নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
স্বপ্ন দেখবো বলে আমি দু’চোখ পেতেছি......
‘আমি শুনেছি সেদিন তুমি
সাগরের ঢেউয়ে চেপে
নীল জল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছো,
আমি শুনেছি সেদিন তুমি
নোনা বালি তীর ধরে
বহুদূর বহুদূর হেঁটে এসেছো।’
মৌসুমী ভৌমিকের এই গান আমার খুব প্রিয়। প্রায়শঃই শুনি, আমার বাড়ীর বারান্দায় বসে বাইরের দিকে দৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়ে। ঠিক কি আছে, গানটাতে আমি জানি না, কিন্তু শুনতে শুনতে চোখের দৃষ্টি উদাস হয়ে যায়, মনটা হু হু করে ওঠে, কেমন একটা বিষন্নতায় ছেয়ে যায় হৃদয়।
মৌসুমী ভৌমিক আমার অন্যতম প্রিয় শিল্পী। বেশ কয়েক বছর আগে ফরিদপুর এসেছিলেন। তখন হোস্টের আমন্ত্রণে তার বাড়িতে সীমিত সংখ্যক অতিথিদের সাথে সামনে বসে তাঁর গান শুনেছিলাম। তিনি যখন গেয়ে ওঠেন-
‘আমি কখনো যাই নি জলে,
কখনো ভাসিনি নীলে,
কখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাঙচিলে,
আবার যেদিন তুমি সমুদ্র স্নানে যাবে,
আমাকেও সাথে নিও,
নেবো তো আমায়, বলো নেবে তো আমায়?’
এ আর্তি বাতাসকে চিরে প্রতিধ্বনিত হয়, চোখ ছাপিয়ে যায় জলে, মাথার মধ্যে ‘জলের মতো ঘুরে ঘুরে’ কে যেন কথা কয়, ‘নেবে তো আমায়? নেবে তো?’
যতবার গানটা শুনি, এ লাইন গুলো শুনলেই কেমন যেন আনমনা হয়ে যাই- কত কথা মনে হয়, কতজনের কথা ভাবি- কিছু না দেখার কথা, কিছু তৃষিত আকাঙ্খার- সবই ঐ সমুদ্র নিয়ে।
একজন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলো তার মা-বাবার কথা। ছেলের কাছে বেড়াতে এসেছেন তাঁরা। ছেলে, ছেলে-বৌ, নাতিরা মিলে সযত্নে নিয়ে গেছে মা-বাবাকে সমুদ্রসৈকতে। সমুদ্র-দর্শনে দু’জনেই উল্লসিত ও উদ্ভাসিত। ছেলে স্মিতমুখে বাবা-মাকে বলছে, ‘আগে বঙ্গোপসাগরের ঘোলা পানি দেখেছেন, এবার আটলান্টিকের নীলজল দেখলেন- কোনটা বেশি ভালো?’। ছেলেকে অবাক করে দিয়ে মা-বাবা জানালেন যে এর আগে দু’জনের কেউই সাগর দেখেননি।
পুত্রটি হতবাক! প্রতিষ্ঠিত পরিবার, মা- বাবা দু’জনেই ভালো চাকুরে ছিলেন, কিন্তু এর আগে কোনদিন সমুদ্র দেখেননি! অথচ দেশে থাকতে ছাত্র জীবনেই বাবা-মা'র থেকে টাকা নিয়ে ছেলেটি কতবার কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, কুয়াকাটা গেছে বন্ধুদের সঙ্গে। অথচ তার মা-বাবা এর আগে সমুদ্র দেখেননি! কিছুটা লজ্জিত হয়ে মা’কে প্রশ্ন করলে তিনি জবাব দিয়েছেন, ‘চাকরি, সংসার, তোমাদের ভাই-বোনদের সামলিয়ে সময় হয়নি’।
আমার প্রিয় বন্ধু দেবু ওদের মা (আমি কাকীমা ডাকি) যখন ভীষন অসুস্হ, তখন দেবু ওর মা’কে জিজ্ঞেস করেছিল, 'মা তোমার কি খেতে ইচ্ছে করে?'
খুব নরম স্বরে তিনি বলেছিলেন- "দেবু, আমি সমুদ্র দেখিনি- আমার সমুদ্র দেখা এবং সমুদ্র স্নানের খুব ইচ্ছে হচ্ছে।"
দেবু নিজে ড্রাইভ করে ওর মা'কে কক্সবাজার নিয়ে গিয়েছিলো। সাথে দেবুর স্ত্রী এবং ওদের একমাত্র ছেলে। তখন কাকীমা হাঁটতে পারতেন না তাই তাঁকে একটি রিক্সা ভ্যানের পাটাতনের ওপরে বসিয়ে সাগরের পানি আর ঢেউয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিল।
দেবু আমাকে বলেছিল- সমুদ্রের দিগন্ত রেখার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মা'র দু’চোখ জলে ভরে গিয়েছিল। তিনি মৃদুস্বরে বলেছিলেন, ‘তিনি কল্পনায় যে সমুদ্র দেখেছেন, তার চেয়ে বাস্তবের সমুদ্র অনেক বেশী সুন্দর।’ সবাই মিলে রিক্সা ভ্যানটিকে জলে নামালে সমুদ্রের ঢেউ লোনাজল তাঁকে সিক্ত করে দিয়েছিল- মায়ের চোখেমুখে তৃপ্তির ঝিলিক। বহুকালের একটি লালিত আকাঙ্খা তাঁর পূরণ হয়েছিল। এ ঘটনার পরে তিনি আর বেশীদিন বাঁচেননি- বলতে বলতে দেবু কান্না করছিলো.....
আমি প্রথম বহুদূর থেকে সমুদ্র দেখি- যখন আমি ১০/১১ বছরের বালক। বাবার পোস্টিং তখন রিসালপুর এয়ার বেইসে। তিনি ছুটিতে এলে বুবু আর আমাকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রীন অ্যারো ট্রেনে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে কুমীরার কাছাকাছি এলে যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কারন ঝাউবনের ফাঁক দিয়ে ক্ষণিকের জন্য বঙ্গোপসাগরের এক চিলতে রূপোলী পানি দেখা যেত। বাবা আমাকে ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখিয়েছিলেন। তেমন কিছু মনে হয়নি আমার, হতবাকও হইনি, সাড়া তোলেনি আমার বালক হৃদয়ে বরং সারি সারি ঝাউগাছ আমার ভালো লেগেছিল।
কিন্তু কলেজ জীবনে যখন বঙ্গোপসাগরের তীরে দাঁড়িয়েছি, তখন তার বিশালত্ব, অবিরাম গর্জন, ঢেউয়ের মাথা কুটে মরার চিত্রপটের সামনে হতচকিত মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একটা ঘোর লেগে গিয়েছিল এবং কেন জানি চোখ ছাপিয়ে পানি এসেছিল। তারপর এ দীর্ঘ পাঁচ দশকে কত সমুদ্র দেখেছি। এ জীবনে তিনটি মহাসাগর দেখেছি, অনেকগুলো সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়েছি, বহু উপসাগরের জলে পা ভিজিয়েছি। সমুদ্র এখনও আমাকে আবিষ্ট করে রাখে, তরঙ্গ এখনও আমায় টানে, সমুদ্র-তৃষা আমার আজও আকণ্ঠ।
আমি আমার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বেশ কয়েকবার কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গিয়েছি। দেশ বিদেশে অনেক বেড়িয়েছি.....কিন্তু ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবরের পর ২০২২ পর্যন্ত ঢাকার বাইরে যাওয়া হয়নি। আমাদের গোটা পরিবারের সদস্যরা এক দুঃসহ অবস্থায় ছিলাম....কিন্তু জীবন থেকে থাকে না। ২০২৩ সাল থেকে কয়েকবার সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম, ব্রাম্মণবাড়িয়া, বরিশাল, ভোলা যাওয়া হয়েছে নিতান্তই প্রয়োজনে। কিন্তু এই সময়ে আমার স্ত্রী ঢাকার বাইরে কোথাও যাননি। সকল মামলা থেকে মুক্ত হওয়ার পর আমাদের না জানিয়েই সস্ত্রীক ছেলেরা, নাতনিকে দিয়ে সেন্ট মার্টিন, কক্সবাজারে সাত দিনের ট্যুর প্রোগ্রাম করে....২০১৬ সালের পর আবারও আমরা সবাই মিলে বেড়ায়ে এলাম.....আমার পাসপোর্ট সীজ করেছিল র্যাব...আমার পাসপোর্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও তিনটি দেশের মাল্টিপল ভিসা ছিলো....ইতোমধ্যেই আমাদের দুজনেরই পাসপোর্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ছেলেরাই দুজনের নতুন পাসপোর্ট করিয়ে দেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিয়েছে- আমরা দুজন শুধু নির্ধারিত দিনে ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। আমাদের ওমরাহ হজ্জের জন্য ব্যবস্থা করেছে....আলহামদুলিল্লাহ।
আবার ফিরে আসি সমুদ্রে। সমুদ্র দেখতে কি সবসময়ে জলরাশির সমুদ্রের কাছে যেতে হয়? তা কিন্তু নয়। আমাদের আশে পাশে অনেক মানুষ আছেন যাঁদের হৃদয়ে মমতার সমুদ্র, কথায় মায়ার সমুদ্র, আর চোখে স্বপ্নের সমুদ্র। সূদূ্রের জলের সমুদ্রের আকাঙ্খায় আমরা যেন আমাদের চারপাশের মায়ার, মমতার আর স্বপ্নের সমুদ্রে ডুব দিতে ভুলে না যাই। তখন মৌসুমীর গানের শেষ চরনটি মনে পড়ে যায়, ‘তাই স্বপ্ন দেখবো বলে আমি দু’চোখ পেতেছি....’।
(পুরনো লেখাটা এডিট করে হালনাগাদ করেছি)
২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৪
জুল ভার্ন বলেছেন: আমীন।
২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: মৌসুমী ভৌমিকের এই গান টি আমার খুবই ভালো লাগে, কত কত বার শুনেছি।
২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯
জুল ভার্ন বলেছেন: ওনার অডিও শুনতে ভালো লাগে।
৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২০
মেহবুবা বলেছেন: প্রথমে গানের কথায় আসি, গানটা মোটামুটি পছন্দ, মানে খুব পছন্দ নয়। আর গায়িকা মৌসুমি ভৌমিক কেন যেন পরিপাটি হয়ে থাকেন না। আমাদের স্কুলের আপারা সাধারণ তাতের শাড়ীতে কেমন পরিপাটি হয়ে আসতেন, কলেজে, পরিবারে পরিপাটি রূপ আমার চোখে ভাল লাগে।
অপু দূর্গার ট্রেন দেখবার আকুলতা অনেক বছর বাদে কেমন পরিবর্তিত। সেই ট্রেনে চেপে সাগর দেখবার আকুলতা বুবুর আর আপনার, যেন দূর্গা আর অপু ! এরপর আপনার নাতি সাগরে বসে দেখতে চাইবে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে কি আছে!
উমরাহ করতে যাবার কথা লিখেছেন, ফরজ হজ্জ্ব করেছেন কিনা জানিনা; করা থাকলে উমরাহ করতে গিয়ে relax mood এ অনেক কিছু দেখতে পারবেন!
ভালো থাকবেন।
২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:০৪
জুল ভার্ন বলেছেন: মৌসুমী ভৌমিক শুধু অগোছালোই না, সামনা-সামনি বসে তার গান শোনাও অত্যন্ত পীড়াদায়ক.....কণ্ঠস্বর এবং ব্যাতিক্রমী গায়কী ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না। অর্থাৎ লাইভে নয়, অডিও শোনাই ভালো।
বুবু আমার জীবনে দুর্গা.... আমি ছিলাম বুবুর অপু....গড নোজ হোয়াট ইজ দ্যা নেক্সট....
আলহামদুলিল্লাহ। আমি একাকী প্রথম বার হজ্জ্ব করেছি ২০০২ সালে এবং আমরা দুজনেই হজ্জ্ব করেছি ২০১১ সালে। ছেলেরা হজ্জ করেছে ২০১৫ সালে। ওমারাহ হজ্জ্ব আগেও একবার করেছি। এবার ছেলেরা আমাদের দুজনকে ওমরাহ হজ্জ্বে পাঠাচ্ছে।
আলহামদুলিল্লাহ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০৯
জটিল ভাই বলেছেন:
আমিও স্বপ্ন নিয়ে লিখলাম, সঙ্গে সঙ্গে আপনিও স্বপ্ন নিয়ে পোস্ট দিলেন। বিষয়টা আনন্দ দিলেও পুরোটা পোস্ট পড়ে আবেগ তাড়িত হয়ে গেলাম
আল্লাহ্ সব মা-বাবাকে যোগ্য সন্তান তৈরী, আর সন্তানদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে কবুল করুন। আমিন।