![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(আমি এখন আমার ৪ নং চাকরি করছি এবং আরও ভাল চাকরি খুজছি)
তখন সবেমাত্র মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টার শেষ করেছি। টাকার খুব অভাব। অতিরিক্ত টিউশানি করেও কুলচ্ছে না। এমনই মুহূর্তে শুভ সংবাদ দিল বন্ধু রায়হান। একটি চাকরীর খবর। মিজান স্যারের মাধ্যমে সে খবর পেয়েছে। মিজান স্যার আসলে রায়হান কে চাকরীটা করতে বলেছেন। কিন্তু রায়হানের তখন হাতে সময় নেই। আমাদের ব্যাচে appeared দের মধ্যে রায়হান তখন বি.সি. এস. এ চান্স পেয়েছে (আমি চান্স পাই নাই) ।
টার ভাবনা তখন শুধু সরকারি চাকরি নিয়ে, বেসরকারি চাকরীর ব্যাপারে রায়হানের তেমন কোন আগ্রহ ছিল না। তাই তার ঘনিষ্ঠ ও অভাবি বন্ধু হিসেবে আমি ছিলাম অগ্রাধিকারে। আমাকে রায়হান ফোন করে বলল আমি যেন তাকে সাথে নিয়ে মিজান স্যারের সাথে দেখা করি। আমি আমার আপন গরজেই দ্রুত রায়হান কে সাথে নিয়ে স্যারের সাথে দেখা করি। জীবনের প্রথম চাকরি করব। একটু নার্ভাস ছিলাম। যদিও এর আগে অনেক গুলো কোচিং সেন্টার এ পরিয়েছি। কিন্তু চাকরি বলে কথা। স্যার বললেন স্থানীয় একটি ফারমাসিউতিকেল এর কথা। কোয়ালিটি কন্ট্রোলার এর চাকরি। যদিও শীর্ষস্থানীয় নয় তবুও ফারমাসিউতিকেল এ চাকরি কেমিস্ট হিসেবে খারাপ নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে আমরা যারা কেমিস্ট্রি পরি এবং সরকারি চাকরীর আশা না করে ফারমাসিউতিকেল এ চাকরিকে গুরুত্ত দেই। সবার হয়ত মনভাব সমান নাও হতে পারে। কিন্তু তারপরেও আমাদের ডিপার্টমেন্ট এ অনেক ই স্থানীয় ফারমাসিউতিকেল এ চাকরি করতে চায় না।
কিন্তু আমার অত ভাবাভাবির সময় বা অবস্থা ছিল না। আমার কাছে সংবাদটি ছিল আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মত। স্যারের নির্দেশ মত আমি পরদিন সাহেব সেজে আমার সিভি নিয়ে স্যারের সাথে দেখা করলাম। স্যার সিভিতে কিছু সংশোধন করে দিলেন এবং রেফারেন্স হিসেবে স্যরের নাম লিখে দিলেন আর সবশেষে বললেন যে আমি একা যাচ্ছি না, আমার সাথে আরও একজন অভাবীকে পাঠানো হবে। কথাটি শুনামাত্র কিছুটা বিচলিত হলাম। আর কত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে জীবনে কে জানে? ক্লাস সিক্সে ভর্তি হবার জন্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি, কলেজে ভর্তির সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি, ভার্সিটি ভর্তির সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। আর কত? তখন ও কি জানতাম এটা কিছুই না, মহাসমুদ্রের কাছে পানির ফোটার মত। যাই হোক মেনে নিতেই হবে। চাকরি তো সবার ই দরকার থাকতে পারে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজারের সাথে স্যার আগেই আলোচনা করে রেখেছিলেন। পরদিন আমি যথাসময়ে হাজির হই, আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী দেরি করেছিল। হয়তবা একারনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে ছিলাম। সবকিছু জানার পর ম্যানেজার আমাকে বলেছিলেন যে ঠিক আছে। কিন্তু ম্যানেজারের মুখে বেতনের কথা শুনে আমার মনে হল কিছুই যেন ঠিক নেই। তিনি বললেন যে কোম্পানির গাড়ি দিয়ে আসাযাওয়া করতে পারবেন, দুপুরে খাবার ফ্রি পাবেন, সকাল ৯.৩০ এ চা-বিস্কিত পাবেন, ১১.০০ টার দিকে নাস্তা হিসেবে মুড়ি বানানি অথবা চমচা বা সিঙ্গারা সাথে চা। তবে ১১.০০ টার নাস্তার টাকা সবাই মাসিক চান্দা তুলে পরিশুদ করেন। এছাড়া দুপুর ৩.০০ টার দিকে আবার এক কাপ চা পাবেন। আর প্রতিমাসে ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পাবেন ৬০০০ টাকা। ম্যানেজার এমন ভাবে কথাটা বললেন যেন নতুন হিসেবে আমাকে অনেক টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। সাথে এটাও যোগ করলেন যে আমার আগে যে এখানে চাকরি করেছে সে মাস্টার্স পাস করেও মাত্র ৬০০০ টাকাই পাতেন আর আমি তো পাস করি নাই। যাই হোক এডমিন অফিসারের ফোন নং এবং তাদের হেড- অফিসের ঠিকানা নিয়ে ফিরে আসলাম। রাতে খাবার খাওয়ার পরে চিন্তা করতে বসলাম। আম্মার সাথে ফোনে যখন কথা হত, তখন বলতাম পাস করলেই মিনিমাম ৩০০০০ বা ৪০০০০ টাকা বেতন পাব। আমার আম্মা কিছু বলতেন না, শুধু বলতেন ভাল করে পড়। আর আজ, একি শুনলাম, বেতন মাত্র ৬০০০ টাকা, সকাল ৯.০০ থেকে বিকাল ৫.০০ পর্যন্ত থেকে বেতন মাত্র ৬০০০ টাকা। বইগুলোর দিকে ঘৃণা ভরে তাকিয়ে ছিলাম। কেন এত পরাশুনা করলাম। এই সম্মানির আশায় কি?
আমি তো প্রতিমাসে বাড়ি থেকেই আনতাম ৫০০০ টাকার মত। এই টাকায় কোনমতে টানাটুনি করে চলতে হত। আর আজ এত প্রত্যাশিত চাকরি করব মাত্র ৬০০০ টাকায়। অথচ এই আমি ১ বছর ধরে একটি টিউশানি করাচ্ছি ৬০০০ টাকায়, সপ্তাহে ছয়দিন। আমি কি জানতাম এতদিন আর এখন কি দেখছি!!!
যাইহোক পরদিন গেলাম স্যারের সাথে দেখা করতে। স্যারকে জানালাম সব। স্যার শুনলেন। আমার কাছে মনে হল তেমন অবাক হন নি। স্যার বললেন মিনিমাম ৮০০০ টাকা দিলে করা যেতে পারে। আমি অবাক হয়ে স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। অনেকক্ষণ ভাবলাম। রায়হানের সাথে আলোচনা করলাম। সে বলল কি আর করা, তোর তো এখন সময় খারাপ , জয়েন কর, পরে না হয় দেখা যাবে। রায়হান আরও বলল এম ডির সাথে দেখা হলে ১০০০০ টাকা ডিমান্ড করতাম। আমি ভাবলাম আর ভাবলাম। আমার সপ্নের পৃথিবী ছেড়ে আমাকে বাস্তবে নামতে হল। নিজেকে বুজালাম। কম টাকা, তাতে কি , আমার চলবে তো, আমার আপাত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব তো। আমার ছোটবোন কাকন তখন আমার কাছে থেকে পড়ে। নিপার সাথে আলোচনা করলাম । নিপা হতাশ হল। সেও হয়ত এত কম আশা করে নি, ভার্সিটি সম্পর্কে তাঁর ধারনা তো অনেক উঁচু। হায়রে ভার্সিটি। আমার সপ্নের ভার্সিটি।
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:২৭
কামরুল আলম চাদপুরী বলেছেন: আমি তো মনে করতাম আমার একার ই এই দুরাবস্থা।
২| ২০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩
মিষ্টিগল্প বলেছেন: বেকারের জন্য ৬০০০ টাকার বেতনও অনেক। যদি আপনি বেকার হন, শুরু করেন উন্নতি হবে ইনশাল্লাহ।
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:২৮
কামরুল আলম চাদপুরী বলেছেন: এখন তো চার নম্বর চাকরি করছি। এটা অনেক আগের ঘটনা।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৩২
বিকারগ্রস্থ মস্তিস্ক বলেছেন:
ভাই আমার প্রথম চাকরী অফারটাও এতো কম বেতনের ছিল