নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি প্রেমের গল্প

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০৩

বাবু স্যারকে খুব, খুব বোকা ভাবতাম আমি। খুব বোকা। কিছুই বুঝতেন না। কতোভাবে যে তাকে বোঝাতে চাইতাম। একদিন পড়াতে আসলে তাকে বললাম, স্যার আজ পড়ব না। গল্প করব। তিনি বললেন, হ্যা অবশ্যই গল্প করব। তবে গল্পের টপিকটা হতে হবে পরমাণুর গঠন। আরে বাবা, পরমানুর গঠন নিয়ে যদি কিছ বলা হয় তবে তো সেটা গল্প হবে না। হয়ে যাবে পড়া। গাধা একটা টিচার ছিলেন তিনি। আরেকদিন অংক খাতায় প্রেম নিয়ে কিছু কথা-বার্তা লিখে রাখলাম। এমন জায়গায় লিখলাম যাতে প্রথমেই তার চোখে পড়ে। চোখে তার পড়ল ঠিকই, লেখাগুলো পড়লেনও। কিন্তু পড়ার পর যা বললেন তাতে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম তিনি কেবল একটা গাধাই না। একটা রাম গাধা। তিনি বললেন বাহ! চমৎকার কমেন্টস্। আমাকে লিখে দিওতো। আরে বাবা, আমি তাকে লিখে দিবো না তো কাকে লিখে দিবো? কিন্তু যেটা লিখে দিবো সেটা যে আমারও মনের কথা এটা কি তিনি বুঝবেন? হঠাৎ একদিন তিনি একটা নতুন ঘড়ি পরে আসলেন। কেসিও ঘড়ি। তার কোন এক কাজিন নাকি তাকে গিফট করেছিল। আমি ঘড়িটা দেখে অবাক হবার ভান করলাম। তার হাতে থাকা অবস্থাতেই, দেখি দেখি, বলে ঘড়িটা ধরলাম। ঘড়িটায় অনেকগুলো ফাংশান ছিল। ঐ অবস্থাতেই হাত ঘড়িটা গুতোতে থাকলাম ফাংশানগুলো দেখার জন্য। তিনিও আমাকে গভীর আগ্রহ নিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কোন বাটন কি কাজ করে। আমি একসময় মন খারাপ করে খেয়াল করলাম, তিনি আসলে বুঝেনই নাই, ঘড়িটা দেখায় আমার কোন আগ্রহ ছিল না। আমার সবটুকু আগ্রহ লুকিয়ে ছিল তার হাত স্পর্শ করায়। হাঁদারাম স্যারটি এর কিছুই বুঝলেন না। তার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমাকে নি:সন্দেহে অতো কষ্ট করতে হতো না। কি যে রাগ হতো তার উপর। জানেন,স্কুলে গেলে কতো কতো ছেলেরা প্রপোজ করত প্রতিদিন। পাড়ার ছেলেরা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতো আমাকে দেখবে বলে আর, তিনি কিনা আমাকে অতো কাছে পেয়েও মজলেন না আমার রূপে!

এভাবে মাসের পর মাস আমার চেষ্টা চলছিল তার দৃষ্টি আকর্ষণের। অন্যদিকে তার চেষ্টা চলছিল আমাকে এসএসসিতে এ প্লাস উপযোগী ছাত্রীতে পরিণত করার। বলা বাহুল্য আমরা দজনই দুজনের চেষ্টায় ব্যর্থ হচ্ছিলাম। তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না আমাদের দুজনের চেষ্টা একে অপরের পরিপূরক। তিনি যদি আমার চাওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে পারতেন, তবেই কেবল আমি পারতাম কুচিন্তা দূর করে পড়াশুনায় মনোযোগী হতে।

তো, আমার এই বোকা স্যারটিকে হঠাৎ খুব চালাক একজন মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করলাম যেদিন তিনি তার গার্ল-ফ্রেন্ডকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসলেন। আম্মার সাথে তার খুব ভাল খাতির ছিল। আম্মার সাথে তার গার্ল-ফ্রেন্ডের পরিচয় করিয়ে দিলেন এভাবে, আন্টি আমার বান্ধবী। ঠিক করেছি আমরা বিয়ে করব। তখন কিন্তু আপনার হেল্প লাগবে। আমার মাথায় হঠাৎ করে আকাশ ভেঙে পড়ল। এতোদিন পর আমি নিজেকেই চরম গাধি হিসেবে আবিষ্কার করলাম। আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল তিনি কেন আমার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখান না। আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল, আমাকে তার ভাল লাগলেও তিনি আমাকে চাইতে পারেন না। কারণ তিনি আরেকজনের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমার মনটা হঠাৎ ভীষন খারাপ হয়ে গেল। কিছু করতে ভাল লাগত না। সারাক্ষণ ভাবতাম আমার ভাগ্যটা এতো খারাপ কেন? আমি জীবনে প্রথম যাকে ভালবাসলাম তাকে কিনা আগে থেকেই আরেকজন দখল করে নিল। আমি জানতাম আমি তাকে কতোটা ভালবাসতাম। এমন করে কেউ কাউকে ভালবাসতে পারে না। আমি মনে মনে আমার সবকিছু সপে দিয়েছিলাম তাকে । আমি জানতাম আমি অনেক রূপবতী, তাই আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম যে আমি চাইলেই তাকে পাব। এর অন্যথা হতে পারে এমনটা কল্পনাতেও ছিল না। কিন্তু মানুষের কল্পনা আর বাস্তব সবসময় একরকম হয় না- ব্যাপারটা ভুলে গিয়েছিলাম আমি। তবু আমি দমে যাওয়ার পাত্রী ছিলাম না। আমি এটা বিশ্বাস করতাম, এখনও করি, আমার ভালবাসা যদি সত্যি হয় তবে অবশ্যই আমি আমার ভালবাসার মানুষটাকে পাব। আর ঐ মেয়েটির ভালবাসায় যদি বিন্দুমাত্র খাঁদ থাকে তবে একদিন না একদিন সেটা প্রকাশ পাবে।



তাদের দুজনকে প্রায়ই এক সাথে ঘুরতে দেখতাম। ঐ মেয়ের ভাগ্য দেখে হিংসা হতো খুব। যে জায়গাটা আমার হবার কথা ছিল সে জায়গাটা তার দখলে। ব্যাপারটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না।



সময়ের সাথে সাথে তাদের সম্পর্কও এগুতে থাকল। আমার কষ্টের গভীরতাও বাড়তে থাকল। এক সময় আমি কলেজে উঠলাম, আমি চাইলেও আর তাকে আমার হাউস টিউটর হিসেবে রাখা হল না। তিনি নাকি ছোটদের টিচার। তার নাকি অনার্স নাই। অনার্স থাকলেও আর তাকে আমার টিচার হিসেবে রাখা হতো কিনা এ বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ এখনো আছে। কারণ আমার মা ঠিকই বুঝে ফেলেছিলেন তার প্রতি আমার দুর্বলতার ব্যাপারটা। তার প্রতি আমার দুর্বলতার কথা ভেবে অথবা আমার ক্রমবর্ধমান সৌন্দর্যের ভয়ে সেই বয়স থেকেই আমার জন্য পাত্র দেখা শুরু হয়েছিল। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই একটা করে প্রপোজাল আসতে থাকল আমার বিয়ের জন্য। টিকে থাকার জন্য, তার জন্য অপেক্ষা করার জন্য আমাকে কি যে লড়াই করতে হচ্ছিল, এটা একবার আমার বাসার যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পাবেন আপনারা। তিনি ছাড়া অন্য কাউকে আমি কিভাবে বিয়ে করব এ আমি ভেবেই পাই না। আমার সমস্ত মন জুড়ে আমার বাবু স্যার, বাবু স্যার আর বাবু স্যার। আমি কেবল বাবু স্যারের। কেবল তার হয়েই থাকতে চাই শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।

২.

যা ভেবেছিলাম তাই। বাবু স্যারের সেই প্রাণপ্রিয় প্রিয়তমা বিয়ে করে বসল আরেকজনকে। আমি আসলে দেখতে চাচ্ছিলাম, তাকে কে বেশি ভালবাসে- আমি, নাকি তার সেই প্রেমিকা। তাই আমার একটা কাজিন যখন বাইরে থেকে এফসিপিএস সেরে দেশে ফিরে বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা শুরু করল তখন বাবু স্যারের প্রেমিকার জন্য তাকে প্রস্তাব দিলাম। মনে করতে পারেন আমার চেষ্টাতেই তাদের বিয়ে। আমি জানতাম তার প্রেমিকা যিনি, তিনি যখন একজন ডাক্তারের সাথে একজন প্রাথমিক শিক্ষকের তুলনা করবেন তখন স্বল্প আয় ও অল্প স্ট্যাটাসের বাবু স্যারের জন্য তার ভালবাসা এক ফুৎকারে উড়ে যাবে। আমি জানতাম বাস্তববাদী মানুষের কাছে ভালবাসা মানে কেবল আনন্দ বিনোদনের একটা উপায়। আমি জানতাম আমার মতো করে ভাল আর কেউ তাকে বাসতে পারে না। কখনো পারবেও না। তাই আমি এখনো অপেক্ষা করে আছি, কখন তিনি আসবেন, আমার হাতটি ধরবেন। যে চলে গেল তার জন্য যেন বাবু স্যার কষ্ট না পায়, সে যাবার ছিল বলেই গেল। যে পাখি পোষ মানতে চায়না, তাকে খাঁচায় ভরে রাখতে হয়। সুযোগ পেলেই সে চলে যায়। একমাত্র আমার ব্যাপারটা ভিন্ন। আমাকে তার খাঁচায় বেঁধে রাখতে হবে না। আমি নিজেই নিজের তৈরী খাঁচাতে বন্দী আছি, থাকব অনন্ত কাল, যে খাঁচার মালিক বাবু স্যার একা।



স্যারের প্রেমিকার বিয়ের পর সবকিছু জানিয়ে বাবু স্যারকেএকটি চিঠি লিখে অপেক্ষা করতে থাকলাম বাবু স্যারের জন্য, বাবু স্যারের চিঠির জন্য। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই চিঠির উত্তর পেলাম। চিঠিটা আপনাদের জন্য এখানে প্রকাশ করছি।



প্রিয় নীতু,



আমার জন্য তোমার অন্তহীন ভালবাসা জেনে আমি আনন্দিত। এখন আমি সত্যি বিশ্বাস করি, এমন ভালবাসা এই পৃথিবীতে একেবারে বিরল। যদিও আমি জানি না তোমার এরকম ভালবাসা পাবার যোগ্য আমি কি না। তোমার প্রতি তাই আমার চির কৃতজ্ঞতা।



এটা ঠিক যে প্রথম দিকে আমি বুঝতাম না আমার প্রতি তোমার এই দুর্বলতাটুকু। সেদিন বুঝলাম যেদিন তুমি আমার আধ-খাওয়া চায়ের কাপটি নিয়ে চুমুক দিলে নির্বিকারে। হঠাৎ করে সেদিন যেন আমার চোখ খুলে গেল। পড়িয়েছি তোমার মতো অনেক অনেক ছাত্রী। কিন্তু কখনো এমনটা মাথায়ও আসেনি যে ছাত্রীরা আমার মতো নিরস টিচারের প্রেমে পড়ে যাবে। তাই যখন নিশ্চিত হলাম আমার প্রতি তোমার ভাল লাগার ব্যাপারটা, তখন আকাশ থেকে পড়লাম। তুমি দেখতে অসম্ভব রূপবতী, এমন রূপবতীর প্রেম হেসে উড়িয়ে দেওয়ার মতো মহাপুরুষ আমি নই। কিন্তু আমি যে আমার সবটুকু ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছিলাম অন্যএকজনকে, তোমার সাথে আমার দেখা হওয়ার আগেই। তাই আমি সবসময় ভান করতাম তোমার কোন ইশারা বা ইঙ্গিত আমি বুঝতে পারছি না। তবু যখন দেখলাম তুমি আমাতে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছ, যখন বুঝলাম এতে তোমার ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে যাবে, তখন তোমাকে পড়ানো ছেড়ে দিতে চাইলাম। তোমার বাবাকে গিয়ে বললাম কথাটা। কিন্তু তিনি এমনভাবে আমাকে রিকোয়েস্ট করলেন যে তোমাকে পড়ানোর কাজটা বাদ দিতে পারলাম না। একবার ভাবলাম সরাসরি কথাটা তোমাকে বলে ফেলি। তোমাকে বলি, এ হতে পারে না নীতু। আমি অন্য একজনকে ভালবাসি। কিন্তু তাও পারলাম না। মনে হল তবে তো তুমি বুঝে নেবে যে তোমার দুর্বলতার ব্যাপারটা আমি জানি। এবং তুমিও আমার সাথে সহজ হয়ে যাবে। তাই বুদ্ধি করে অন্যভাবে তোমাকে বুঝাতে হয়েছিল ব্যাপারটা। জানতাম তুমি অনেক কষ্ট পাবে এতে। তবু তোমার ভালোর জন্যই কাজটা করতে হয়েছিল আমাকে।



তুমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে দিলে তোমার সাথে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেলে ভাবলাম তুমি ভুলে যাবে আমার কথা। প্রেমে অমন উতলা সেদিনকার তোমার মতো বয়সের মেয়েরা একটু আধটু হয়েই থাকে। তাই বলে তুমি আজো আমার স্বপ্ন নিয়ে বসে আছ এ জেনে অবাক ও চমৎকৃত হলাম। আরো অবাক হলাম এটা জানতে পেরে যে সোহানার বিয়েটা তোমার চেষ্টাতেই হয়েছে।



সোহানাকে আমার সবটুকু দিয়েই ভালবেসেছিলাম নীতু। সোহানার ভালবাসায় এভাবে টাকা পয়সা আর স্ট্যাটাসের মতো বাস্তবিক ব্যাপার চলে আসবে কোন একসময়, এ আমার কল্পনাতেও ছিল না। কতোটা পাগলের মতোই না ভালবেসেছিলাম তাকে। তুমি হয়তো জান না যে প্রাইমারী স্কুলে চাকরী পাবার পর আমার আরেকটি চাকরী হয়েছিল। অনেক বড় চাকরী। কিন্তু এখান থেকে চলে যেতে হবে বলে, সোহানাকে প্রতিদিন দেখার সুযোগ পাব না বলে, আমি সেই চাকরীতে জয়েন করিনি। সোহানাকেও জানাইনি ব্যাপারটা এই ভয়ে যে সে যদি আমাকে চাকরীটা নিতে বাধ্য করে। সোহানা চাইলে তো আমি কিছুই না করতে পারতাম না। দু:খ এটাই যার জন্য আমি স্ট্যাটাসিত হবার সুযোগ হাতছাড়া করলাম, সে কিনা স্টাটাসহীনতার কারনেই আমাকে ছেড়ে গেল! যাই হোক, তোমার প্রতি আমার চির কৃতজ্ঞতা আমাকে তীব্র একটা অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসার জন্য।



আমাকে একটা মিথ্যা থেকে বাঁচালে তুমি। তোমার ভালবাসার কাছে আসলেই সোহানার ভালবাসা কিছু না। তোমার রূপের সাথেও হয়তোবা সোহানা কখনো কমপিট করতে পারবে না। তুমি আমার জন্য যা করেছ বা করছ তার রিন আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না। আমার ভালবাসাটাই হবে তোমার কাছে সবচেয়ে বড় পুরুস্কার। আমাকে তুমি গ্রহণ কর- এই বাক্যটা শুনার জন্য তুমি কান পেতে আছ ,আমি জানি।



তবু জেনো- তুমি আমাকে যতোটা ভালবাসো, আমি ঠিক ততোটাই ভালবাসি সোহানাকে। তুমি যেমন আমাকে ছাড়া আর কাউকে গ্রহণ করতে পারছ না। আমিও তেমনি সোহানাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারব না। তোমার কাছে যেমন আর কাউকে ভালবাসার কাজটা হবে অভিনয় করা- আমিও তেমনি তোমাকে ভালবাসতে পারবো যদি কেবল সেটা অভিনয় হয়। আমাকে ক্ষমা করো তুমি। আমি তোমার ভালবাসার অমর্যাদা করতে পারব না।



ইতি

তোমার বাবু স্যার।



চিঠিটা পড়ার পর আমার অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার থাকল না।



৩.

জীবনটা একটা নাটক ছাড়া আর কিছুই না। সেই নাটকের একমাত্র পরিচালক স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। আমার জীবন নাটকে একসময় বাবু স্যারকে কাছে পেয়ে গেলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখন তিনি স্মৃতিশক্তিহীন একজন মানুষ। একটা রোড এক্সিডেন্ট, ব্রেন এবং লেগ ইনজুরি। কাউকে চিনতে পারেন না। পাশাপাশি পায়ে অস্ত্রপ্রচার হয়েছে। ছয় মাস বিছানায় থাকার নিষেধাজ্ঞা। খবর শুনে ছুটে গেলাম তার বাসায়। আমার ভালবাসার মানুষটার কি যে এক অসহায় অবস্থা। আমার মতো তখনো বাবু স্যার বিয়ে করেননি। আমাদের দুজনের বিয়ে না করার পণ তখন পাড়ায় ওপেন সিক্রেট। বাসায় বৃদ্ধ বাবা মা ছাড়া বাবু স্যারের আর কেউ নেই। সেই বাবা-মার ক্ষমতা নেই বাবু স্যারকে উন্নত চিকিৎসা করানোর। সবকিছু বিবেচনা করে আমি স্যারের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলাম। প্রতিদিন অফিস (ততোদিনে আমি খুব বড় একটা চাকরী পেয়ে গেছি) শেষে তার বাসা, তারপর রাতে নিজ বাসায় ফেরা। এক সময় তার পা ভাল হল, হাটা-চলা শুরু করলেন, কিন্তু স্মৃতিশক্তি ফিরে পেলেন না। প্রথম প্রথম আমি নিজে কাউন্সেলিং করে চেষ্টা করলাম তাকে আমার কথা মনে করানোর। কিন্তু কিছুই মনে করতে পারতেননা তিনি। আমি তার সঙ্গ পাচ্ছিলাম ঠিকই, তিনিও আমার সাথে খুব আপন জনের মতোই ব্যবহার করছিলেন তবু ভাল্লাগছিল না আমার। ইনফেক্ট এটা বুঝতে পারছিলাম যে তিনি মনে মনে আমাকে ভালবেসে ফেলেছেন। বললেই তিনি আমাকে বিয়ে করবেন। কিন্তু আমি তো এ বিয়ে চাই না। আমি চাই তার সবকিছু মনে পড়ুক। তার জন্য আমার আকুল মন কতোকিছুই না করেছে। কতো কষ্টই না সহ্য করেছি এই আমি। সবকিছু তার মনে পড়ুক। তারপর আমরা বিয়ে করব। তাকে নামকরা সব ডাক্তারদের দেখানো শুরু করলাম। সবাই ঐ একই কথা বলল। এমনেসিয়ার রোগীদের অবস্থার উন্নতি হতে সময় লাগে বেশ। দু বছর পার হয়ে গিয়েছিল। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। তবু হাল ছাড়লাম না আমি। সৃষ্টিকর্তার উপর আমার ভরসা ছিল শতভাগ। তিনি যেহেতু আমার মনের মানুষটাকে কাছে পাইয়ে দিয়েছেন, তিনি তাকে সুস্থ করবেন ঠিকই। রোজ সকালে উঠেই বাবু স্যারের বাসায় চলে যেতাম। ওখান খেকে অফিস। অফিস শেষে আবার বাবু স্যারের বাসা। রাত আটটায় নিজ বাসায় ফেরা। বাসার সবাই বুঝে নিয়েছিল বাবু স্যার ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করব না আমি। তাই বিষয়টা সবাই মেনে নিয়েছিল। সত্যি বলতে কি, আমার আব্বা আম্মাও বাবু স্যারকে মেয়ে জামাই হিসেবে মেনে নিয়েছিল। আম্মা মাঝে মাঝে তাকে দেখতে যেতেন। তার সাথে সময় কাটাতেন। আমার আনন্দ আর ধরছিল না এটা ভেবে যে আমাদের বিয়েতে আর কোন বাঁধা নেই। দুই পরিবারই চায় আমরা দুজন বিয়ে করে ফেলি। বাবু স্যারও আর বাঁধা দিচ্ছেন না ব্যাপারটাতে। কিন্তু বাবু স্যার তার অতীতের সবটুকু অংশ ভুলে গিয়েছিলেন। যাই হোক আমার চেষ্টায় আর ঈশ্বরের করুনায় একসময় আবিষ্কার করি ধীরে, ধীরে, খুব ধীরে বাবু স্যারের মনে পড়ছে অতীতের ঘটনাগুলো। বাবু স্যার তার অতীত ফিরে পাওয়া শুরু করলেন। আমি আরো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম যেন বাবু স্যার আমাকে চিনতে পারেন। একদিন আমার অপেক্ষার অবসান হল। তিনি বলে উঠলেন, তুমি তো নীতু, তাই না। জ্বি স্যার। আমি নীতু। আপনি চিনতে পারছেন আমাকে? আমার খুশী যেন আর ধরে না। তবু কোথা থেকে জানি এক রাশ সংকোচ এসে ভর করল আমার মনে। অসুস্থ অবস্থায় এতোদিন তাকে তুমি করে সম্বোধন করেছি । এখন কেন জানি না, তুমি ছেড়ে তাকে আপনি বলা শুরু করলাম। তার মুখের দিকেও লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না।

মাথা নিচু করে খুব অভিমান নিয়ে তাকে বললাম, এতোদিন সবকিছু ভুলে ছিলেন কেন?

ভুলেছিলাম বুঝি? কই? আমার তো সবকিছু মনে পড়ছে। তোমার চিঠি, সোহানার চলে যাওয়া, আমার এক্সিডেন্ট। সবকিছু মনে পড়ছে আমার।

খুশীতে তাকে জাড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সংকোচের কারনে পারলাম না।

তিনি বললেন, তুমি এখানে কেন? এখন তো রাত আটটা।

চলে যাব স্যার। আপনি খেয়ে নিন তারপর যাব।

না! লোকে কি বলবে বলতো?

লোকে কিছু বলবে না। সবাই জানে আমরা বিয়ে করছি খুব শিগ্গীর।

বিয়ে? কিন্তু আমি যে বিয়ে করতে পারবো না, নীতু।

হুট করে মনে হল আমার পায়ের নীচে মাটি সরে যাচ্ছে। আমার চোখে জল জমে উঠছে।

তিনি নিষ্ঠুরের মতো বলতে থাকলেন,

তোমাকে তো চিঠিতে সব বলেছিলাম নীতু। আমি সোহানাকে ভালবাসি। সে চলে গেছে তাতে কি? আমার ভালবাসা তো ঠিকই তার জন্য রয়ে গেছে। তোমাকে আমি ভালবাসতে পারব না কখনো নীতু। তুমি বরং যাও।

মানুষটা এতো পাষান! আমি তার সামনে আর থাকতে পারলাম না। থাকলে যে তিনি আমার চোখের জল দেখতে পাবেন। এ জল কেবল আমার নিজের, আর কারো না।



৪.

এখনও বেঁচে আছি। একা আছি। বাবু স্যারও আছেন। তিনিও একা। দুজন যার যার মতো করে অপেক্ষাতে আছি। জানিনা সৃষ্টিকর্তা কার অপেক্ষার অবসান ঘটাবেন।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪২

হাবীব রহমান বলেছেন: ঘটনা বাস্তব হলে আপনার অকৃত্রিম ভালবাসাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭

কয়েস সামী বলেছেন: পাঠের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৭

তামজিদা সুলতানা বলেছেন: প্লট ভালো :) সুন্দর প্রেম :)

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১৭

মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন: পুরুষরা এতো পাষান কেন? জানে যে আমাকে ছাড়া তার চলবে না , তাও বিয়ে করবে না। ধুরু। ভালো লাগে না। :( :(। গল্পটা খারাপ না। বাস্তব অনেক উদাহরণ আমার কাছে আছে।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩২

কয়েস সামী বলেছেন: আমি এখানে কাউকে খারাপ বলে দেখাতে চাইনি। হোয়াটএভার, পড়ার জন্য থ্যাংকস।

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৩

ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে... এমন ঘটনা শুধু আনকমন না, রীতিমত তাক লাগানো বিরল।

যাই হোক, গল্পে অনেক ভাললাগা। আপনার লেখনী খুবই সাবলীল, স্মুথ... অতি সুখপাঠ।

অটঃ ভাল্লাগতিসিলো না, এই ব্লগ ঐ ব্লগ করতে করতে হঠাত চতুরে উঁকি দিলাম... ঐখানে পড়লাম। চতুরে একাউন্ট না থাকার কারণে এইখানে আসতে হল। লেখনীতে একটা ভাললাগা জানানোর লোভ সামলাতে পারছিলাম না...

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৭

কয়েস সামী বলেছেন: গল্পটি লেখার সময় আপনার কথা স্মরন করেই লেখা। আপনার গল্পগুলি আমার কাছে এমনই লাগে। এ গল্পে আপনার কমেন্ট অামার উৎসাহ অনেকখানি বাড়িয়ে দিল!

৫| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫১

মামুন রশিদ বলেছেন: মুগ্ধ হয়ে পড়লাম । প্রেমের গল্প হিসেবে নিঃসন্দেহে চমৎকার, কিন্তু আমার ভালো লেগেছে প্রেমের সত্যিকারের কিছু রুপ দেখে । সত্যিকারের ভালোবাসা বোধহয় এমনই ডিভোটেড ।


সর্বোপরি গল্লের ভাষা-ভংগি-স্টাইল সবকিছুই অসাধারন হয়েছে ।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৮

কয়েস সামী বলেছেন: মনতব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

৬| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: এরকম সিনেমাটিক ভালোবাসার গল্প পড়তে ভালো লাগে না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় গল্পটা পড়ে ফেললাম, এবং নীতুর জন্যে কষ্ট বোধ করলাম। সবই লেখনীর গুণ।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০০

কয়েস সামী বলেছেন: সিনেমাটিক গল্প আমারও ভাল্লাগেনা হামা। তবু লিখলাম একবার নিজের রকম খুব পাল্টাতে ইচ্ছে হল। লেখনী ভাল্লাগলো জেনে অনুপ্রাণীত আবার।গল্পটি অপানকে পড়াতে পেরেও ভাল লাগা। ধন্যবাদ হামা!

৭| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২১

মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন: আমি জানি আপনি কাউকে খারাপ দেখাতে চান নাই। আসলে অনেক বাস্তব ঘটনার সাথে মিল আছে ।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০১

কয়েস সামী বলেছেন: ভাল থাকবেন, মৌ।

৮| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১০

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া কিন্তু এই গল্পটা আমি পড়েছিলাম তো। মনে হয় কোন কারনে মন্তব্য করা হয়ে উঠেনি।

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:০২

কয়েস সামী বলেছেন: মনোযোগ পাঠের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৯| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৮

অপ্রচলিত বলেছেন: হায় ভালোবাসা! যে ভুগেছে একমাত্র সেই বুঝবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.