![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(এক বছর আগে কোরবানী ঈদে লেখা গল্পটি আবার পোস্ট করলাম। আগে যারা পড়েছেন, না পড়লেও চলবে।)
ইরফান সাহেব এলাকার জনপ্রতিনিধি। তিনি বাসার দিকে চলেছেন পায়ে হেটে। তার হাতে একটি দড়ি, দড়ির মাথায় একটি গরু। অন্যহাতে গরুটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি লাঠি।
কোরবানী ঈদের গরুটি তিনি নিজেই কিনেন। কাউকে সাথে নেন না। সেই ছোটবেলা থেকেই ঈদের জন্য গরু কেনা তার খুব শখ। প্রতি ঈদে তিনি খুব সাজগোজ করে পান খেতে খেতে গরুর হাটে যান। জনপ্রতিনিধি হবার পর শখের সাথে আরো ডালপালা যুক্ত হয়েছে। ডালপালাগুলোর মধ্যে একটি হল, বেছে বেছে বাজারের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে দামী গরুটি কিনে আনা। তিনি এলাকার জনপ্রতিনিধি বলে কথা। তার চেয়ে বেশী দামী গরু যদি আর কেউ কোরবানী দিয়ে দেয় তবে বিষয়টি ন্যাক্কারজনক হয়ে যাবে।
তিনি হেটে চলেছেন। পথচারীদের যারা তাকে দেখছে, দাঁড়িয়ে লম্বা একটা সালাম দিয়ে গরুটির দাম জিজ্ঞেস করছে।
আস্সালামুআলাইকুম এমপি সাহেব।
ওয়ালাইকুমআচ্ছালাম।
গরু কিনলেন বুঝি?
জ্বি।
তা দাম কত হইল?
এক লক্ষ টাকা।
দেখেই বুঝছিলাম স্যার। এ গরুটার দাম এক লক্ষ না হয়ে যায় না। কি সুন্দর গরু। ডাগর ডাগর চোখ। শরীর স্বাস্থ্য তো দেখছি মাশাআল্লাহ! খেতে জবর মজা হবে স্যার।
এমপি সাহেব খুব আনন্দ বোধ করেন। বলেন, আরে না, এই অঞ্চলের বাজারে এর চেয়ে বড় গরু আসে না। আসলে আমি সেটাই কিনতাম। তবু এটাও মন্দ না।
জ্বি স্যার। আমি তবে যাই, স্যার?
আচ্ছা। আস্সালামুলাইকুম।
জনাব ইরফান হেটে চলেছেন। তার সামনে গরুটি।
মিথ্যা বললেন কেন?
ইরফান সাহেব চারদিকে তাকালেন। কে কথা বলল? কেউ তো আশেপাশে নাই।
মিথ্যা বললেন কেন, জনাব?
আবার প্রশ্নটি শুনে তার মনে হল গরুর মুখ থেকে কথাগুলি বের হয়ে আসছে।
গরু কথা বলবে কেন? তিনি বুঝলেন আজ পরিশ্রম বেশি হয়ে যাওয়ায় তার এমন বিভ্রম হচ্ছে। গরুর হাটে কম হাটাহাটি করতে হয়নি। তিনি গরুর পেছন পেছন হাটতে থাকলেন।
এবার গরুটি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে প্রশ্ন করল, মিথ্যা বললেন কেন?
নিজের অজান্তেই জবাব দিলেন তিনি, কোনটা মিথ্যা?
কেন? আপনি যে বললেন, আমাকে আপনি এক লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছেন। কিনেছেনতো নিরান্নববই হাজার দিয়ে।
হ্যা। মিথ্যা বলেছি। তাতে কি হয়েছে। মাত্র এক হাজার টাকা বাড়িয়েছি। বেশি তো না। এর থেকে কত বড় বড় মিথ্যা বলতে হয়!
মিথ্যা বলার দরকারটা কি ছিল শুনি?
দরকার আছে। তোর মতো অবলা প্রাণী এটা বুঝবি না। এজন্যই তোদের মানুষ গরু বলে।
দরকারটি কি শুনি?
আরে মিয়া, এক লাখ বলতে গর্বে বুকটা ফুলে উঠে। গতবার কিনছিলাম ৮৮ হাজার টাকা দিয়ে। এবার লক্ষ ছুঁয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তোর মালিকতো মানল না। সে নাকি নিরান্নববই হাজার থেকে এক টাকাও বেশি নিবে না। তোর মালিক তোর মতোই একটা আসত্ম গরু। একশ টাকাও কেউ ছাড়ে না আজকাল।
কিন্তু আমার মালিক তো ছেড়ে দিল।
তোর মালিক তো মানুষ না, গরু।
গরু হওয়াই ভাল।
চুপ। চুপ হারামজাদা। কথা বলিস কেন? ইরফান সাহেব কষে দুই ঘা লাগালেন গরুর পিঠে।
আস্তে মারেন। ব্যাথা লাগে।
লাগুক। তোর ব্যাথা লাগলে আমার কি?
এভাবে মারলে তো আপনার কুরবানীর উদ্দেশ্য পূরন হবে না জনাব।
কুরবানীর উদ্দেশ্যের তুই কি জানিস, গরুর গরু কোথাকার!
মুখ খারাপ করেন কেন? আমি জানি। ধর্মে বলা আছে, প্রিয় কিছু কুরবানী দিতে। যেহেতু আপনি আজকেই আমাকে কিনলেন আমাকে মায়ার চোখে দেখতে হবে আপনাকে। দেখে আপন করে নিতে হবে আমাকে।
চুপ ব্যাটা, চুপ। ইরফান সাহেব গরুটিকে ধমক লাগিয়ে নিজের কর্মকান্ডে নিজেই অবাক হয়ে গেলেন। তিনি কি পাগল হয়ে যাচ্ছেন? গরুর কথা বুঝতে পারছেন, গরুর সাথে কথা বলছেন- এসব তো পাগলামীর লক্ষণ। এটা নিশ্চয়ই হেলুসিনেশন টাইপের কিছু একটা হবে। আজ দুদিন গরু খোঁজার মতো করে গরু খোঁজা, তাও আবার যেন-তেন গরু না, এতদঞ্চলের সবচেয়ে দামী গরু খুঁজে বের করা কি কম পরিশ্রমের কাজ? পরিশ্রমের কারনে এমন হচ্ছে বুঝতে পারলেন তিনি। নিজের আচরণে নিজেই মুচকি হাসলেন একবার। যাই হোক গরুটি খাসা হয়েছে। এর চে বেশী দামী গরু এ বাজারে আর উঠবে না। উঠলেও এক লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনার সামর্থ্য নি:সন্দেহেএখানকার কারু নাই। তিনি গুনগুনিয়ে গান ভাজতে ভাজতে এগুতে থাকলেন গরুর পিছু পিছু। পাশাপাশি একটু পরপরই পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজনের গরু সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলেন আনন্দ ও গর্ব ভরে। কিন্তু যখন একটা ছেলে তার পাশ কেটে চলে গেল কিছু না বলে, তখন তার বেশ রাগ হল। ছেলেটা তো দেখি বড্ড বেয়াদব। একজন জনপ্রতিনিধির সামনে দিয়ে গেল, অথচ সালামটা পর্যন্ত দিল না! ছেলেটা তবে কি তাকে চিনতে পারল না?
চিনতে পেরেছে। সে আপনাকে হাড়ে হাড়ে চিনে। আপনিই বরং তাকে চিনতে পারেন নি। সামনে থেকে গরুর কথা শুনা গেল।
এই বেয়াদবের বেয়াদব! তুই কি বলতে চাচ্ছিস? আমাকে হাড়ে হাড়ে চিনে একথার মানে কি? মনে রাখিস, তোর একটা হাড়ও আমি রাখব না।
সে আমি ভালভাবেই জানি, স্যার। আমার ভবিতব্যে কি আছে এ আমার থেকে ভাল আর কেউ জানতে পারবে না এই মুহুর্তে।
তুই জানি আরো কি বললি? ছেলেটাকে আমি চিনতে পারিনি?
না পারেননি। এ সেই ছেলে, যার বাবাকে আপনি ভিটে ছাড়া করেছেন। তার সব জমি জমা আপনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দখল করেছেন।
কি বললি? এ কি গালিব সাহেবের ছেলে? কিন্তু আমি তো তাকে জমির দাম দিয়েছিলাম। তিনি তো স্বইচ্ছায় জমি বিক্রি করেছিল আমার কাছে।
হ্যা, ছেলেটি গালিব সাহেবের। না, হুজুর। আপনি তার বাবাকে বাধ্য করেছিলেন আপনার কাছে পানির দামে জমি বিক্রি করতে।
চুপ কর বেয়াদব। চুপ কর! বড্ড বেশি কথা বলিস তুই। গরুর গরু! এজন্যই লোকে তোদের কুরবানী দেয়। চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন ইরফান সাহেব।
লোকে কুরবানী দেয় বলেই তো জনাব আমাদের গরু জন্ম স্বার্থক। এভাবে আল্লাহর নামে জীবন দেয়ার ভাগ্য কয়জনের হয় বলেন? আমি আমার এ গরু জন্মে রিতীমতো গর্ব বোধ করি।
বাহ! বাহ! নেতাদের মতো কথা বলছিস দেখি!
নেতাদের মতো কথা বলব কেন? আপনাদের মতো নেতা হবার কোনো শখ নেই আমার।
আপনাদের মতো মানে? আমরা কি খারাপ?
খারাপ না। আপনারা খারাপের চেয়েও খারাপ।
চুপ! তোকে কুরবানী দিয়ে কি করব জানিস। তোর হাড়গোড় সব চিবিয়ে খাব।
তাতো খাবেনই। আপনি মানুষের হাড়গোড় চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন যেখানে, আমি তো নেহায়েৎ একটি গরু।
শোন, তুই গরু বলেই আজ আমার কুরবানী হচ্ছিস। আর আমি মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব হওয়াতে তোকে কুরবানী দিয়ে সওয়াব পাব।
না। ভুল বললেন। আপনার কোন সওয়াব হবে না।
কেন হবে না?
হবে না, কারন আজ আপনি যে টাকায় গরু কিনেছেন তা ঘুষের টাকা। ঘুষের টাকা হারাম টাকা। হাদিসে স্পষ্ট ঘোষনা আছে, হালাল আয় না থাকলে কোন ইবাদত কবুল হয় না।
ওরে হারামীর বাচ্চা হারামী, হালাল হারাম তুই কি বুঝিস?
আপনি বলেন আপনি যে টাকায় আজ আমাকে কিনলেন তা সরকারী কর্মকর্তা নিয়োগের বিনিময়ে নেয়া উৎকোচের টাকা নয়কি?
না। এটা উৎকোচ না তো। এ তো যারা নিয়োগ পাবে তারা খুশী হয়ে কিছু টাকা দিয়েছে। তাছাড়া যাদের আমি নিয়োগ দিলাম তাদের কতো বড় উপকার করলাম, ভেবে দ্যাখ। তারা তো জীবনেও কোন চাকরী পেতো না।
সেটাই তো কথা। আপনি এসব অযোগ্যদের চাকরী দিয়ে, যোগ্যদের বঞ্চিত করলেন। নিয়োগ দেয়ার উপায়টাকেও তো অস্বীকার করলেন আপনি।
হয়েছে, অনেক লেকচার দিছিস।এবার থাম। একবার ভাব কাল তোকে জবাই করা হবে। ভয় করে না তোর?
ভয় করবে কেন? আল্লাহর কাছে যেতে কিসের ভয়। আমরা গরু জাতি কখনো কোন পাপ করি না। তাই আমাদের কোন ভয় নেই। আপনারা সারক্ষণ পাপের মধ্যে থাকেন, তাই মৃত্যুকে আপনাদের ভয় অপরিসীম।
ইরফান সাহেব ঠিক করলেন গরুর সাথে আর কথা বলবেন না। একটি অবলা প্রাণীর সাথে কথা বলার কোন যুক্তি নেই। তিনি উত্তর দিলেন না। আবার গুনগুনিয়ে গাইতে গাইতে মনের সুখে হাটতে থাকলেন। তার মনে খুব আনমদ আজ। কাল অনেকদিন পর মাংস খাওয়া যাবে। ডাক্তারের নিষেধ থাকায় তার স্ত্রী তাকে মাংস খেতে দেয় না। কিন্তু কাল ঈদের দিন বলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে না কোন। হঠাৎ পেছন থেকে একটা গরু পাশ কেটে যাচ্ছে দেখে হাতের লাঠি দিয়ে খোঁচা দিলেন তাকে। মনে মনে বলে উঠলেন, কিরে গরু, বড্ড রোগাটে লাগছে তোকে। খাসনি বুঝি? দ্যাখ, আমার কেনা গরুটা দ্যাখ। কতো নাদুস নুদুস। কথা শেষ না হতেই আশ্চর্য ব্যাপার! গরুটি শিং বাঁকিয়ে তেড়ে আসল তার দিকে। বিশাল দুটি শিং। তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেন। কি হবে তার পেটে শিং দুটি ঢুকলে? কেমন ধারালো শিং দুটি! একটু আগের পুচকে এই ষাড়কে এখন বিশাল বলে মনে হচ্ছে তার। যখন ষাড়ের মাথাটা তার পেটের কাছাকাছি চলে এসেছে, এমন সময় তিনি দেখতে পেলেন তার সদ্য কেনা গরুটি তার সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর ঐ ষাড়টির দিকে শিং উঁচিয়ে হুশিয়ার করল। এতো বিশালদেহী একটি ষাড়ের হুশিয়ারী খেয়ে ইরফান সাহেবের দিকে তেড়ে আসা ষাড়টি পিছিয়ে গেল। ইরফান সাহেব হাঁফ ছাড়লেন। বুকে থুতু দিলন। বড্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আবার ইরফান সাহেব তার সদ্য খরিদকৃত গরুটিকে নিয়ে হাটতে থাকলেন গমত্মব্যের দিকে। হাটাতে হাটতে তিনি মনে মনে একটি গালি দিলেন, বজ্জাতের বজ্জাত! আমার দিকে কিনা তেড়ে আসে।
বজ্জাত বলেন কেন? আপনিইতো তাকে খোঁচা দিলেন। আপনি যদি তাকে খোঁচা না দিতেন, তবে কি সে তেড়ে আসতো? গরুকে কেউ বিরক্ত না করলে অযথা সে কারো কোনো ক্ষতি করে না। আপনি যেভাবে করেন। সামনে থেকে গরুটি কথা বলে উঠল।
আমি অযথা কারো ক্ষতি করি?
হ্যা করেন। এই কিছুদিন আগের ঘটনা। ভুলে গেছেন বুঝি?
কোন ঘটনা?
ঐ যে রহিম শেখকে সেদিন তুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। সে কি ক্ষতি করেছিল আপনার?
রহিম শেখ? তার কথা আর বলিস না? আমার মন্ত্রীর ড্রাইভার হয়ে আমার মন্ত্রীর নামে অভিযোগ তোলে। মন্ত্রীর গোপন কাজের কথা সে টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলে দেয়! কত বড় সাহস তার!
সে তো ভাল একটা কাজ করতে চেয়েছিল। আপনার বিপক্ষে তো কিছু বলেনি সে।
না, তা বলেনি। কিন্তু ভেবে দেখো, তার কারনে মন্ত্রী কতই না বিপদে পড়ে যাচ্ছিলেন, আমি তাকে বাঁচিয়ে দিলাম। এখন তিনি সবসময় আমাকে নেক নজরে দেখবেন। ঠিক কিনা তুমিই বল?
না, ঠিক না। আপনার ধর্মতো এটা বলে না। মানুষের জন্ম মৃত্যু সবই তো আল্লাহপাকের হাতে।এই যে আপনি একটা রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য, আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য একটি মানুষকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিচ্ছেন, এটা কি ভাল হচ্ছে? এই যে পাপ করলেন এর থেকে কি কোন মুক্তি আছে? আরে, আপনি কি না আজ গরু কোরবানী দিয়ে আল্লাহর নেক নজর পেতে চাইছেন। আপনার তো জাহান্নামের আগুনেও ঠাঁই হবে না।
তাইতো, এভাবে তো কখনো ভাবিনি। তুমি তো দেখি হে খুব ভাল যুক্তি দেখাতে পার।
সত্য কথা সবসময় সুন্দর। আমরা গরুরা কখনো মিথ্যা বলি না। মিথ্যা বলেন আপনারা।
আচ্ছা গরু, তোমাকে একটা প্রশ্ন্ করি। ঐ গরুটা যখন আমার দিকে তেড়ে আসল, তুমি আমাকে বাঁচালে কেন? এ বয়সে ঐ গরুর এক ঢুসিতেই তো আমি মরে যেতাম। আমি মরলে তুমিও পালিযে যেতে পারতে।
আমরা গরুরা সবসময় মনিবের ভাল চিন্তা করি। আমাদেরকে আপনাদের মতো ভাবছেন কেন? আপনি রাজনীতিতে যে খেলা খেলে আজ এতো উপরে উঠেছেন, আমি গরু হয়ে তো তা করতে পারি না।
আমি আবার কি খেললাম?
বারে, আপনি বুঝি আপনার মনিব মানে যিনি আপনাকে প্রথম দিকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছিলেন সেই রহমান সাহেব কে খুন করেননি নিজ হাতে? খুন করে তার জায়গা দখল করেছেন সুকৌশলে। আমাকে প্লিজ আপনার মতো ভাববেন না।
হু, তুমি ঠিক বলেছ। কিন্তু আমি যদি তাকে না মারতাম তবে তো আজকের এই আমি, কখনো হতে পারতাম না।
এটাই। আমরা গরু জাতি কিন্তু এমন না। আমরা নি:স্বার্থভাবে আপনাদের কথা ভাবি। সারাদিন আপনাদের জন্য লাঙল টানি। আপনাদের জন্য দুধের ব্যবস্থা করি। একসময় নিজের জীবন দিয়ে আপনাদের জন্য খাবার ব্যাবস্থা করি।
আসলেই তুমি ঠিক বলেছ। আমরা যারা মানুষ তাদের কতো চিন্তা। কতো চাওয়া পাওয়া। কতো স্বপ্ন। কতো ক্ষিদে, কতো লোভ। এ কারনেই তো আমাদের এতো অধ:পতন। কতো পাপ! আপনারা গরুরাই ভাল।
যাক। অবশেষে স্বীকার করলেন। আপনাকে ধন্যবাদ। আসুন আমার সাথে বলুন, গরু জীবন মহৎ জীবন।
গরু জীবন মহৎ জীবন। ইরফান সাহেব বিড়বিড় করে বললেন।
আপনি কি গরু হতে চান? গরুর প্রশ্ন।
হু, হতে চাই।
তবে সব লোভ লালসা ত্যাগ করেন।
ত্যাগ করলাম। ইরফান সাহেব ঘোরের ভেতর চলে যাচ্ছেন।
তিনবার বলুন, ত্যাগ করলাম।
ত্যাগ করলাম, ত্যাগ করলাম, ত্যাগ করলাম।
গুড, এবার আপনার কুরবানীর ত্যাগ স্বার্থক হবে ইনশাআল্লাহ।
****************************************************
ঈদের পরদিন। ইরফান সাহেবের পি.এসের সাথে দেখা করতে এসেছেন পার্শ্ববতী থানার মীর্জা হাকিম আর তার ছেলে আরফান। হাকিম সাহেবের হাতে একটি চটের ব্যাগ। ব্যাগের মধ্যে টাকা। পাঁচ লক্ষ না হলে এমন কেস নাকি হাতেই নেন না ইরফান সাহেব। ড্রয়িং রুমে তাদের বসতে বলা হল। খানিক পরে পি.এস রুমে প্রবেশ করলেন। টাকার ব্যাগটি দেখিয়ে বললেন, ওটি সরিয়ে ফেলুন। ছেলেকে বলেন ভাল করে পরীক্ষা দিতে। পাশ করলে চাকরী এমনিতেই হবে। কথাটি শুনেই মীর্জা হাকিম সোফা ছেড়ে উঠলেন। পি.এসের হাত দুটি ধরে বললেন, এ আপনি কি বলছেন? ছেলেকে নিয়ে বড্ড আশা করে এসেছিলাম। এমপি সাহেব একটা ব্যবস্থা না করলে এর চাকরী তো কখনোই হবে না।
হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পি.এস বললেন, স্যারের কি জানি কি হয়েছে। সারাক্ষণ ঝিম মেরে বসে আছেন। আর বিড়বিড় করছেন, গরু জীবন মহৎ জীবন। আপনাদের কথা বলতেই রেগে গেলেন। বললেন, ঘুষের টাকা আর নেবেন না। বড় টেনশনে আছি মীর্জা সাহেব। এখন আপনি যান। পরে কথা হবে।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪
কয়েস সামী বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকেও শুভেচ্ছা।
২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৩০
খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনি মানুষের হাড়গোড় চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন যেখানে, আমি তো নেহায়েৎ একটি গরু।
+++++++++++
১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫
কয়েস সামী বলেছেন: পাঠের জন্য প্রিয় খেয়াঘাটকে অনেক শুভেচ্ছা।গরু মোবারক।
৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:২৬
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: “তার হাতে একটি দড়ি, দড়ির মাথায় একটি গরু।” চমৎকার শুরু!
“এবার লক্ষ ছুঁয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তোর মালিকতো মানল না। সে নাকি নিরান্নববই হাজার থেকে এক টাকাও বেশি নিবে না। তোর মালিক তোর মতোই একটা আসত্ম গরু।” -হাহাহা।
“তুই কি বলতে চাচ্ছিস? আমাকে হাড়ে হাড়ে চিনে একথার মানে কি? মনে রাখিস, তোর একটা হাড়ও আমি রাখব না।”
“চুপ কর! বড্ড বেশি কথা বলিস তুই। গরুর গরু! এজন্যই লোকে তোদের কুরবানী দেয়।”
“লোকে কুরবানী দেয় বলেই তো জনাব আমাদের গরু জন্ম স্বার্থক। এভাবে আল্লাহর নামে জীবন দেয়ার ভাগ্য কয়জনের হয় বলেন? আমি আমার এ গরু জন্মে রিতীমতো গর্ব বোধ করি।” -হুম।
“আমরা গরু জাতি কখনো কোন পাপ করি না। তাই আমাদের কোন ভয় নেই।” -চিন্তার বিষয়।
গরুর জীবন মহৎ জীবন! অসাধারণ লিখেছেন। ঈদ শুভেচ্ছা
১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৬
কয়েস সামী বলেছেন: অসাধারন মনোযোগী পাঠের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৩
অচিন্ত্য বলেছেন: প্রথমেই বলি গত বছরই আপনার পোস্টটা দেখেছিলাম এবং সেভ করে রেখেছিলাম। কিন্তু আর পড়া হয়ে ওঠেনি। আজও আমার হার্ড ড্রাইভে লেখাটি সেভ করা আছে। যাক।
গল্পের শুরুর প্যারাতে একটা রম্য আমেজ ছিল। একজন লোক একটি গরুকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। এই কথাটা অত্যন্ত রসিয়ে বলেছেন ভাই। হাতে দড়ি। দড়ির মাথায় গরু। হাহহাহ। কিন্তু ক্রমশ গল্পটি রম্যচ্ছলে একটা সিরিয়াস বক্তব্যই পুনরুজ্জীবিত করল।
গ্রেট। নাইস ওয়ার্ক
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪১
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় গীতিকার ও সুরকার ও গায়ক। আপনার গানের সিডির অপেক্ষায় আছি।কবির সুমনের মতো একটা ওয়েবসাইট করার পরামর্শ দিলাম।
৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯
অচিন্ত্য বলেছেন: !!!!!!!!!!!!!
৬| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:১৯
উপপাদ্য বলেছেন: ঈদ মোবারক সামু ভাই
১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৫
কয়েস সামী বলেছেন: ঈদ মোবারক। ইটস নট ফেয়ার। ইউ নো মি পারসনালি, বাট আই ডোন্ট নো ইউ।
৭| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:১৩
উপপাদ্য বলেছেন: আমার ফেসবুকে আপনার নম্বরটা দিলে হয়তো একটু কথা টথা বলতআম আরকি?
৮| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৬:২৩
কয়েস সামী বলেছেন: আপনার ফেসবুক কই পামু! আইডি দেন।
৯| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:৪৬
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২২
মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: এর আগে পড়ি নি। এবার পোস্টটি দেখলাম।
শুভেচ্ছা।