![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যতো দিন যাচ্ছে, বাবুটা বেয়াড়া হচ্ছে। সারাদিন দুষ্টামী, দৌড়াদৌড়ি, খেলা আর ধূলা। আজ খেলতে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলেছে। সেদিকে খবর নাই, টিভিতে খবর দেখে দেখে প্রশ্নের পর প্রশ্ন।
বাবা, পুলিশ গুলি করে মানুষ মারে কেন?
এমনিতেই টেন্শনে মরে যাচ্ছি, তার উপর আবার ইঁচড়ে পাকা প্রশ্ন। মেজাজ গেল আরো বিগড়ে।
যা হোক উত্তর তো দিতে হবে। নাহলে আরো প্রশ্ন। বললাম, মানুষ মারে না তো বাবা, যারা সহিংসতা করছে তাদের মারছে। সহিংসতা থামানোর জন্য গুলি করতে হচ্ছে।
এরা সহিংসতা করে কেন?
রাজাকার বাঁচাবার জন্য, বাবা।
রাজাকারের তো ফাঁসী হয়ে গেছে।
এরা বাবা ফাঁসীর বিপক্ষে।
রাজাকারের ফাঁসী হলে তাদের কী বাবা। তারা তো রাজাকার না।
উফ! এবার আমার সত্যি সত্যি বিরক্ত হবার পালা।
বললাম,বড় হলে বুঝবে। চুপ কর এখন।
বাবা, বাবা, আরেকটা কথা। তুমি আজ রাফি মামাকে রাজাকার বললে কেন? উনারও কি ফাঁসী হবে।
রাফি আমার একমাত্র শ্যালক। বাবুর হাত ভাঙার খবর পেয়ে আজ দুপুরে এসেছিল। সে খুব রাজনীতি সচেতন। ছাত্রকালে ছাত্রদল করত। দুজন একসাথে হলেই রাজনীতি নিয়ে আলাপ হয়। বাকবিতন্ডা হয়। আজো বরাবরের মতো রাজনীতি নিয়ে কথা হচ্ছিল। তখন সে কথায় কথায় বলেছিল দেশে এখন গণহত্যা চলছে। কথা শুনে খেপে গিয়ে তাকে রাজাকার বলেছিলাম। তখন বোধহয় বাবু খেয়াল করেছে।
বললাম, সে জামাত শিবিরের মতো কথা বলেছিল বলে তাকে গালি দিয়েছিলাম, বাবু। হয়েছে, অনেক কথা হয়েছে। এবার ঘুমাও।
বাবু তবু ঘুমায় না। কিছুক্ষণ পর আবার বলে উঠে, বাবা, রাফি মামা তো একবার একটা শিবিরকে দৌড়ানি দিয়েছিল, তাই না।
রাফি ছাত্রদল করতো যখন, তখন শিবিরের সাথে ছাত্রদলের বেশ ঝামেলা চলছিল। ঐ সময়ের একটা ঘটনার বর্ণনা সে প্রায়ই আমাদের সাথে করে। সেটাও বাবু মনে রেখেছে! আশ্চর্য হতেই হল। বললাম, ঠিক বলেছো বাবু।
তবে বাবা তুমি উনাকে রাজাকার বললে কেন? উনি কি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিল।
না, তখন তো বাবু উনি তোমার থেকেও ছোট ছিলেন।
তবে?
তবে কি বাবা?
তবে উনাকে রাজাকার বললে কেন?
বাবু, শুধু যুদ্ধের সময় রাজাকারী করলেই রাজাকার হয় না। রাজাকারের অর্থ অনেক ব্যাপক। বড় হও বুঝবে।
উফ! বাবা, ঘুমাওতো। কাল ঢাকা যেতে হবে। তোমার অপারেশন লাগবে। বাবুর মা পাশে বসে বাবুর চুলে বিলি করে দিচ্ছিল। এবার সে মুখ খুলল।
ঢাকা যাবে কিভাবে? কাল তো হরতাল। বাবুর মার প্রশ্ন।
বাবা, হরতাল কেন দিল? আবার বাবুর প্রশ্ন।
বাবুটা এত্তো জ্বালায়! কি যে করি!
হরতাল দিয়েছে রাজাকারের ফাঁসী যাতে না হয়, সেই দাবীতে।
কে ডেকেছে বাবা?
জামায়াত।
বিরোধী দল বিএনপিও তো ডেকেছে। বাবুর মা যোগ করল।
হরতাল কেন ডাকে মা? হরতালে তো দেশের তি হয়, তাই না?
হ্যা বাবা, ক্ষতি হয়।
সরকারও কি চায় হরতাল হোক।
না বাবা, কোন সরকারই চায় না হরতাল হোক। আমি বললাম।
তবে সরকার এমন ব্যবস্থা করতে পারে না, যাতে হরতাল না হয়?
বাবুর প্রশ্ন শুনে মাঝে মাঝেই টাশকি খেতে হয়। আটকে যাই। উত্তর দিতে পারি না।
তখন একটাই উপায় থাকে ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দেওয়া।
ধমক দিলাম। দিয়ে বললাম, ঘুমাও কাল সকালেই ঢাকা যেতে হবে।
ঢাকা যাব না বাবা। বাবুর হঠাৎ ইউ টার্নে অবাক আমরা।
কেন যাবে না বাবা? যেতে হবে। না গেলে তোমার হাতটা সারাজীবনের জন্য বাঁকা হয়ে যাবে। তাকে সত্যি কথাটা জানালাম।
না, তবু যাবো না।
ভয় পেয়ে গেলাম। আমার ধমক শুনে বাবু এভাবে বেঁকে বসবে ভাবিনি। বাবু বাঁকলে আর সহজে তাকে মানানো যায় না। এ অবস্থায় তাকে কোন লোভ দেখিয়েও লাভ হবে না। তাই বললাম,
স্যরি বাবা। আর বকবো না তোমাকে।
না, বকার জন্য না।
তবে কেন? কৌতুহল হল আমার।
হাত বাঁকা থাকুক বাবা।
কেন, হাত বাঁকা থাকবে কেন? আমার প্রশ্ন। জানিনা কী যে আছে ছেলেটার মনে।
দুজন ঝুঁকলাম তার মুখের সামনে।
এ দেশ যে বাবা চায় না আমার হাত ভাল হোক। ঢাকা যাবার সময় পুলিশ ভুল করে তো আমাদেরও মেরে ফেলতে পারে।
২| ০২ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪৪
নিয়েল ( হিমু ) বলেছেন: বাচ্চাটা দ্রুত সুস্থ হোক এই কামনাই থাকল ।
০২ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪৮
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
জাকারিয়া মুবিন বলেছেন:
কঠিন কিছু সত্যি কথার প্রতীকী উপস্থাপনা ভাল লাগলো।
৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৪৩
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: বেড়ে উঠুক ওরা রাজাকারমুক্ত বাংলায় সেই কামনা করি।
৫| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:২৭
শ্রাবণ জল বলেছেন: এ দেশ যে বাবা চায় না আমার হাত ভাল হোক। ঢাকা যাবার সময় পুলিশ ভুল করে তো আমাদেরও মেরে ফেলতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩০
বোকামন বলেছেন: