নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বস্ত্র কারখানার পেশাজীবি
জর্জ অরওয়েল-এর এনিম্যাল ফার্ম-এ আমরা দেখি যে, ফার্মের মালিকের অপশাসনের বিরুদ্ধে সকল প্রানী একত্র হয়ে বিদ্রোহ করে, মালিককে পরাজিত করে তাড়িয়ে দেয় এবং নিজেদের স্বশাসিত ঘোষনা করে । এর কেন্দ্রীয় চরিত্র নেপোলিয়ন পরবর্তীতে মানুষের মতো জীবন-যাপন শুরু করে, হুইস্কির অর্ডার দেয়, মানুষদের সাথে পশু বানিজ্য করে । এক টেবিলে খাওয়া-দাওয়া করে । এভাবে সে তার পশুত্ব হারিয়ে ফেলে মানুষের কাতারে উঠে আসে। অতপর, আবারো মানুষের আক্রমনে স্ব-শাসিত প্রানী ফার্ম ধ্বংস হয় । এটি একটি বিদ্রপাত্মক, কাল্পনিক কাহিনী যেখানে পরীক্ষামূলক বাস্তব চিত্র তুলে ধরে প্রমান করার চেষ্টা হয়েছে যে প্রানীরা স্বশাসিত হলেও মূল সমাজ-ব্যবস্থার পরিবর্তন হয় না এবং শাসক শ্রেনীর চরিত্র একই সমতলে থাকে বা সামঞ্জস্যপূর্ন হয়- আলাদা কোন প্রত্যাশিত বাস্তবতা তৈরী করতে পারে না ।
তারও অনেক দিন পরে ২০২৪-এ এক এনিম্যাল ফার্মের জনৈক এলিট ছাগল দুর্ধর্ষ শক্তিমান এক দুর্নীতিবাজকে পেঁড়ে ফেলে । অপিচ, দ্রুতই সেই ছাগল নেপোলিয়নের মতো অথবা তারও থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠে । তাই তার বেড়ে উঠার জায়গাটা হুমকি বিবেচনা করে দ্রুত আক্রমনে গুড়িয়ে দেওয়া হয় । ভবিষ্যতে যাতে কেউ এধরনের ঝুঁকিতে না পড়ে অথবা আর কারো ভ্যালুয়েবল সিক্রেট ওপেন হয়ে না পড়ে । পনের লাখ টাকার ছাগল কিংবা এক কোটি ছিয়াশি লাখ টাকার গরু কিনে যারা অশেষ সওয়াব ও দো-জাহানের কামিয়াবি হাসিল কর্তে চেয়েছিলেন,
# তারা কি কোন এফবি স্ট্যাটাস বা ইউটিউব ভিড্যু দিয়ে প্রতিবাদ করবেন ?
# কেন এবং কি করে তাদেরকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হল ?
# আখিরাতে তারা কি জবাব দেবেন ?
# টেকা-টুকার হ্যাডম দেখানোর এমন মওকা হাতছাড়া হলে কেমন লাগে?
এরি মাঝে কিছু ধূর্ত নেকড়ে এবং খেকশিয়ালের দল আরো বেশী সতর্ক হয়ে উঠবেন আর নিরাপদ সময়ে আটলান্টিক অথবা প্যাসিফিক পাড়ি দিয়ে কোন নিশ্চিত মানবিক ডেরায় মাগ-ছেলেমেয়ে নিয়ে বাকী জিন্দেগী সুখে-শান্তিতে কাটিয়ে দিবেন । এই আবালের দেশে আর নয়, যেখানে ছাগলে ল্যাদায় ঢেকে যায় বড় সাহেবের চেয়ার, স্ত্রীর নেতৃত্ব, সুদৃশ্য রিসোর্ট, হর্ম্যশোভিত দালান, পক্ষিনিবাস আর রেশমী সুখের দ্বি-পত্নীক সুখের সংসার । সমঝদারদের জন্য ইশারাকে লিয়ে কাফি । দেশটি ছাগলদের জন্য ঠিক আছে বলে বিজ্ঞজনের ধারনা ।পৌরানিক গল্প বলি, একবার এক রাজা মৎস-শিকারে বের হবার সময়ে রাষ্ট্রীয় আবহাওয়াবিদের পরামর্শ চাইলেন । দিনটি ছিল চমৎকার রৌদ্র-করোজ্বল, সাথে মৃদুমন্দ দখিনা বাতাস আর উপরে পরিস্কার নীলাকাশ । পরিচালক মহোদয় এইসব নমুনা এবং তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষন করে বল্লেন যে দিনটি হবে উজ্বল এবং বৃষ্টি হবার কোন সম্ভাবনা নাই । সুতরাং, মৎস শিকারের জন্য আজ আবহাওয়া অত্যুত্তম । গোবু এবং সভাসদগন সেই হিসাবে প্রসন্নমনে রওনা হলে কিছুদুরে এক ছাগ-মালিকের সাথে দেখা হয় যে কিনা ফিরতি পথে উর্ধশ্বাসে ছাগলের সাথে দৌড়ুচ্ছিল । তার এমন দৌড়ের কারন জানতে চাইলে সে বলে যে, খুব জোর বৃষ্টি হবে তাই তার আগেই সে নিরাপদে ঘরে ফিরতে চায় ।
এমন সূর্যকিরনে ভরা দিনে এটা কি করে হবে এমনকি যেখানে রাজ্যের প্রধান আবহাওয়াবিদও দ্বিমত করেন নি সেখানে এই সামান্য রাখাল কি বলে । কেউ কেউ লোকটির মাথার গন্ডগোল আছে বলেও সন্দেহ করলেন । কিন্তু, অনতিদুরে দু’কিলোমিটার পথ পারি দিলে উম্মুক্ত পথে হঠাৎ করে আকাশে ঘন কালো মেঘ আর বাতাস বয়ে গেলে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয় । পথিমধ্যে কোন গাছ বা শেল্টার না থাকায় মান্যবর গোবুচন্দ্র এবং তদসংগীয় রাজপুরুষগন ভিজে চুপসে গিয়ে শিকারে যতি দিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসেন । তলব করেন চীফ মিটিওরলজিস্টকে, ভুল রিপোর্টের জন্য কারাগারে নিক্ষেপ করেন তাকে । একই সাথে তলব করেন সেই দৌড়বাজ মেষপালককে । সে হাসিমুখে তার ছাগলসহ রাজদরবারে উপস্থিত হয় । গোবু আদেশ করেন যে, পরবর্তী তিন দিন তাকে মেঘ-বৃষ্টির আগাম খবর বলতে হবে । সেই মতে সেই ছাগ-পালক পরবর্তী তিনদিন সঠিক খবর জানিয়ে যায় । রাজা আদেশ দেন যে, এই লোক, ছাগ্লিক মফিজ আজ থেকে রাজ্যের প্রধান আবহাওয়াবিদ হিসাবে নিয়োগ পেলেন ।
আচমকা এই আদেশে ইনাম-প্রত্যাশী ছাগু মফিজ হত-বিহ্বল হয়ে পড়ে, জোড়হস্তে রাজাদেশ প্রত্যাখ্যান করে । কারন জানতে চাইলে সে সবিনয়ে বলে, হুজুর, বৃষ্টির খবর আমি কি জানি, জানে আমার ছাগলে । আমি কিচ্ছু জানি না স্যার । তবে জল-ঝঞ্চা হবার দু’ঘন্টা আগে থেকে আমার ছাগল ম্যাঁ ম্যাঁ করে, লেজ নাচায় আর ল্যাদাতে থাকে । এই থেকে আমি বুঝতে পারি ঝড়-বৃষ্টি হবে, এর বাইরে আমি কিচ্চু জানিনে জাঁহাপনা- আমি ও ডিউটি কর্তি পার্বিনা নে ।
রাজা বলেন, ওকে, তবে তাই হোক, আজ থেকে ঐ ছাগলই হবে দেশের প্রধান আবহাওয়া কর্মকর্তা, সি.এম.ও।
সেই থেকে গোবুরাজ্যে আবহাওয়াবিদের চেয়ার অলংকৃত করে আছেন সেই প্রাজ্ঞ বরাহ ।
মহামতি গোবুর পদাংক অনুসরন করে, কোন কোন কমিশনে কি ছাগল স্কোয়াড নিয়োগ দেওয়া যায় না ? তারা নিরীহ কিন্তু কাজের বলে ইতিধ্যে নিজেদের প্রমান করেছে । দেশের বাঘা-বাঘা সাংবাদিক, দেশপ্রেমিক রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবি, চৌকশ পুলিশ এবং অন্যান্য গুপ্ত বাহিনী যেটা পারেন নাই, সেটা এই সামান্য ম্যাঁৎকৃত প্রানীটি অবলীলায় করেছে ।
ছাগসমাজের এমন সম্মান কালে কালে হয়েছে, সাদিক এগ্রো-ই শুধু বংশীয় প্রানী পালনকারী নন এমনকি মহান গান্ধীজির প্রায়শই ভ্রমনসঙ্গী হয়েছে এক দুগ্ধবতী ছাগী -যার দুধ তিনি পান করতেন ; ইতিহাস স্বাক্ষী ।
অধুনা ১২ লাখ টাকার এই সেলিব্রেটি ছাগলের গুতায় প্রভাবশালী লোকের জীবন-জীবিকা, মান-সম্মান, ঘর-বাড়ী, ছেলে, স্ত্রী, পরিবার যাবতীয় তাসের ঘরের মতো ধ্বসে পড়ে, শেষমেষ তার মালিকের খামার অব্দি গুড়িয়ে যায় । তাই তারা বলছেন অবশেষে, এ ছাগল সর্বনেশে । এতসবের মধ্যে দিয়ে বাংলায় নতুন বাগধারা তৈরী হোল, ছাগলে কি না পারে ! তাই সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন -ছাগল হইতে সাবধান ।
০৫ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৩:০৪
কালমানব বলেছেন: অনেকানেক ধন্যবাদ । অন্তত একজন পাঠকের মনের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরন করতে পেরেছি । উৎসাহিত বোধ করছি ।
২| ০৫ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ৯:২১
শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার লেখা টি অতি আগ্রহ নিয়ে পড়তে এসেছিলাম, লেখার শিরোনাম দেখেই।
প্রথম দিকের আলোচনা টি ভালো ছিল, তবে এনিম্যাল ফার্ম যে সাদিক এগ্রোর সাথে তুলনীয় হতে পারে বা রাজার আব হাওয়াবিদের গল্পের সাথে পরিবেশিত হতে পারে, এটি জানলে হয়তো বেচারা অরওয়েল শোকে মূর্ছা যেতেন।
সাদিক এগ্রোর ছাগলের এহেন পারদর্শিতার গল্প ইদানীং ফেসবুকে পড়েছি তবে তার সাথে এই বইর গল্প তুলনীয় বলে আমার কিন্তু মনে হলো না।
০৫ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৩:১১
কালমানব বলেছেন: বিদগ্ধ পাঠকের মন্তব্যের জন্য নিজকে সম্মানিত লাগছে। লেখাটি আপনার আগ্রহ ভংগের কারন হলে দু:খিত । শুরুতে কঠিন করে লিখতে গিয়ে পরে মত পরিবর্তন করে হালকা চালে নিয়ে আসি -কি দরকার অনাহেতু ঝামেলা ডেকে আনবার, এই ভেবে । এনিওয়ে, ভাল থাকবেন ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:০৪
নয়া পাঠক বলেছেন: ভাইয়ে জটিল লিখেছেন! হাসতে হাসতে লু খু গে টাইপের লেখা।