![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তখন ১৯৯৬ সাল। আমি দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। আব্বা অসুস্থ হয়ে মেডিকেল চেক আপের জন্য ঢাকা গেলেন। উঠলেন আমার দুঃসম্পর্কের এক ফুপুর বাসায়। কিন্তু ওখানে পৌছেই তিনি হয়ে পড়লেন আরো অসুস্থ। তাকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করানো হল। প্রয়োজনীয় চেকআপ শেষে ডাক্তার জানালেন, তাৎক্ষনিক অপারেশন প্রয়োজন। ফুপু খবর দিলেন। আমাদের কাউকে যেতে বললেন। কিন্তু তখন চলছে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের ডাকা অবরোধ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে। বাসায় আমি একমাত্র ছেলে মানুষ। চারদিকে চলছে সহিংসতা। জ্বালাও পোড়াও, সরকার হটাও আন্দোলন। আম্মা কিছুতেই আমাকে ঢাকা যেতে দিবেন না। আমি বলি, যেভাবেই হোক আমি চলে যাব। আমি যেতে পারব। আম্মা বলেন, উনি যাবে। যদিও উনি একা একা কখনো কোথাও যাননি। তবু উনি যেতে চাইলেন কারণ তিনি চান না তার ছেলে কোন সমস্যায় পড়ুক। অবশেষে আমাদের এ করুন অবস্থা দেখে আমার এক কাজিন সাহস করে রওনা দিলেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। অনেক কষ্টে উনি ঢাকা পৌছালে তবেই আমরা একটু ভরসা পেলাম। নিজের কেউ একজন তো পাশে আছে, এটা ভেবে আম্মাও তার কান্নাকাটি থামালেন।
তবু দিন আমাদের কাটছিল না। আব্বার পাশে যাবার জন্য, আববার অবস্থা সামনে থেকে দেখার জন্য, অপারেশন শেষে তার সেবা শুশ্রষার জন্য আমাদের পরিবারের তিন সদস্যের ( আমি, আম্মা আর আমার বোন) মনটা আকুলি বিকুলি করছিল প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেবকে ডেকে এনে আম্মা বাসায় মিলাদ পড়াতেন। (টানা সেই হরতালের মধ্যে তিনি আর কি বা করতে পারতেন!) পড়াশুনা বাদ দিয়ে আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই হেটে হেটে শহরে যেতাম পত্রিকা পড়ে দেশের অবস্থা বুঝার জন্য, হরতাল কবে শেষ হবে এটা জানার জন্য। একটা একটা করে পত্রিকা হাতে নিয়ে খুঁজতাম কোথাও কি পাওয়া যায় একটুখানি আশার আলো। পত্রিকাগুলো আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতো কেবল। আমার ঐ ছোট্ট মনটাতে হাসি ফুটাতে পারতো না। বরং আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জনগণকে কিছু কষ্ট স্বীকার করে নিতে হবে’ টাইপ মন্তব্য দেখে বুকটা আমার খালি হয়ে যেত। আমি কিছুতেই ভেবে পেতাম না, একটা স্বাধীন দেশে আমাকে বা আমাদের এমন অবস্থায় পড়তে হবে কেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিশ্চয়ই আমার কাছে আমার বাবার চাইতে বড় হতে পারে না।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আমার সেই ১৭ বছর আগেকার আমাদের পরিবারে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে পড়ে গেল। ১৭ বছর অনেক সময়। এই সময়ে এক নবজাতক তার শৈশব কাটিয়ে কৈশোরে উপনীত হয়, এই সময়ে কোন ছাত্র তার পড়শোনা শেষ করে একজন ডিগ্রীধারিতে পরিণত হয়, এই সময়ে একটি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙে স্বাধীন হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের এই দেশ এই দীর্ঘ সময়ে কতোদূর এগিয়েছে? আমাদের গণতন্ত্র কতদূর এগিয়েছে? আমাদের নৈতিকতাবোধ কতোটা উন্নত হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার মতো ভাষা আমার মনে হয় না কোন বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন সুনাগরিকের আছে।
খুব আশ্চর্য হই, যখন দেখি আমাদের কেউ কেউ (অল্প শিক্ষিত থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবীরাও) যুক্তি দেখাই, পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করে মানুষ মেরেছে। যারা মরেছে তারা জামাত-শিবির, মানুষ না। কেউ কেউ যুক্তি দেখাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেনে না নেয়ার কারনে হরতাল হচ্ছে, হরতাল হলে পিকেটিং হবেই, পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করলে সহিংসতা হবেই। আপনারা যারা এ কথাগুলো বলছেন, এইসব মন ভুলানো মেকি কথা বলে হয় সরকারী দলকে বা বিরোধী দলকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করছেন যারা, তাদের বলি, একবার ভাবুনতো, পুলিশ সুদূরের কোন গ্রামের কোন লোককে না মেরে আপনার সন্তান বা বাবা অথবা মাকে মেরে ফেলেছে অথবা ভাবুন আপনার পরিবারের কেউ হরতালের সহিংসতায় পুড়ে মারা গেছে ,কেমন লাগে দেখুন তো। জানি এরকম কিছু ভাবতেও আপনাদের সারা শরীর কেঁপে উঠবে। একটা স্বাধীন দেশে আপনি আপনার প্রিয় মানুষের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারবেন না।
ইদানিং বিভিন্ন ব্লগে দেখতে পাই কোন না কোন রাজনৈতিক দলকে ডিফেন্ড করার জন্য বিভিন্ন লেখা পোস্ট করা হচ্ছে। ব্লগ কর্তৃপক্ষকেও দেখি সেইসব লেখাগুলোকে স্টিকি করে ঝুলিয়ে রাখতে। পত্রিপত্রিকাতেও নানা বয়েসের নানা রঙের বুদ্ধিজীবীদের থেকেও এমন দলীয় পক্ষপাতদোষে দুষ্ট লেখা হরহামেশাই পাওয়া যায়। যারা এমন লেখা লিখছেন আর যারা সেই লেখাগুলোকে স্টিকি করছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনি বা আপনারা যাদের হয়ে কষ্ট করে সময় অপচয় করে লেখা তৈরী করছেন সেই রাজনৈতিকরা কি আমাকে বা আপনাকে নিয়ে একটুও ভাবে? তারা আপনার জন্য কি করেছে বা কি করার সংকল্প করেছে? তারা কি সারাক্ষণ নিজেদের চিন্তায় ব্যস্ত নয়? তারা তো ক্ষমতায় যাওয়ার বা ক্ষমতায় থাকার লোভে যা খুশি তাই করতে পারে, করছেও। যারা নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, এটা নিঃসন্দেহ যে, তারা সমাজের শিক্ষিত লোকজন। আপনারা কেন এমন অন্ধ হবেন? আপনারা কেন দলীয় রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকবেন। কেন আপনাদের নিজেদের মধ্যে ভাদা, পাদা, ছাগু এসব নিয়ে কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ি হবে? এতে আপনারা এইসব দলকে দল সর্বস্ব হীন রাজনীতি করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। লেজুড়বৃত্তির কারনেই তো আমাদের এ সুন্দর ব্লগস্ফিয়ার আজ হুমকির সম্মুখীন। আমরা যদি সবসময় নির্দলীয় নিরপেক্ষভাবে দেশের কথা ভাবি, দেশকে নিয়ে লিখি, দেশের জন্য কাজ করি তাহলেই কেবল আমাদের এ দেশকে অনেকটা পথ এগিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারব। মনে রাখবেন সকল নাগরিক রাজনৈতিক দল নির্ভর হয়ে গেলে সেই রাষ্ট্র কখনোই আর কল্যাণমূলক রাষ্ট্র থাকে না, থাকতে পারে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ডিফেন্ড করা লেখক বা বুদ্ধিজীবীদের বলছি, আপনাদের যদি পক্ষপাতদুষ্ট লেখা লিখতেই হয় তবে নামের পাশে পরিচিতি মূলক শব্দ হিসেবে পেইড ব্লগার বা পেইড বুদ্ধিজীবী অথবা 'অমুক ভাবধারায় পুষ্ট' কথা লিখে দেয়া উচিত।
এবার আসি কেন নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে তবেই এমন লেখা প্রচার করা উচিত। কয়েকদিন আগে যখন দেশে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয় সেদিন সকাল থেকেই আমি একটু পরপর ব্লগে লগ ইন করে দেখে নিচ্ছিলাম কি অবস্থা। একের পর এক পোস্ট আসছিল এই খবর দিয়ে যে বাচ্চারা নাকি এ ভিটামিন খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হঠাৎ বিকাল ৪ টা ৪৪ মিনিটে ব্লগার নাহোল এই অসুস্থ হবার বিষয়টা যে একটা গুজব ছাড়া আর কিছু না এটা উল্লেখ করে একটা পোস্ট দিলেন। সাথে সাথে পোস্টটি স্টিকি হয়ে গেল।
লিংক:ববব
এতোক্ষনের আতংকগ্রস্ত আমিও নিশ্চিন্ত হলাম। আতংক কেটে গেল। আগামী বছর তো আমার বাচ্চাটাকেও খাওয়াতে হবে। কিন্তু নাহোলের পোস্টে সন্দেহ ঢুকল তখন যখন সন্ধ্যাবেলা আমার ক্লাস টেনে পড়া বোনকে ডাক্তার দেখানোর জন্য নিয়ে গেলাম। চেম্বারের চারদিক রোগীতে রোগারণ্য! অসুস্থ সবাই বাচ্চা মানুষ। আমার রোগীর বয়স বেশি বলে বাচ্চাদের উৎকন্ঠিত বাবা-মা আমাদের চেম্বারেই ঢুকতে দিল না। খবর নিয়ে জানলাম ভিটামিন এ খেয়ে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বমি করছে। বোনকে নিয়ে অগত্যা বাসায় ফিরতে হল। চিন্তা করার ফুরসত পেয়ে মনে প্রশ্ন জাগল, গুজবে যদি বাবা-মা আতংকিত হয় তবে বাচ্চাগুলা কেন সেই আতংকে বমি করা শুরু করব। ইনফ্যাক্ট যে বয়সের বাচ্চা দেখে আসলাম তাদের তো আতংক বা গুজব এসব শব্দ বুঝার কথা না। আর যদি জোর করে খাওয়ানোর কারনে বমি হয়ে থাকে - যা নাহোল সাহেব এক ডাক্তারের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন- তবে এমন ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি কেন? এ ক্যাপসুল তো অনেক আগে থেকেই খাওয়ানো হচ্ছে। বাবা-মা তো সবসময়েই বাচ্চাদের জন্য উৎকণ্ঠায় থাকে। সন্দেহ হওয়াতে অন্তর্জালে বসলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই এ বিষয়ে গত ১০ জানুয়ারী তারিখের প্রথম আলোর একটা রিপোর্ট পেয়ে গেলাম যাতে লেখা হয়েছে এ বছর ভিটামিন এ এর মান নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সন্দেহের কথা।
লিংক: ড়পগটবগম
রিপোর্টটি পড়া মাত্রই বুঝলাম নাহোল সাহেবের লেখাটি ছিল উদ্দেশ্য প্রণোদিত। পরবর্তীতে পত্রপত্রিকায় আরো কিছু রিপোর্টের পর
লিংক:ররররর
নাহোল সাহেবের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরো সন্দেহ হল।বুঝলাম হয় তার জানার ভুল অথবা তিনি সত্য বের করতে আগ্রহী না। কিন্তু অনুসন্ধিৎসু হওয়াতে একটা ভুল ধারণা নেয়া থেকে আমি না হয় বেঁচে গেলাম। কিন্তু আমার মতো আরো অনেকে আছে যারা এখনো নাহোল সাহেবের কথামতো ব্যাপারটাকে গুজব বলে মেনে নিয়েছে। একটা লেখা এভাবে খুব সহজেই ভুল মতামতের সৃষ্টি করতে পারে। হতে পারে নাহোল সাহেব হয়তো বা তখন ভাল উদ্দেশ্যেই (বাবা-মা যাতে আতংকিত না হোন সেজন্য) পোস্টটি দিয়েছিলেন। এটাও নিশ্চিত যে আমার মতো করে ব্লগ কর্তৃপক্ষও নাহোলের বক্তব্যকে সত্য বলে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাপারটা ঘটত না, যদি নাহোল সাহেব তার রাজনৈতিক ভাবধারাগত পরিচয় দিয়ে লেখাটি লিখতেন অথবা (তিনি যদি নির্দিষ্ট কোন ভাবধারার না হয়ে থাকেন) লেখাটি লেখার আগে যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয়ে তারপর লিখতেন। ব্যাপারগুলা এমনই হয়। তার এ পোস্টে সরকারের হয়তো বা সাময়িক কিছুটা ফায়দা হল। কিন্তু দলীয় সর্মথনের কারনে কালোকে কালো বলতে না পারলে আল্টিমেট ক্ষতিটা কিন্তু আমাদের মতো সাধারন নাগরিকের। আমরা যদি চোখ কান বিবেক বন্ধ করে রাখি তবে এভাবে প্রতিনিয়ত পরাজিত হতে থাকব। আমাদের দেশ নিমজ্জিত হতে থাকবে অন্ধকারের অতলে, যেখান থেকে ফিরে আসা কখনো সম্ভব না।
তাই এখনই সময়। ঘুরে দাঁড়ান। নিজের সত্তাকে আর বিকোবেন না। শাহবাগের গনজাগরণ মঞ্চ থেকেই শুরু হোক আমাদের এই নব যাত্রা। এখান থেকে আমরা কিছুতেই অন্য কাউকেই তথাকথিত রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে দিব না। সবাই সতর্ক থাকুন।জয় হবে তরুনের, জয় হবে বাংলাদেশের।
২৫ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:৩৯
কয়েস সামী বলেছেন: ঠিক
২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৪৬
সোহাগ সকাল বলেছেন: ভাবনাগুলো সুন্দর সামী ভাই।
শুভ কামনা।।
২৫ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৮
কয়েস সামী বলেছেন: ভাবনাগুলা সুন্দর হলেও সময়টা মোটেও সুন্দর না। ভাল থাকা হোক। আপনার নামটা, রিয়েল কিনা জানি না, খুব সুন্দর।
৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:১২
উপপাদ্য বলেছেন: এটা মিস করেছিলাম।
২ টা আলাদা প্রসংগের উপর লিখেছেন যদিও রাজনীতি সংশ্লিস্ট। আলাদা করে বা পয়েন্ট আকারে লিখলে ভালো হতো বলে মনে হচ্ছে।
ওভারঅল খুব ভালো লেগেছে।
একটা গল্প লিখেছি। একবার ঢু দিয়েন সময় থাকলে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:২৪
জাকারিয়া মুবিন বলেছেন:
নবজাগরন মঞ্চ নিয়ে চলছে রাজনৈতিক কুটচাল। কেউ নেতা হচ্ছে, কেউ পপুলার হচ্ছে, প্রতিবাদকারী কই?
প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে হোক তরুনের প্রতিবাদ, মাথা নত করুক সব রাজনীতিবিদ।