বাবাকে। আর সেই চিঠির বাক্য ছিল- "বব টক পঠইল ত পঠইবন, ন পঠইল ভত পত মরণ।" এবং আ-কার ই-কার সহকারে এ বাক্যটি হওয়ার কথা ছিল, "বাবা টাকা পাঠাইলে তো পাঠাইবেন, না পাঠাইলে ভাতে পাতে মরণ।"
সেই ছটি পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর- যার পরিচয় উপমহাদেশের কোনো শিক্ষিতজনদের অজানা নয়!
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারী মধুসূদন দত্তের জন্ম যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে। পিতা জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত ও মা জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। মাইকেল মধুসূদন দত্তকেও পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মতো জ্ঞান আমার মতো অধমের নাই। আমরা সবাই জানি- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলো পারস্পরিক বন্ধু-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী।
* বিলেতে ব্যারিস্টারী পড়তে গিয়ে ভালোবেসে খৃষ্টধর্মাবলম্বী নারী হেনরিয়েটাকে বিয়ে করেন নিজ ধর্মত্যাগ করেন। বনে যান পুরো দস্তুর সাহেব। ততদিনে মাইকেলের কলমে সৃষ্টির জোয়ার, মেতে উঠেছেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। সংক্ষিপ্ত সময়, সংখ্যায় পাঁচ বছরে মাইকেল বাংলা নাটক ও কাব্যকে নিস্তরঙ্গ পুকুর থেকে মহাসমুদ্রে পরিণত করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে ফেলেছেন। মধুসূদনের 'তিলোত্তমাসম্ভব' কাব্য প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬০ সালের মে মাসে। অমিত্রাক্ষর ছন্দে সেই প্রথম বাংলা কাব্য লেখা। গোড়ার দিকে মাইকেলের অমিত্রাক্ষর বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পছন্দই হয়নি। কিন্তু কিছুদিন পরে বিদ্যাসাগরের মতের পরিবর্তন হয়। মাইকেল যা লেখেন সব কিছুর মধ্যে তিনি ' Great merit' দেখতে পান।
* ভারতবর্ষ পেরিয়ে ইউরোপ জুড়েও তখন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং মাইকেল মধুসূদন দত্ত সাহিত্য সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য নাম।
প্যারিসের এক দোকানে মাইকেল মধুসূদন দত্তের চোখে পড়ল বিদ্যাসাগরের বই। মাইকেল দোকানদারকে বললেন এই লেখক আমার মস্ত বন্ধু। মাইকেল মধুসূদনের জীবনে বন্ধুর থেকে আরও বেশি কিছু ছিলেন বিদ্যাসাগর। বিদেশে টাকার অভাবে মাইকেল চরম দূর্ভোগে পরিত্রাতা বিদ্যাসাগর। ব্যারিস্টারী পাশ করে কলকাতা হাইকোর্টে প্রাকটিসের জন্য আবেদন করেন মাইকেল। কিন্তু হিন্দুধর্ম ত্যাগ করায় মাইকেলকে হাইকোর্টে এনরোলমেন্টে আপত্তি কলকাতা বার কাউন্সিল এবং একাধিক বিচারপতির। তবে বিখ্যাত কারোর উপযুক্ত সুপারিশ পেলে আশা আছে। মাইকেল সহযোগিতা চাইলেন বন্ধু বিদ্যা সাগরের। বিদ্যাসাগর, রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারী তিনজনের সুপারিশ /প্রশংসাপত্র দিয়েছেন। ১৮৬৭ সালের ৩ মে কলকাতা বার কাউন্সিল এবং হাইকোর্টের জজেরা একমত হয়ে মাইকেলকে কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টারী করার অনুমতি দিলেন।
* স্ত্রী সন্তানদের রেখে এসেছিলেন ফ্রান্সে। মাইকেল ফ্রান্সে ফিরে এসেছেন। হাতে এক কানাকড়িও নাই। চরম দুর্দশা বললে কম বলা হয়। জিনিসপত্র সব বন্ধক সঙ্গে প্রচুর ধারদেনা। তখন তিনি বিদ্যাসাগরের সাহায্য চেয়ে চিঠি দিলেন পরপর দুটো। মাইকেল নিশ্চিন্ত নন দুটো চিঠি লিখেও, যদি বিদ্যাসাগর চিঠিগুলো না পেয়ে থাকেন! জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকা কত কঠিন প্রতি মুহূর্তে অনভূত হচ্ছে। স্ত্রী, কন্যা নিয়ে উপোস করার মত অবস্থা। বাধ্য হয়ে এক পাদ্রীর থেকে পঁচিশ ফ্রাঁ ধার করলেন। কয়েক দিন পর আর এক বন্ধু দিগম্বর মিত্র আটশো টাকা পাঠিয়েছেন। তবে মাইকেলের ধার দেনার যা বহর- আটশো টাকা কিছুই নয়। একদিন স্ত্রী হেনরিয়েটা কাঁদতে কাঁদতে মাইকেলকে বললেন ছেলেমেয়েরা মেলায় যেতে চায়, কিন্তু তাঁর কাছে আছে মাত্র তিন ফ্রাঁ। সংসারে অভাব অনটন মারাত্মক। মাইকেল হেনরিয়েটা কে মনখারাপ করতে নিষেধ করে বললেন আজ ডাক আসবার কথা ছিল, সুখবর নিশ্চয়ই আসবে। কেননা তিনি যাঁর কাছে টাকার জন্য আবেদন করেছেন তাঁর প্রতিভা, জ্ঞান প্রাচীন ঋষিদের মত, শক্তি ইংরেজদের সমতুল, প্রাণ বাংলার মায়েদের মত। মাইকেল ভুল কিছু বলেননি। বিদ্যাসাগরের চিঠি এল। দেড়হাজার টাকা তিনি পাঠিয়েছেন। সত্যি হল বারবার টাকা দিয়ে মাইকেলকে বাঁচিয়েছেন বিদ্যাসাগর, তিনিই তাঁর আসল পরিত্রাতা।
* আবার ব্যারিস্টার মাইকেল দেশে ফিরলে তাঁর জন্য সুকিয়া স্ট্রীটে একটা বাড়ি সাহেবি কায়দায় বিদ্যাসাগর সাজিয়ে রেখেছিলেন। মাইকেল সেখানে না উঠে স্পেনসেসের মত বিলাশবহুল হোটেলের তিনটে ঘর ভাড়া নিয়েছেন। একা মানুষ, ব্যারিস্টারি করে অর্থাগম হয় কিন্তু ব্যায় করেন অনেক বেশি। ঢালাও হাতে খরচ করেন, বন্ধুবান্ধবরা খাওয়া দাওয়া করেন। মাসে কয়েক হাজার টাকার কমে চলে না। হেনরিয়েটা ও ছেলেমেয়েদের জন্য তিন- চারশ টাকা বিদেশে পাঠাতে হয়। আগের ঋণ শোধ হয়নি আবার বিদ্যাসাগরের কাছে ধার চাইলেন মাইকেল।
* অভাব, মাইকেলের নিদারুণ অভাবের শেষ নেই। তাতে কী! চলতেন রিজার্ভ গাড়িতে। একদিন এক রিজার্ভ গাড়িতে বিদ্যাসাগরের বাড়িতে এলেন মাইকেল। ড্রাইভারকে বখশিশ দিলেন আধুলি নয়, টাকা নয় আস্ত সোনার মোহর। 'ড্রাইভারকে এত বেশি বখশিস দেওয়া আদপে অপব্যায়", বিদ্যাসাগরের কাছে দু-চার কথা মাইকেলকে শুনতে হল। কিন্তু তিনি যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত! বললেন, গত দুদিন যাবৎ এই গাড়িওয়ালা আমাকে নিয়ে ঘুরছে- ওকে বেশি আর কী দিলাম!
* ব্যারিস্টারি ছেড়ে মাইকেল কিছুদিন চাকরি করলেন। তবুও অভাব কিছুতেই দূর হয় না। এদিকে শরীর ভেঙে গিয়েছে। চাকরি ছেড়ে ১৮৭২ সালে আবার ব্যারিস্টারি শুরু করলেন। তখন স্বাস্থ একেবারে ভেঙে পড়েছে, শরীরে অনেক অসুখ। বিপুল ঋণ। বছর ঘুরতে না ঘুরতে মাইকেল মৃত্যুশয্যায়। বালবন্ধু গৌরদাস মধুকে দেখতে যান এবং দেখতে পান- ‘‘সে তখন বিছানায় তার রোগযন্ত্রণায় হাঁপাচ্ছিল। মুখ দিয়ে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছিল। আর তার স্ত্রী তখন প্রচণ্ড জ্বরে মেঝেতে পড়ে ছিল।’’
পরদিন মাইকেলকে ভর্তি করানো হয় আলিপুরের জেনারেল হাসপাতালে, গলার অসুখ তো ছিলই, যকৃতের সিরোসিস রোগ।
১৮৭৩ এর ২৬ জুন হেনরিয়েটা মারা গেলেন। মাইকেল এই সংবাদ তার পুরনো কর্মচারীর কাছ থেকে জেনে আরও ভেংগে পারলেন। ২৯ জুন রবিবার বেলা দুটোর সময় চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন মধু কবি। মৃত্যুর পর মাইকেলের শেষকৃত্য নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। কলকাতার খ্রিস্টান সমাজ তাঁকে সমাহিত করার জন্য মাত্র ছয় ফুট জায়গা ছেড়ে দিল না। কবির মরদেহে পচন ধরল। অবশেষে এগিয়ে এলেন অ্যাংলিকান চার্চের রেভারেন্ড পিটার জন জার্বো। বিশপের অনুমতি ছাড়াই, জার্বোর উদ্যোগে, ৩০ জুন বিকেলে, মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টারও পরে লোয়ার সার্কুলার রোডের কবরস্থানে মাইকেলকে সমাধিস্থ করা হয়।
* বিদ্যাসাগরকে অগাধ শ্রদ্ধা করতেন মাইকেল। ১৮৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডন থেকে তিনি বিদ্যাসাগরকে চিঠিতে লেখেন: My trust in God and after god in you. এর ছয় বছর আগে মাইকেল বিদ্যাসাগরের একটা স্ট্যাচু নির্মাণের জন্য নিজে অর্ধেক টাকা দিয়েছেন। বাকী টাকার জন্য রাজনারায়ণ বসুকে চিঠি লিখেছেন। আবার বিদ্যাসাগর স্বয়ং তাঁর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে চাঁদা দিতে রাজি হননি।
* মাইকেলের সমাধিস্থলের উপর কোনও স্মৃতিস্তম্ভ নেই, কোনও চিহ্ন নেই। কয়েকজন ভক্ত সিদ্ধান্ত নিলেন- চাঁদা তুলে সমাধিতে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে অস্থি পঞ্জর রক্ষা করতে হবে। চাঁদার জন্য বিদ্যাসাগরের কাছে গেলেন। বিদ্যাসাগরের চোখে জল চলে এল। বিনীত নিবেদন করে তাদেরকে তিনি বললেন- "প্রাণপণ চেষ্টা করে যাঁর জান রাখতে পারিনি তাঁর হাড় রাখবার জন্য আমার সায় নেই।"
তথ্যসূত্র পুস্তকঃ করুণাসাগর বিদ্যাসাগর, লেখক ইন্দ্র মিত্র।
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৪
জুল ভার্ন বলেছেন: বন্ধুত্ব এমনই হওয়া উচিৎ।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত যখন শুধুই মধুসূদন দত্ত ছিলেন তখন কেউ লোন/ সাহায্য চাইলে মুঠো ভর্তি করে টাকা দিতেন। একদিন বন্ধু গৌর টাকা গুনে দেওয়ার জন্য বললে মধুসূদন দত্ত বলেছিলেন- "রাজনারায়ণ দত্তের ছেলে মধুসূদন দত্ত কাউকে টাকা গুনে সাহায্য / লোন দেয়না এবং তা কখনও ফেরত পাবার আশা করেও দেয়না!"
অথচ এই মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঋণ জর্জরিত এবং অর্থাভাবে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরন করেছেন।
২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: মাইকেল ওয়াস্টেড প্রতিভা!
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৫
জুল ভার্ন বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: মাইকেল বাজারে গিয়েছেন সবজি কিনতে। সেখানে একজন লোক মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ছিলেন। মাইকেল কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, "কি গো মশাই এত মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছেন"? লোকটি জবাব দেয়, " বাংলা কবিতা পড়ছি"। মাইকেল বিরক্ত হয়ে বলেন, "ধুর মশাই! বাংলায় কেউ কবিতা লিখতে পারে নাকি"! এই বলে চলে যাচ্ছিলেন তিনি। পিছন থেকে শুনতে পান লোকটি বলছে, " মেঘনাথবদ কাব্য পড়ছি - মাইকেল মধুসূদন দত্তের"।
২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৪
জুল ভার্ন বলেছেন: এই গপ্পো কি স্বরচিত?
৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫০
জটিল ভাই বলেছেন:
আহা! সব বন্ধুত্বগুলো যদি অমন সুন্দর হতো!
২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:২৪
জুল ভার্ন বলেছেন: না, তা হবার নয়। তবে বিপদের সময় বন্ধুত্ব হলেই সেই বন্ধুত্ব অমর হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অমর বন্ধুত্বের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
মাইকেলের এ দুরবস্থার কথাগুলো শুনলে খুব খারাপ লাগে। অবশ্য তিনি নিজেই এর জন্য দায়ী ছিলেন।
চমৎকার পোস্ট।