নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
সততার খেসারত....
সাধারণত সরকার নির্ধারিত ফ্ল্যাট/ জমির মিউটেশন (নাম জারি) ফি ১০৫০ টাকা এবং ১০৭০ টাকা হলেও জমি/ফ্ল্যাট যদি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন হয় যেমন ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায়, তাহলে ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে নামজারির সরকারি ফিস ১৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত ১৫০০০ টাকা, ১৫০০-২০০০ বর্গফুট পর্যন্ত ২০,০০০ টাকা। অনলাইনে মিউটেশন এর জন্য আবেদন করতে ১,১৭০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। আবেদন করার ৪৫ দিনের মধ্যে নাম জারি সম্পন্ন হবার নিয়ম। বিষয়টা লেখা যতটা সহজ, কার্যক্রমটা বেশুমার হ্যাপার। দালালদের মাধ্যমে কাজটা করানো সহজ হলেও জেল থেকে বের হয়ে বলতে গেলে প্রতি সপ্তাহেই কোর্টের বারান্দার বাইরে আমি একেবারেই নিষ্ক্রিয়। এই সময়টা ছেলের কাজে কিছুটা সাশ্রয় হবে ভেবে নিজেই করে দিতে লেগে যাই।
ছেলের ফ্ল্যাটের মিউটেশন এর জন্য আবেদন করেছিলাম ২০১৯ সনের নভেম্বর মাসে। অনলাইনে আবেদন করে সংশ্লিষ্ট অফিসে মূল ডিড ডকুমেন্টস এর ফটোকপি জমা দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট ডিলিং ক্লার্ক জানায়, চা-পানি খাবার জন্য বাড়তি ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে, তা নাহলে কাজ হবে না।
আমি বাড়তি টাকা দিতে অস্বীকার করি....অনেক্ষণ ক্যাচাল করে বাধ্য হয়ে উর্ধতন কর্মকর্তা এসি ল্যান্ডকে
"চা-পানি খাবার জন্য বাড়তি ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে" বিষয়টা জানাই। এসি ল্যান্ড সার্ভেয়ারকে ডেকে বিষয়টা দেখতে বলেন.....সার্ভেয়ার আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে যায়....ডকুমেন্টস উল্টেপালটে দেখে বলেন- "আপনি এসি স্যারের কাছে কমপ্লেন করলেন কেন? জানেন না- সরকারি অফিসে কাজ করাতে হলে কিছু খরচাপাতি দিতে হয়.....শুধু ডকুমেন্টস ঠিক থাকলেই হয়না- আমাদের হাজারো কাজ, সাইট সার্ভে করে রিপোর্ট ফাইল স্যারের কাছে যাবে। নিয়মানুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে"। ডকুমেন্টস রেখে দেয়। ৪৫ দিন পার হয়ে গিয়েছে, সাইট সার্ভেই হয়নি- নিয়মানুযায়ী নতুন করে আবেদন করতে হবে- আবারও আবেদন করি। সার্ভে করতে যায়না। তখনকার ভূমি সচিব আমার পূর্ব পরিচিত। তাঁর সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানাই। তিনি এ সি ল্যান্ড কে ফোন করে জানতে চান। এসি ল্যান্ড সার্ভেয়ারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে বলে- 'স্যার, আমি একলা মানুষ সময়াভেবে সার্ভে করার সুযোগ হয়নি'।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অজুহাতে আমার আবেদন বাতিল করা হয়। আমি আবার আবেদন করি। এর মধ্যে দুইজন ভূমি সচিব, দুইজন এসি ল্যান্ড বদলী হয়েছেন। এভাবে ৫ বার আবেদন বাতিল করা হয় অযৌক্তিক কারণে। সব চাইতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়- এ সি ল্যান্ড অফিসের সেই ডিলিং ক্লার্ক সামনে যেতে...তার তাচ্ছিল্য, উপেক্ষা মনোভাব অসহ্য! আবারও একজন সচিবের দ্বারা এ সি ল্যান্ডকে ফোন করাই। নতুন এ সি ল্যান্ড আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সার্ভে করে রিপোর্ট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
হ্যা এক সপ্তাহের মধ্যেই সার্ভে রিপোর্ট দেয়- "আবেদন মোতাবেক দলিলে যে পরিমাণ জমি উল্লেখ করা হয়েছে সরেজমিন সার্ভেতে তার চাইতে ০.১ অযুতাংশ জমি কম থাকায় দলিল মোতাবেক নাম জারি সনদ প্রদান করার সুযোগ নাই। এমতাবস্থায় সার্ভেতে পাওয়া জমির পরিমাণ মতো মালিকানা পেতে ঢাকা বিভাগীয় ভূমি আপীল বোর্ডে আপীল করার অনুরোধ করা হইলো।"
ডিলিং ক্লার্ক আমাকে শুনিয়ে তার সহকর্মীকে বলে- "কথায় আছেনা, কাউয়ার বুদ্ধি বেশী খায় গু"! আমি না শোনার ভান করি কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমার কলিজা পোড়ার ধুঁয়া উড়ছে....
যাইহোক, আবারও ভূমি সচিবের সাথে দেখা করে বিস্তারিত জানাই। তিনি আবারও এসি ল্যান্ড কে ফোন করেন। এসি ল্যান্ড সচিব মহোদয়কে বলেন- "স্যার, জমির পরিমাণ নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে আইন অনুযায়ী ভূমি আপীল বোর্ডে আপীল করতে হবে।"
এদিকে মিউটেশন না হওয়ায় ছেলেকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় (সিটি হোল্ডিং ট্যাক্স, ওয়াসা, সুয়ারেজ ইত্যাদি) বেশী ট্যাক্স দিতে হচ্ছে... আমি
বাধ্য হই আপোষ করতে।
ফ্ল্যাট ভবনের জমির পরিমাণ ০.১ অযুতাংশ কম হিসাবেই নাম জারির অনুরোধ করি। কিন্তু সার্ভেয়ার সাহেবের রিপোর্টের বাইরে কম/বেশী হলে নাম জারি করার সুযোগ নাই"- বলার পর আমি বাধ্য হয়ে আপীল করি। অনেক জ্যাক ব্যবহার করে ১৪ মাসে রায় পাই। জ্যাক ব্যবহার না করলে এই মামলা ১৪ বছরেও ফয়সালা হতোনা। উল্লেখ্য, একই সময়ে বিল্ডিংয়ের অন্য ১১ ফ্ল্যাটের মালিক ৩০,০০০/- টাকা বাড়তি দিয়ে নির্ধারিত ৪৫ দিনের মধ্যে নাম জারি (মিউটেশন) করিয়ে নিয়েছেন।
ভেবেছিলাম ভূমি আপীল বোর্ড থেকে মিউটেশন পেপারটা পেয়ে যাবো। কিন্তু না, আপীল বোর্ড নির্দেশ দিয়েছে এ সি ল্যান্ডকে মিউটেশন সনদ প্রদানের জন্য। অর্থাৎ আমাকে আবারও সেই এ সি ল্যান্ড অফিসের ডিলিং ক্লার্কের টেবিলে যেতে হবে!
নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে ছিলাম। আর স্বাধীন দেশের ভূমি অফিসের ঘুষখোর কেরানীদের সাথে প্রায় চার বছর আদর্শ আর সততার যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত পরাজয় মেনে আমার ছেলের ফ্ল্যাটের মিউটেশন সম্পন্ন হয়েছে দুই লক্ষাধিক টাকা গচ্ছা দিয়ে, কোনো একটা ডকুমেন্টস পরিবর্তন না করেই।
অতএব, যেখানে দেশের সর্বস্তর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সেখানে সততা, আদর্শ আর জেদ অভিমানের কোনো মূল্য নাই।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৪
জুল ভার্ন বলেছেন: এটা আমাদের নিয়তি কিম্বা পাপের ফল!
২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪
ঢাবিয়ান বলেছেন: ফ্যসিবাদী দুর্নীতিপরায়ন সিস্টেমের এক বিন্দুও পরিবর্তন হয় নাই।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৫
জুল ভার্ন বলেছেন: বরং যদি বলি আরও বেড়েছে তা মোটেই ভুল বলা হবে না।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ নেই।