নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পোশাক কারখানার মেধা-শ্রমিক । মেহনতী মানুষের জয় হোক । পড়তে ভাল লাগে, মূলত এই জন্যেই ব্লগে আসা-যাওয়া করি ।

কালমানব

বস্ত্র কারখানার পেশাজীবি

কালমানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সুখী কাজের জায়গার খোঁজে......

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯

প্রায় চার দশকের গার্মেন্টস শিল্পের ইতিহাসে আমরা কখনো কর্মীদের কাজ ও জীবনের (ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স)ভারসাম্যের আলোচনা মূল প্রবাহে আনি নি । তার ফলাফল দাড়িয়েছে যাদের শক্তিতে এই শিল্পের বিকাশ সেই নারী শ্রমিকদের সংখ্যা উল্লেখয়োগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, আশির দশকে বস্ত্রশিল্পে ৮০% নারী শ্রমিক কর্মীদের অনুপাত কমে এখন ২০২৩ সনে এসে দাড়িয়েছে ৫৯.৩% । এর অন্যতম কারন হচ্ছে, কারখানাগুলোতে কাজ ও জীবনের সাম্যাবস্থা না থাকা; যার মূল্য পরিশোধের দায়িত্ব নিয়েছেন মূলত নারীরা- কর্মক্ষেত্র থেকে নিজেদেরেকে সরিয়ে নিয়ে ঘর সামলানোর কাজে মনোনিবেশ করে ।
আমরা, সাধারনত শ্রমিকদের ঠিক সময়ে বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করতে পারলে যথেষ্ট হয়েছে ধরে নেই, এরপর তাদের আর কি দাবী-দাওয়া থাকতে পারে বিশেষ করে প্রায় অশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, টেনে-টুনে এইট, বড়জোর এসএসসি পাশ; তাদের কি মৌলিক চাহিদা পূরন ছাড়া আরো কিছু প্রয়োজন আছে যেমন বিনোদন, বিশ্রাম, অবকাশ অথবা কোন সুক্ষতর চাহিদা থাকে- প্রেম-ভালবাসা, ডিপ্রেশন, আশা-নিরাশা এই ধরনের আবেগীয় অনূভূতি? এই সমস্ত মানবীয় আবেগ শিক্ষা-স্তর, উচু-নিচু, ধনী-নির্ধন সবার জন্য সমান কাজ করে, প্রকাশভঙ্গী, উপভোগ বা মোকাবেলার ধরন ভিন্ন হতে পারে ।

প্রায়শ আমাদের কারখানাগুলোর নিত্যদিনের চিত্র হচ্ছে-
 অনিয়ন্ত্রিত কর্মঘন্টা, কাজ কখন শেষ হবে সেটা নির্ধারিত নয়
 ছুটি এখনো এক প্রিভিলেজ, অধিকার নয়
 কোন খোলামেলা পরিবেশ নাই যাতে ব্যক্তি সমস্যাগুলো আলোচনা করা যেতে পারে
 মেন্টাল ওয়েল-বিয়িং/মানসিক সুস্থতার বিষয়ে কোন আলোচনার অবকাশ নাই, প্রত্যেকে নিজ দ্বায়িত্বে ভাল থাকুন
 বছরে দু’বার কর্মকর্তা পর্যায়ে টিম-বিল্ডিংয়ের নামে কোন রিসোর্ট ভাড়া করে একরাত দুইদিন থাকা আর শ্রমিক-কর্মচারী পর্যায়ে পিকনিক আয়োজন করা হলে সেটা বেশ বড়মাপের কিছু হয়েছে ধরে নেয়া হয়
 মানব-সম্পদ বিভাগের দৃশ্যমান কাজ হলো শক্তহাতে প্রশাসন পরিচালনা করা

অনিয়ন্ত্রিত কাজের সময়, কর্মস্থলে মানসিক চাপ, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারনে জীবনমানের অবনতি, যান্ত্রিক কাজের পরিবেশ ইত্যাদী কারনে শ্রমিকশ্রেনীর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে । যার ফলে পরিবার ভেংগে যাচ্ছে এবং পরকীয়া, মাদকাসক্তি, গৃহ-বিবাদ, নারী নির্যাতন, বিচ্ছেদ চুড়ান্ত পর্যায়ে আত্মহত্যা বা খুনের মত নৃশংস ঘটনা ঘটছে- যার প্রধানতম শিকার নারী ও শিশু ।
এমন এক সময়ে আমাদেরকে কারখানা-কর্মীদের মানসিক সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে এবং এ্টাই উপযুক্ত সময় যখন আমাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিতসক বা মনোবিদ নিয়োগ দিতে হবে অথবা তাদের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে ।
প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে, এইচআর বিভাগ কর্মীদের মানসিক সুরক্ষা দিতে কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়ে কর্মক্ষেত্রকে আরও ইতিবাচক এবং পরিপূর্ণ পরিবেশে রূপান্তর করতে শুরু করতে পারে:

 উন্মুক্ত আলোচনা উত্সাহিত করুন: কর্মী এবং এইচআর-এর মধ্যে স্বচ্ছ এবং সঠিক যোগাযোগের চ্যানেলগুলিকে উত্সাহিত করুন। যে কোন সমস্যা দ্রুত কার্যকর সমাধান করুন, কর্মীদের প্রতিক্রিয়া সহজভাবে নিন ও সরাসরি মোকাবেলা করুন, এবং প্রতিষ্ঠানের নীতির মধ্যে আছে এমন বিষয় অবিলম্বে সমাধান করুন ।

 কর্ম-জীবনের ভারসাম্যকে অগ্রাধিকার দিন: আপনার কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার গুরুত্ব স্বীকার করুন। শর্ট-লিভ ও ছুটি সহজ করা, নমনীয় কর্মঘণ্টা, রিমোট, হোম-ওয়ার্ক এবং এর বিকল্প খুঁজে বের করুন । মানসিক ও শারিরীক সুস্থতার পক্ষে অবস্থান নিন, স্বপক্ষে প্রচার করুন এবং কর্মীদের বার্নআউট কমাতে ব্যক্তি পর্যায়ে বিনোদন ও অবকাশ যাপনে উত্সাহিত করুন।

 পেশাগত বিকাশে বিনিয়োগ করুন: দক্ষতা বিকাশে প্রশিক্ষন এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির উন্নয়নের সুযোগ প্রদান করুন। তাদের কর্মজীবনের লক্ষ্য অর্জনে উপযোগী প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, পরামর্শমূলক উদ্যোগ এবং সহায়তা প্রদান করুন। এটি কেবল কাজের সন্তুষ্টিই বাড়াবে না বরং উত্পাদনশীলতা এবং কর্মচারীদের আত্মবিশ্বাস ও প্রতিষ্ঠানের উপরে আস্থা বাড়াবে।

 একটি ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তুলুন: একটি কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি তৈরি করুন যা বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তি এবং সহযোগিতাকে মূল্য দেয় । ছোট ছোট সাফল্যের স্বীকৃতি দিন, অফিসে বিভিন্ন দিবস উদযাপন করুন । বিভিন্ন মত, আদর্শ ও জাতিসত্তার বৈচিত্র স্বীকৃতি দিন এবং বৈচিত্রপূর্ন দলগত কাজকে উত্সাহিত করুন, ব্যক্তি প্রতিভার স্বীকৃতি দিয়ে দলগত উদযাপনের আবহ গড়ে তুলুন । লাঞ্চ টাইমে, কাজ কম থাকলে কিংবা সময় বের করে কাজের জায়গাতে ফ্লোরে, এসেমব্লি পয়েন্টে, খোলা জায়গায়, ট্রেনিং বা কনফারেন্স রুমে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্যাপন করা যেতে পারে ।

 কর্মীদের সুস্থতার উপর জোর দিন: ডেন্টাল ক্যাম্প, আই ক্যাম্প, হেলথ স্ক্রিনিং আয়োজন করা যায় । এগুলোর জন্য অনেক সময় স্পন্সরশীপও পাওয়া যায় । এছাড়া, ওয়েলনেস কর্মসূচী আয়োজন করুন, যেমন শারিরীক ব্যায়াম, যোগ-মেডিটেশন ক্লাস, মাইন্ডফুলনেস ওয়ার্কশপ, বা মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলিতে প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তি করে হ্রাসকৃত সেবামূল্যে কর্মীদের অ্যাক্সেস দিন অথবা ইন-ক্যাম্পাস এ’ধরনের প্রোগ্রাম চালু করুন । কর্মীদের দৈহিক-মানসিক মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এমন সংস্কৃতি চালু করে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সুস্থ সামাজিক আচরন নিশ্চিত করা যেতে পারে ।

এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করে, আপনি কর্মীদের জন্য একটি সুখী কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে পারেন। একজন সুখী কর্মী তার কাজে বেশি নিবিষ্ট, উতপাদনশীল এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের সাথে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে । কর্মীদের মঙ্গল এবং সন্তুষ্টিতে বিনিয়োগ করা শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত করবে না বরং আরও সফল এবং সমৃদ্ধ সংস্থার দিকে পরিচালিত করবে।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এইসব কর্মী-সহায়ক পদক্ষেপ সবার জন্য প্রযোজ্য বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের ঝরে পড়া রোধ করবে, এবং নারীরা কাজে-পরিবারে-সমাজে সক্ষম, স্বাবলম্বী, মর্যাদাপূর্ন অবস্থান করে নিতে পারবে ।


মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৮

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


ব্লগ ব্যাতীত আপনার সাথে যোগাযোগের অন্য মাধ্যম কি?

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:০১

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো একটা বিষয় নিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২৫

কালমানব বলেছেন: ধন্যবাদ, রাজীব ভাই ।

৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:১৩

বিজন রয় বলেছেন: দারুন কার্যকরী একটি পোস্ট দিয়েছেন।
গার্মেন্টস মালিকদের স্বেচ্চাচারিতা আর অনিয়মগুলো আস্তে আসেত ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
এসময়ে আপনার এই লেখা কাজে লাগবে।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৪

কালমানব বলেছেন: কর্মীদের যত্ন না নিয়ে আসলে নিজদের ক্ষতিই করা হচ্ছে । সুখী কর্মীবাহিনী সুখী ক্রেতা তৈরী করে, আমাদের দেশেই যারা এই নীতি মেনে চলে কারখানা বা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তারা যে কোন পরিস্থিতিতেই লাভজনক ব্যবসা পরিচালনা করছেন; আর যারা বিভিন্ন উপায়ে নিজের শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অবহেলা করছেন, বঞ্চিত রেখে চলেছেন অথবা সুযোগ নিচ্ছেন- ঐসব প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিক লসের সম্মূখীন । সমস্যা হলো গাছে সার-পানি-পরিচর্যা না করে আপনি ভাল ফল বা ফসল আশা করতে পারেন না ।

৪| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:২০

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: চমৎকার সব পয়েন্টগুলো বলেছেন...
দারুণ লিখেছেন...

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

কালমানব বলেছেন: ধন্যবাদ, খটমটে লেখা ব্লগে কেউ পড়বে না বলে লিখতে চাই না, উৎসাহিত হলাম ।

৫| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০

নতুন বলেছেন: ব্যবসায়ীরা শ্রমিকের যত্ন নেয় কিন্তু অনেক শুধুই টাকা কামানোর ধান্দা করে তাদের ব্যবসা কিছুদিন পরে মন্দা শুরু হয়।

অবশ্য আপনার এই আইডিয়া বড় কর্পরেসনে চালানো যায়। মাঝারী এবং ছোটো প্রতিস্ঠানে এসব কম করবে।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

কালমানব বলেছেন: সব ধরনের ব্যবসার জন্যই এই বিষয়গুলো প্রযোজ্য, ব্যবসায়ের সারভাইভালের কারনেই । ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো সহজে এবং অনেক কম খরচে অনায়াসে করতে পারে । পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ, উৎসাহ পেলাম ।

৬| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম।
কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.