![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক
এই তুই কই? তোর ফোন বন্ধ কেনো? তোকে খুব ইমার্জেন্সি দরকার । এই টেক্সট দেখার সাথে সাথে আমাকে ফোন দিবি। ফেসবুকে এই ছিলো প্রিতম দার মেসেজ । প্রিতম দা হলো আমাদের পত্রিকার সম্পাদক । পেটমোটা , নাক উচা টাইপের লোক । দেখে মনে হয় সবসময় একধরনের অসস্থিতে আছেন । আমি তাই তাঁর নাম দিয়েছি অস্বস্তি প্রিতমদা। আমি মেসেজ দেখে ভাবলাম কি না কি! দেখি ফোনটা দেই তাড়াতাড়ি । ফোন দেবার পর প্রিতম দা একটা কষা ঝারি দিয়ে বসলেন -ঐ কই তুই ? তোর ফোন বন্ধ থাকে কেন?
-এইতো দা মানে চার্জ ছিলো না ।
-চার্জ থাকে না কেন?
-জানি না।
-জানিস না কেন? কি করিস সারাদিন ? আচ্ছা যাই হোক, রুশ বিপ্লব সম্পর্কে কি জানিস ?
- আমি করি নাই এটাই জানি ।
- ফাজিল , সবসময় ফাজলামি করিস কেন? এইটা ফাজলামির সময় না । এখনই রুশ বিপ্লব সম্পর্কে পড়াশোনা করে কালকের মধ্যে আমাকে একটা লিখা দিবি এটা নিয়ে । পরশু ৭ নভেম্বর । আর্টিকেল বের করতে হবে ।
-আচ্ছা।
- কি আচ্ছা ? কাল দশটার মধ্যে আমার লিখা চাই ।
- পারবো না ।
- তাইলে গো টু দা হেল ।
- মানে কি?
- মানে নরক পাহারা দাও । চাকরি করা লাগবে না ।
- এটা কেমন কথা । তুমি ভালো করেই জানো এইসব বিপ্লব টিপ্লব নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নাই । আমি কিছুই জানি না । এখন কেমনে কি? এইটা কিছু হইলো?
- নাহলে নাই । অতশত বুঝি না । লিখা চাই কাল সকাল ১০ টার মাঝেই। নাহলে ............ বলেই পুট করে ফোন কেটে দিলেন প্রিতম দা । আমার মেজাজ সপ্তমে উঠলো । ধুর এখন কি করবো? চাকরিটাই বুঝি যায় । নাহ দেখি কি করা যায় ।পাশের রুমেই আমার ব্যাক্তিগত লাইব্রেরীটায় গেলাম । বই সংগ্রহের আমার দারুন আগ্রহ । তবে রুশ বিপ্লব নিয়ে কোন বই আছে কিনা কে জানে । খুজতে খুজতেই পেয়ে গেলাম কয়েকটা বই । একটা বাংলা বই পেলাম হায়দার আকবরের লিখা "ফরাসি বিপ্লব থেকে রুশ বিপ্লব" । লেখক কে আমি চিনি না। কিন্তু তাকে এই মুহুর্তে একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করতেসে । এই বই আমার বাসায় আসলো কিভাবে ভাবার প্রশ্ন । আমার এতো এলার্জি নাই যে এসব বই কিনে আনবো । যাগগে দেখতে দেখতে আরো ২ টা ইংরেজীতে লিখা বই পেয়ে গেলাম । শিলা ফিতজপ্যাট্রিক এর লেখা The Russian Revolution আর ম্যারি ম্যাকাউলির লেখা Soviet Politics 1917 - 1991 । সংগ্রহ খারাপ না । পড়া শুরু করা যাক ।
খ
এখন রাত ৩ টা বাজে । আমি সকাল ৮ টা থেকে পড়ছি । এর মাঝে কিছুই খাওয়া দাওয়া হয়নি । ক্ষিদেয় পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে । তবুও নড়তে মন চাচ্ছে না বইগুলো থেকে । গভির মনযোগ দিয়ে Soviet Politics 1917 - 1991 বইটা পড়ছি ঠিক তখনি দেখলাম আমার সামনের চেয়ারটায় একজন দাড়ি ওয়ালা লোক বসে আছে । আমি চমকে উঠলাম ! এটা কে ? বাসার দড়জা বন্ধ এই লোক আসলো কোথা থেকে ? এই এই আপনি কে? আমি লোকটাকে জিজ্ঞসা করলাম । লোকটার মুখে দাড়ি এরকম বাংলায় আমরা এসব দাড়িকে ছাগলে দাড়ি বলি । ছাগলে দাড়িওয়ালা লোকটা আমার দিকে ঝুকে এসে বলল - আমিই লেলিন। ভ্লাদিমির ইলিচ লেলিন ।
আমি স্পষ্টতই বুঝতেসি এটা আমার হেলুসিয়েশন । অনেকক্ষন থেকে একনাগাড়ে কারো সম্বন্ধে পড়াশোনা করলে আমি হেলুসিয়েশনে ভুগতে থাকি । কিন্তু বেপারটা আমার খারাপ লাগছে না । ভালোই তো আমার সামনে রাশিয়ান একজন বিপ্লবী বসে আছেন । আমি তাঁর সাথে কথা বলছি খারাপ কি? আমি ভাবলাম আমার অন্তরজগতের অবাস্তবিক এই কল্পিত লেলিনের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিলে মন্দ হয় না । আমি স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করলাম ,
-তো আপনি এখানে কি করেন?
- তোমাকে দেখতে এসেছি ।
- ভালো , তো আমিতো মদ খাইনা আপনাকে কি দিয়ে আপ্পায়ন করি! বাসায় ভোদকা নেই যে!
- লাগবে না । আমাকে আপ্যায়নের চিন্তা না করে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে করতে পারো ।
- প্রশ্ন? ও হ্যাঁ প্রশ্ন । আসলে তো প্রশ্ন অনেকগুলোই ছিলো । আচ্ছা প্রথমে বলেন আপনি বিপ্লব কেনো করলেন? ঐ যে কি জানি বলে অক্টোবর না নভেম্বর বিপ্লব , ঐটার কথা বলছি ।
- খামোশ, বদমাইশ! ঐটা মহান অক্টোবর বিপ্লব । নভেম্বর না । আমাদের রাশিয়ান ক্যালেন্ডারে ওটা ২৫ অক্টোবর আর তোমাদের খ্রিষ্টীয় মতে ৭ নভেম্বর । শত বছর আগে আমার নেতৃত্বে এই বিপ্লব ঘটেছিলো । সেসময় ইউরোপজুড়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আলোড়ন ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন চলছিল। ফরাসি দেশে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইংল্যান্ডে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের প্রচলন হয়। সামন্ততান্ত্রিক অভিজাত শ্রেণীর পতন ঘটতে থাকে এবং শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা নতুন শাসক শ্রেণীতে পরিণত হয়। কিন্তু রুশ দেশ তখনও প্রাচীন যুগে বাস করতে থাকে_ রুশীয় সম্রাট বা জারদের স্বেচ্ছাচারী শাসনাধীনে পড়ে থাকে। মধ্যবিত্ত শ্রেণী না থাকায় রাশিয়ায় শিল্পায়ন দেরিতে শুরু হয়। আর অন্যদিকে জারদের কোন স্বদিচ্ছাই ছিলো না এ অবস্থা থেকে রাশিয়াকে মুক্তি দেবে । বরং তারা ভোগ বিলাসে মত্ত থেকে দেশকে পুজিপতিদের স্বার্থে চালাতে থাকে। আর তখন রুশ পুঁজিপতিরা বিদেশি মূলধন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে শ্রমিকদের মজুরি কেটে রেখে দেয়ার মধ্যে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে যাচ্ছিল । ফলে শ্রমিকদের দুরবস্থা আরও বেড়ে যায়। শ্রমিকদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। এমনকি দুরবস্থার সামান্যতম সংস্কার সাধনেরও কোনো উপায় তাদের হাতে ছিল না। রাশিয়া জুড়ে চলছিলো হাহাকার । চারিদিকে দুর্ভিক্ষ! শ্রমিকেরা না খেয়ে পথে পথে ধুকে ধুকে মরছিলো । তখন আমিই এগিয়ে আসি । সেই দলিত শ্রমিকদের নিয়ে গড়ে তুলি রেড আর্মি ।
ভাষণের মত করে কথা গুলো বলছিলো লেলিন সাহেব ।আমি তাকে থামিয়ে দিলাম ।
-বুঝলাম কম্রেড বুঝলাম । কিন্তু ফেব্রুয়ারীতে বিপ্লব করে দুমায়তো ( রাশিয়ান পার্লামেন্ট) ঠিকি বসালেন প্রভিশনাল সরকার কে । কিন্তু প্রভিশনাল সরকারের ভিতরে তো সাবেক দুমা সদস্য কিছু সৈন্য আর জনগনের মধ্যে কিছু পুঁজিপতি ছিলো । তাইলে কেমনে কি? সরিষাতেই তো ভুত ছিলো ! দলিতরা সুযোগ পেলো না কেনো? শ্রমিকদের দুঃখ মালিকরা কিভাবে বুঝবে? আমি আয়েশী ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলাম । তবে প্রশ্ন শুনে বোধ হয় লেলিন সাহেব ক্ষিপ্ত হলেন কিছুটা ।
- কথার মাঝখানে সাইকেল চালাও কেন? সবকিছুই বলছি , শোন , ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষের সময় রাশিয়া পুরোপুরি অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলো। জার জনগনের কথা শুনত না। তাঁর সামরিক কোন জ্ঞান ছিলো না অথচ মদ্দ গিয়েছিলেন বিশ্বযুদ্ধ সামলাতে । এদিকে রাশিয়ায় শ্রমিক কৃষকেরা না খেয়ে মরে । জারিনা ছিলো জার্মান কুচক্রি মহিলা আলেকজান্দ্রা । তাঁর সাথে ছিলো রাসপুটিন নামের এক বদের পরকিয়া সম্পর্ক । সে জার না থাকায় দেশের ভেতরে রাসপুটিনের কথা শুনে অরাজকতা তৈরী করলো । ফলে দেশের অবস্থা আরো খারাপ হলো ।রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গে দেখা দেয় প্রচন্ড খাদ্য সংকট। প্রতিদিন চলতে থাকে বিক্ষোভ। এমন অবস্থায় জার দেশে ফিরে দুমা ভেঙ্গে দিলো । ফলে বিপ্লব জরুরি হয়ে পড়লো । তখন বিপ্লব ছাড়া আমাদের হাতে আর কোন রাস্তাই ছিলো না । ফলে দুমার কিছু সাবেক সদশ্য আর কিছু সৈনিক আর আতে ঘা লাগা কিছু পুজিপতিদের নিয়ে আমরা আবার দুমা তৈরী করেছিলাম । এবং সে সময় আমরা প্রতিদিন বিক্ষভ করতাম জারের পতন চেয়ে । ফলে জারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর উপদেষ্টারা এই সময় নিকোলাসকে সিংহাসন ছেড়ে দিতে বললো। অন্য কোনো উপায় আর নেই বুঝতে পেরে নিকোলাস ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে তার এবং অসুস্থ ছেলে অ্যালেক্সির পক্ষ থেকে সিংহাসনের দাবী ত্যাগ করেন, তার ছোট ভাই মাইকেলকে পরবর্তী জার হিসেবে সম্বোধন করে চিঠিও লিখেন। কিন্তু মাইকেলকে প্রত্যাখ্যান করে প্রভিশনাল সরকার জারতন্ত্রেরই মৃত্যু ঘোষনা করে। এটাই ছিলো ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের সাফল্য । ঠিক তারপরেই আমরা দেখলাম প্রভিশনাল সরকারের হাতে দেশে আরো খারাপ অবস্থাইয় ফলে অবতির্ন করতে হল মহান ইতিহাস বিখ্যাত অক্টোবর বিপ্লব ।
- বুঝলাম প্রভিশনাল সরকারের ভিতরে কিছু ছাগল ছিলো । ছাগল দিয়ে হালচাষ হয় না অতএব আপনারা আবার বিপ্লব করলেন । এখন আমারে বলেন জার নিকলাস সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?
- তোমাদের এইদেশে অভিমত জানতে চাওয়া ছাড়া আর কোন প্রশ্ন থাকে না ?
- নাহ থাকে না । আমাদের দেশের সাংবাদিকরা অভিমত আর অনুভুতিতে বিশ্বাসী । আপনি এটিএন বাংলায় সাক্ষাৎকার দিলে তারাও এটা জিগাষা করতো । আর আমিও একজন সাংবাদিক । এইটা আমার কর্তব্য ।
- এটিএন বাংলা কি?
- চ্যানেল ।
- ইংলিশ চ্যানেলের মত?
- আরে নাহ । আপনি দেখি খালি বিপ্লব বোঝেন বিজ্ঞান বোঝেন না । এইটা টিভি চ্যানেল ।
- ও আমাদের সময় এতকিছু ছিলো নাকি? বুঝবো কিভাবে।
- বোঝা লাগবে না । আপানার অভিমত টা বলেন ।
আমার কথা শুনেই লেলিন সাহেব ক্ষিপ্ত হয়ে ছাপার অযোগ্য ভাষায় জার নিকলাস কে গালিগালাজ করতে লাগলেন ।
- খামোস ! এটা আবার কে? আমি আমার সামনের অপর আরাকটা চেয়ারে আরাকজন দাড়িওয়ালাকে দেখলাম বসে রাগত ভঙ্গিতে লেলিন সাহেব কে শাসাচ্ছেন। এনার দাড়ি লেলিন সাহেবের মত না । কিছুটা ইংলিশ ফাস্ট বোলার ড্যানিশ লিলির মত । গোফ উপরের দিকে উঠানো । পরনে রাজপোশাখ । দেখতেও অনেক ড্যাশিং ।
- জ্বি জনাব আপনার পরিচয়?
- আমি সর্বশেষ জার নিকলাস ২য় ।
- জ্বী জনাব আপনি ২য় কেন ১ম নন কেনো? দৌড়ে কোনবার ২য় হয়েছিলেন বুঝি?
- চুপ , ফাজিল! দৌড় দিয়ে কাওকে রাজা অথবা মন্ত্রী হতে দেখেছো? আমার পুর্ববর্তি একজন জারের নামছিলো নিকলাস । কাজেই আমাকে সবাই জানতো নিকলাস ২য় নামে ।
- জনাব আসলে আমাদের দেশে দৌড়ে অনেক কিছুই হয় । এর আগে একজন দৌড়ে ফাস্ট হয়ে যোগাযোগ মন্ত্রী হয়েছিলেন ।
- তাই নাকি? পিকুলিয়ার দেশ ।
- জ্বি জাহাপানা , পিকুলিয়ার । তা জনাব আপনার ভাষ্য কি? আপনি ব্যার্থতার দায়ভার কার ঘারে চাপাবেন?
- ব্যার্থতা? কিসের ব্যার্থতা?
- এইজে আপনার সময় রাশিয়ার যে খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হলো সেটা?
- আমি মানি আমি রাষ্ট্র চালনায় ব্যর্থ চিলাম কিন্তু তাঁর আগে তোমাকে বুঝতে হবে তখন আমার অবস্থা কি ছিলো । কেনো আমি ব্যর্থ ছিলাম জনগনের মনের ভাষা বুঝতে ।
শোন.........।
- জ্বি বলুন । আমি দেখলাম লেলিন সাহেব কোথায় যেন চলে গেছেন ? এখন আর চেয়ারটায় বসে নেই ।
গ
- আমি জার নিকোলাস ২য় । ১৮৯৪ সালে নিকোলাস যে সাম্রাজ্যের জার হলাম, কিন্তু বুঝলাম না কীভাবে মাত্র ২০ বছরের মধ্যেই সেই সাম্রাজ্য হাতছাড়া হয়ে গেলো? কীভাবে জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম? সত্য বলতে স্বিকার করি, আমি কখনোই সাধারণ মানুষের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। হয়তো কখনোই অনুভব করতে পারতাম না এক বেলা খাবারের জন্য তার জনগন কতটা মরিয়া থাকতো। যখন জনগনের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো জারের উপস্থিতি, তার সহানুভুতি, নিকোলাস তখন থাকতেন তার প্রাসাদে অসুস্থ সন্তান অ্যালেক্সির শয্যাপাশে। জনগন ভাবতো, জার তাদের এই দুর্বিষহ অবস্থাকে অবজ্ঞা করছেন। আসলে আমি তাদের অবজ্ঞা করতাম না , করতে চাইতাম না । কিন্তু আমাকে করতে হত । কথা গুলো বলতে গিয়ে জারের চোখ থেকে অশ্রু বেয়ে নামতে লাগলো । সেই অশ্রুসিক্ত কন্ঠেই তিনি আবার বলতে শুরু করলেন
- আমি শাসক কম প্রেমিক বেশী ছিলাম । আমার অন্তর জুরে আমার পুত্র এলাক্সির প্রতি স্নেহপ্রবনতা আর আমার জারিনার প্রতি আমার ভালোবাসা ছিলো আকাশ চুম্বি । সবাই আমাকে শাসক হিসেবে ভাবে ভিতরের এই মানবিক হৃদয়টা কেও দেখে না । আমার জায়গায় অন্য যেকোন বাবা যেটা করতো আমিও তাই করেছিলাম ।
- জনাব এলেক্সি কি আপনার সন্তান? তাঁর কি হয়েছিলো?
- হুম । সে আমার প্রানপ্রিয় সন্তান ।যখন তার বয়স মাত্র ১০ বছর, তখনই গুরুতর সমস্যা শুরু হলো। গুরুতর সমস্যা শুরু হলো রাজ্যে।গুরুতর সমস্যার উৎস তারই মা রাশিয়ার জারিনা অ্যালেক্সজান্দ্রা। অ্যালেক্সি একজন হিমোফিলিক। অ্যালেক্সি সেই সময়ের হিমোফিলিক, যেই সময়ে হিমোফিলিয়া ছিলো মরণব্যাধি।আর অ্যালেক্সি সেই সময়ের হিমোফিলিক, যেই সময়ে জারতন্ত্র তাদের গোপন কথা বাইরে প্রকাশ করতো না। জনগন কখনই জানতো না আমি কত যন্ত্রনা নিয়ে প্রতিটা দিন শুরু করতাম । যদি তারা জানতো তাদের পরবর্তী জার গুরুতর অসুস্থ? হয়তোবা তারা সত্যটা জানলে কিছুটা হলেও বুঝতে পারতো কেনো তাদের জার নিকোলাস জনগনের চাহিদা পূরনের চাইতে তার পরিবারকে সময় দিচ্ছেন বেশী। হয়তোবা তারা আমাকে একজন শাসক হিসেবে চিন্তা না করে একজন স্নেহপ্রবন বাবা হিসেবে দেখতো। কিন্তু যখন জনগন জানতে পারলো অ্যালেক্সি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত, ততদিনে রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে, তারা প্রচন্ড রকমের ক্ষুধার্ত। তাদের অধিকাংশ সৈন্য যুদ্ধ করছে খালি পায়ে, তখন রাশিয়ার পরিবর্তন প্রয়োজন। কিন্তু সত্যি আমি হতভাগা আমি জনগনের চাওয়াকে অনুধাবন করতে পারি নি, যখন অনুধাবন করতে করতে পেরেছিলাম, রাশিয়ার উপর আমার সেই কর্তৃ্ত্ব আর ছিলো না, যে কর্তৃ্ত্বকে আমি আমার পুর্বপুরুষরা ইশ্বরপ্রদত্ত ভাবতাম।
আমার বাবা ছিলেন জার অ্যালেক্সজান্ডার তৃতীয়, যিনি ৪৯ বছর বয়সে মারা যান আর দাদা ছিলেন জার অ্যালেক্সজান্ডার দ্বিতীয়, যিনি নৃশংসভাবে খুন হোন। আমি কখনোই নিজে থেকে জার হতে চাইনি, জার হওয়াটা ছিলো আমার নিয়তি। আমি ছিলাম প্রেমিক পুরুষ। আমি জার্মানির সুন্দরী প্রিন্সেস, ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার নাতনী, এলিক্সের (পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে অ্যালেক্সজান্দ্রা) প্রেমে পড়েছিলাম। অ্যালেক্সজান্দ্রার মা, ভিক্টোরিয়ার মেয়ে, এলিস অল্প বয়সে মারা গিয়েছিলেন। এলিসের বয়স যখন ৩৫ বছর, তখন তার ছেলে ডিপথেরিয়াতে আক্রান্ত হয়। ছেলেকে সহানুভূতি জানাতে গিয়ে এলিস চুমু খান, সেই সময়ের মরণঘাতক ডিপথেরিয়ার জীবাণু এভাবেই এলিসের শরীরে সংক্রমিত হয়। এলিসের মৃত্যুর পর অ্যালেক্সজান্দ্রা জার্মানিতে থাকলেও, বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করতেন ইংল্যান্ডেই নানী ভিক্টোরিয়ার সাথে। পরবর্তীতে রাশিয়া যখন জার্মানির সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, রাশিয়ান জনগন ভুলে গেলো অ্যালেক্সজান্দ্রা্র শরীরে ইংরেজ রক্তও প্রবাহিত হচ্ছে। বেশিরভাগ রাশান তাকে মনে করতো ঘৃন্য জার্মান হিসেবে। আমি যখন অ্যালেক্সজান্দ্রাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম, আমার বাবা-মা রাজী ছিল না, কারণ রাশিয়ার জারিনা হবার জন্য যেসব ডাইনামিক গুণাবলীর প্রয়োজন, সেগুলোর অধিকাংশের অভাব ছিলো অ্যালেক্সজান্দ্রার চরিত্রে। তাছাড়া তারা ফ্রান্সের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ফ্রান্সের প্রিন্সেসের সাথেই আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার ইচ্ছাই প্রাধন্য পায়। বাবা অ্যালেক্সজান্ডার তৃতীয়ের আকস্মিক মৃত্যুর পর, আমি প্রায় একই সময়ে অ্যালেক্সজান্দ্রাকে বিয়ে করি এবং রাশিয়ার জার হিসেবে সিংহাসনে বসি। তখন কেউই কী সেই সময়ে বুঝতে পেরেছিলো, যে রাজবংশ রাশিয়াকে ৩০০ বছর ধরে শাসন করেছে, আমিই হব সেই রাজবংশের শেষ জার? হাহ ঈশ্বর!!
- জনাব লোকমুখে শোনা আপনার জারিনার সাথে নাকি রাসপুটিনের অবৈধ্য সম্পর্ক ছিলো?
- আলবৎ না । এসব কুচক্রীদের কথা ।আমি জনগনের দুর্দশার কথা অনুভব করতাম, তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য চিন্তা করতাম, কিন্তু তা জনগনের সামনে প্রকাশ পায়নি। আমার সাথে সাধারণ জনগনের সম্পৃক্ততা না থাকলেও, এলিট সমাজের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু এমন এক সময় আসলো, যখন এলিট সমাজের সাথে এই সম্পর্কে ঘুণ ধরলো। এমন এক সময় আসলো, যখন রাজপরিবারের জীবনে Gregory Efimovich Novyk নামে আশ্চর্য ক্যারিশম্যাটিক সন্যাসীর আগমন ঘটলো, বেশিরভাগ মানুষ যাকে চিনে রাসপুটিন নামে। এই সন্যাসীকে আমি এমনি প্রশ্রয় দেইনি । আমি মানি হয়তো রাসপুটিন আমার সবচেয়ে বড় ভুলগুলোর একটি কিন্তু তাঁর আগে বুঝতে হবে কেন এই ভুল আমি করেছিলাম । যখন কেউ অ্যালেক্সির রক্তপাত বন্ধ করতে পারলো না, তখন একমাত্র রাসপুটিনই রক্তপাত বন্ধ করে দিয়েছিলো। শুনেছি এখনকার ডাক্তাররা মনে করেন , রাসপুটিন হিপনোটাইজিং জানতো, এবং অ্যালেক্সিকে হিপনোটাইজড করেই রক্তপাত বন্ধ করতো। কিন্তু শতাব্দীর গোড়ার দিকে আমার কাছে এই ছাড়া আর কোন গতি ছিলো না। তাছারা আমার আর জারিনার কাছে রাসপুটিনের এই রক্তপাত বন্ধ করার ক্ষমতাকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা বলেই মনে হতো এবং আমি সন্তানের বেঁচে থাকার জন্য রাসপুটিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম । তবে রাসপুটিনকে একবার রাজদরবার থেকে নির্বাসিত করেছিলাম শুধু তাঁর উছ্বংখল জীবন-যাপন পদ্ধতি, অতিরিক্ত মাত্রায় এলকোহল সেবন, নারীদের প্রতি অশালীন আচরন প্রভৃতি কারণে ।
কিন্তু ১৯১২ সালে পোল্যান্ডে অবকাশ যাপনের সময় অ্যালেক্সির আবার রক্তপাত শুরু হলে, আমি ও জারিনা, উভয়েই খুব বিচলিত হয়ে পড়ি। যখন ছোট্ট অ্যালেক্সি ব্যথা সহ্য করতে না পেরে কাতর কন্ঠে তাঁর মাকে বলল, ‘আমি যদি মারা যাই, তাহলে বোধহয় এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাবো, তাই না মা?’, সঙ্গে সঙ্গে জারিনা রাসপুটিনকে খবর দেয় এবং সে এসে আবারো রক্তপাত বন্ধ করে। যেহেতু, অ্যালেক্সির হিমোফিলিয়া জনগনের কাছে গোপন ছিলো, তারা বুঝতে পারতো না কেনো জারিনা রাসপুটিনকে এতো প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। আর তাই কুচক্রীদের প্রচারনায় অধিকাংশ জনগন মনে করতো, অ্যালেক্সজান্দ্রার সাথে রাসপুটিনের কোনো অবৈধ সম্পর্ক আছে।
- শুনেছি প্রিঞ্চ ফেলিক্স আপনার বোনের মেয়ের স্বামী, রাসপুটিনকে ১৯১৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সেন্ট পিটার্সবার্গে তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়। সেখানে প্রথমে রাসপুটিনকে সায়ানাইড মিশ্রিত মদ আর কেক খাওয়ানো হয়, কিন্তু রাসপুটিন মারা যায়নি। এরপর ফেলিক্স রাসপুটিনের বুকে গুলি করেন, এমনকি আরেকজন ষড়যন্ত্রকারী আরো দুইবার গুলি করে, কিন্তু তখনো রাসপুটিন মারা যায়নি। আহত রাসপুটিনকে পরে পেট্রোভস্কি দ্বীপের ব্রিজ থেকে নেভা নদীতে ফেলা দেওয়া হয়। কিছুদিন পর তার লাশ পাওয়া যায়। আপনার আত্মীয়রা কেন রাস্পুটিনকে মেরে ফেলেছিলো বলে মনে করেন?
- আসলে তাঁরা ভেবেছিলো রাসপুটিন রাজসভা চালাচ্ছে আড়াল থেকে । কাজেই তাঁরা ভাবে তাকে হত্যার মাধ্যমেই জারতন্ত্র রক্ষা করা যাবে। তবে জানো মৃত্যুর পূর্বে রাসপুটিন আমার কাছে এক অদ্ভুত ভবিষ্যতবানী করে যান । সেটা এরকম “ যদি আমি সাধারণ জনগনের হাতে মারা যাই, তুমি, রাশিয়ার জার, তোমার সন্তানদের জন্য কোনো চিন্তা করো না, তারা আরো শত শত বছর রাশিয়া শাসন করবে।……আর যদি আমার মৃত্যুর কারণ হয় তোমার আত্মীয়দের মধ্যে কেউ, তাহলে শুনে রাখো, তোমার পরিবারের সবাই আগামী দুই বছরের মধ্যে খুন হবে, খুন হবে রাশিয়ার জনগনের হাতে………”
- সেটা কি সত্যি হয়েছিলো?
- হুম ! রাসপুটিনের ভেতরে অদ্ভুত ক্ষমতা ছিলো । তাঁর ভবিষ্যতবানি কখনো মিথ্যে হতো না ।
- ভালোই লাগছে একজন মৃতের সাথে কথা বলতে । আপনি আপনার মারা যাবার আর আপনার বিরুদ্ধে হওয়া বিপ্লবের বর্ননা দিতে থাকুন ।
- আসলে আগেই আমি তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী জার্মান সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু রণাঙ্গনে দেখা গেলো রুশ বাহিনী যুদ্ধের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না। জার্মানির সাথে তারা প্রতিটি যুদ্ধেই হারতে লাগলাম আমরা। এমন সময়, আমি মারাত্মক এক ভুল সিদ্ধান্তে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিয়েছিলাম।
যুদ্ধ পরিচালনার জন্য আমি রাজধানী থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে আসলাম। অ্যালেক্সজান্দ্রার উপর দিয়ে আসলাম দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব। অনভিজ্ঞ জারিনা রাসপুটিনের পরামর্শমতো দেশ চালাতে গিয়ে এক অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করেন। রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গে দেখা দেয় প্রচন্ড খাদ্য সংকট। প্রতিদিন চলতে থাকে বিক্ষোভ। এরই মধ্যে রাসপুটিন খুন হলে জারিনা হয়ে পড়েন একা।আর এদিকে আমি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন আনতে পারছিলাম না, বরঞ্চ সমস্ত পরাজয়ের জন্য দায়ী করা হতে লাগলো আমাকেই। সেইসাথে যুদ্ধের পরাজয়ের জন্য জনগন অ্যালেক্সজান্দ্রাকে জার্মান গুপ্তচর বলা শুরু করলো। ক্রমেই তারা চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ আর প্রচন্ড খাদ্য সংকটের জন্য ফুঁসে উঠতে লাগলো। আমি তখন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নির্দেশ পাঠালাম আর্মিকে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে। কিন্তু সেই দক্ষ আর্মি কোথায়? তারা তো তখন পোল্যান্ডের গণকবরে শায়িত। এরপরে যাও ছিলো, তা নিয়ে জার যুদ্ধে ব্যস্ত। রাজধানীতে তখন শুধুমাত্র ভলান্টিয়ার সৈন্য। অনভিজ্ঞ এই সৈন্যবাহিনী সাধারণ জনগনের উপর গুলি বর্ষন করলো। পরে আমি ফিরে এলে আইনসভা দুমার নির্বাচিত সদস্যরা আমাকে জনগনের অবস্থার উন্নতি করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিলেন। কিন্তু আমি প্রতিবারের মত জনগনের ভাষা বুঝতে আবারো ব্যর্থ হলাম, দুমাকে ভুল বুঝে নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙ্গে দি্লাম। আসলে ভুলটা আমারই ।আমি যদি সাধারনের সাথে কথা বলতাম, বুঝতে পারতাম কতো অসহায় তারা, কতটা দরিদ্র তারা! আমি যদি ফ্যাক্টরীগুলোও দেখতাম, বুঝতে পারতাম সেখানে কী দুর্বিষহ অবস্থা চলছে! কিন্তু আমি বড়ো হয়েছিলাম এমন এক রাজকীয় পরিবারে, যেখানে আমাকে শিখানো হয়েছে, জার কখনো সাধারণের সাথে কথা বলে না, জারের কখনো ফ্যাক্টরীর পরিবেশ দেখতে যাওয়া লাগে না!আমি কখনোই সে সময়ে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়া বুঝতে পারি নি। আমি অনুধাবনও করতে পারি নি আমার দেশেরও কতটা পরিবর্তন প্রয়োজন ছিলো। সমাজের ভেঙ্গে পড়া আমার চোখের আড়ালে ছিলো । যখন সবকিছু প্রতিয়মান হলো আমি পদ ছেড়ে দিয়েছিলাম । পরবর্তী জার হিসেবে আমি মাইকেলের কথা বলেছিলাম । কাজ হয়নি ওরা মাইকেল কেও মেরে ফেলেছিলো ।
আমাকে পরিবারের সকল সদস্যসহ প্রভিশনাল সরকার প্রথমে আলেক্সজান্ডার প্রাসাদ এবং পরে তুবলস্কের গভর্ণর ম্যানসনে গৃহবন্দী করে রাখে। এই সময়টাতে আমার সাথে ছিলেন আমার স্ত্রী অ্যালেক্সজান্দ্রা, একমাত্র পুত্র অ্যালেক্সি, চার কন্যা ওলগা, তাতিয়ানা, মারিয়া আর আনাস্তাসিয়া, আমাদের পারিবারিক ডাক্তার ইউজিন বটকিন, জারিনার Lady-in-waiting আনা দেমিদোভা, পরিবারের পাচক ইভান খারিতোনভ এবং এলেক্সি ট্রুপ।
-জনাব আপনাদের কি বিনা বিচারেই মেরে ফেলা হয়েছিলো?
-বিচার? হাহ ! বিচারের যোগ্যতা কি ছিলো তাদের? তারাতো ভিতুর ডিম ছিলো । ১৯১৮ সাল, ১৬ই জুলাই, রাত ২ টা। ইয়াকুভ ইউরোভস্কি ,ডাঃ ইউজিন বটকিনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বললেন, ‘শহরে গোলমাল হচ্ছে, তাই সবাইকে বেসমেন্টে যেতে হবে’।আমাদের সবার পোশাক পরে তৈরী হতে প্রায় আধা ঘন্টার মতো সময় লাগে।আমি কোনো কিছুই তখন সন্দেহ করি নি। অ্যালেক্সি তখন হাঁটতে পারতো না, আমি ওকে কোলে করে নিয়ে বেসমেন্টে গেলাম। যে রুমটাতে আমরা্ গেলাম সেখানে কোনো আসবাবপত্র ছিলো না। আলেকজান্দ্রা বসবার জন্য চেয়ার চাইলে সাথে সাথে তিনটি চেয়ার এনে দেওয়া হল। আমি ভেবেছিলাম হয়তোবা আমাদের গ্রুপ ছবি তোলা হবে। একটু পরেই সেই রুমে ইয়াকুভের নেতৃত্বে ঘাতক দল, যারা আগে থেকেই পাশের আরেকটা রুমে অপেক্ষা করছিলো, প্রবেশ করে জানালো, যেহেতু হোয়াইটরা ইয়াকাটেরিনবার্গ প্রায় দখল করে ফেলছে, তাই রাজকীয় পরিবারের সবাইকে হত্যার আদেশ দেওয়া হয়েছে, বিনা বিচারে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে লেলিন এই আদেশ দিয়েছেন।
- হোয়াইট কারা?
- হোয়াইট হলো যারা আমার হয়ে প্রভিশনালদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো । তাঁরা চাইতো আমি জারত্ব ফিরে পাই । আর রেড আর্মিরা ছিলো লেলিনের সয়তানি সৈন্য ।
- আসলে কি হয়েছিলো তখন?
- আসলে, আমি কিছুই জানতাম না । আমি হোয়াইটদের কোন আদেশও দেইনি । তাঁরা শুধুই আমাকে ভালোবেসে আমাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছিলো । তাঁরা রেল রোড দখল করার উদ্দেশ্যে ১৯১৮ সালের জুলাইয়ের দিকে হোয়াইট আর্মি ইয়াকাটেরিনবার্গের দিকে অগ্রসর হতে থাকে,অথচ তারা জানতোও না সেখানে আমরা বন্দী অবস্থায় আছি। লেলিন ভেবেছিল ইয়াকাটেরিনবার্গ হোয়াইটদের দখলে চলে যাবে, সে চাইল না রাজকীয় পরিবারকে হোয়াইটরা মুক্ত করে পুনরায় জার হিসেবে অভিষিক্ত করুক। কাজেই সে কাপুরুষের মত আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন ।
- এবং আপনাদের হত্যা করা হলো ?
- হুম । কাপুরুষেরাই বন্দিদের হত্যা করে । যখন ঘাতকেরা বলল আপনাদের মরতে হবে । আমি তাদের জিগাষা করলাম - হোয়াইটদের অভিযানের পিছনেতো আমার হাত নেই তবে সে দোষে আমরা মরবো কেনো ? ওরা কিছু শুনলো না আমাদের দিকে রাইফেল তাক করলো , বলল - অতশত বুঝি না কম্রেড বলছেন তাই । আমি আবার তাদের বাঁধা দিয়ে কাকুতি মিনতি করে বলছিলাম আচ্ছা আমাকে মারছো মারো আমার দোষ আছে । আমি অযোগ্য রাশিয়ার শাষক কিন্তু আমার পরিবারের কি দোষ তাদের ছেড়ে দাও । ওরা আমার কথা শেষ না হতেই গুলি করা শুরু করল । সবার প্রথমেই ওদের গুলিতে আমি মারা যাই । তবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমি অ্যালেক্সির সামনে ঢাল হয়ে তাকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম। আমার পরপরই রানী ভিক্টোরিয়ার নাতনী, ইংল্যান্ডের তৎকালীন রাজা জর্জের আপন খালাতো বোন, রাশিয়ার শেষ জারিনা অ্যালেক্সজান্দ্রা ফিউডেরোভনা মারা যান। ওরা গুলিবর্ষনের প্রথম ধাপ শেষে দেখে আমার চার কন্যা সন্তান এবং অ্যালেক্সি বেঁচে গেছে। আসলে আলেকজান্দ্রা ওদের হিরের অলংকার পড়িয়ে দিয়েছিলো । অসভ্যরা আমার মেয়েদেরকে নগ্ন করে দেখতে চায় কেন তারা মরে নি । আমার লাশের উপরে আমার মেয়েদের সমস্ত কাপর চোপড় খুলে নেয়া হয়। তারা দেখে কাপড়ের ভিতরে ডায়মন্ড এবং অলংকারগুলোই প্রটেকটরের কাজ করেছিলো।সয়তান লেলিনের দোসর ইয়াকুভ এরপরে আমার চার মেয়েকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। কি বীভৎস ছিলো সেসব । আর সবার শেষে হত্যা করা হয় হিমোফিলিয়ার আক্রান্ত ১৩ বছরের আমার প্রিয় অ্যালেক্সিকে।
এসব সৃতিচারন করতে গিয়ে জার নিকোলাস কেদে ফেলেন । আমি জানতাম প্রত্যেক বিপ্লবের পিছনে থাকে কিছু মানুষের কান্না আর রক্ত । কান্না আর রক্তের সোপান বেয়ে আসে সফলতা । আর হয়তো সেই সোপানের সবচেয়ে বড় অংশই ছিলো জার নিকলাসের পরিবার সহ এই মর্মান্তিক মৃত্যু ।
- আপনার কথা শুনে আমার আমাদের দেশের একজনের কথা মনে পড়ে গেলো । যাকেও আপনার মত কিছুটা ভাগ্য বরন করতে হয়েছিলো ।
- কে তিনি? চোখ মুছতে মুছতে জিগাষা করলেন জার নিকলাস ।
- চিনবেন না । তিনি আমাদের জাতীর কারিগর । তাঁর হাতেই আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম । বঙ্গবন্ধু তাঁর উপাধি ছিলো ।
- তিনি কি করেছিলেন?
- নাহ ! অন্যায় বলতে আপনার মত কিছু করেন নাই । তিনি প্রজা দরদী ছিলেন । তবে তাঁরও কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো । সবগুলোকে ছাপিয়ে বড় ভুল ছিলো নিজের জনগন কে তিনি পাগলের মত ভালবাসতেন ! তাদের অন্ধের মত বিশ্বাষ করতেন । সেই জনগনই তাঁকে মেরে ফেলে পরিবার সহ । জানেন তাঁর না আপনার মতই একটা বাচ্চা ছিলো রাসেল নাম । বিদ্রহীরা সেই বাচ্চাটাকেও নির্মম ভাবে মেরে ফেলেছিলো । এবং সেটাও ছিলো সবার শেষেই । তার আগে তাঁকে তাঁর স্ত্রীকে তাঁর কন্যা পুত্র, পুত্রবধু সবাইকে মেরে ফেলা হয় । শেষে লুকানো রাসেলকে খুজে বের করে টেবিলে উপরে দাড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হয় ।
-তোমরা তো অনেক পিকুলিয়ার ! যে তোমাদের স্বাধীন করলো তাকেই তোমরা মেরে ফেললে? সো স্যাড ।
- আসলেই সো স্যাড ! আসলেই আমরা পিকুলিয়ার । বলেই আমি আবার তাকালাম জারের দিকে সেখানে তিনি ছিলেন না । তিনি চলে গিয়েছেন কিন্তু আমার ভাবনায় রাসেল আর এলেক্সিকে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন । এদের মেরে ফেলা হয় যাতে আর নতুন করে কোন দেখতে না চাওয়া শাসক কে না পেতে হয় ।,জারের বদলে আবার এসেছেন লেলিন সাহেব । জার থাকার সময় তিনি ছিলেন না । এখন এসেছেন । তিনি কি জারের মুখমুখি হতে চাননি ।
- বদমাইশ টা গিয়েছে?
-কে আপনাদের জার? হুম গিয়েছে । আচ্ছা কম্রেড শেষ একটা কথার উত্তর দিন তো , আপনাদের সেই বিপ্লব কি সফল হয়েছে? সেটার ফলাফল কি এখনো পাচ্ছে বিশ্ববাসি?
ঘ
- অবস্যই সফল হয়েছে ।রুশ বিপ্লব ব্যর্থ হয়নি, যেমন হয়নি মহান ফরাসী বিপ্লবও। আসলে কোন বিপ্লবই ব্যর্থ হয় না, কেননা ওই ঘটনা মানুষের অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে দাঁড়ায় এবং যা থেকে পেছনে হটার উপায় থাকে না, পথ থাকে শুধু সামনে যাবার। মানুষের মুক্তির সংগ্রাম থামবে না, সে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। রুশ বিপ্লব এই সংগ্রামের প্রত্যক্ষ মদদদাতা হিসেবে থাকবে, থাকবে স্ফুলিঙ্গের আলো ও উত্তাপ হয়ে।
এই মহান অক্টোবর বিপ্লবের পতাকা হাতে নিয়ে এশিয়া ও ইউরোপের ১৩টি দেশে শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে জনগণতান্ত্রিক তথা সমাজতান্ত্রিক দেশ ও রাষ্ট্রের গোড়া পত্তন হয়। সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদ, দালাল বুর্জোয়া ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ তথা সমাজ বদলের সংগ্রাম জোরদার হয়।
যদিও বিংশ শতাব্দীর শেষ অব্দে সাময়িক কালের জন্য কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বিপর্যয় ঘটে, তবুও অদ্যাবধি চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা ও কোরিয়ান সমাজতান্ত্রিক দেশের নেতৃত্বে সারা বিশ্বে এখনও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। আফ্রো এশিয়া লাতিন আমেরিকা, নেপালসহ বিশ্বের দিকে দিকে এখনও সাম্রাজ্যবাদ তথা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এগিয়ে চলেছে। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন অজেয়, সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদ তথা বিশ্বের যে কোন জাতীয় নিপীড়ক গোষ্ঠী এর অপ্রতিরোধ্য গতিকে স্তব্ধ করতে পারবে না। বিশ্বের দিকে দিকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের পতাকা হাতে নিয়ে এবং অক্টোবর বিপ্লবের আদর্শে বলীয়ান হয়ে আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনবোই।
কম্রেড লেলিন বলে চলছেন । কিন্তু আমি আর ঘুম ধরে রাখতে পারলাম না । আমি ঘুমিয়ে পরলাম.......................................। ঘুমের সাথে আমার কল্পনাও মিলিয়ে গেলো................................
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৭
নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: এক কথায় অসাধারণ ।