নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বস্ত্র কারখানার পেশাজীবি
’ট্রিট মানে সিল না দাস্ত, দেইখ্যা-শুইন্যা খাইস, গরীব মারিস না’ এটুকু বলে হেসে ফেলে মুরসী । ওর কথা শুনে কেউ কেউ ফ্রাইড চিকেন নামিয়ে রাখতে যাচ্ছে দেখে সে তাড়াতাড়ি সামাল দেয়, ’জোক্স, দোস্ত, জোক্স এত্ত সিরিয়াস হইও না কেউ, টেইক এ্যাজ ইউ ক্যান’ । পিছনে বিড়বিড় করে সুমনা আর দীপ্ত, ’হালায় কিন্ত মাইজার এট্টা, অর পার্টিতে আসা ঠিক হয় নাই ।’ দীপ্ত কয়, আরে বাদ দাও, দুইদিন পরে সে চলে যাবে কানাডা, আজকেই এর শেষ প্যারা ।’ সুমনা শেষ করে উঠে দাড়ায়, কিপ ইন টাচ, হ্যান-তেন বলে বাই জানায় । দীপ্ত উঠে গেল, মুরসীকে হাগ করে, তারপর বলে, দোস্ত, পার্টি অসাম হৈছে । টেক কেয়ার, কথা হবে । বাসায় একটু আর্লি ফিরা লাগে, না হলে আরো থাকলে ভাল্লাগতো, যাই মামা, বাই ।’
নীচে নেমে দেখে সুমনা গাড়ীতে উঠছে । তাকে দেখে ডাকে, এ্যাই, যাবা আমার সাথে । দীপ্ত হসে বলে, কবুল, বাইক আনি নাই আজকে, ভালই হল ।’ রাস্তায় টুকাটাক কথা হয় বাসায় কে কে আছে, কে কি করে ইত্যাদী তারপর প্রায় আধা ঘন্টার নিরবতা পরে দীপ্তর বাসার সামনে তাকে নামিয়ে দিলে সে থ্যাংকস ফর দ্য লিফট বলে, আসো নামো বলে সৌজন্য দেখায়, আর সুমনা না না আরেকদিন বলে গ্লাস তুলে চলে যায় ।
পরদিন ভার্সিটি ক্লাস শেষে করিডরে সুমনার ডাকে পিছন ফিরে দেখে, বাইক আনছো ? আমারে নিবা ? -সুমনা বলে না কপিলা বলে; সহসা দীপ্ত ঠাহর করে উঠতে পারে না । মেয়েটা একটু ভারী আছে, সেটা তার হাইটের সাথে ভালই ম্যাচ করেছে । ’কবুল’ সে বলে । সুমনা ওরফে কপিলা যেন একটু ফেইক লজ্জা পায়, সে বলে এই কি কে তোমারে বিয়ের প্রপোজাল দিল, যা ই বলি তোমার জবাব হয় কবুল, এ্যাই এটা কি, এ্যাঁ, এই দীপ্ত, এই কি ?’ দীপ্ত তাকিয়ে দেখে, সুমনার টান টান চুল, টলটলে চোখ, কাঁটা চিবুক নিয়ে শক্ত গলার উপরে বেশ মায়াবী মুখ বলতে হয় । সে তাকিয়ে থাকে আর তার ভিতরে কিছু একটা ঘটে চলে যেটা দেখা যায় না সে দেখে দুরে কোথাও হিজলের নীচে শান্ত রাতারগুলের পানিতে পানকৌড়ি ভেসে চলে, ডুব দিয়ে আবার উঠে উড়ে চলে যায় পানিতে মৃদু খলবল শব্দ করে উঠে । সুমনা এখন এতটাই কাছে দাড়িয়ে যে তার গায়ের পারফিউমের ঘ্রান পাওয়া যাচ্ছে, ’এ্যাই কি হলো, পার্বা না, ভাল চালাও, লাইসেন্স আছে তো ?’ দীপ্ত ফিরে আসে ভার্সিটি করিডরে, ও, হ্যা । চল, লাইসেন্স অবশ্যই আছে, আর চালাই ভাল, তুমি সাথে গেলে আরো সাবধানে চালাব । ওকে চল, যাই ।’
বসুন্ধরা থেকে ধানমন্ডি, হঠাৎ করেই এই রাস্তার জ্যাম, ট্রাফিক, রিকশা মায় হকার পর্যন্ত সুন্দর হয়ে উঠে রাস্তাটি দ্রুতই শেষ হয়ে গেলে সুমনা নেমে যায় । নামার সময় কথার কথা বলে ’থ্যাংকস, দীপ্ত বাসায় আসো, চা খেয়ে যাও’ বলে সুমনা বাসার গেটের দিকে হাটতে শুরু করে । কয়েক সেকেন্ড পরে সুমনা তাকিয়ে দেখে দীপ্ত সত্যিই তার পেছন পেছন আসছে । ’ আসবা ?’ আসো- ঘোর লাগা মানুষের মতো দীপ্ত এসে তার প্রায় গায়ে লেগে যায় । সুমনার কোন আদেশ তার উপেক্ষা করবার ক্ষমতা নাই, তারপরেও কি করে সেই মূহুর্তে তার সংবিৎ ফিরে আসে । সে বলে, না না, এই আমার কেডসের ফিতা বাঁধতে হবে, বলে ফুটপাতের সাইডে পা তুলে জুতোর ফিতে গুজে ফিরে এসে দেখে চাবিসহ স্টার্ট দেওয়া বাইক দাড়িয়ে আছে । কি এমন হল যে, চলন্ত মোটরবাইক বন্ধ না করেই বান্ধবীর ফর্মাল আমন্ত্রনে সাড়া দিয়ে সে চলে যাচ্ছিল । তার কাজে আজব লাগছে আর সুমনা নিশ্চয় আজ তাকে উইয়ার্ড মনে করে অস্বস্তি বোধ করছে, করুক; কিভাবে কি হয়েছে দীপ্ত বলতে পারে না । তার জীবনে কখনো এমন হয় নি ।
’’সত্যি, ? ঠিক আছে, দীপ্ত ? আর ইউ সিওর ?’’ -সুমনা হেসে ফেল্লো, তার রেগে যাওয়ার কথা কি, কে জানে ? ’শোন, তাহলে এটা আমার জন্য একটা নিউ থিং, প্রোপজ করার জন্য ধন্যবাদ’ ।
দীপ্ত বলে, ’এর মানে কি ?’ এইটা কি ? ইয়েস অর নো ?
সুমনাকে কি কিছুটা অপ্রস্তুত মনে হয়, সে আমতা আমতা করে, ’ধরো, ইয়ে.. হ্যা বা না কোনটাই না । আমি এটা কখনো ভেবে দেখিনি । এর আগে আমাকে কেউ এভাবে বলে নি । এই জন্য আমি এখনি বলতে পারি না এইটা কি হবে ? আই ফিল গুড নাউ, যে তুমি এমন করে আমার জন্য ভাবছো । তার মানে আমি নিজেও জানি না আমার উত্তর হ্যা বা না, কোনটা হবে ।’
দীপ্ত সাহায্য করতে চায়, বলে -আচ্ছা আমি তোমাকে হেল্প করি । বুঝছি তোমাকে কেউ প্রপোজ করে নি এ’পর্যন্ত । কিন্তু তুমি কি কাউকে পছন্দ করো এমন কেউ আছে, দুরে কিবা কাছে ?’
সুমনা উপর-নীচ মাথা নাড়ায়, হ্যা আছে, ধরো কোরিয়ান কে ব্যান্ড, ইমরান হাশমী, টাইগার শ্রফ আরো কাছের হলে ম্যাথ টিচার রাইয়ান সিদ্দিক ।’
দীপ্ত বুঝতে পারে এইগুলা কিছু না । সে বলে, ওকে সময় নাও, আবার বেশী ঝুলাইও না । ’না’ বল্লে অসুবিধা নাই । আমার মনে হয় ব্যাপারটা এতটা জটিল হয় নাই আমার দিক থেকে । ইন এনি কেস ইফ ইট’স নেগেটিভ.... মনে হয় আমি সামলে নিতে পারব ।’
সুমনা ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে থাকে কেন তার এদ্দিনেও কোন প্রেম-ফ্রেম হয় নাই । সে দেখতে ভাল সে জানে। লোকজনের সাথে সহজে মিশতে পারে, মানুষকে সাহায্য করতে চায় । তার কাজিন, পাড়ার বড়ভাই, নিজের পুরুষ বন্ধু- সব মিলে বড় একটা সার্কেল; কেউ তো একবারের জন্যও তাকে ইশারা-ইঙ্গিতেও কখনো বোঝায় নাই এইটা, তাইলে ক্যাম্নে কি ? সমস্যা কোথায় ? ব্যাপারটার সুরাহা করতে পারে না, ভাবতে ভাবতে সে বাসায় চলে আসে ।
আদিব তার ছোট ভাই, বাসা থেকে কোথাও বের হচ্ছিল । সুমনা জিজ্ঞেস করল, এ্যাই কই যাচ্ছিস ? আদিব বলে, এইতো একটু মোড়ে আমার এক বন্ধু এসছে, ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি ।’ কেন তোমার জন্য কিছু আনতে হবে ?’ কোন কিছু ভেবে না পেয়ে বলে, হ্যা, আইসক্রিম নিয়ে আসিস তো আমার জন্য, খেতে ইচ্ছে করছে, টাকা নিয়ে যা ।’ আদিব বলে যে সে নিয়ে আসবে, বোনের জন্য একটা আইসক্রিম তো সে আনতেই পারে, তার কাছে টাকা আছে ।
শাওয়ার নিয়ে এসে সুমনা দেখে ড্রইং রুমে আদিব ফোনে কথা বলছে । মোবাইল থেকে মুখ তুলে বলে, আপু তোমার আইসক্রিম ফ্রিজে । তারপর সে আবার কথা বলতে থাকে । বেশ খানিক সময় পরে আদিবের কথা শেষ হলে সুমনা তাকে জিজ্ঞেস করে সে কার সাথে এত কথা বলছে । আদিব তাকে জনায় যে তারা একটা মুভমেন্টের জন্য প্রেপ নিচ্ছে আর এটা হবে একটা এন্টি-ডিসক্রিমেনটরি ডেমো যেখানে সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যানার নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রসেশন করবে । সুমনা একটু কৌতুহলী হয়, হোয়াট ডিসক্রিমিনেশন? হোর্য়জ্জ্যাট হ্যাপেনিং? গিম্মী এ্যা ক্লু, কি নিয়া হৈচে এটা?
আদিব বলে, আপু, এটা হচ্ছে সরকারী জবের কোটা যার ৫৬% আর রিজার্ভড ফর ফ্রিডম ফাইটার্স, ওমেন, মাইনরিটি, ডিজ্যাবলস । পয়েন্ট হচ্ছে, ৩০% রাখা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা আর তার বংশধরদের জন্য, এইটা আফটার অল দিজ ইয়ার্স লেটার ইজন্ট জাস্টিফাইড । যুদ্ধের এত বছর পরে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতির কোটা হিসাবে এই পার্সেন্টেজ কারেকশন করা দরকার । সত্যিকারের মেধাবীদের সুযোগ আরেকটু বাড়ানো দরকার ।
সুমনা একটু ভাবে । তারপরে ভাইকে বলে, সো হোয়াট, তুই কি সরকারী জব করতে চাস নাকি? আই ডোন্ট থিংক সো । তুই এটা করবি না এমনকি আমিও না । উই পারহ্যাপস রিটার্ন টু ব্রন্কস আফটার এ কাপল অব ইয়ার্স, আই সাপোজ ।
আদিব উপরে-নীচে মাথা নাড়ে, আপু, ? ঠিকই আছো । আমি জব চাই না । আমি জাস্ট চাই যে এটা রিফর্ম হয়ে একটা লজিক্যাল স্ট্যান্ডে আসুক । আই ডোন্ট নীড ইট, বাট সামওয়ান ক্যান ক্যাচ ইট হু রিয়েলী ডিজার্ভ দ্যাট, লাইক দীপ্ত ভাইয়া, লাইক আমার ফ্রেন্ড সাবিত যার সাথে কথা বলছিলাম ।
সুমনা বলে, তোর পয়েন্টে মেরিট আছে, আদিব, আই অলসো ফিল ইনস্পায়ার্ড । কবে হবে তোদের র্যালী। আমি যাবো ।
আদিব জানায় আগামীকাল, ধানমন্ডি ২ নম্বর থেকে শুরু হবে । আদিব আরো বলে যে সবচে টাফ পার্ট যেটা সুমনাকে করতে হবে সেটা হলো বাবার থেকে মিছিলে যাবার পার্মিশন আদায় করা ।
সুমনা ওকে সাইন দিয়ে ভাইকে আশ্বস্ত করে । তারপরে ফোন করে দীপ্তকে, দীপ্ত শোন, কালকে আমি আর আদিব একটা প্রসেশনে যাচ্ছি আমি চাই তুমিও আমাদের সাথে থাকো । দীপ্ত জানায় যে তারা যেন তার জন্য ওয়েট করে, কালকে সবাই মিছিলে একত্র থাকবে । সেই সাথে সে কিছুটা অবাক হয় এই ভেবে যে, সুমনা বা আদিব কেউই তো চাকরী করবে বলে মনে হয় না । কারন, আমেরিকাতে তার বাবার বিজনেস আছে, বাংলাদেশেও তাদের পুরনো ব্যবসা, বাড়ীঘর সব মিলিয়ে নিসন্দেহে তারা উচ্চবিত্ত । তাহলে, তার মনে হয় যে তারা দুই ভাই-বোন একটা সিস্টেমেটিক অব্যবস্থার প্রতিবাদ করতে চায়- এটা হতে পারে বলে দীপ্ত সাব্যস্ত করে । হোয়াটএভার, এই দুই শৌখিন আন্দোলনকারীর দায়িত্ব যে তাকে নিতে হবে সে ব্যাপারে মনে মনে প্রস্তুতি নিতে থাকে ।
ডাইনিং টেবিলে সুমনার বাবা ব্যাপারটা শুনে ছেলে-মেয়ে দু’টোর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন তাদের ফিজিক্যাল এ্যাবিলিটি কতটুকু, মিছিলে যাবার জন্য তারা কতটা মনো-দৈহিক রেডি? সামরিক জান্তা এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র ছিলেন, ঝট করেই পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো ফ্ল্যাশব্যাকে চলে এলো । তিনি স্পষ্ট মনে করতে পারেন, রড হাতে তিনি সামনের কাতারেই থাকতেন । তারই রক্ত, আবার ২০২৪ এ দুরন্ত মিছিলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চায়, তিনি মানা করবেন কি করে? মন্ত্রমুগ্ধের মত বল্লেন, ওকে, যাবে ? ঠিক আছে । টেইক সাম চকলেট এ্যান্ড ওয়াটার বটলস, টিস্যু . . . . . এন্ড উইয়ার কেডস এন জিন্স । ওকে, টেক কেয়ার অব ইচ আদার, সব সময় একসাথে থাকার চেষ্টা করবে । ডোন্ট গেট প্যানিকড ইনসাইড এ মব ।
আদিব ও সুমনা অবাক হয়ে তাদের বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল । তাকে কেমন যেন অন্যরকম লাগছে এই মূহুর্তে । এত সহজে বাবা তাদের মিছিলে যাবার অনুমতি দেবে তারা দুই ভাই-বোন ভাবতে পারে নি ।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.