![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার স্বপ্নের হাতে হাতকরা, তাই স্বপ্নের হাতে বন্দি...................।
বাংলা নববর্ষের উদ্ভব:
“এসো হে বৈশাখ, এসো এসো”
আবহমান কাল থেকে বাঙ্গালির চিরন্তন সার্বজনীন পার্বণ বাংলা নববর্ষ।এ সময় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আনন্দে উদ্বেল হয় নববর্ষের আহ্বানে।আমরা বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন তথা পহেলা বৈশাখ শুরু করি বৈশাখী গান দিয়েই। বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়।
‘বাংলা নববর্ষ’ এ দেশের একটা প্রাচীনতম ঐতিহ্য। নববর্ষের উদ্ভব কোথায়, কখন হলো তা রহস্যে আকীর্ণ। এমন কি মানুষ কোন শুভৰণে বর্ষ গণনা শুরম্ন করলো তা নিয়েও রহস্যের শেষ নেই। লৰ যুগের এ অজ্ঞেয় রহস্য যুগে যুগে রহস্যবাদীদের আলোচনার রসদ যুগিয়েছে।
একবার পেছন ফিরে তাকানো যাক। খৃষ্টপূর্ব ৭০০০ গর্বিতা আসিরীয় সাম্রাজ্যের নিনেভা নগরী। প্রাচীন সভ্য লোকেরা জড়ো হয়েছে টাইগ্রিস নদীর তীরে। দেশ জুড়ে উৎসব চলছে, নববর্ষের উৎসব। উৎসবের মধুচ্ছন্দা রাগিনী টাইগ্রিসের কলচ্ছন্দে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত। হঠাৎ বিভাবরী নেমে এলো বিভাসে। আধেক আনন্দ, আধেক বেদনা নিয়ে আসিরীয়বাসী দেখলেন, এক পাল (?) ক্রীতদাস এই মাত্র বলী হলো টাইগ্রিসের সুনীল সলিলে। নববর্ষের প্রাচীনতম এ উৎসবের এরকম ছিটে ফোটা বর্ণনা আছে গিলগামোস নামের অদ্যাবধি আবিষ্কৃত বিশ্বের সর্ব প্রথম মহাকাব্যে।
অবশ্য এই উপমহাদেশে নববর্ষ বরণের কাহিনী অপেক্ষাকৃত নবীনতর।ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতেহত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাঠের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে।
আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয় নি।
বাঙ্গালী জীবনে নববর্ষের প্রভাব:
বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশি তথা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের প্রতিটি শহরে-নগরে, গ্রামে-গঞ্জে বাংলা নববর্ষ আনন্দ-উল্লাসে উদযাপিত হয়।নববর্ষে’ আমরা অতীত বৎসরের তিরোধান এবং সমাগত বৎসরের আবির্ভাবের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে যাই।
পহেলা বৈশাখে বাংলার জনসমষ্টি অতীতের সুখ-দুঃখ ভুলে গিয়ে নতুনের আহবানে সাড়া দিয়ে তাই মন সাড়া দেয়, চঞ্চল হয় নতুনকে গ্রহণ করার প্রস্তুতি নেয়। তারা সে-দিন প্রাত্যহিক কাজকার্ম ছেড়ে দিয়ে, ঘরবাড়ি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে, আটপৌরে জামা কাপড় ছেড়ে, ধোপদোরস্ত্ পোশাক-পরিচ্ছদ পরে, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করে পানাহারে মেতে যায়; বটের তলায় জড় হয়ে গান গায়, হাতে তালি বাজায়, মুখে বাঁশী ফুঁকে, মাঠে-বাটে খেলায় বসে পড়ে, তড়াক-পুকুরে সাঁতার কাটে, ডুব দেয় ও নদ-নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সব কিছু মিলে দেশটা যেন হয়ে উঠে উৎসবমুখর।
চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের প্রথম থেকেই গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হয়। এ-সময় আকাশ থেকে আগুন ঝরে; পশুপক্ষী গাছের ছায়ায় ঝিমুতে থাকে; মানুষের হাতে-হাতে তালের পাখা শোভা পায়; বাংলার সমুদ্রোপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষগুলো ডাবের জলে তৃষ্ণা মেটায়; ডাবের শাঁসে অমৃতের স্বাদ গ্রহণ করে; দেশ জুড়ে চাতক ‘দে জল’ ‘দে জল’ বলে চেঁচাতে থাকে; আর উত্তর-বঙ্গের পাড়ায়-পাড়ায় সাঁঝের বেলা ‘আল্লা মেঘ দে, পানি দে’ বলে যুবক-যুবতী, বালক-বালিকা সমস্বরে হাহাকার তোলে। মেঘের কাছ থেকে জল ভিক্ষা করাও ‘বাংলা নববর্ষের’ আর একটা সার্বজনীন অনুষ্ঠান।
বাংলা নববর্ষের সার্বজনীন অনুষ্ঠান বহু। এ-জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো এখন দেশের সর্বত্র প্রচলিত নেই। তবে, দেশের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে এখনও প্রচলিত আছে।
হালখাতা : হালখাতার অনুষ্ঠান পহেলা বৈশাখের একটি সার্বজনীন আচরণীয় রীতি।আমাদের দেশের সব শ্রেণীর ব্যবসায়ীর অর্থাৎ দেশীয় ধরনের যাঁরা ব্যবসায়ের হিসাব রাখেন তাঁদের মধ্যেই এই অনুষ্ঠানটির প্রচলন এখনও বর্তমান। তবে অর্থনৈতিক কারণে এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রভাবে পয়লা বৈশাখের’ এই অনুষ্ঠানটির জাঁকজমক এখন বেশ কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু ‘হালখাতা এখনও যথারীতি খোলা হয়। এখনও ব্যবসায়ীদের বিপণিগুলো পহেলা বৈশাখে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে বাহারি রঙের কাগজ, লতা-পাতা প্রভৃতি দিয়ে সাজানো হয়। এখনও এই দিনে ব্যবসায় কেন্দ্রগুলোতে বেচাকেনার চেয়ে আলাপ-আলোচনা ও সামাজিকতার পরিচয় পাওয়া যায় বেশী।
বৈশাখি মেলা : বাংলা নববর্ষের সার্বজনীন অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে বার্ষিক মেলার আয়োজনও একটি। বাংলা দেশের নানা স্থানে সারা বৈশাখ মাস ধরে বিশেষ করে পয়লা বৈশাখে বড়-ছোট নানা মেলা বসে। স্থানীয় লোকেরাই এ-সব মেলার আয়োজন করে থাকে। মেলাগুলোর স্থায়িত্বকাল এক থেকে সাত দিন। জনসাধারণের আনন্দ দানের উপযোগী আয়োজনও এ-‘মেলায় কম থাকে না। তন্মধ্যে নাচ, গান, নাগরদোলা প্রভৃতিই বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
পুণ্যাহ ; বাংলা নববর্ষের পুণ্যাহ নামক আরও একটি অনুষ্ঠানও সার্বজনীন। ‘জমিদার কর্তৃক প্রজাদের কাছ থেকে নতুন বছরের খাজনা আদায় করার প্রারম্ভিক অনুষ্ঠানসূচক দিন।’ এই সে-দিন (১৯২০) পর্যন্ত জমিদার ও বড় বড় তালুকদারের কাছারিতে ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠিত হত।
গম্ভীরা’ : এও একটি সার্বজনীন অনুষ্ঠান। প্রতি বৎসর সারা বৈশাখ মাস জুড়ে ঘটা করে না হলেও নীরবে গম্ভীরা অনুষ্ঠিত হয়।গম্ভীরা’ লোক-গীতি ও লোক-নৃত্যের অনুষ্ঠান।
বলীখেলা : এটির প্রচলন কেবল চট্টগ্রাম জেলায় সীমাবদ্ধ। ‘পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে সারা মাস ধরে এ জেলার নানা স্থানে ভিন্ন ভিন্ন দিনে বলীখেলার আয়োজন করা।
গরুর দৌড় : ‘নববর্ষের সার্বজনীন অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে গরুর দৌড় অন্যতম। এ-অনুষ্ঠানটি এখন একরূপ লোপ পেয়েছে।
বাংলা নববর্ষ’ এ দেশের একটা প্রাচীনতম ঐতিহ্য। পয়লা বৈশাখের উৎসবের মধ্য দিয়ে এ-দেশের নরনারী এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সঙ্গীত, নৃত্য, আমোদ-প্রমোদ, পানাহার প্রভৃতি পৃথিবীর যে কোন প্রাচীন ও নবীন উৎসবের একটা অতি সাধারণ অঙ্গ। প্রাচীনকালের ‘আর্তব উৎসব’ থেকে আধুনিক যুগে এসে এ-গুলো ভোল পালটিয়েছে বটে’, তবে তাদের মৌলিক সত্তা কখনও হারায়নি। তার প্রমাণ পাচ্ছি বাংলা প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগের কাব্যে, গানে, গাথায় ও বারমাসীতে। এগুলোতে বৈশাখে ‘নববর্ষের’ আগমনে আমাদের দেশের মানুষের চিত্তে যে চেতনার পরিচয় পাই, তাতে ঋতু পরিবর্তনের অমোঘ প্রভাব সূচিত হয়। তাই বলতে হয়, ‘বাংলা নববর্ষ’ আর্তব উৎসব এবং কৃষ্যুৎসবও বটে। এর সাথে ধর্মের কোন সংস্রব নেই বললেই চলে।
আমাদের অধুনাতন নববর্ষ এ-দেশের গ্রীষ্মকালীন আর্তব উৎসব ও কৃষিৎসব উদযাপনের একটা বিবর্তিত নবসংস্করণ। এর ঐতিহ্য প্রাচীন, কিন্তু রূপ নতুন। নতুন সংস্কার, নতুন সংস্কৃতি, নতুন চিন্তাধারা অবারিত স্রোতে যুক্ত হয়ে এতে সৃষ্টি করেছে এমন এক নতুন আবহ, যাকে একটা দার্শনিক পরিমণ্ডল বলে উল্লেখ করতে হয়। এ পরিমণ্ডলে পুরাতন বিলীন, মিথ্যা বিলুপ্ত ও অসত্য অদৃশ্য। আর নতুন আবির্ভূত, নবজীবন জাগরিত, সুন্দর সুস্মিত ও মঙ্গল সম্ভাবিত।কাল-বৈশাখীই’ এর প্রতীক। সে নববর্ষের অমোঘ সহচর, নব-সৃষ্টির অগ্রদূত, সুন্দরের অগ্রপথিক ও নতুনের বিজয়-কেতন। তাই, আজিকার দিনে কবি কালবৈশাখী দেখে গেয়ে উঠেন,-
“তোরা সব জয়ধ্বনি কর,
তোরা সব জয়ধ্বনি কর,
ওই নতুনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”
২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৯:২৩
মুহম্মদ তুষার খান বলেছেন: পহেলা বৈশাখ তথা ফসলী সনের প্রথম দিন,যা মূলত: মুসলমানদের জন্য নয়
বাংলা সনের পহেলা বৈশাখ বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্য নয়
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:২০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার লেখাটা বাংলাপিডিয়া ৫ম ও ষষ্ঠ খণ্ড যথাক্রমে পহেলা বৈশাখ ও বাংলা বর্ষপঞ্জি থেকে লেখা, যা যথাক্রমে সমবারু চন্দ্র মহন্ত ও সৈয়দ আশরাফ আলীর লেখা। সূত্র উল্লেখ করা উচিত ছিল। আপনি হয়তো আরো কিছু অনলাইন লিংক ব্যবহার করেছেন, তাও উল্লেখ করতে পারতেন।
শুভ কামনা।