![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ আমি আমার জীবনের শেষ গল্প লিখতে বসেছি। আর কখনো লিখবো না আমি। এতো বড় সিদ্ধান্তের পেছনে আছে একটি চিঠি। আগে চিঠিটা পড়েন, পরে বাকিটা বলব।
প্রিয় লেখক,
আপনি আমাকে চিনবেন না। একসময় আমি আপনার লেখার একজন গুণমুগ্ধ পাঠক ছিলাম। আপনি যদি শ্রেষ্ঠ দশজন ভক্তের তালিকা তৈরী করতেন, তবে আমার নামটি নিঃসন্দেহে প্রথমেই থাকতো। এ পর্যন্ত প্রকাশিত আপনার সবগুলো বইয়ের নাম আমি এক নিঃশ্বাসে বলে দিতে পারব। বলে দিতে পারব, সব কটি বইয়ের প্রধান চরিত্রের নাম। আরো বলতে পারব, আপনার কোন বই কাকে উৎসর্গ করেছেন। মুখস্থ বলতে পারব, কোন বই কোন বাক্য দিয়ে শুরু হয়েছে। আপনার সবকটি বই একসময় আমার সংগ্রহে ছিল। মনে পড়ে, ডিগ্রি ফাইনাল পার্টের অর্থনীতি পরীক্ষার আগের রাতে পড়াশুনা ফেলে শেষ করেছিলাম আপনার ‘নিশি পাওয়া মানুষ’ নামের বইটি। এতোটাই ভক্ত ছিলাম আপনার লেখনীর! কী এক দুর্নিবার আকর্ষণে আমি ছুটে যেতাম আপনার বইয়ের জগতে! আপনার বই পড়তাম আর পড়তে পড়তে হাসতাম। কখনোবা দুচোখ বেয়ে জল ঝরে পড়তো আমার। আমার অনুভূতি হাতে নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলতে পারত আপনার লেখনী! এমন শক্তিমান একজন লেখক আমাদের এ দেশে আছে, এ ভাবতেই গর্বে বুকটা ভরে উঠত। আপনার লেখার বিপরীতে কেউ কিছু বললেই কান্না পেতো আমার। আমাদের পরিবারের সবাই আমার এই পাগলামীর কথা জানতো। তাই কেউ আমাকে কোন গিফট দিতে চাইলে আপনার বইগুলোই বেছে নিত। আপনার বইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল আমি যখন কাস টুয়েলভে। আর আমার বিয়ে হয়, আমি ডিগ্রী পরীক্ষায় পাশের পরপরই। এখানে বলতে হয় যে, ডিগ্রী ফাইনাল আমার দুবার দিতে হয়েছিল। প্রথমবার আপনার বই পড়ে পরীক্ষা দেয়ার কারনে অর্থনীতিতে ফেল করেছিলাম!
বিয়ের পর আমার হাসব্যান্ডও জানতে পারেন আমার প্রিয় লেখক হিসেবে আপনার কথা। ব্যবসায়ী বলে কি না জানিনা, উনি আবার বই পড়া পছন্দ করতেন না। আপনাকে নিয়ে যখনই উনার সাথে গল্প করতে চাইতাম, উনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতেন। আমার আবার দিনে অন্তত একবার আপনার বই নিয়ে কারো না কারো সাথে কথা না বললে হতো না। আমার এই আচরনে উনি বিরক্ত হতেন। বলতেন, আমাদের এই ছোট্ট সংসারে তুমি আরেকজন পুরুষকে নিয়ে এসো না। তার কথায় আমার খুব অভিমান হতো। আমি ভেবে পেতাম না, আমার এই নির্দোষ লেখক প্রেমে উনার সমস্যাটা কী। মাঝে মাঝে আমি রাগ করে উনার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিতাম। আমার এই রাগ দেখে উনি যে চরম বিরক্ত হতেন এটা বুঝতে পারতাম।
একদিন লইব্রেরীতে গিয়ে আপনার নতুন একটা বই কিনলাম। বইয়ের নাম ভালবাসার রকমফের। বাসায় ফিরে পড়তে গিয়ে অবাক হলাম। ওমা! এ যে দেখি আমার নাম! গল্পের নায়িকার নাম পারুল। আমার নামও পারুল। আরো আশ্চর্য বিষয় গল্পের পারুলের বাড়ি আমার বাবার বাড়ি একই জায়গায় ময়মনসিংহের গাজীপাড়ায়। কাকতালীয় এ মিল দেখে আমি খুব মজা পেলাম। গল্পে আপনি লিখেছেন পারুল নামের মেয়েটির সাথে আপনার একসময় পরিচয় ছিল। তাকে আপনি পড়াতেন। পড়াতে পড়াতেই তার সাথে আপনার প্রেম হয়ে যায়। সেই প্রেম কাহিনী তুমূল যখন, তখন বাঁধ সাধেন আপনার মা। শেষ পর্যন্ত মায়ের জয় হয়। পারুল নামের মেয়েটিকে চিরতরে দূরে ঠেলে দেন আপনি। চরম মর্মস্পশী সেই গল্পটি পড়তে পড়তে আমি দুপুরের নাওয়া খাওয়া ভুলে গিয়েছিলাম। সন্ধায় উনি যখন বাড়ি ফিরলেন তখন মাত্র বইটা পড়া শেষ করেছি। আমার চোখে পানি ঝরছে। আমার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে, আমি তাকে বইটি দেখালাম। আমি আসলে তাকে আপনার লেখার শক্তিটা দেখাতে চাচ্ছিলাম। একজন লেখক কতোটা ভাল লিখলে এভাবে তার পাঠককে কাঁদাতে পারে- চাচ্ছিলাম বিষয়টা উনি বুঝতে পারেন। তিনি বইটা হতে নিলেন এবং ঐ প্রথম তিনি আপনার বই পড়া শুরু করলেন। আমিও মনে মনে আনন্দিত বোধ করলাম এই ভেবে যে এবার তিনি বুঝতে পারবেন কেন আমি আপনার লেখার একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি এক বসায় বইটি শেষ করে উঠলেন। আমি আশা করছিলাম এবার তিনি নিশ্চয়ই আপনার লেখার প্রশংসা করবেন। এখন থেকে আমি নিশ্চয়ই তার সাথে আপনার লেখা নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতে পারব। মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। তিনি পড়া শেষে আমার দিকে তীর্যক এক দৃষ্টি দিয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে উঠলেন,
ও! তাহলে এই ঘটনা! তাইতো বলি উনি কেন লেখকের জন্য এতো পাগল।
আমি বললাম,
বুঝতে পারলে তাহলে! কী দুর্দান্ত একজন লেখক, তাই না?
দুর্দান্ত লেখক কিনা জানিনা। তবে এটা নিশ্চিত যে তিনি একজন দুর্ধর্ষ প্রেমিক। প্রেমিকাকে এমন প্রেমসুধা দিয়েছেন যে তার প্রেমিকা বিবাহিত জীবনেও তাকে ভুলতে পারছেন না।
আমি বুঝতে না পেরে বললাম,
তুমি কি বুঝাতে চাইছ?
থাক। ন্যাকা সাজার দরকার নেই। তুমি ব্যাপারটা আগে বললেই তো হতো। আমি তোমাকে বিয়ে করতাম না। আমি তো জোর করে বিয়ে করিনি তোমাকে।
এখানে আমাদের বিয়ের কথা আসল কেন?
এক লেখকের সাথে কি সব ফষ্টিনষ্টি করে তারপর আমাকে বিয়ে করেছ তুমি! তোমরা মেয়েরা না, পারও। তার বিষাক্ত কণ্ঠের কথাগুলো শুনে বুঝতে পারলাম তিনি গল্পের কাহিনীকে সত্যি বলে ধরে নিয়েছেন।
বই না পড়া মানুষ তিনি। তাকে তাই কিছুতেই বুঝাতে পারলাম না, আমার আর বইয়ের চরিত্রের নাম ঠিকানা মিলে যাওয়াটা নেহাৎ কাকতালীয়। তাকে অনেক বলেও বুঝাতে পরলাম না যে, লেখকরা মাঝে মাঝে প্রথম পুরুষে লিখেন গল্পে বিশ্বাসযোগ্যতা আনার জন্য। প্রথম পুরুষে লেখা মানেই ব্যাক্তিগত জীবনের সত্যি কোন কাহিনী নয়। এই লেখকের সাথে জীবনেও দেখা হয়নি আমার। আমি তাকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনিও না। না, তিনি আমার কোন কথাই বিশ্বাস করলেন না।
ধীরে ধীরে তার সাথে আমার দূরত্ব বাড়তে থাকল। দরকার ছাড়া আর কোন কথা হতো না আমাদের। উপলব্ধি করতে পারলাম, আমার প্রতি তার ভালবাসা কমে যাচেছ ক্রমশ। আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। সব রাগ তখন আপনার উপর। আপনার লেখার কারনেই আজ আমাদের এ অবস্থা। আপনার একটি গল্পের কারনে আমার ভালবাসার মানুষটি (যার সাথে আমার সারা জীবনের বন্ধন) কে হারাতে বসলাম। আমার প্রিয় লেখক, আপনি ধীরে ধীরে পরিণত হলেন আমার ঘৃণার পাত্রে। আমি আপনার সবগুলা বই পুড়িয়ে ফেললাম একসময়। হ্যা, আমি আপনাকে চরম ঘৃণা করি। শুধু আপনাকে না, সব লেখকদেরকেই আমি ঘৃণা করা শুরু করি। দার্শনিক প্লেটো ঠিকই তার আদর্শ রাস্ট্রে কোন কবি রাখতে চাননি। কবিরা মিথ্যাকে খুব সুন্দর করে সত্যিতে পরিণত করতে পারে। কবি লেখকদের এ জগতে কোন স্থান হতে পারে না।
ঘৃণা করি আপনাকে। তবু আপনার কাছে একটা রিকোয়েস্ট আমার। রাখা, না রাখা আপনার ইচ্ছা। চরম অবহেলার মধ্যে আমি আমার বিবাহিত জীবনের ত্রিশটা বছর কাটিয়ে দিয়েছি। আজ আমার স্বামী মৃত্যু শয্যায়। তার মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে হলেও আমি তাকে বিশ্বাস করাতে চাই আপনাকে নিয়ে তার যে ধারণা সেটা ভুল। আপনি যদি দয়া করে একবার আসতেন, এসে নিজের মুখে যদি তাকে বিষয়টি বলতেন তবে কৃতজ্ঞ থাকতাম।
আমার বর্তমান ঠিকানা মানে আপনাকে যেখানে আসতে হবে - ইবনে সিনা, সিলেট, কেবিন নং- ৩০৮।
ইতি
পারুল।
চিঠিটা পড়ার পর মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। আমার একটা লেখা এভাবে পারুল নামের মেয়েটির জীবনে দুর্দশা নিয়ে আসবে তা কল্পনাও করিনি কখনো। আমরা লেখকরা লেখালেখি করি মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্য। তার আনন্দ কেড়ে নেয়ার জন্য না। আমরা মানুষের জীবন থেকেই কাহিনী নিয়ে গল্প বানাই। সে গল্প কখনো মানুষকে সাময়িক আনন্দ দেয়, কখনো বা তার চোখে কিছুক্ষণের জন্য অশ্রু নিয়ে আসে। কিন্তু এভাবে একটা লেখার জন্য কারো জীবন তছনছ হয়ে যাবে এমনটা আমরা কখনো আশা করি না। আমি রাতের ট্রেনে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
সিলেট ইবনে সিনার রিসিপশানে পৌছে জিজ্ঞেস করলাম ৩০৮ নং কেবিনটি কোন দিকে। হঠাৎ পেছন থেকে একটি মেয়ে কণ্ঠ ভেসে আসল,
আরে! বাবু স্যার না!
পেছনে তাকিয়ে যাকে দেখলাম তাকে চিনতে আমার একটুও দেরী হল না। এ যে দেখি পারুল। এ যে সেই পারুল যাকে নিয়ে আমার সেই গল্পটা!
কিছুই আর বুঝতে বাকি থাকল না তখন। পারুল তখন কাস টেনের ছাত্রী। তাকে পড়াতাম আমি। পড়াতে পড়াতেই একসময় প্রেম হয়ে গেল দুজনের। সেই কাহিনীর সবটাই লিখা আছে আমার ‘ভালবাসার রকমফের’ বইটিতে। আগ্রহীরা বইটি সহজেই সংগ্রহ করে পড়তে পারবেন বলে সেই কাহিনীতে আর যাচ্ছি না। তবে আপনাদের একটা কনফিউশন দূর করার চেষ্টা করাটা উচিত বলে মনে করছি। আমি তখন এলাকায় বাবু নামেই পরিচিত ছিলাম। ছাত্ররা সবাই আমাকে বাবু স্যার বলেই ডাকত। আমার এখনকার লেখক নামটি একটু কঠিন ছিল বলেই কিনা জানি না, অনেকে মনে রাখতে পারত না। আর ক্লাস টেনের সেই অপরিণত বয়েসের মেয়েটির আমার আসল নামটি মনে না রাখাটা অথবা না জানাটা দোষের কিছু না। যাই হোক, আমার ভালবাসার সেই মানুষটা, যে মানুষটা আমার জীবন থেকে একেবারেই হারিয়ে গিয়েছিল তার জীবনটা আমার লেখার কারনে এমন দুর্বিষহ হয়ে গেছে এটা জানতে পেরে নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছিলাম না। সত্যিই এমনটা আমি চাইনি। আমি তো পারুল নামটি ব্যবহার না করলেও পারতাম। কিন্তু যখন আমি গল্পটি লিখি, তখন পারুলের জায়গায় আর কারু নাম লিখতে পারছিলাম না আমি। পারুলের নাম আর ঠিকানাটাই কেবল ঠিক রেখেছিলাম। গল্পে আমার জীবনের সত্যি ঘটনার বাইরেও আরো অনেক কথাই ছিল। আমি ভাবিনি বইটি পারুল পড়বে। এটাও আমার ভাবনার বাইরে ছিল যে পারুল আমার মতো তুচ্ছ এক লেখকের এতোটা ভক্ত হতে পারে।
স্যার, আমাকে চিনতে পারেননি? আমি পারুল! তার হাসি মুখের কথাগুলোয় সম্বিত ফিরে পেলাম।
ও পারুল বুঝি! কেমন আছো?
ভাল আছি স্যার। আপনি এখানে যে!
অনেক ভেবে তারপর বললাম, আমার পরিচিত এক রোগীকে দেখতে এসেছিলাম।
রোগী দেখা শেষ?
হ্যা, এখন যেতে হবে, পারুল। নয়তো গাড়ি মিস করবো। বলেই পারুলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে আসলাম।
এরপর থেকে আমার এ লেখক সত্ত্বার প্রতি একটা ঘৃণা ঢুকে গেছে মনে। তাই ঠিক করেছি, আর লিখব না আমি। বিদায় পাঠক।
বি.দ্র: এ গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কারো ব্যক্তি জীবনের সাথে ন্যুনতম মিল পেলেও ভাববেন, সেটা কাকতাল মাত্র।
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৩
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার সাথে কি মিলে গেল তবে!
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫০
এহসান সাবির বলেছেন: সম্পূর্ণ কাল্পনিক, যদি মিল হয় কাকতাল মাত্র? বাচালেন।
৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪৯
শার্লক বলেছেন: ভাল লাগা দিয়ে গেলাম।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:৫৯
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ হোমস!
৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৮
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ হামা ভাই। ভাল থাকবেন।
৫| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৭
মাক্স বলেছেন: ৬ষ্ঠ প্লাস।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৯
কয়েস সামী বলেছেন: ম্যাক্সের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা সবসময় এভাবে উৎসাহ দেবার জন্য।
৬| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৪
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভালো লাগলো।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৯
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৭| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এক্স ফ্যাক্টর বলেছেন: সম্পূর্ণ কাল্পনিক যদি মিল হয় কাকতাল মাত্র? বাচালেন।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫০
কয়েস সামী বলেছেন: পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫০
এহসান সাবির বলেছেন: সম্পূর্ণ কাল্পনিক যদি মিল হয় কাকতাল মাত্র? বাচালেন।