![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাটির দেয়াল ও টিনের চালের জীর্ণ ঘরই বলে দিচ্ছিল পরিবারটির দৈন্যদশার কথা। ঘরের পাশে শ্মশান। গত শনিবার সন্ধ্যায় দাহ করা বাবুল শীলের চিতা থেকে গতকাল রোববার সকালেও ধোঁয়া উঠছিল। স্বামীর শ্মশানের দিকে বারবার ছুটে যাচ্ছিলেন স্ত্রী সবিতা শীল। একটানা কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে লিকলিকে শরীরের এই নারীর। তাঁর কণ্ঠস্বর যেন রুদ্ধ হয়ে গেছে।
চুলকাটার দোকান চালাতেন নাপিত বাবুল শীল। তাঁর জন্য কাঁদছেন স্ত্রী সবিতা শীল, ছেলে, ছেলের বউ ও নাতিরা। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের শীলপাড়ায়। গত শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারা যান তিনি। তাঁর সংসারে রয়েছে স্ত্রী, বড় ছেলে জিতেন্দ্র শীল, জিতেন্দ্রর স্ত্রী ঝিনু শীল, দুই নাতি জয় ও বিজয় এবং ছোট ছেলে সাগর শীল।
গত শনিবার নির্বাচন চলাকালে দক্ষিণ আশিয়া হযরত শাহ আমানত হেফজখানা ও এতিমখানা ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুজন ইউপি সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে বুকে ইটের আঘাতে মারা যান বাবুল শীল। তাঁর বাড়ি থেকে ভোটকেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ভয় পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান বাবুল। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
গতকাল দুপুরে বাড়ির উঠানে কথা হয় সবিতা শীলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে মারামারির খবর শুনে কয়েকজনকে নিয়ে সেখানে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি, উনি (বাবুল) রাস্তার এক পাশে পড়ে আছেন। তাঁকে ধরার পরই বুঝতে পারি, তিনি আর নেই। তারপরও লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যায়।’ কথা বলার সময় কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘কালকে আদ্যশ্রাদ্ধ করতে হবে। সেখানে মানুষকে নিমন্ত্রণ খাওয়াতে হবে। ঘরে এক পয়সাও নেই। সংসার চলবে কেমন করে?’
আশিয়া বাংলাবাজারে সেলুনের দোকান ছিল বাবুলের। একই বাজারে বড় ছেলে জিতেন্দ্ররও একটি সেলুন আছে। ছোট ছেলে অন্য একটি সেলুনে কাজ করেন। গতকাল দুপুরে দুই ছেলের কেউ বাড়িতে ছিলেন না। সংসার এখন কীভাবে চলবে জানতে চাইলে মুঠোফোনে জিতেন্দ্র শীল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ও ভাই কী আর হবে। সব আমাদের কপালের দোষ। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমরা দুজন (বাবা ও ছেলে) ব্যবসা করছিলাম। এখনো এক লাখ টাকা কিস্তি বাকি। বাবা তো মরে গেছেন। আদ্যশ্রাদ্ধ করার টাকাই এখনো জোগাড় করতে পারিনি। এর মধ্যে আবার কিস্তির টাকা শোধ করা, সংসার কীভাবে চালাব তার কিছুই জানি না।’
নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেলেও মামলা কেন করেননি জানতে চাইলে সবিতা শীল প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ বাজি, আঁরা গরিব। পোয়াছা লই ক্যানে চল্লুম, ন জানি। যেডে ভাত খাইবার ট্যাঁয়া নেই, এডে মামলা ক্যানে চালায়ুম। আর মামলা চালাবেল্লাই অনেক ট্যাঁয়া লাগিবু। (আমরা গরিব মানুষ। ছেলেদের নিয়ে কীভাবে চলব, তাই জানি না। ভাত খাওয়ার টাকা নেই, মামলা চালাব কীভাবে। আর মামলা চালাতে অনেক টাকার দরকার।) ’
বাবুলের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন পাশের পাড়ার জালাল উদ্দিন, সুমন শীল ও বিকাশ শীল। পাড়া-প্রতিবেশীদের সান্ত্বনায় কি স্বামী হারানোর দুঃখ ঘুচবে সবিতা শীলের? চোখের পানিই যে এখন তাঁর একমাত্র সম্বল।
২| ১৩ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: খুব কষ্টের!
অনেক বেদনাহত হই সমাজের বৈষম্য আর দুর্বলের প্রতি সবলের নির্মমতা দেখে!
সামাজিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে, এগিয়ে আসতেই হবে সামাজিক অবক্ষয় রোধে।
শুভকামনা আপনার জন্য।
১৩ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫
শেষ খেয়া বলেছেন: আমাদের সমাজ এখন এমন এক পর্যায় আছে যে, তা কবে ঠিক হবে কেউ জানি না। কাউকে যদি বলা হয় ৫০ টাকা দাও ওই লোকটা কে দেবো তাহলে বলা হয় আগে আমি বড় হই তারপর। আজ আমার সামন ঘটা এক বিরল কাহিনী আমি লোকটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।আপনার জন্য ও শুভকামনা
৩| ১৩ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০০
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই, সমাজে নিজেকে দ্রুত বড় প্রমাণ করতে সবাই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি। তাতে বঞ্চিত হচ্ছে সমাজ, বাড়ছে অবক্ষয়। এই ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার জন্য সমাজের শ্রেণী বৈষম্যই দায়ী বলে আমার মনে হয়। টাকার মূল্যে মানুষ মূল্যায়িত হচ্ছে, টাকার কাছে সত্য মার খাচ্ছে বারবার, অসত্যের জয় উল্লাসে সত্য নির্বাসিত প্রায় প্রতিটি সমাজ থেকে। সামাজিক বৈষম্য দূর করে সামাজিক মূল্যবোধ ফেরাতে না পারলে আমাদের প্রতিনিয়ত মর্মাহত হতেই হবে। ( কিছু মনে করবেন না ভাই, আমার ছোট মগজে এমনটাই মনে হয়।)
আপনার প্রতিউত্তরে মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম।
শুভ হোক আপনার সামনের দিনগুলি।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
এই মানুষগুলো বেঘোরে প্রাণ হারায়েছেন ডাকাতদের ভোট দিতে গিয়ে। চেয়ারম্যানরা জাতির জন্য ভয়ংকর সমস্যা