![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আর বেশি সময় নেই হাতে। আধা ঘন্টা মাত্র। অফিসে ১০ টার আগেই পৌছাতে হবে। তার আগেই আমাকে এ লেখাটি শেষ করে উঠতে হবে।
ইদানিং খুব ভুলোমনা হয়ে গেছি। মনে রাখতে পারি না কিছু। ফার্মেসীতে এন্টাসিড আনতে গিয়ে নিয়ে আসি ইসোনিক্স। বাজার থেকে মাছের বদলে আনি মাংস। শার্টের নীচে মাঝে মাঝে রূপা পরতে ভুলে যাই। গল্প মাথায় আসা মাত্র লিখে না রাখলে পরে সেটা বেমালুম ভুলে যাই। ভূমিষ্ট হবার আগেই হারিয়ে যায় তা।
তাই এ গল্পটি যদি এক্ষুনি না লিখি, এটা হয়তোবা আপনারা আর কখনো পড়ার সুযোগ পাবেন না। অসাধারন একটি প্রেমের গল্প থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতে পারে আমাদের বাংলা সাহিত্য। তাই যা করার এই ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই করতে হবে।
আগেই বলে নিই এ গল্পটি সঞ্জয় (ছদ্ম নাম) আর মিতুর (এটাও ছদ্ম নাম) গল্প। সঞ্জয় আমার বন্ধু। মিতুর সাথে তার পরিচয় যখন তারা গত বছর প্রাইমারী শিক্ষক ট্রেনিং ইন্সটিউটে ট্রেনিং নিতে যায়। তখন থেকেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। প্রেম হবার পর সঞ্জয়ের মধ্যে আমি দেখতে পাই বিরাট রকমের পরিবর্তন। আগে তার সাথে প্রতি সন্ধ্যায় জমিয়ে আড্ডা দিতাম, দাবা খেলতাম, লেখালেখি নিয়ে মেতে উঠতাম। কিন্তু হুট করে একসময় আবিষ্কার করলাম, সঞ্জয়ের সাথে আমার আর দেখাই হচ্ছে না। মাঝে মাঝে রাস্তায় দেখা হলেও তার কানে মোবাইল ফোন থাকার কারনে কথা হতো না তেমন। ব্যাপারটা আমি ঠিক মেনে নিতে পারলাম না। একটা মেয়ের জন্য কেন আমাদের এতোদিনের বন্ধুত্ব এমন সময়হীনতায় ভুগবে? একদিন ঠিকমতো বাগে পেয়ে সঞ্জয়কে আমার এই ভাল না লাগার ব্যাপারটা খুলে বললে সে জানাল মিতুকে সময় না দিলে সে নাকি রাগ করে বসে। আমি তাকে বুঝাতে চাইলাম, মেয়েরা ভাল না। মেয়েদের থেকে সাবধান থাকতে বললাম। অমর সেই বানী শুনাতেও ভুল করলাম না- Beware of three W- War, Wine and Woman. সে বলল মিতু খুব ভাল মেয়ে। তার মতো মেয়েই হয় না। আমি ব্যাপারটার প্রমান চাইলাম। সে বলল, এটা বুঝে নিতে হয়। এর কোন প্রমান নেই। আমি বললাম, আমার কথার পক্ষে প্রমান দেব। দে, মিতুর মোবাইল নাম্বারটা দে। সে নাম্বারটা দিল।
আমি আমার মোবাইল থেকে তাকে কল দিলাম। দুইটা রিং হওয়া মাত্রই কলটি রিসিভ হল। আমি একটা কবিতা দিয়ে শুরু করলাম। আমার আবার আবৃত্তির কণ্ঠ বেশ ভাল। কিছুক্ষনের মধ্যেই বুঝলাম, ওপাশ থেকে বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনা হচ্ছে কবিতাটা। কবিতা পড়া শেষে নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করলাম মজা করে। বুঝলাম টোপ গিলেছে। এদিকে সঞ্জয় তো রাগে ফুঁসছে। কথা শেষ করতেই মিতুকে কল দিল সে। জিজ্ঞেস করল, এতোক্ষন কই ছিল মিতু। মিতু জানাল, সে বাথরুমে ছিল। সঞ্জয় রাগ করে ফোন কেটে দিল। হাহাহা। আমি বললাম দেখেছিস সঞ্জয়, তুই একটা মিথ্যেবাদীকে ভালবাসলি। মেয়েরা আসলে এমনি হয়। হাসতে হাসতে তোর গলায় ছুরি বসিয়ে দিবে, তুই টেরও পাবি না। সাধে কি কবি সাহিত্যিক মেয়েদের বহুরূপী বলে আখ্যা দিসেন?
সঞ্জয়ের রাগ তখনো কমেনি। বলল, তোকে অনেক ধন্যবাদ। তুই আমাকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসলি। এখন আমি বুঝতে পারছি সবসময় কেন তার মোবাইল ওয়েটিং থাকে। অথচ জিজ্ঞেস করলেই বলে বাসা থেকে মা কল করেছিল। মামার সাথে কথা বলছিলাম। এর তো দেখি কারেক্টারটাই খারাপ।
শেক্সপিয়রের ইয়াগোর কথা মনে পড়ল। আমি কি তবে ইয়াগো হয়ে গেলাম? না। ইয়াগো ডেসডেমোনার ব্যাপারে ওথেলোর মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছিল ওথেলোর জীবন ছারখার করে দেবার জন্য। আমি তো কেবল আমার বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য, তার ভালোর জন্য এমন করলাম। তাছাড়া মিতুর কারেক্টারতো দেখি আসলেই খারাপ। অচেনা অজানা ছেলেদের সাথে মোবাইলে কথা বলে! যাক এখন সঞ্জয়কে নিয়মিত পাওয়া যাবে ভেবে খুশী হলাম।
কিন্তু না। সঞ্জয় মিতুর সাথে সম্পর্ক চালিয়ে গেল। আগে যেমন সবসময় মোবাইল কানে দেখতাম, এখনও তাই। একদিন সঞ্জয় জরুরী খবর দিয়ে দেখা করল আমার সাথে। রেস্টুরেন্টে চা খেতে খেতে জানাল সে একটা মন্দীরে গিয়ে নাকি মিতুকে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছে। আজ তাই তার খুব আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু ছ্যাকা খাওয়া মানুষ আমি, সঞ্জয়ের এই আনন্দটাকে ভাল চোখে দেখতে পারলাম না। বললাম মন্দীরে সিঁদুর পরানো মানেই বিয়ে না। আজ কালকার মেয়েদের কাছে এটা একটা খেলা মাত্র। বি কেয়ারফুল।
কি যে বলিস! আমার কথা সঞ্জয় হেসেই উড়িয়ে দিল।
এভাবে দিন যায়, মাস যায়। সঞ্জয় একেবারে উধাও হয়ে গেল। তার সাথে আর দেখাই হয় না। বুঝলাম মিতুতে বেশ ভালই মজেছে সে।
একদিন হঠাৎ করেই সঞ্জয়ের সাথে রাস্তায় দেখা হয়ে গেল। মোবাইলটা যথারীতি তার কানে। খুব উত্তেজিত দেখাচ্ছিল তাকে। আমাকে দেখতে পেয়ে মোবাইল রেখে দিল। জিজ্ঞেস করলাম, কার সাথে অতো গরম হয়ে কথা বলছিলি।
কার সাথে আবার, মিতুর সাথে। জোরে জোরে নি:শ্বাস নিচ্ছিল সে।
কেন কি হয়েছে?
আরে এর কথা আর বলিস না। প্রস্টিটিউট একটা।
ছি! খারাপ কথা বলছিস কেন?
খারাপ মেয়েকে খারাপ কথা বলবো না তো, কী বলব?
কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে চায়ের অর্ডার দিয়ে তাকে বললাম, বলতো খুলে বল। ঘটনা কী?
আরে, বিয়ের কথা বলতেই কিনা বলে তাকে ভুলে যেতে। সে নাকি আমাকে বিয়ে করতে পারবে না।
কেন পারবে না?
সে কথা তো বলে না। বলে তার জন্য নাকি অনেক ভাল আলাপ আসতেছে।
আমার অনুমান সত্যি হয়ে যাওয়াতে খুশী হয়ে বললাম, তোকে আগেই বলেছিলাম না এটাই মেয়েদের কারেক্টার? প্রেম করবে একজনের সাথে, বিয়ে করবে আরেকজনকে।
এ পর্যায়ে তার মোবাইলটা বেজে উঠল। সে মোবাইল রিসিভ করে বলে উঠল, .. র ..গী। (খারাপ একটা গালি)। এখন আবার কল দিছিস ক্যান? বিয়ে করবি না তো এ খেলা খেললি ক্যান? এখন ভাল করে শুনে রাখ। আই হেইট ইউ। আই হেইট ইউ।
মিতুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মোবাইলটা বন্ধ করে দিল সে।
তার তো দেখি ভয়াবহ অবস্থা। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার।
আমি বল্লাম, এমন করে কাঁদছিস কেন তুই? কাঁদবে তো মেয়েরা। তুই ছেলে মানুষ হয়ে কাঁদছিস! লোকে কি বলবে?
দ্যাখ, মিতুকে আমি অনেক ভালবেসে ফেলেছি। এখান থেকে আর কখনো ফেরা যাবে না। তার উত্তর শুনে আমি অবাক হলাম। বলে কি সে! এতো কিছু ঘটে যাওয়ার পরও সে বলছে তাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছে!
যাহোক, তাকে এটা সেটা অনেক কিছু বলে স্বাভাবিক অবস্থায় এনে বাসায় পৌছে দিলাম।
সে রাতে বিছানায় যাবার পরে সঞ্জয়ের কথা আবার মনে পড়ল। বেচারা এভাবে ঠকবে আমি আগেই জানতাম। আমিও যে ভুক্তোভোগী একজন। থাক। আমার গল্পে পরে যাব । হাতে একদম সময় নেই। সঞ্জয়ের সথে একটু গল্প করা যাক এটা ভেবে তাকে কল দিলাম। দেখি কল ওয়েটিং। একটু পরে সে ব্যাক করল। জিজ্ঞেস করলাম, এর মধ্যেই আরেকজন জুটিয়ে নিলি নাকি?
কি যে বলিস তুই। মিতুর সাথে কথা বলছিলাম।
মিতুর সাথে? আমি বিষ্ময় প্রকাশ করলাম।
হ্যা, মিতুকে কল দিয়ে বিকালের আচরনের জন্য স্যরি বললাম।
সে কী বলল?
বলল, এখন ঘুমাতে। কাল কথা বলবে।
তুই কি আবার কথা বলবি? তোর তো তাকে আর একটুও ছাড় দেয়া ঠিক হবে না।
ঠিক হবে না বুঝতেসি। কিন্তু করার যে কিছু নাইরে। তাকে যে অনেক ভালবাসি।
সঞ্জয়ের এই ইমোশনাল বোকামী দেখে আমার খুব রাগ হল। বললাম, যা ইচ্ছে তাই কর।
বলে কলটা কেটে দিলাম।
কয়েকদিন পর আবার সঞ্জয়ের সাথে দেখা। আমাকে দেখে সিগারেট ফেলে দিল। অবাক হয়ে জিঞ্জেস করলাম সিগারেট কবে থেকে ধরলি?
তোকে সব কথা বলতে হবে নাকি? আমার উপর রেগে যাওয়ায় অবাক হলাম আবার।
তবু বললাম, কি ব্যাপার বলতো? যদ্দুর জানি তুই সিগারেটের ঘ্রাণটাই সহ্য করতে পারিস না।
আগে পারতাম না। এখন পারি।
ছোট ছোট জবাবে বুঝতে পারলাম মেজাজটা তার খিটখিটে হয়ে আছে। কি ব্যাপার? মিতুর খবর কী?
ওর কথা বলিস না। কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।
কী হয়েছে?
দেখা করতে চাইলাম। বলল সে তার মামার বাড়ী। দেখা হবে না। এখন দেখি সে একটা ছেলের সাথে রিক্সায়। এখানেই আছে। অথচ দেখা করতে চাইছে না। আরেকটা ব্যাপার। ইদানিং তার মোবাইলটাও সবসময় বিজি থাকে। আমাকে সময় না দিয়ে অন্যকে দেয়। এমনকি গভীর রাতেও।
এমনটা ঘটবে আমি তো আগেই বলেছি। এখনো সময় আছে। ছেড়ে দে তার চিন্তা।
ছাড়তে পারলে তো ভালই হতোরে। পারি না যে! বলে সে হাটতে হাটতে চলে গেল বিদায় না জানিয়েই।
আমার খুব করুনা হল। একটা ভুল মানুষকে এভাবে সে এতোটা ভালবেসে ফেলল!
আরো কিছুদিন পরের কথা। ওর স্কুলের এক টিচারকে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সঞ্জয় বাবুর কি হয়েছে? ইদানিং বেশ অনিয়মিত স্কুলে।
কাজের চাপে বেশ ব্যস্ত থাকায় এই কদিন সঞ্জয়ের কোন খবর নিতে না পারায় এ বিষয়ে আমার অজ্ঞানতার কথা জানালাম। তারপর দেরী না করে সঞ্জয়ের বাসায় গেলাম। আমাকে দেখতে পেয়ে সঞ্জয় কান্না শুরু করে দিল। আবার কি হল? জিজ্ঞাসাবাদে যেটা জানতে পারলাম তা হলো, মিতু নাকি তার সাথে আর যোগাযোগ রাখছে না। মোবাইল সুইচড অফ করে বসে আছে। সেদিন তার স্কুলে গিয়েছিল সঞ্জয়। তাকে নাকি মিতু চিনতেই পারেনি।
আমি বললাম, তুই যা করছিস এটা তো মেয়েরা করে থাকে। আজকালকার যুগে এমনটা একেবারেই হাস্যকর। তুই তাকে ভুলে যা। যে মেয়ে তোকে বিয়ে করতে চায় না, যে মেয়ে তোর সাথে গেম খেলেছে সে মেয়ের জন্য তুই এভাবে নিজের তি করছিস কেন? আগে বাড়। তোর জন্য অনেক মেয়ে বসে আছে।
তুই বুঝতে পারছিস না রাগীব, আমি তাকে সিঁদুর পরিয়েছি। তুই অন্য ধর্মের, তুই বুঝবি না সিঁদুরটা কি জিনিস আমাদের কাছে।
মেজাজটা গরম হল আবার।
তুই পরিয়েছিস, সে পরে নাই? সে হিন্দু হয়েও যদি সিঁদুরকে খেলনা মনে করে তুই কেন পারবি না?
আমি পারব না। যেটা পারব না সেটা আমাকে করতে বলিস না। পারলে তুই আমার মিতুকে এনে দে। ওকে তুই বল সে যেটা করছে সেটা ঠিক না। প্রেমটা ছেলেখেলা না।
এরপর আর কিছু বলার থাকে না। যে নিজের চোখ, কান, যুক্তিবোধ সব অকেজো করে রাখে তাকে বুঝিয়ে কী লাভ?
তার বাসা থেকে বের হবার আগে সঞ্জয়ের মায়ের সাথে দেখা হল।
বললেন, কি ব্যাপার বাবা, সঞ্জয়ের কি হয়েছে তুমি কি কিছু জানো? সারা দিন মনমরা হয়ে পড়ে থাকে। ধাক্কা দিয়ে বাইরে পাঠালে আর সহজে ফিরে আসে না। কোথায় যায়, কী করে- কিছু জানতে পারি না। তুমি ওর দিকে একটু খেয়াল রেখো।
মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। একটা ফালতু মেয়ের জন্য সঞ্জয়ের এ অবস্থা হবে ভাবতেই পারিনি। মিতু মেয়েটাকে যদি পেতাম! মেয়েরা এমনই হয় জানতাম। কিন্তু তাই বলে সঞ্জয় এমনভাবে ভেঙে পড়বে কল্পনাতেও ছিল না। মিতুর উপর প্রচন্ড রাগ হল আমার। যে করেই হোক মিতুর সাথে দেখা করে তাকে দুটা কথা শুনাতে হবে। সঞ্জয়ের কাছ থেকে মিতুর বাসার ঠিকানা জেনে তার বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। মিতুই দরজা খুলে দিল। পরিপাটি পোষাকে মিতুকে দারুন লাগছিল। বুঝলাম, সঞ্জয় কেন এ মেয়ের জন্য মজনু হয়ে বসে আছে। পরিচয় দিলে বেশ ভদ্রভাবেই মিতু আমাকে ড্রয়িং রুমে বসাল।
জ্বি ভাইয়া, বলেন। সপ্রতিভ ভাবে সে আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দিল।
আপনি জানেন সঞ্জয়ের অবস্থা খুব খারাপ, বললাম তাকে। আসলে রাগ ধরে রাখতে পারছিলাম না আমি।
কী হয়েছে তার? শীতল গলার প্রশ্নটা শুনে রাগ আরো বেড়ে গেল। ন্যাকা সেজেছে! কিছুই যেন জানে না।
তার সাথে এমন করছেন কেন? সে খুব ভাল একটা ছেলে। সে মনেপ্রাণে আপনাকে ভালবাসে।
জানি আমি।
জেনেশুনে এমন করছেন কেন? তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন কেন?
তার ভালোর জন্যই, ভাইয়া।
এমন কি ভাল করছেন তার? সে সারাদিন মনমরা হয়ে পড়ে থাকে। সেদিন দেখলাম সিগারেট ধরেছে। আরো কতো কি ধরেছে কে জানে! স্কুলেও ঠিক মতো যাচ্ছে না। কী ভালোটা তার করছেন তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে? এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলে তবেই থামলাম।
সে বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছিল।
বিয়ের জন্য চাপ দিলে বিয়ে করতেন। আমাকে বলতেন। আমি সব ব্যবস্থা করতাম। বিয়ে করার ইচ্ছা না থাকলে প্রেম করলেন কেন? ভালবাসার অভিনয় করে কী লাভটা হল আপনার?
অভিনয় করিনি ভাইয়া । আমি সত্যি তাকে ভালবাসি।
ভালবাসেন! নিকুচি করি এমন ভালবাসাকে। আমার উত্তেজনা তখন চরমে।
ভাইয়া, আপনি উত্তেজিত। একটু স্বাভাবিক হন। তারপর বলি।
কী বলবেন আপনি? কী বলার থাকতে পারে আপনার?
মাথা নিচু করে মিতু আমাকে বলল,
ভাইয়া, সেদিন যখন আমার মাকে দিয়ে বাপিকে সঞ্জয়ের কথা বলালাম, তখনই তার বুকে ব্যথা উঠল। এর আগে ভাইয়া তার একবার স্ট্রোক হয়ে গেছে। ওটা সেক্যন্ড টাইমস! তাড়াতাড়ি হসপিট্যাল নেয়ায় বাঁচানো গেল বাপিকে। ভাইয়া, আমি সঞ্জয়কে যেমন ভালবাসি, আমার বাপিকেও বাসি। আমার জন্য বাপির যদি কিছু হয় তবে নিজেকে মা করতে পারবো না কখনো। ইনফ্যাক্ট এখনো পারছি না।
হঠাৎ মনে হল বুকের ভেতর চেপে রাখা উত্তেজনা কমতে শুরু করেছে।
জিজ্ঞেস করলাম, সঞ্জয় তো খুব ভাল ছেলে। যতদূর জানি জাতপাতের দিক থেকেও আপনাদের মধ্যে কোন ঝামেলা নেই। তবে?
আসলে ভাইয়া, বাবা শিক্ষক ছিলেন তো । তিনি জানেন শিক্ষকরা কতো কষ্ট করে চলে এদেশে। তিনি তার মেয়েকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিতে চান না।
কিন্তু আপনি তো তাকে ভালবাসেন। আপনার ভালবাসার ব্যাপারটা তিনি বুঝবেন না?
বাপি একটু এমনই। একরোখা। বয়েসও বেড়েছে। উনাকে বুঝানোর সাধ্যি আমাদের কারো নেই।
আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি।
সেটা দেখতে পারেন। আমার আপত্তি নেই।
তার আগে এটা বলেন, আপনি সঞ্জয়কে কতোটা ভালবাসেন?
অনেক ভালবাসি। অনেক ভালবাসি তাকে। আমি চাই সে খুব ভাল থাকুক।
এতোক্ষনে মিতুর প্রতি রাগ অনেক কমে গিয়েছে আমার।
জিজ্ঞেস করলাম, বিয়ে করা যাবে না এটা জানলে প্রেম করলেন কেন সঞ্জয়ের সাথে?
প্রেম কি বলে কয়ে আসে? তবে বাপি এমন করবেন এটা আসলে আগে বুঝিনি।
তবে আপনি যে সেদিন আমার সাথেও মজা করে কথা বললেন। মোবাইলে বুঁদ হয়ে আমার কবিতা শুনলেন। তারপর সঞ্জয়কে আবার মিথ্যে বললেন। এটা কি উচিত?
কবে ভাইয়া?
দিন-ক্ষণ জানালাম।
সে বলল, ওটা বোধ হয় রিয়া ছিল। তখন তো ভাইয়া আমি হোস্টেলে ছিলাম। আর রিয়া এমন করে মঝে মাঝে আমার মোবাইল রিসিভ করে ফেলত। আমার জানামতে কোন অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলিনি কখনো। সঞ্জয়ই আমার কাছে সবকিছু।
আর সঞ্জয় যে বলল, আপনার মোবাইল সবসময় বিজি থাকে ইদানিং।
সেটা তো ভাইয়া ইচ্ছে করেই। সঞ্জয় যেন আমাকে ঘৃণা করে, সে যেন ভুলে যায় আমকে। তাই আমি বান্ধবীদের সাথে কথা বলি। যাতে সে মনে করে আমি কোন ছেলের সাথে কথা বলছি।
আসল ব্যাপারটা আপনি ওকে খুলে বলতে পারতেন।
তবে যে ভাইয়া সে আমার কথা কখনোই ভুলতে পারবে না। আমি চাই সে আর কাউকে বিয়ে করুক, স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক। আমাকে ঘৃনা করলেই এটা সে পারবে।
কিন্তু তার অবস্থা তো খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে মিতু।
সময় দেন একটু। ঠিক হয়ে যাব। টাইম ইজ এ গ্রেট হিলার। আমার জানা মতে আপনিও তো একজনকে অনেক ভালবাসতেন, বাসতেন না?
বাসতাম। আমার কথা তুলছেন কেন বুঝতে পারলাম না।
তার কথা কি এখন মনে পড়ে?
হঠাৎ মনে পড়ে। সবসময় না।
তবে সঞ্জয়ও একসময় ভুলে যাবে। না ভুললেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে সে।
আপনার কি খারাপ লাগছে না, মিতু?
আমার?
হ্যা?
মিতু মাথা নীচু করে বসে থাকল। কোন কথা বলল না।
জবাব দিন।
চোখ তুলে আমার দিকে চাইল সে।
তারপর চোখ মুছতে মুছতে বলল, ভাইয়া এ বিষয়টা থাকুক এখন।
না বললেও বুঝে নিতে আমার কষ্ট হচ্ছিল না মিতুর কতোটা কষ্ট হচ্ছে।
বললাম, আপনার বাবার সাথে কি দেখা করতে পারি। আমি চাই না, আপনারা দুজন এভাবে কষ্ট পান।
সে আমাকে ভেতরের রুমে নিয়ে গেলে দেখতে পেলাম একটা মানুষ বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায়। পাশে বসে একজন মহিলা তাকে কাপে করে কি জানি খাইয়ে দিচ্ছেন।
মিতু তাদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। মিতুর বাপি আর মা।
বিছানার পাশে রাখা একটা চেয়ারে বসতে বসতে সালাম দিলাম তাদের। সাথে সাথে দেয়ালে টানানো একটা ছবিতে চোখ পড়ল। পঞ্চাশোর্ধ একজন পুরুষ আর মহিলার সাথে মিতু। মহিলাটাকে চিনতে পারলাম। মিতুর মা। মিতুকে জিজ্ঞেস করলাম, ছবির পুরুষ মানুষটা কে? মিতু জানালো, ওটা তার বাপি। অবাক হলাম। ছবির মানুষ আর বাস্তবে আমার সামনে বসা মিতুর বাপির কোন মিল নেই। ছবিতে মিতুর বাপি সুঠাম দেহের একজন সুপুরুষ আর সামনে বসা মানুষটি একেবার ভগ্নস্বাস্থ্য! জিজ্ঞেস করে জানলাম ওটা এক বছর আগে তোলা ছবি। আরো জানলাম এবার স্ট্রোকে উনার ডান পাশটা প্যারালাইসড হয়ে গেছে। মিতুর বাপির এতোটা খারাপ অবস্থা অনুমান করতে পারিনি আগে। কেন জানি না সঞ্জয়ের প্রসঙ্গটা তোলার আর সাহস হল না আমার। আবার কি জানি হয় ওর বাপির! এটা সেটা ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করে বের হয়ে আসলাম রুম থেকে। মিতুর প্রশ্নভরা চোখ দেখে বললাম, থাক মিতু। আমি বরং যাই। ভাল থাকবেন।
সৃষ্টিকর্তার এ কেমন নিষ্ঠুর খেলা! ভালবাসার নানান রকম অনুভূতি দিয়ে মানুষকে কষ্টের বেড়াজালে আটকে রেখেছেন তিনি। এইসব টুকটাক ভাবতে ভাবতে ভাবতেই সঞ্জয়ের কল।
কি রাগীব, গেসিলি মিতুর বাসায়?
হ্যা। এই মাত্র বের হয়ে আসলাম।
কী বলল মিতু? সঞ্জয়ের আকুল জিজ্ঞাসা।
কী আর বলবে। ও একটা ছেলের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমার সাথে কথাই বলল না। তুই ভাববিনা। আমি কাল দেখা করব।
কন্ঠ জড়িয়ে যাবার আগেই কলটা কেটে দিলাম। জানিনা এভাবে মিতুকে সঞ্জয়ের চোখে খারাপ করে তুলে ধরে আমি ঠিক করছি কি না। এটা বিচারের রায় সময়ের হাতে তুলে দিলাম।
হায় হায়! আধা ঘন্টা সময় নিয়ে বসেছিলাম। অথচ এক ঘন্টা সময় শেষ! আজ বস আমাকে কিরকম ঝাড়ি দেবেন ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল আমার। দিক। ঝাড়ি দিক যতো খুশী। সহ্য না করতে পারলে রেজিগনেশন লেটার ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসব। বলে আসব আমি আমার চাকরী থেকেও বেশি ভালবাসি আমার লেখালেখিকে, ভালবাসি আমার পাঠকদের। ও হ্যা, জানি, গল্পটা অতোটা অসাধারন হয়নি। তবু শুরুতে মিথ্যে বলেছিলাম আপনারা যাতে আগ্রহ নিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়েন। জানি, এজন্য ক্ষমা করবেন আমায়। আপনারাও আমায় ভালবাসেন যে!
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৭
কয়েস সামী বলেছেন: আপনার মন্তব্য সাদরে গ্রহন করলাম। বুঝলাম নিজেকে আরো গড়তে হবে। ধন্যবাদ।
২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫১
বিষণ্ণ বালক বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন। অনেকটা আবেগআপ্লুত হয়ে পরেছিলাম।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৮
কয়েস সামী বলেছেন: পাঠের জন্য ধন্যবাদ। আবারো বুঝলাম একেকজনের রুচিবোধ একেক রকম।
৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২০
শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: অসাধারন...জীবন সত্যিই জীবন্ত গল্প
৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৮
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ ভ্রাতা।
৫| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:০৬
মাক্স বলেছেন: ২য় ভালোলাগা!
৬| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৭
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ ম্যাক্স!
৭| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১৯
হিতৈষী বলেছেন:
৮| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩২
maya111 বলেছেন: কোন উত্তেজনার কথায় বলতে বলতে স্ট্রোক শুধু সিনেমাতেই দেখা যায় । আপনার গল্প টা সুন্দর । বাস্তব হয়ত এমন না । আপনার ফোন ধরল রিয়া বাসাতে । সঞ্জয় এর ফোন ধরল হোস্টেলে !!!
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫
কবির সাহেব বলেছেন: পুরা ফালতু