![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভোর হয়, সূর্য ওঠে... সেই সূর্যও একসময় রাতের কোলে ঘুমিয়ে যায়। আমিও সূর্যের সাথে উঠি, রাতের কোলে ঘুমিয়ে যাই, মাঝিবিহীন নৌকায় বসে উত্তাল সমুদ্রে নিয়মিত ঘুরপাক খাই, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াই আবার দক্ষিণ থেকে উত্তরে কচ্ছপ বেগে হেঁটে হেঁটে আসি, তারপর চৈত্রের কড়া দুপুরে কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ! কারণ আমার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই!\n\n\nপেশায় ছাত্র। পড়ছি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। এইতো..
শাহীনূর। বারো-তের বছরের ভাগ্যাহত বালক এক বালক; ভাগ্যাহত রিক্সাওয়ালা বালক।
শাহীনূর কেন এর চেয়ে অনেক ছোট ছেলেকে ক্যাম্পাসে রিক্সা চালাতে দেখেছি। ময়মনসিংহে এটা নতুন কিছু নয়। এমদাদ, এক সময় আমাদের ডাইনিং বয় ছিল। পাঁচ-ছয় বছরের এত ছোট একটা ছেলেকে ডাইনিংয়ে কাজ করতে দেখে প্রথমে একটু অবাকই হয়ে ছিলাম। কিন্তু ব্যাপারটা কয়েকদিনেই সাধারণ হয়ে গিয়েছিল। আশে পাশে এত এত এমদাদ ছিল যে একজন এমদাদ কে নিয়ে ভাবার আর অবকাশ হয়ে ওঠেনি। এমদাদরা যেন ডাইনিং বয় হয়েই জন্মায়!
হঠাৎ একদিন দেখি এমদাদ নেই। মনে মনে একটু খুশিই হলাম। এত ছোট্ট একটা বাচ্চাকে কাজ করতে দেখে কেমন যেন একটা অস্বস্থি লাগত। কিন্তু আমার অস্বস্থিটা স্বস্থিতে কনভার্ট না হয়ে যে আরো দীর্ঘায়িত হবে কে জানত?
কোন এক জরুরী কাজে একদিন জব্বার মোড় যাচ্ছিলাম। প্রচণ্ড রোদ ছিল। একটা রিক্সার অভাব তীব্রভাবে অনুভব করছিলাম। দেখলাম লন্ডন ব্রীজের ওপাশে একটা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে। গিয়ে রীতিমত অবাক। তিন ফুটে এক রিক্সাচালক রিক্সার সিটে বসে হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, রিক্সাচালকের পা টেনে দু’ইঞ্চি লম্বা করে দিলেও পেডেল পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব না!
মুখটা চেনা চেনা লাগছিল।
- কিরে তুই এমদাদ না?
- জ্বি ভাই। ডাইনিংয়ে পোষায় না। তাই রিক্সা নিছি। (ক্রেডিট মার্কা একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকাল।)
- ভালো করছিস
- ভাই যাবুউন? (ভাবখানা এমন যে আমাকে ওর রিক্সায় ওঠাতে পারলে স্বর্গ হাতে পাবে।)
- না, যাব না!
সেদিন ইচ্ছে করেই ওর রিক্সায় উঠিনি। ওর সহজ সরল হাসিমুখটা কেন যেন আমার সহ্য হচ্ছিল না।
যাহোক। বলছিলাম শাহীনূরের কথা। এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টি শেষে বন্ধু পাভেলের সাথে হলে ফিরছিলাম। দেখি যে পাভেল রিক্সায় উঠে বসেছে। অগ্যতা আমাকেও উঠতে হলো। বিকেলটা অনেক ভালো কেটেছিল। বলতে গেলে খুব ফুরফুরে মেজাজেই ছিলাম। রিক্সায় উঠে বসেছি কিন্তু রিক্সাওয়ালাকে লক্ষ্য করিনি। দেখি পাভেল রিক্সাওয়ালাকে প্রশ্ন করা শুরু করেছে। রিক্সাওয়ালা ছোট বলতে ছোটই।
- কি নাম তোমার?
- জ্বী শাহীনূর
- স্কুলে যাও না?
- হ ভাই যাই। দাখিলে পড়ি (কি যেন এক মাদ্রাসার নাম বলল)
- কোন ক্লাস?
- সেভেন এ
- রিক্সা চালাও ক্যান?
- রিক্সা চালাইতাম না। এটতুকু থাকতে বাপ মারা গ্যাছে। (হাত দিয়ে যা দেখালো তাতে বুঝলাম ওর বয়স তখন পাঁচ-ছয় বছর হবে।)
- বাড়িতে কে কে আছে?
- ছোট ভাই আছে। বিদ্যালয়ে ভর্তি করায়া দিছি
- তোমার আম্মা কিছু করে না?
- করে। আশেপাশে বাড়িতে কাজ পাইলে করে
- প্রাইভেট পড়না?
- হ ভাই, পড়ি। মাদ্রাসার এক হুজুরে পড়ায়।
- টাকা নেয় না?
- আমার থেকে নেয় না।
- তুমি প্রতিদিন রিক্সা চালাও?
- না ভাই। মাঝে মাঝে। আজ পাঁচটায় আসছি।
- রিক্সার ভাড়া কত দাও?
- ফুল চালাইলে ৫০ আর হাফ চালাইলে ২৫ দিতে হয়
- কত টাকা পাও?
- আজ ১২৫ টাকা পাইছি।
- ... ... ...
ওদের কথা চলছিল। আমার হল এসে গেছে। নেমে পড়লাম। ব্র্যান্ড নিউ কোন ঘটনা নয়। অতি কমন একটি ঘটনা। তারপরও কেন যেন মেনে নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে। এটাকেই বুঝি তাহলে জীবনযুদ্ধ বলে। বাঁচতে হলে, লড়তে হবে!
স্যালুট হে শাহীনূর! তোদের কাছে আমার অনেক শেখার আছে। পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা সত্যিই অনেক কঠিন। অনন্তকাল বেঁচে থাক তোরা...
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৮
মোঃ জুনায়েদ খান বলেছেন: কড়া বাস্তবতায় মন খারাপ হয়েও লাভ নেই
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:২৮
সানফ্লাওয়ার বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেল