নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা অামার তৃষ্ণার জল

কয়েস সামী

i m nothing in this huge world...

কয়েস সামী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট্ট প্রতিবাদ -১! (উৎসর্গ: আন্দোলনরত সব ব্লগারদের)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫৩

বাবা! বাবা! শিবির! শিবির!

৬ বছরের ছেলেটার চিৎকারে মেজাজটা গরম হয়ে গেল।

টিভিতে শাহবাগ দেখতে দেখতে যা অবস্থা হইসে তার! ‘তুই রাজাকার’ আর ‘একটা দুইটা শিবির ধর’- স্লোগান তার মুখে সারাক্ষণ লেগেই আছে। এখন আবার ড্রয়িং রুম থেকে শিবির শিবির বলে ভয়ার্ত চিৎকার। ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখি সফেদ পাজামা-পাঞ্জাবী পড়া এলাকার জামে মসজিদের ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে। মুখে বিব্রত হাসি। কি লজ্জা! কি লজ্জা! বাচ্চা ছেলেপিলে যখন ইঁচড়ে পাকা হয়ে যায় তখনই সমস্যা।মুখে দাড়ি থাকা মানেই শিবির না এটা তাকে বুঝাতে হবে শিগ্গীর।



বাবুকে ধমক দিয়ে বললাম, চুপ করো বাবু। ইনি তোমার আরবী শিক্ষক। না জেনে, না বুঝে খারাপ কথা বলতে নেই। উনাকে সালাম করো। উনি আজ থেকে তোমাকে আরবী পড়াবেন।



ইমাম সাহেবকে বললাম, কিছু মনে করবেন না হুজুর, বাচ্চা মানুষ। না বুঝে খারাপ কথাটা বলে ফেলসে।



ছিঃ, ওভাবে বলবেন না। আমি কিছু মনে করিনি। আর তাছাড়া সে তো কোন খারাপ কথা বলেনি।



জানতাম ইমাম সাহেব মানুষটা ভাল। খুব অমায়িক। কিন্তু তার শেষ কথাটায় খটকা লাগল। সে তো খারাপ কথা বলেনি! জামাত-শিবিরের রাজনীতি আমি ব্যাক্তিগতভাবে ঘৃণা করি। শিবির আমার কাছে একটা অবাঞ্চিত একটা শব্দ। যেদিন এই শব্দটি বাংলাদেশে কেবল ইতিহাস হয়ে থাকবে আমি সেদিনের অপেক্ষা করি।



আমি ভ্রু কুঁচকে হুজুরের দিকে চাইলাম।



আমার চোখের প্রশ্ন বোধ করি ইমাম সাহেব বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, ও আসলে ঠিকই বলেছে। ছাত্রজীবনে আমি শিবির করতাম। এখন সরাসরি জড়িত না থাকলেও নৈতিক দিক থেকে জামাত বা শিবিরের রাজনীতি সমর্থন করি।



এই অসময়ে এরকম সুষ্পষ্ট কথায় অবাক হলাম, পাশপাশি লোকটার প্রতি এক রাশ ঘৃণায় মনটা ভরে গেল। ইচ্ছে হচ্ছিল লোকটাকে চলে যেতে বলি, তবু ভদ্রতার খাতিরেই হোক অথবা এতোদিনকার সম্পর্কের কারনেই হোক মনের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখলাম।



বাবুর মাকে আগেই বলা ছিল। তিনি ততোক্ষনে চা নাস্তা নিয়ে এসেছেন।



সরাসরি শিবিরের সমর্থক ইতিপূর্বে কখনো পাইনি। তাই মনের ভেতরে জমে থাকা কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার ইচ্ছে হল।

জিজ্ঞেস করলাম, সরাসরিই প্রশ্ন করলাম, আপনারাতো স্বাধীনতার বিপক্ষের লোক, তাই না।

নাউযুবিল্লাহ নাউযুবিল্লাহ! কি যে বলেন। আমাদের শিবির গঠিত হয় ১৯৭৭ সালে। একটা স্বাধীন দেশে গঠিত হওয়া একটি দল কিভাবে স্বাধীনতার বিপক্ষের হয়?



আর আপনাদের জামায়াত?



এটাও তো স্বাধীনতা পরবর্তী সময় নতুন করে গঠিত হয়। আপনিও জানেন ঐ সময়েই আওয়ামীলীগেরও নতুন করে জন্ম হয়।



কিন্তু আপনাদের তৎকালীন আমির গোলাম আযম? উনি তো একজন চিহ্নিত রাজাকার! তাই নয় কি?



এ কথা যদি বলেন তবে তো বলতেই হয় যেসব দল স্বাধীনতার পক্ষের বলে দাবী করে তাদের মধ্যেও তো অনেক রাজাকার রয়ে গেছে।



এবারের গণজাগরণ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? এবার আমার স্ত্রী মুখ খুললো। যদ্দুর জানি সেও জামায়াতের রাজনীতি অপছন্দ করে।



এবার কিছুটা সময় নিলেন হুজুর। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বললেন, আমার ব্যক্তিগত মত হল যুদ্ধাপরাধের বিচারে আমার কোন অমত নেই। তবে কথা হল বিচার কাজটা যেন নিরপেক্ষ হয়। আর অন্যান্য দলের ছত্রছায়ায় থাকা রাজাকারদেরও বিচার হোক। আরেকটা কথা, জামায়াত শিবিরিকে নিষিদ্ধ করা এদেশের জন্য খুব খারাপ হবে। আমার ধারণা, তখন আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে কাজ করতে হবে। তামিল গেরিলা, তালিবান, হিজবুল্লাহ এদের কথা তো আপনারা ভাল করেই জানেন।



এভাবে দীর্ঘক্ষন হুজুরের সাথে আমাদের দুজনের কথা হল। তার বিনীত ভঙ্গি, শিবির ও জামায়াত সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ও অঢেল জ্ঞান অজান্তেই আমাদের মুগ্ধ করে ফেলল। আমাদের ঘৃণার কথা ভুলে গিয়ে ব্যাক্তি ইমাম সাহেবকে আমাদের বেশ ভাল লেগে গেল। তখনই হঠাৎ বাবুর দিকে চোখ পড়ল। দেখি সে গালে হাত দিয়ে বসে আমাদের কথা শুনছে। বাবুর পড়ার কথা খেয়াল হল। এমনিতেই এক ঘন্টা সময় দিবেন বলে হুজুর এসেছেন। আমাদের গল্পও অনেকক্ষন হয়ে গেছে। বাবুকে বললাম, যাও বাবু ওযু করে এসো। পড়তে বসবে।

না, আমি কোন শিবিরের কাছে পড়ব না। বলেই বাবু দৌড়ে তার রুমে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিল।



বাবুর উচ্চারণের দৃঢ়তা আমাদের হতবাক করে দিল। বিব্রতও হয়ে পড়লাম। বাবুকে ধমক দিয়ে ডাকতে থাকলাম। দরজা খুলে পড়তে বসতে বল্লাম। সে ভেতর থেকে কেবল বলতেই থাকল, কোন শিবিরের কাছে সে পড়তে পারবে না। শিবির গেলে তবেই দরজা খুলবে। আইসক্রিম তার প্রিয় খাবার। উপায়ান্তর না পেয়ে অগত্যা আইসক্রিমের লোভ দেখালাম। তবু তার এক দাবী, শিবিরের কাছে সে কিছুতেই পড়বে না। বল্লাম, কেবল তখনকার মতো পড়ে নিতে। পরদিন থেকে আর পড়তে হবে না। তবু সে আকাট্টা। কিছুতেই দরজা খুলবে না।



ভয়াবহ বিব্রতকর পরিস্থিতি!



একসময় হুজুর নিজেই এগিয়ে আসলেন। বললেন, থাক। বাবু যখন পড়তে চাচ্ছে না, আমিই বরং যাই। আমরা দুজন তখন এমন অবস্থায় ছিলাম যে তাকে প্রতি উত্তরে কিছুই বলতে পারলাম না। যাবার আগে হুজুর আরো বলে গেলেন, জামায়াতের নীতিতে বিশ্বাসী বলে গর্ব বোধ করতাম এতোদিন। আজ বড় লজ্জা পেলাম। বড় লজ্জা।



দুদিন পর হুজুরের কাছে ক্ষমা চাইব বলে মসজিদে গেলাম। হুজুরকে কোথাও পেলাম না। খবর নিয়ে জানতে পারলাম, দুদিন আগে হঠাৎ হুজুর কাউকে কিছু না বলে চলে গেছেন। কোথায় গেছেন কেউ জানে না।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৩

মুহাম্মাদ আলী বলেছেন: জামাত-শিবির শব্দটা সকলের কাছে ঘৃণার হয়ে গেছে
এদের নির্লজ্জতা দেখলে আমার প্রচণ্ড রাগ হয়
পোস্ট এ ভাল লাগা দিয়ে গেলাম

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৪

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৫

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: নতুন প্রজন্মের কাছে শিক্ষা পেয়েছে। সাবধান থাকবে, সেই হুজুর না আবার আপানদের ক্ষতি করে বসে।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১০

কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১২

মশামামা বলেছেন:


ওহে শিবির, ওহে ফ্রান্কেনস্টাইন্ড!
ফিরে এসো বাছাধন - সুস্থ জীবনে
বাঙালী হয়ে প্রজন্ম চত্বরে এসে জড়ো হও -
রাজীব হত্যার ক্ষমা চেয়ে পবিত্র করো কণ্ঠ তোমার,
মুখে তোলো একটাই স্লোগান -
'জয় বাংলাদেশ; রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ,
আমি বাঙালি, বাঙালির জয় হোক,
পাকিস্তানী হানাদারবাদ নিপাত হোক।'

ওহে শিবির, ওহে ফ্রান্কেনস্টাইন্ড!
সবার সামনে এসে প্রকাশ্যে বলো -
আমি দ্বিধাহীন, বিবেকবোধে সমুজ্বল তোমাদের মতই,
আমি বাংলায় জন্মেছি, বাংলায় একাত্ম, বাংলায় গান গাই
আমি তোমাদেরই সন্তান ও ভাই।

ওহে শিবির, ওহে ফ্রান্কেনস্টাইন্ড!
উচ্চস্বরে বলো - আমি লজ্জিত, আমি ভারাক্রান্ত,
আমি মুসলমান; তবে উন্মাদনা নয়, ত্যাগ ও শান্তিই আমার ধর্ম,
আমি জানি - শিবির মানেই উন্নাসিক, মানসিক রোগীদের আস্তানা
করজোড়ে প্রার্থণা করো - প্রজন্মের কাছে প্রজন্ম চত্বরে এসে -
'আমার ভুল হয়ে গেছে; আমায় ক্ষমা করো ।

ওহে শিবির, ওহে ফ্রান্কেনস্টাইন্ড!
আজ জাগ্রত জনতার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলো -
'জয় বাংলাদেশ; যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ,
আমি বাঙালি, বাঙালির জয় হোক,
পাকিস্তানী হানাদারবাদের মৃত্যু হোক।
জামাতীবাদ নিপাত যাক, সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাক,
মানবতাবাদের জয় হোক, বাংলাদেশের জয় হোক।'

ওহে জনতা, জেগে ওঠো -
আর একটিবার মুক্তির স্লোগানে মাতো আর বলো -
সারাদেশ জাগ্রত হোক, গোটাজাতি এক হোক
এখনি সময়, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবার
পবিত্র মাটির রক্তের ঋণ পরিশোধ করবার।

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৭

স্বপনবাজ বলেছেন: নতুন প্রজন্মের কাছে শিক্ষা পেয়েছে।

৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৩৮

মোহন মিথ্যা বলেছেন: ভালো লাগলো লেখাটা।

৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: চতুরের কমেন্টগুলা পৈড়েন।

৭| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:২৩

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: স্বপনবাজ বলেছেন: নতুন প্রজন্মের কাছে শিক্ষা পেয়েছে।

৮| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১

তাজমুল আক্তার বলেছেন: কথার মায়াজালে আপনাদের মুগ্ধ করতে সমর্থ হলেও নতুন প্রজন্মকে কথার মায়াজালে জড়ানো সম্ভব না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.