নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উদ্ভট

উদ্ভট

উদ্ভট কাব্যখোর

পাগলের প্রলাপ বকা ছাড়া আমার কোন কাজ নাই।

উদ্ভট কাব্যখোর › বিস্তারিত পোস্টঃ

খারাপ মানুষ

১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৫৮




কেরামত মিঞা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে কথা বলছে। মন ভালো থাকলে সে এরকমটা মাঝেমাঝেই করে। মন ভালো না থাকলে অবশ্য কথা ভিন্ন। তখন সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভেংচি কাটে। পান খাওয়া দাঁত বের করে, চোখ উল্টিয়ে, ভ্রু-কুচকে এভাবে ভেংচি কাটলে মন ভালো হবার সম্ভাবনা থাকে। আজ তাঁর মন এমনিতেই ভালো।

কেরামত মিঞার বাড়িভীটা সংলগ্ন একটি বেশ্যাপাড়া রয়েছে। স্থানীয়রা সেটাকে সুরুপল্লী নামে জানে। সুরু হলো এই পতিতালয়টির মাসি। তাঁর নামেই পতিতালয়ের নাম। দলিল অনুযায়ী অনেক বছর আগে স্থানীয় এক জমিদার এটির মালিক ছিল। তখন এটির নাম ছিল রঙ্গড়তখানা। অর্থাৎ রঙের আড়তখানা। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির সাথে এটির মালিকানাও বিলুপ্ত হয়েছে। বলাচলে সুরুমাসিই এখন এটির মালিক। খুব সাংঘাতিক মহিলা। নিজের প্রয়োজনে কাউকে খুন করতেও তাঁর দ্বিধা হয় না। পতিতালয়ের সকলেই তাঁকে খুব ভয় করে।

কাল রাতে সুরুপল্লীতে নয়া কিছু মেয়ে এসেছে। কয়েকজনকে সুরু নিজে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। কেরামত সামনেই ছিল। কয়েকটা মেয়ে একেবারে ঠাসা কঁচি। লোকালয়ে এধরনের মেয়েদের বলা হয় এক নম্বর। যাদের শরীরে কারো হাত পড়েনি। যাদের শরীরে হাত পড়েছে তাঁদের বলা হয় দুই নম্বর। যাদের শরীরে হাত পড়ার পাশাপাশি আরো অনেককিছু পড়েছে তাঁদের বলে ৩ নম্বর। মেয়েদের কথা ভাবতেই কেরামতের পান খাওয়া চোখে মুখে লোভাতুর একটা হাসি ফুটে উঠে। শরীরটা চনমন করতে থাকে। সে নিজেকে জিজ্ঞাসা করে,
- কেরামত মিঞা, তুমি কেমনতর মানুষ?
- খারাপ মানুষ! ভীষণ খারাপ মানুষ। বলেই কেরামত মিঞার হাসতে থাকে। লোভাতুর পুরুষের মত হাসি।
লোকমুখে কেরামত মিঞা আসলেই ভীষণ খারাপ মানুষ। মাওলানা সাহেব ফতোয়া দিয়ে তাঁকে সমাজচ্যুত করেছে। গ্রামের মুসলিমরা তাঁর ছায়া মারাতে চান না। পতিতালয়টিই তাঁর সমাজ। পেশায় সে পতিতার দালাল। লোকে গালী দিয়ে বলে মাগির দালাল। তাঁর কাজ প্রতিদিন পতিতাদের জন্য খদ্দের ধরে আনা। সুরু মাসির সাথে তাঁর চুক্তি আছে। রোজগারের একটা অংশ সে পায়। বেশি দাম ধরাতে পারলে বেশি টাকা পাবার সম্ভাবনা । আর নতুন মেয়ে মানেই বেশি দাম। পুরাতন মেয়েদের বেলায় খদ্দেররা বেশি টাকা দিতে চায় না। পতিতালয়ে মেয়ে বুঝে দাম। দামাদামি কেরামত নিজেই করে।

দালালীর পাশাপাশি কেরামতের আরো একটা কাজ রয়েছে। নতুন আসা মেয়েদের সেই তালিম দিয়ে থাকে। তালিম মানে খদ্দেরকে কিভাবে খুশি রাখতে হয় শেখানো। শেখানোর সময়ে কেরামত নিজের শরীরটাকে উদহরণ হিসেবে ব্যবহার করে। সেটা একটু ঝক্কির কাজ হলেও মজাটাও বেশ। একেকটা নতুন শরীর! অদ্ভুত সেইসব শরীরের ঘ্রাণ। যেন একেকটা সুবাসিত টাটকা ফুল। আর নতুন ফুলগুলোর প্রথম পুরুষ হবার বন্যতার মাঝে অস্বাভাবিক আনন্দতো আছেই।

কত জাতের মেয়েই এখানে আসে। বিবাহিত, অবিবাহিত, বাচ্চা, মধ্যবয়স্কা, কেউ উপায়ন্তর না দেখে পেটের দায়ে যেচে আসে। আবার কাউকে জোর করেই এই পেশায় নামিয়ে দেয়া হয়। ভালোবাসার কথা বলে, বিয়ের কথা বলে, চাকরির লোভ দেখিয়ে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করে দেয়া হয়। কেউ কেউ অবশ্য কম পরিশ্রমে বেশি টাকা আয়ের জন্য স্বেচ্ছায়ও এসে থাকে। গতর খাটাতে যাদের অনেক আলশেমি লাগে।

বিক্রি করে দেয়া মেয়েগুলো প্রথমদিকটায় খুব ঝামেলা করে। পালানোর চেষ্টা করে, আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাঁদের দেখে রাখতে পতিতাপল্লীর সুরুমাসি দুজন লোক রেখেছে। একজনের নাম গোপেষ। আরাকজনের নাম আলতাফ। দুজনই আগে ডাকাত ছিল। এদের তাগড়া অতিকায় শরীরের সামনে দাঁড়ালে কেরামতকে পুচকে মনে হয়। পাহারা দেয়ার জন্য এদের কাছে মান্ধাতার আমলের থ্রি নট থ্রি দুটো রাইফেল আছে। এতেই অবশ্য কাজ চলে যায়। এদের ভয়েই মেয়েগুলো একসময়ে পোষ মানতে বাধ্য হয়। কেরামত তাঁদের জন্য সাজসজ্জ্বার সরঞ্জাম নিয়ে আসে। লাক্স সাবান, সানসিল্ক শ্যাম্পু, আতরের শিশি, লিপিষ্টিক, নেলপলিশ সহ আরো কত কি! এসব ভাবতে ভাবতে কেরামত আবার হাসে। কুৎসিত চিন্তার হাসি। আজ রাতে তাঁর আবার তালিম দেয়ার দায়িত্ব। কেরামত নিজেকে আবারও আরাকটু জোরে জিজ্ঞাসা করে,
- কেরামত মিঞা, তুমি কেমনতর মানুষ?
- ভীষণ, ভীষণ খারাপ মানুষ! হাহাহা...



সাফিয়ার চোখভর্তি পানি। ভয়ানক চিন্তায় তাঁর মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। সে বুঝতে পারছে না আসলেই কী ঘটছে। তাঁকে একটা রুমের ভেতরে তালা মেরে রাখা হয়েছে। সাথে আরো ২জন নারী। একজন তাঁর মতই কাঁদছে আর মাঝে মাঝে মূর্ছা যাচ্ছে। খানিক গোঙাচ্ছে আর বলছে, - আব্বার কাছে যাব। আমি আব্বার কাছে যাব। আমি এই চাকরি করব না। আমার চাকরির দরকার নাই। আমারে রাইখা আসেন। তাঁর এই আবেদন শোনার মত এখানে কেউ নাই। সাফিয়ার বুঝতে বাকি থাকে না। এ মেয়েটিও তাঁর মত প্রতারিত। চাকরির কথা বলে একে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।

সাফিয়ার নিজেরই এখনো বিশ্বাস হয় না। নিজেকেও বিশ্বাস হয় না। লোকটাকে সে কতখানি ভালোবেসেছিল। কত স্বপ্ন দেখেছিল তাঁকে নিয়ে! লোকটা বলত, - সাফু, দেইখো একদিন আমাগো একটা ঘর হইব। পাহাড়দ্যাশে ঘর। সেইখানে তুমি রাজরাণীর মত থাকবা। আমি খাইটা আনুম। তোমারে কিচ্ছু করন লাগব না। তোমার কাজ খালি একটাই। আমি আইলে আমার সামনে বইসা থাকবা। ব্যাস।
সাফিয়া শুনে বলত মুচকি হেসে অনুযোগের স্বরে বলত, - আপনার মুন্ডু! তাইলে রান্নাবাড়া কে করব? ভুতে আইসা রাইন্ধা দিব?
লোকটা বলত, - আরে রান্নাবাড়ার লাইগা লোক থাকব। তোমারে আমি কুনু কাম করতে দিমু না। এই কইয়া দিলাম। তোমার কাম হইলো রাইতে যখন আন্ধার নামবো তখন আমার সামনে বইসা থাকবা। আমি বাত্তির আলোতে আমার সাফুরে দেখুম। সাফিয়া শুনে লজ্জা মেশানো ঠোটে বলত, - পারুম না। আমি আপনার কাছেই যামু না।
- আয় হায় তাইলে আমাগো বাচ্চা কেমনে হইবো? ও সাফু কি কও? একথা শুনে সাফিয়া আরো লজ্জা পেয়ে যেত। তাঁর কানগুলো যেন গরম হয়ে উঠত। কেমন যে লাগত মনে!
লোকটা কইতো, সাফু আমাগো কিন্তু দুইটা বাচ্চা হইব। তোমার মত ধলা। বড়টার নাম দিমু আলী। আলী মানে উইচা। পোলাডা তোমার মতই উইচা লম্বা হইব। আর ছুডুটার নাম হইব, তালি। আলীর সাথে মিল রাইখা তালি। সাফিয়া এই কথা শুনে প্রতিবাদ করত, -তালি আবার কেমন নাম?

লোকটা শুইনা হাসত, আহা কি মধুর লাগত সেই হাসি! অথচ এই হাসিটাই সাফিয়াকে ধোকা দিল! সব ছেড়ে যার জন্য চলে আসল। সেই কিনা তাকে এখানে এনে রেখে দিল! যাবার সময় বলল, সাফু তোমার দামটা খারাপ না! মনস্থির করসি এই টাকায় গঞ্জে দুই কাঠা জমি কিনমু। ভালো থাইকো। কাস্টমারের মন রাইখো। সাফিয়া নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না এখনো।

সাফিয়ার পাশেই আরাকজন মধ্যবয়স্কা। ইনি কাঁদছেন না। বরং বেশ হাসিখুশি। সাফিয়া আর ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকা মেয়েটিকে সান্তনা দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে বলছেন, - কাইন্দ না। কামডা কিন্তু খারাপ না। স্বয়ামী থাকলেও এইডাইতো করন লাগে। উপরে স্বয়ামীতো সবসময় দেহে না। প্যাটের খিদায় মাডি কাটোন লাগে। দিনশেষে দ্যায় ২০০ টাকা। এইহানে আধাঘন্টায় ২০০...



কাঁদতে কাঁদতেই সাফিয়া ঘুমিয়ে পড়েছিল। আচানক কিছু কথা-বার্তা শুনে সে চমকে জেগে উঠল। আওয়াজটা পাশের ঘর থেকে আসছে। সে তাকিয়ে দেখে ঘরে থাকা মধ্যবয়স্কা মহিলাটি নেই। তাঁর খিল খিল করে হেসে উঠার শব্দ শোনা যায় পাশের ঘর থেকে। পরিষ্কার শুনতে পায় সাফিয়া। তাঁকে একটা পুরুষ কন্ঠ বলছে, - শোনো, কাষ্টমার হইলো নারায়ণ, অনেকে বলে লক্ষ্মী কিন্তু লক্ষ্মীতো মেয়ে মানুষ। তোমাগো কাষ্টমার সব পোলামানুষ। তাই আমি কই নারায়ণ। কি কথা ঠিক কইসি না? প্রতিত্তরে মধ্যবয়স্কা কি বলেন শোনা যায় না। পুরুষকন্ঠ আবার বলে, - নারায়ণরে সন্তুষ্ট রাখবা তাইলে দেখবা আমোদ-ফুর্তির অভাব নাই। নারায়ণরে সন্তুষ্ট রাখতে হয় কেমনে জানো? দাঁড়াও তোমারে শেখাইতেসি। প্রথমে নিজ হাঁতে নারায়ণের পোশাক-আশাক খুইলা দিবা। কই, দেও দেখি,...

এটুকু শুনে সাফিয়া দুইহাতের আঙ্গুল দিয়ে কান বন্ধ করে ফেলে। সে দেখে পাশে থাকা মেয়েটির কোন রা নেই। বোধহয় আবার মূর্ছা গিয়েছে। কান বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কথাগুলো শোনা যায়। ভয়ংকর সব কথা। সাফিয়ার মাথা ঘুরতে থাকে। পেটের ভিতরে পাঁক দিতে শুরু করে। ভীষণ বমি আসছে তাঁর। চোখের পর্দায় নেমে আসছে নানান রঙ। তারপর আর কিছু বলতে পারে না সাফিয়া...







কেরামতের সামনে একটা বিছানা। বিছানায় লাল চাদর। চাদরে শরীর এলিয়ে একটা মেয়ে পড়ে আছে। নাম সাফিয়া। এখন সে অচেতন। দেখতে অসম্ভব সুন্দরী। ঠোটগুলো নিষ্পাপ শিশুর মত। বয়স ১৭ কি ১৮ হবে। কেরামত সাফিয়ার ওড়নাবিহীন শুভ্র বক্ষের খাঁজের দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু আগে সে আনোয়ারা নামের একজন মহিলাকে তালিম দিয়েছে। মহিলাটি স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিয়েছে। আগে একটা বিয়ে হয়েছিল। কেরামতের শরীরের আনন্দ তাতে অবশ্য খুব বেশি ফিকে হয়ে যায়নি।

আনোয়ারার সাথে সময় কাটানোর পর খানিকটা জিরিয়ে নিয়ে এই মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে। মেয়েটার গাল কাশ্মীরি আপেলের মত খানিকটা লালচে। কেরামত মনে মনে ভাবে মেয়েটার নাম দেবে গোলাপী। এইপাড়ায় আসল নামে ব্যবসা চলে না। ছদ্ধনাম ধরতে হয়। সেটাই আসল নাম। গোলাপী নামটা মেয়েটাকে মানাবে।
কেরামত তাঁর মুখে-চোখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরালো। চেতনা আসার পর মেয়েটা খানিকক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে কেরামতের দিকে তাকিয়ে ধপ করে কেরামতের পা ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
- আপনি আমার পিতার মত, দোহাই লাগে আমারে কিছু কইরেন না। আমারে ছাইড়া দেন। একথা বলে মেয়েটি ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। তাতে কেরামতের কামুক মুখায়ববের ভাবান্তর ঘটল না। এসব দৃশ্য তাঁর অচেনা নয়। তাচ্ছিল্য করে সে বলল,
- মা জননী, এইখানে কেউ কারো পিতা কিংবা ভাই হয়না। এখানে সবাই শুধু স্বামী। এই মূহুর্তে আপনারে আমি শিখাইব কিভাবে স্বামীদের সহীত মিশতে হয়। আচার ব্যবহার করতে হয়। একথা শুনে মেয়েটির কান্নার স্বর দ্বিগুণ বেড়ে গেল।
- আপনার দুইটা পায়ে পড়ি। আমারে ছাইড়া দেন। কেরামতের খানিকটা ধৈর্য্যচূতি ঘটল। বিরক্ত কন্ঠে সে বলল,
- মাগি তোরে ছাড়লে আমার রোজগারের কি হবে? তোরে ছাড়মু আমারে কি পাগলায় কামড়াইসে? বলেই সে পা সাফিয়ার কাছ থেকে পা ছাড়াতে লাগল। সাফিয়া তবুও পা ছাড়ছে না।
- আমারে তাইলে মাইরা ফালান। তবু আমার এই ক্ষতিটা করবেন না।
- তুই তাইলে নিজের ইচ্ছায় তালিম নিবি না তাইতো? নিজের ইচ্ছায় তালিম না নিলে, কেমনে তালিম দিতে হয় সেইটা আমার ভালো জানা আছে। মাগি দাঁড়া! এই কথা বলে কেরামত সাফিয়াকে স্বজোরে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে ঘরটা থেকে বের হয়ে গেল। যাবার সময় বাহির থেকে ঘরের খিল আটকে দিল।
বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল গোপেষ। আজ বোধহয় আলতাফ আসেনি। এরা পালা করে পাহারা দেয়। প্রয়োজনের সময় অবশ্য দুজন একসাথেই পাহারা দেয়। কেরামতকে রাগে ফুসতে দেখে গোপেষ বলল, - কি কেরামত মিঞা ঘটনা কি? মালডা আরাম দিতাসে না নাকি? বলেই সে খ্যাক কইরা হেসে দিল। হাসি দেখে কেরামতের শরীর জ্বলে গেল।
- আরাম দেয়া নেয়ার কাজতো আমার। তুমি পাহারা দেও। এত জাইনা তোমার কি? তোমার এত পেরেশানির কি?
- পেরেশান কি আর সাধে হই কেরামত মিঞা। মাঝে মাঝেই যে তোমার কাছ থিক্কা পক্ষী উড়ন দেয়। কেরামত এই কটাক্ষটা ধরতে পারে। এর আগেও অনেক মেয়ে তাঁর হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছে। কখনো কেরামতকে জিম্মি করে, কখনোবা আঘাতের মাধ্যমে অচেতন করে। কেরামত একদলা থুথু ফেলে বলে,
- আমার কাছ থিকা উড়নের সময় তুমি কি ছিরছিলা গোপেষ? আমার কাছ থিকাতো মাগি পলাইসে। তোমার যে নিজের বৌ তোমারে ছাইড়া পলাইসে। সেইডা মনে থাকে না? এই উত্তরে গোপেষ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উঠে।
- আরে খেপতেছ কেন? মশকরা করতেছিলাম।
- এখন মশকরা রাইখা তোমার বন্দুকটা দ্যাও। আর একটু গঞ্জে গিয়া রশি লইয়া আইসো। ঘরে রাখা পুরাতন রশি ইন্দুর কাইটা রাখসে। এইগুলারে রশি দিয়া বাইন্ধা রাখতে হবে। গোপেষ প্রথমে গঞ্জে যেতে রাজি হতে চায় না। পরে কেরামতের পীড়াপীড়িতে গঞ্জের দিকে হাটা ধরে। কেরামত গোপেষের বন্দুকটা নিয়ে পাশের ঘরে যায়। সেখানে আরাকটি মেয়ে হাটুমুরি দিয়ে বসে আছে। কেরামতকে দেখেই মেয়েটা একটা চিৎকার দিয়ে মূর্ছা যায়। কেরামত মেয়েটারে পাজকোলা করে পাশের ঘরে নিয়ে আসে। তারপর পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে সাফিয়া আর তাঁকে পাশাপাশি বসায়। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রাগে গজরাতে গজরাতে বলতে থাকে, মাগি কত ভাবছিলাম, আপোষে কি মজাটা করমু। এখনো সময় আছে ক তোরা কি স্বেচ্ছায় তালিম নিবি না আমি পিডান শুরু করুম? একথা বলেই কেরামত বন্দুকের বাট দিয়ে মেয়েটাকে মারতে উদ্যত হয়। দুটি মেয়ের কেউ কোন কথা বলতে পারে না। দুজনের কান্নার স্বর একসাথে মিশে শব্দটা আরো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠে। তাঁদের আর কোন গতান্তর নেই।

হঠাৎ ঠিক তখনি কেরামতের রাগি মুখটা হাসিতে ভরপুর হয়ে উঠে। সেই পান খাওয়া দাঁতের লোভাতুর হাসি। হাসি দেখে মেয়ে দুটি আরো সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। বন্দুকের বাটটা কেরামত দুহাত দিয়ে ধরে। তারপর আচানক নিজেই নিজের মাথায় স্বজোরে আঘাত করে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। হুট করে এমন ঘটনা দেখবে মেয়ে দুটো আশাও করেনি। কেরামত তাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে, পশ্চিমের রাস্তায় গঞ্জ ঐদিকে গোপেষ গ্যাছে। তোমরা দক্ষিণের খেতগুলো ধরে চইলা যাও। কিছুদূর গেলেই নদী। নদী পার হইয়া আর কিছুদূর পর বিশ্বরোড পাইবা। সেখানে সবসময় গাড়ি যাতায়ত করে। যেকোন একটাতে চইরা সোজা মানিকগঞ্জ জেলা শহর। শহরে গিয়া বাসে চইরা যার যার বাড়ি চইলা যাইবা। এই বন্দুকটা সঙ্গে লও। চালাইতে পারো?
কেরামতের প্রশ্নে সাফিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সে কিছুই বুঝতে পারে না। কি দেখছে সে? এই ভয়ংকর মানুষটা তাঁদের দুজনকে ছেড়ে দিচ্ছে। কেরামত আবার বলে উঠে, - না চালাইতে পারলেও সমস্যা নাই। কেউ সামনে আইলে খালি নলটা তাঁর বরাবর ধইরা রাখবা ব্যাস। আগাইতে সাহস পাইব না। যাও যাও দেরী কইরো না। গোপেষ আইলো বলে। সুরুমাসি টের পাইলে তোমাগোসহ আমারে জিন্দা পুইতা দিব। বলে সে নিজেই তাঁদের দুজনকে টেনে এনে দক্ষিনের পাঠক্ষেতের মধ্যে দিয়ে রাস্তা দেখিয়ে দেয়। কোন কথা না বলে উর্ধ্বশ্বাসে পালাতে থাকে দুজন।

কেরামত তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবে, এভাবে সে এই পেশায় আসতে রাজি না এমন কত মেয়েকেই পালাতে সাহায্য করেছে। তাঁর মাকে যদি কেউ এভাবে সাহায্য করত তবে হয়তো তাঁকে এই বেশ্যাপল্লীতে জন্মাতে হতনা। মায়ের কথা মনে করে উদাস গলায় কেরামত নিজের অজান্তেই আওরাতে থাকে,
- কেরামত মিঞা, তুমি কেমনতর মানুষ?
- ভীষণ খারাপ, খারাপ মানুষ!

লেখক: আল মুকিতুল বারী।
কলাবাগান, ঢাকা।
১৩-৭-১৭

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৭:৫৫

প্রতিভাবান অলস বলেছেন: ভীষন সুন্দর গল্প।

শুভকামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.