![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার স্বপ্নের হাতে হাতকরা, তাই স্বপ্নের হাতে বন্দি...................।
এক
অদ্রীকা মন খারাপ করে বসে আছে। ওর হাতটা আবির জড়িয়ে রেখেছে হাতে। প্রথম সূর্যের লাল আভা ছুঁয়ে যাচ্ছে দুজনকে। আবির তাকিয়ে আছে আনমনে দূর কুয়াশায়। হঠাৎ আবিরের চোখ পড়লো অদ্রীকার চোখে। অদ্রীকার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরছে পানি। আবির নিজ হাতে পরম যত্নে ওর ভালোবাসার মানুষটির চোখের পানি মুছিয়ে দিচ্ছে।
আবিরঃ পাগলী মেয়ে, এভাবে কাঁদতে নেই (আবিরের মুখ থেকে নিঃস্বত শীতের ধোয়ায় সিক্ত হল অদ্রীকা।)
অদ্রীকা এবার নিজেকে ফেরাতে পারল না, আবিরের কাধে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
অদ্রীকা কিছু বলার আগেই আবির ওর আঙ্গুল দিয়ে মুখ চেপে ধরল।
আবিরঃউহু, একদম চুপ। কাল আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।
দুই
খুব ভোরেই অদ্রীকার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখল ৬টা বাজে। আবির ওর জন্য নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে। অজানা এক বন্ধন ডাকছে তাকে। আজ যেতে হবে বহুদূর। তড়ি ঘড়ি করে নিজেকে গুছিয়ে নিল। ব্যাগ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুবা বাসা থেকে বের হওয়া ঝামেলা হতে পারে।আস্তে আস্তে নিজের রুম থেকে বের হতেই বাবার সামনে পরে গেল।
বাবাঃ (কিছুটা আশ্চর্য হয়ে) অদ্রী, এতো সকালে কই যাচ্ছ?
অদ্রীকাঃ (ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গেল। বাবা কে যমের মত ভয় পায় ও) বাবা, কিছু নোট আনতে যাচ্ছি মিম এর বাসায়।
বাবাঃ তোমাকে তোমার মা কিছু বলেনি? যাই হোক আমি বলছি, সকাল ১০টায় বাসায় মেহমান আসছে তোমাকে দেখতে। তাই, আজ নোট আনতে যেতে হবে না।
অদ্রীকাঃ (মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে)
বাবাঃ যাও ভেতরে গিয়ে তোমার মাকে একটু সাহায্য করো।
অদ্রীকা কিছু না বলেই নিজের রুমের দিকে হেঁটে গেল।
অদ্রীকার চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। কি বলবে ও আবিরকে? দ্বিধায় পড়ে গেল। আবির ওকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন ধরার সাহস পাচ্ছে না। কোন উত্তর না পেয়ে ফোন বন্ধ করে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল অদ্রীকা।
তিন
আবির ষ্টেশনে অপেক্ষা করছে অদ্রীকার জন্য। অদ্রীকার এখানে এসে পৌঁছাবার কথা সকাল সাতটার মধ্যে। সাতটা বাজতে এখনো ২৫ মিনিট বাকি। তবুও ছটফট করছে ও। এদিকে ওদিকে ছোটাছুটি কিংবা কখনো উঠবস করে সময় পার করছে। আবির পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল অদ্রীকাকে ফোন দেবার জন্য। অবশেষে নাম্বারটা বের করে কল দিল। রিং হচ্ছে। কোন রিসপন্স পেল না। কিছুক্ষন পর আবার ফোন দিল, এবার ফোন বন্ধ পেল। আবির নেট প্রবলেম ভেবে আবার কল দিল। তবুও বন্ধ পেল। আবির বেশ কয়েকবার ফোন দিল। তবুও ফোনে পাওয়া গেল না অদ্রীকাকে। আবির বিরবির করে বলতে লাগল, অদ্রীকারতো এমন করার কথা ছিলনা!
আবির এবার পাগলের মত এদিক ওদিক করতে লাগল। যেট্রেনে ওদের যাবার কথা ছিল সেই ট্রেন সবে মাত্র ষ্টেশন ছেড়ে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে একটা মেসেজ লিখল আবির।
“অদ্রী,
যে ট্রেনটিতে আমাদের পারি জমানোর কথা ছিল দূর অজানায়, সেটা চোখের আড়ালে মিলিয়েছে ক্ষণিক আগে। কথা ছিল হারিয়ে যাবো দুজনে। আমি কথা রাখছি, আমি হারিয়ে যাচ্ছি; হয়তো সেখানে তুমি থাকবে না”।
আবির রেল লাইন ধরে হেঁটে চলল।
চার
[১০ বছর পর।]
যদিও সকাল ৯টা, এখনো সূর্যের দেখা মেলেনি। কুয়াশায়চারদিক ঢেকে আছে।আজ অরিনের প্রথম স্কুল। অদ্রীকা অরিনকে স্কুলের গেটে নামিয়ে দিল।
অদ্রীকাঃ বাবা, তুমি একদম ভয় পাবে না। আমি তোমার জন্য বাহিরে অপেক্ষা করছি।
অরিন স্কুলের গেটে দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল।
অদ্রীকা চলে যাবার একটু পরে আবির তার মেয়েকে নিয়ে স্কুলের গেটের কাছে এল। আজ অধরাও প্রথম স্কুল। অধরা কিছুটা ভয় পাচ্ছে।
আবিরঃ ভয়ের কিছু নেই। আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব। তুমি শুল ছুটির পর ঠিক এখানে চলে আসবে।
স্কুল ছুটি হবার পর একে একে সবাই বের হতে লাগল। অধরার ভয় এখনো কাটেনি। অধরা স্কুলের এক কোনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। অরিন বের হবার পথে দেখল ওরই ক্লাসের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। অরিন কাছে গিয়ে অধরার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে এল।
বাহিরে এসে অধরাকে নিয়ে অরিন গেটের একটু পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তখনো অধরা কাঁদছে। অধরার কান্নায় চোখ দিয়ে পানি ঝরতে দেখে অরিন হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিচ্ছে।
অদ্রীকা তরিহরি করে স্কুলের গেটের দিকে যাচ্ছে। ও দেখলো অরিন ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
অন্যদিকে আবিরও চুটে আসছে নিজের মেয়ের কাছে। আবির কাছে এসে মেয়ের হাত ধরে বললঃ
আবিরঃ পাগলী মেয়ে, এভাবে কাঁদতে নেই।
ঠিক তখনি আবিরের মুখ থেকে নিঃস্বত শীতের ধোয়ায় সিক্ত হল অদ্রীকা । চিরচেনা সেই গন্ধ নাকে আসতেই অদ্রীকা চোখ তুলে তাকায় আবিরের দিকে। আবিরের চোখ আটকে যায় অদ্রীকার চোখে।
আবিরঃ তুমি?
আদ্রীকাঃ (অপরাধির মত মাথা নিচু করে আছে।)
আবিরঃ আমাদের তো এখানে দেখা হবার কথা ছিল না।
অদ্রীকাঃ অসময়ের দেখা তো এমনই হবার কথা ছিল।
আবিরঃ চেষ্টা তো করেছিলে, তবুও পারলে না তো নিজেকে লুকিয়ে রাখতে!
অদ্রীকাঃ (চুপ করে রইল।)
বাবা মায়ের কথা বলতে দেখে নিজেদেরমধ্যে জড়তা কেটে গেল অরিন এবং অধরার। ওরা দুজন হাত ধরে হাটতে লাগল। আদ্রীকা ও আবির দুজনে পাশাপাশি ওদের পেছনে হাটতে লাগল, দুজনেই নিরব। হাঁটতে হাঁটতে আকষ্মিক ভাবেই অদ্রীকার হাতটি ছুঁয়ে গেল আবিরের হাত।
---শেষ----
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২৫
kabbyo বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:০৭
অপ্রচলিত বলেছেন: অসময়ে কাছে আসার গল্পে ভালো লাগা। +++++++++