নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কর্মব্যস্ততার মধ্যে একটু সময় পেলে কিছু একটা লিখি।

কবির সরদার

কবির সরদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনাকোন্ডা

০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:২৫

ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা সবাই আনাকোন্ডার কথা শুনেছ। আনাকোন্ডার অনেক ভয়ানক মুভি দেখেছ। তোমাদের প্রায় সবারই জানা যে আনাকোন্ডার বাস দক্ষিণ আমেরিকায়। বিশেষকরে আমাজানের বিভিন্ন শাখা নদীর জলজ এলাকায় এদের প্রচুর পরিমানে দেখা যায়। কিন্তু বন্ধুরা এই আনাকোন্ডা এক সময় আমাদের উপমহাদেশে প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত। এসব আনাকোন্ডার এলাকাগুলোতে মানুষ ভয়ে যাতায়াত করত না। একটা ভয় কাজ করাত যে এরা আস্ত মানুষ ধরে গিলে খেয়ে ফেলে।

অত্র এলাকার মানুষ কিন্তু তখন এ সাপগুলোকে অজগরের একটা বৃহৎ জাত হিসেবেই চিনত। অজগর ডিম দেয় আর এরা বাচ্চাা দেয়। এদের বিচরণ জলজ এলাকায় আর অজগরের বিচরণ বেশীর ভাগই স্থলভাগে।

এখন আমরা এ উপমহাদেশের সর্বশেষ যে এলাকায় আনাকোন্ডা দেখা গেছে সে এলাকার কথা জানব। আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান শরীয়তপুর জেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের আনাখন্ড গ্রাম। এটা ছিল সুলতানী আমলে একটা গভীর ঝোপ-জঙ্গল। এর তিন দিকে ছিল বিশাল কালাজারা বিল। শীত মৌসুমেও এ বিলের পানি শুকাতো না। তাই এখানে আনাকোন্ডা বসবাসের এক উপযোগী পরিবেশ ছিল। এ জঙ্গলে পাওয়া যেত শিয়াল, বাঘডাসা, বন বিড়াল ইত্যাদি প্রাণী এবং বিলে পাওয়া যেত বিশাল আকৃতির প্রচুর মাছ। এসবগুলোই আনাকোন্ডার প্রিয় খাদ্য। তাছাড়া মানুষেরও অত্র এলাকায় আনাগোণা ছিল না। তাই আনাকোন্ডারা নির্বিঘ্নে তাদের রাজত্ব চালিয়ে যেত।

সুলতানী আমলে এক ভরা বর্ষায় পর্তুগীজ জলদস্যুরা কীর্তিনাশা নদী দিয়ে যাওয়ার সময় ভুল করে এ এলাকায় ঢুকে যায়। তখন তারা পথ হারিয়ে কালাজারা বিলের পাশের জঙ্গলের কিনারায় নোঙর করে রাতে ঘুমিয়ে পরে। গভীর রাতে হৈচৈ শুনে সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। একজন জলদস্যুকে বিশালাকার অজগর পেচিয়ে ধরেছে। সাবাই মিলে আপ্রাণ চেষ্টা করে, অজগরটাকে মেরে তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু ততক্ষণে তার ভাবলীলা সাঙ্গ হয়েছে। এছাড়া তাদের খাবারের জন্য লুটে আনা কয়েকটি ছাগল এ অজগররা খেয়ে ফেলেছে। ভিন্ন প্রকৃতির এ অজগর গুলো যে আাসলে আনাকোন্ডা, জলদস্যুরা তা চিনতে পারে। তারা এ আনাকোন্ডা উপদ্রুত এলাকা ত্যাগ করে এবং বিভিন্ন জাগায় তাদের এ আনাকোন্ডার কবল থেকে বেড়িয়ে আসার কথা বর্ণনা করে। সে থেকেই এ এলাকার নাম হয় আনাকোন্ডা যা পরে অপভ্রংশ হয়ে আনাখন্ড হয়।

আজ থেকে পাঁচ শত বছর আগে সুলতানী আমলে বাংলা কৃষি ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি সাধন করে। বিভিন্ন জনবসতিহীন এলাকায় সুলতানরা তাদের অবসরপ্রাপ্ত সৈন্যদের পত্তন দিতে থাকে। এতে বাংলায় কৃষি ক্ষেত্রে বিশাল বিপ্লব ঘটে। সুলতান আলাউদ্দিন শাহ-এর আমলে তার একজন বীর সেনা ”লালচান গাজী” যে মূলতঃ ইরানী বংশদ্ভুত। বিরত্বের জন্য গাজী উপাধি পেয়েছে। পাহাড়ী এলাকায় যুদ্ধের সময় অনেক অজগর প্রবণ এলাকায়ও সে নির্বিঘ্নে কাটিয়েছ। সে অত্র এলাকায় আনাকোন্ডার বিচরণ ক্ষেত্র জেনেও এখানে বসতী করার আগ্রহ প্রকাশ করে। তখন এ এলাকা বিক্রমপুর পরগনার অধীনস্থ ছিল। বিক্রমপুরে নিযুক্ত সুলতানের সুবেদার তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে অবসরে অত্র এলাকায় বসতি করার অনুমতি দেয়।

লালচান গাজী কোন রকম ভয়ভীতির তোয়াক্কা না করে এ জনমানবহীন জঙ্গলের পূর্ব দক্ষিণ পাশে বিলের কিনারায় বসতি করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু এরকম ভয়ানক বিপদসংকুল এলাকায় একা বসবাস করা সম্ভব নয়। আশেপাশের কেউ তাকে সহযোগীতা করতে এল না। কারণ অত্র এলাকায় সবাই আনাকোন্ডার ভয়ে ভীত। তাই সে অনেক দূরদুরান্ত থেকে বসতি স্থাপনকারীদের এনে প্রতিবেশী বানাল। তারা সবাই মিলে কিছু কিছু ঝোপঝাড় পরিস্কার করে বসবাস আরম্ভ করল। আনাকোন্ডার আক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য তারা বসত বাড়ীর চতুর্দিকে গাছ পুঁতে বিশাল প্রাচীর নির্মাণ করল।

ধীরে ধীরে তারা বিলের কিয়দংশে আবাদ করা আরম্ভ করল। কিন্তু যেখানেই যায় শুধু আনাকোন্ডা আর আনাকোন্ডা। আনাকোন্ডারা তাদের এলাকায় মানুষের বসতি কিছুতেই মেনে নিতে পারল না। তাই তারা বিভিন্ন ভাবে মানুষকে অত্র এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য উৎপিরণ করতে আরম্ভ করল। তাদের পোষা প্রাণীগুলো খেয়ে ফেলতে লাগল। মাঝে মাঝে একা পেয়ে মানুষকে আক্রমণ করল। এমনকি কয়েকেজনকে আস্ত গিলে ফেলল। সাবাই ভয়ে ভীত হয়ে গেল। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে লাগল। ক্ষেত খামারে কাজ করতে গেলে তাদের দল বেঁধে যেতে হতো। রাতে চলাচল প্রায় বন্ধ। তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল আনাকোন্ডা নিধনের। এজন্য তারা বৃদ্ধ লালচান গাজীকে বিক্রমপুরে সুবেদারের কাছে পাঠাল।

তখনকার মানুষের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের চিন্তা ভাবনা ছিল না। তাই সুবেদার অস্রগুদাম থেকে কিছু পুরোনো অস্র দিয়ে ধীরে ধীরে আনাকোন্ডা নিধনের কথা বলে দিল। সেই সময় থেকেই আনাকোন্ডা নিধন আরম্ভ হলো। পরবর্তীতে বহুবছর পর্যন্ত আনাকোন্ডা নিধন কার্যক্রম চলছিল। এভাবে ধীরে ধীরে অত্র এলাকা প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে আনাকোন্ডা শুন্য হয়ে গেল। কিন্তু তাদের কারণে সৃষ্ট এলাকার নাম ঠিকই রয়ে গেল।

তোমরা ইচ্ছে করলেই এখন আনাখন্ড গ্রাম দেখতে যেতে পার। এখনো সেই বিল আছে, তবে সেই গভীরতা নেই। সেই ঝোপঝাড় আছে, তবে ঘনত্ব নেই। এখন লোকালয় হয়ে গেছে। কিন্ত ভয়ানক নামটা রয়ে গেছে।
আনাখন্ড!!!

____ কবির সরদার (২২/০২/২০১৮)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৩৭

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: জানলাম। ধন্যবাদ।

০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৫৫

কবির সরদার বলেছেন: স্বাগতম।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: ছোট্র বন্ধুরা মানে??

০৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:৫০

কবির সরদার বলেছেন: গল্পটা ছোটদের উদ্দেশ্যে লেখা, তাই। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.