নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
সুন্দর-অসুন্দর- দ্বিতীয় পর্বঃ-
সৌন্দর্য ও রুচিঃ
আমাদের চারপাশের অসংখ্য সুন্দর বিষয় রয়েছে। কিন্তু সব সুন্দর সবার কাছে সুন্দর নয়। আবার একজন মানুষের বিচারে যা কিছু সুন্দর, তা একই সময়ে একই স্থানে নাও থাকতে পারে। একটি সুন্দর পাহাড়, একটি সাগর সৈকত, একটি দিগন্ত প্রসারিত সবুজ মাঠ এক সাথে হয়তো দেখা হয়ে উঠে না। জীবনের সকল সুন্দর মুহূর্ত একই মুহূর্তে আসে না। এমনকি ধারাবাহিকভাবে সকল সুন্দর আসতেই থাকে এমনটাও হয় না। বাস্তব জীবনে প্রতিটি মানুষ তার ব্যক্তিগত মানসিকতার বিচারে সুন্দর-অসুন্দর ভিতরে বসবাস করে। অসুন্দর আছে বলেই সুন্দর আরও সুন্দর হয়ে উঠে। আমাদের জীবনটাকে যদি সুন্দর বলি, তাহলে তা সুন্দর-অসুন্দরের গড় মানেই বলি। এই গড়মানের সুন্দর জীবন ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে, একটি উচ্চতর মানে জীবনকে সাজানোর আকাঙ্ক্ষার ভিতরে গড়ে উঠে সুন্দরতর জীবনের অঙ্গীকার। জীবনকে সুন্দরতর কারা এই প্রক্রিয়ায় থাকে ছোটো ছোটো অনেক উপাদান। জীবনকে সুন্দর করে সাজানোর অর্থ হলো- এর সকল উপাদানের সমন্বয়। আর এই সাজানোর প্রক্রিয়ার ভিতরেই পাওয়া যায় রুচি-র পরিচয়।
ধরা যাক, পাঁচ জন ব্যক্তিকে তাদের মনের মতো করে পাঁচটি ঘর সাজাতে বলা গেল। দেখা গেলো সবার সাজানো এক রকম হচ্ছে না। তার অর্থ হলো, পাঁচজনের সৌন্দর্যবোধ একরকম নয়। পাঁচটি সজ্জার ভিতরে অনেকগুলো সৌন্দর্যের উপাদান মিলে যেতে পারে, কিন্তু সব মিলিয়ে একরকম হয়ে উঠে নি। অর্থাৎ সবার সৌন্দর্যের সামগ্রিক রূপটা এক নয়। তার অর্থ হলো, সবার সমন্বয় করার দৃষ্টিভঙ্গী একরকমের নয়। স্বস্তি-অস্বস্তির তীব্র অনুভূতিতে যে আনন্দ-বেদনার সৃষ্টি হয়, তারই সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় সুন্দর-অসুন্দর। আর এর ভিতরের অনেকগুলো সৌন্দর্য সমন্বিত হয়ে যখন একটি সামগ্রিক সৌন্দর্য তৈরি করে, তখন তার বোধটা নানারূপে মনের মধ্যে বাসা বাধে। এই বোধ এবং তার প্রকাশটাই হলো রুচি। স্পষ্ট করে বললে, বলা যায় প্রতিটি মানুষের সামগ্রিক সৌন্দর্য বোধ এবং তার প্রকাশটাই হলো রুচি।
যখন কেউ কোনো কিছু তৈরি করতে চায় বা অন্যের করা কিছু উপভোগ করতে চায়, তখন তার নিজের ভিতরের রুচি থেকেই বিবেচনা করতে বসে। কোনো একজন ঘর সাজানোর জন্য পেশাগত কোনো লোকে নিয়োগ করলো। পেশাদার লোক তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে যে যেভাবে ঘর সাজাবে, তা হবে অনেকটাই যান্ত্রিক। পরিপাটি করে বিয়ের কনে চুল বাঁধে সেটা আনুষ্ঠানিক এবং কৃত্রিম। সংসারে কাজ শেষে দিন শেষে গৃহবধূ যেভাবে চুলটা বাধে তাই স্বাভাবিক। আড়ম্বরপূর্ণ সজ্জায় থাকে চোখ ধাধানো ঔজ্জ্বল্য, সহজাত সজ্জার ভিতরে আছে লাবণ্য। কনের সাজে সজ্জিত মেয়ের সৌন্দর্য, মেয়েটির রুচি নয়। মেয়েটির রুচির পরিচয় পাওয়া যাবে তার সংসারের সাধারণ জীবনযাপনের ভিতরে লালন করা সৌন্দর্য। প্রতিটি মানুষ যে সৌন্দর্যবোধ লালন করে, প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার ভিতরে তার প্রকাশটা সেই বোধ থেকে। অকৃত্রিমাভাবে সেই বোধের প্রকাশটাই হলো তার রুচি।
রুচির ক্রমবিকাশ এবং পরিণতিঃ
মানুষের বোধ-জগতে থাকে নানা ধরনের সৌন্দর্যের রূপ। শৈশব থেকে পরিণত বয়সের মৃত্যু পর্যন্ত সৌন্দর্যের রূপ পাল্টায়। সৌন্দর্য উপলব্ধির সহজাত ক্ষমতা থাকে তার জিন সঙ্কেতে। এই ভিত্তিকে আশ্রয় করে মানুষের সৌন্দর্যবোধ ডালপালা মেলে বড় হয়ে উঠে। আর এই প্রক্রিয়ার ভিতরে গড়ে উঠে তার রুচি বোধ। শিশু তার খেলনা সাজায় তার প্রিয় খেলনা দিয়ে। অপছন্দের খেলনাকে সে দূরে ঠেলে দেয়। এই পছন্দ-অপছন্দের পিছনে থাকে সুন্দর-অসুন্দরের নির্বাচন। এই নির্বাচনের ভিতরে থাকে রুচির প্রাথমিক উপকরণ তথা প্রাথমিক সুন্দর-অসুন্দরের নির্বাচন। তার নির্বাচিত খেলনা দিয়ে যখন সে তার চারপাশকে সাজায়, তখন তার ভিতরের সৌন্দর্যবোধ তাড়িত করে। এর ভিতর দিয়ে যে সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে, সেটা শিশুর রুচি। এই রুচি হতে পারে ত্রিমাত্রিক উপকরণ, হতে পারে খাদ্যের স্বাদ, চারপাশের সৌরভ, প্রিয়জনের স্পর্শ ইত্যাদি। শিশুরা ছবি আঁকার সময় যেভাবে রঙ ব্যবহার করে, বড়দের কাছে তা হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু শিশুর কাছে সেটাই সত্য, সেটাই সুন্দর। সেটাই তার রুচি।
স্বাভাবিকভাবে শিশুরা বড় হয়ে উঠে একটি পারিবারিক পরিবেশে। সে তার নিজের জগতের বাইরে চোখ তুলে দেখে তাঁর বাবা-মা এবং তার চারপাশের আরও কিছু মানুষ। এর ভিতরে রয়েছে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন, বিদ্যালয়ের সহপাঠী, গৃহশিক্ষক বা স্কুলের শিক্ষক ইত্যাদি। এদের সংস্পর্শে সে যা কিছু পায়, তার কিছু তার ভালো লাগে, কিছু তাকে ভালো হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। এরই ভিতর দিয়ে শিশুরা একটি মিশ্র অভিজ্ঞতা লাভ করে। শিশুর বোধে ঠাঁই করে নেয় সৌন্দর্যের নানা রূপ। আর নানা সৌন্দর্যের সমন্বয়ের সূত্রে গড়ে ওঠে তার রুচিবোধ। যে শিশু প্রতিনিয়ত পরিবারের বাবা-মায়ের ঝগড়া শুনে বড় হয়, তার কাছে অন্য কোনো দম্পতির প্রকাশ্যে ঝগড়াটা কুরুচির মনে হবে না। বস্তি এলাকার শিশুরা ক্রমাগত যৌনগন্ধী গালি ব্যবহার করে। এই রুচিটা পায় তার পরিবেশ থেকে। স্কুলকলেজের একজন শিক্ষকের কাছে তা কুরুচির হতে পারে, বস্তিবাসীর কাছে কচি-মুখের গালিগালাজ শ্রুতিমধুর মনে হতে পারে।
প্রতিটি মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে কাজ করে অনুকরণ। শিশুরা নিজের মতো করে যা ভাবে, তার পিছনে অনেকটাই থাকে অনুকরণে প্রবৃ্ত্তি। এই প্রবৃত্তি থেকে মানুষ ভাষা শেখে। এই প্রবৃত্তি থেকেই আচরণও শেখে। এর সাথে থাকে তার চারপাশের মানুষের আচরণ দেখার বা শুনার অভিজ্ঞতা। কি করতে হয় বা হবে সেটা যেমন শেখে, একই সাথে কি করা যাবে না, কি করা উচিৎ নয়, সেটা শেখে। অনুকরণ এবং অনুসরণের ভিতর দিয়ে মানুষ একটি পরিবারে এবং সমাজের অংশ হয়ে উঠে। আর উভয়ের সংমিশ্রণে বেড়ে উঠা শিশুদের ভিতর।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫৪
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩৩
জটিল ভাই ২.০ বলেছেন:
দুই পর্ব মিলে সত্যিই সুন্দর হয়েছে প্রিয় ভাই ♥
আরো কি পর্ব হবে?
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:২৭
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি প্রথম পর্বের শুরুতে এই নিবন্ধের ব্যখ্যায় লিখেছিলাম- এটা মূলত ১৩০ পৃষ্ঠার একটা বইয়ের পান্ডুলিপি, যা কেউ প্রকাশ করতে আগ্রহী হননি। সেটা পান্ডুলিপির মূল বিষয়গুলো রেখে শর্টকাট করে ৫ পর্বে লিখেছি মূলত সংরক্ষণের জন্য। হ্যা আপনাদের বিরক্ত করার জন্য আরও তিনটা পর্বে শেষ করবো।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪
শাওন আহমাদ বলেছেন: অনেকদিন পর এসে আপনার লেখায় চোখ বুলালাম।