নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসলেই কি ভীমরতি.........

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:২১

আসলেই কি ভীমরতি.........

বেশ কয়েক বছর যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশে ব্যাপক আলোচিত সমালোচিত ছিলো- অসম পরিনিয়ের জুটি রোবাইয়াত ফাতিমা তনি (২৯) ও সাদাদ রহমান(৬৭)। মডেল, উদ্যোক্তা তনি ২য় বিয়ে করেছিলেন নিজের বয়সের চেয়ে ৩৮ বছরের বড় এক বৃদ্ধকে, বিয়ে করে সাম্প্রতিক সময়ে নেটিজেনদের কাছে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। দুই সপ্তাহ আগে ব্যাংককের একটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে সাদাত রহমানের। স্বামীর মৃত্যুর পরেও সমালোচনা শেষ হয়নি।

বছর দুই আগেও সোস্যাল মিডিয়ায় "৭৯ বছরের আইনজীবির বিয়ে করলেন ৩৭ বছরের নারীকে"- এই নিউজের স্বস্ত্রীক ছবির সাথে অনেক কটুক্তিমূলক মন্তব্যের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এমন সংবাদ হামেশাই সোস্যাল মিডিয়ায় হাস্যরসের দড়জা-জানালা খুলে শতমূখে প্রচারিত হয়। ঠিক একই রকম একটা ঘটনার স্বাক্ষী আমার মতো আমাদের প্রতিবেশীদের অনেকেরই মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিষয়টা বিস্তারিত বলিঃ-

সুলতান সাহেব ছেলে বেলা থেকেই আমাদের নিকট প্রতিবেশী। আটষট্টি বছর বয়সে দ্বিতীয় বিয়ে করে বসলেন সুলতান সাহেব। তাও আবার কাকে- নিজ বাড়ির ষাট বছর বয়সী বাড়ির কাজের বুয়াকে! একেই 'ভীমরতি' বলে! এসব ক্ষেত্রে প্রতিবেশীরা এবং চেনা জানা, আত্মীয় স্বজনরা যতটা সরব হয়ে থাকেন ততটা সরব হয়নি সুলতান সাহেবের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার কারণে। প্রকাশ্যে কেউ তেমন কিছু না বললেও মৌনমূখর ছিলেন অনেকেই।

ছয় বছর বয়সী ছেলে এজাজকে রেখে যখন সুলতান সাহেবের স্ত্রীর অকাল মৃত্যু হলো তখন সুলতান সাহেব বয়স মাত্র চৌত্রিশ বছর। তখন যদি দ্বিতীয়বার বিয়ে করতেন তবে কারো বলার কিছু ছিল না। বরঞ্চ সেটা স্বাভাবিক ঘটনা বলেই সবাই মেনে নিত। কিন্তু আত্মীয়বন্ধু সবার অনুরোধ পরামর্শ সত্বেও তিনি বিয়ে করলেন না।

সুলতান সাহেব এজিবি অফিসে বেশ বড় চাকরি করতেন। দিনের অনেকটা সময় দিতে হত অফিসে। সকাল আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফিরতেন সন্ধ্যে নাগাদ। তাই সুলতান সাহেব স্ত্রী মারা যাওয়ার পর এজাজকে দেখাশোনার দায়িত্ব পড়েছিল দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় কাম মেড আলেয়া দম্পতির উপর। খুব সকাল সকাল আলেয়া আর তার স্বামী চলে আসত সুলতান সাহেবের বাড়িতে। আলেয়া লেগে পড়ত সকালের খাবার বানাতে, কাপড়চোপড় ওয়াশ সহ গৃহস্থালির কাজে। আর তার স্বামী বাড়িঘর পরিষ্কার করে চলে যেত।

সুলতান সাহেব আর ছেলে এজাজ সকালের খাবার খেয়ে বেরিয়ে যেতেন। যাওয়ার পথে সুলতান সাহেব এজাজকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে যেতেন। আর বাড়ির কাজ করে আলেয়ার স্বামী বাজার করে দিয়ে বাড়ি ফিরে যেত। আবার এজাজের স্কুল ছুটি হলে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে যেত। আলেয়া দম্পতি নিঃসন্তান।

আলেয়ার সারা দিন কাটতো রান্না করে আর এজাজ ফেরার পর তার সঙ্গে। সুলতান সাহেব ফেরার পর আলেয়া বাড়ি ফিরে যেত। সুলতান সাহেব সময় কাটতো ছেলের সাথে। এভাবেই অফিস আর ছেলেকে নিয়ে দিন কাটাতেন সুলতান সাহেব।

দিন পেরিয়ে বছর যায়। এজাজ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি পায়। আলেয়া সকালে ও সন্ধ্যায় একবার করে এসে রান্না করে দিয়ে যায়। এরই মধ্যে হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল আলেয়ার স্বামী।

আরো কয়েক বছর পর ছেলে এজাজের বিয়ে দিলেন সুলতান সাহেব। বছর দুয়েক পরে নাতনি মিলিয়ার জন্ম হল।

বছর দুয়েক পর ছেলে চাকুরিতে প্রমোশন নিয়ে চলে গেল চট্টগ্রাম। ওরা বছরে দুবার করে আসে সুলতান সাহেবের কাছে। আরো কয়েক বছর পর সুলতান সাহেব বিয়ে করে বসলেন আলেয়াকে।

একদিন আমার দেখা হল সুলতান সাহেব সাথে। আমাকে ডেকে খোঁজখবর নিলেন বাড়ির। আমিও তাঁর কুশলাদি জিজ্ঞেস করতে তার উত্তর দিয়ে বললেন,"অন্য সবার মত তুমিও ভাবছ নিশ্চয় বুড়োর এই বয়সে এমন ভীমরতি ধরল কেন!"
আমি না না করাতে বললেন, "তোমার ব্যস্ততা না থাকলে চল আমার বাড়িতে। তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মত। তোমাকে ব্যাপারটা একটু খুলে বলি।"
তারপর সুলতান সাহেব যা বললেন তা এইরকমঃ-

সুলতান সাহেবের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বিয়ে করেননি কারণ উনি ছেলে এজাজকে অত্যধিক ভালোবাসতেন। তাঁর ভয় ছিল বিয়ে করলে যে স্ত্রী হয়ে আসবে সে তাঁর ছেলের যদি অযত্ন করে। তাই উনি নিজেই একসাথেই বাবা মার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। অবশ্য আলেয়াও মায়ের স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছিলেন এজাজকে।

আলেয়া এবং তার স্বামীর প্রতিও তাঁর একটা টান তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে মালিন্য ছিল না কোনও দিনই। তারপর হঠাৎ আলেয়ার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি ভাবলেন তাঁদের দুজনেরই একটা অবলম্বন দরকার। এদিকে তিনি কোনও দিনই চাননি ছেলে বৌমার সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করতে।

আমি তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে এতদিন তিনি আলেয়াকে বিয়ে করলেন না কেন। তার উত্তরে তিনি যেটা বললেন তাতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাতে আমার মাথা নুয়ে গেল।

উনি বললেন, "ভাই একটা সময় মানুষের শারীরিক চাহিদা থাকে.... আজ আমাদের দুজনের কারোরই সেটা নেই। এখন যেটা আছে শুধুমাত্র মনের চাহিদা। সমাজে থাকতে হলে একটা সামাজিক স্বীকৃতি চাই। নাহলে আমরা মনে প্রাণে মা ছেলেই বল বা বাবা মেয়েই বল বা ভাই বোনই বল আমরা তাই।"

সুলতান সাহেবের শারীরিক চাহিদার কাছে নতি স্বীকার করেননি। সন্তানকে বড় করা মানুষ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ করেছেন। এরপর নিজের একজন সঙ্গী, একজন বন্ধুর খুব প্রয়োজন হয়। সেই জন্যই এত বয়সেও তাঁর বিবাহের প্রয়োজন হয়।
তাঁর এই নির্ভীক সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল।
আমি সুলতান সাহেবকে মনেমনে শ্রদ্ধা জানিয়ে বেরিয়ে এলাম।

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৫০

খায়রুল আহসান বলেছেন: সুলতান সাহেবের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪০

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় অগ্রজ।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: আমি এই বিয়েকে ভীমরতি বলবোনা।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪১

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৫৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: সুন্দর হোক তাদের জীবন।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:০১

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.