![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকালে চোখটা খুলেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ঘুম ভাঙ্গার কারণ মোস্তাকের কল। ঘড়ি দেখে বুঝলো ১০টা বেজে গেছে। তাই ছেলেটাকে বকতে গিয়েও থেমে গেলো তন্দ্রা। কিন্তু মাঝে মাঝেই এই ছেলেটার উপর ওর চরম মেজাজ খারাপ হয় এবং তার যথেষ্ট কারণও থাকে। মোস্তাকের সময়জ্ঞান খুবই খারাপ কিংবা সে ইচ্ছে করেই কাজটা করে। তন্দ্রা রাত ১১ টার মধ্যে ঘুমিয়ে যায় জেনেও ১২টা অথবা ১টার সময় কল দিয়ে ঘুম ভাঙাবে। বলবে, খুব ঘুম পাচ্ছে? মনে হবে যেন বেশী ঘুম পেলে ও ফোন রেখে দেবে। আসলে ও কখনই ঐ কাজটা করবে না। উল্টো বিচিত্র সব কাহিনি বলা শুরু করবে এবং তন্দ্রা জোর করে ফোনটা রাখার আগ পর্যন্ত সেই কাহিনি শেষও হয় না। আবার সে নিয়ে কখনো কখনো জনাবের প্রচণ্ড ঢং মার্কা রাগ হয়। কয়েকদিন ফোন করে না। কথা তো সামনাসামনি এমনিতেই কম বলে। তখন প্রায় বলেই না। তন্দ্রাও কখনও এই অবস্থা ঠিক করার চেষ্টা করেনা। নিজেই সপ্তাহখানেক পর হঠাৎ ফেসবুকে নক দিয়ে বলবে, কি খুব বিজি নাকি ???......হুহ!!! এই ছেলের উপর মেজাজ খারাপ হবেনা তো কার উপর হবে!
সবচেয়ে বড় কথা তন্দ্রার মতে এমন আচরণ কোন ছেলে করতেই পারেনা। ছেলেরা এতো অকারণে রাগ করে কবে থেকে! যাক গে ভালই হল কলতা কেটে গেছে ধরতে ধরতে। কিছুটা খুশিই লাগছে সেজন্যে। তন্দ্রা বিছানা ছেড়ে হাতমুখ ধুয়ে এলো।
‘মামুনি খাবো।’
হুম। এতক্ষণে তোমার ঘুম ভাঙল। ফোন করেছিল কে? রিং শুনলাম।
কেউ না। ওই মোস্তাক আর কি ।
হুম।
তন্দ্রা টেবিলে বসবে ঠিক এই সময়ে আবার ওর মোবাইলটা বেজে উঠল। ও গিয়ে কলটা ধরল। মোস্তাকের কল।
হুম, বল।
হুম, কি অবস্থা???
ভালো, তোমার?
হুম , এইতো। শুনো যেটার জন্য ফোন করলাম। আমি ক্লাসের রুটিন হারায়ে ফেলছি। আজকে কখন থেকে ক্লাস বলতো?
ও। আজকে ১ টাই ক্লাস। ২ টায়। আসবা না?
হুম। আসব তো। ২ টায় ক্লাস দেখেই এতক্ষণ পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিলে?
হুম। আমি তো বেশিই ঘুমাই। যাক গে ক্লাসে দেখা হবে।
হুম, আচ্ছা।
মোস্তাক কল কেটে দিলো। ও সবসময়ই এমন করে। এটাও নিতে পারেনা তন্দ্রা। কেউ বাই, খোদা হাফেয এসব না বলে কিভাবে ফোন ছেড়ে দেয়! বিরক্তিকর!
তন্দ্রা ডিপার্টমেন্টে ঢোকার পথেই দেখল মোস্তাক কয়েকটা মেয়ের সাথে সিঁড়িতে বসে গল্প করছে। সবসময়ই এমনি দেখা যায়। তন্দ্রাকে দেখেও তাকাল না। তন্দ্রা চেহারায় কোন এক্সপ্রেশন না এনে হেটে যেতে লাগলো। পাশ কাটানোর সময় হঠাৎ দেখেছে এমন ভঙ্গি করে মোস্তাক বলে উঠলো, আরে, তন্দ্রা !!! তন্দ্রা এই আচরণ খুবই অপছন্দ করে। যেই ছেলেটা প্রায় প্রত্যেকদিন সূর্য উঠলো কী ডুবলো টাইপ কথা বলার জন্যে দিনে চার পাঁচবার করে ফোন দেয় সেই একই ছেলে সামনাসামনি এমন অদ্ভুতভাবে কথা বলে। এটা কেমন কথা !!! তন্দ্রাও তেমনি সৌজন্যতামূলক হাসি দিয়ে চলে গেলো। ২টা বাজতে আর মাত্র ৫ মিনিট বাকী। তন্দ্রা তাই কোনদিকে না তাকিয়ে ক্লাশ এর দিকে দৌড় দিলো। মোসতাক অবশ্যই আরও ৫ মিনিট পরই ওখান থেকে উঠবে এবং পড়িমরি করে ক্লাসে ঢুকবে। তন্দ্রা সেটা ভাবনায় নিতে চাইলো না।ক্লাসে গিয়ে দেখলো যে স্যার আজ একটু আগেই এসে পরেছেন। হাসিমুখে দাড়িয়ে সবাইকে দেখছেন। তন্দ্রা পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়লো। গিয়ে ওর বান্ধবীদের সাথে বসে পড়লো। ক্লাসের সময় শুরু হতেই স্যার ‘হ্যালো এভরিবডি’ বলে যথারীতি লেকচার শুরু করলেন। প্রায় ১৫মিনিট পর মোস্তাক কোথা থেকে দৌড়ে এলো। স্যার জিজ্ঞেস করলেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে? ও খুব স্বাভাবিকভাবেই বলল, স্যার রাস্তায় এখন অনেক জ্যাম। দুপুরবেলা তো। বাসা থেকে আরও আগে বের হওয়া দরকার ছিল মনে হয়। বুঝতে পারি নাই, সরি স্যার।
স্যার বললেন, হুম। এই সময়ে ক্লাস দিলে এই এক সমস্যা। যাক ১ দিনই তো। এসো বস। মোস্তাক হাঁপিয়ে গেছে এমনভাবে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে ক্লাসে ঢুকে শেষ বেঞ্চিটার আগের বেঞ্চে বসে পড়লো। বসতেই ওর তন্দ্রার সাথে চোখাচোখি হল। মোস্তাক দেখল তন্দ্রার চোখে এক ধরণের বিদ্রূপ। তাতে ও বিচলিত হলো না। খুব স্বাভাবিক হাসি বিনিময় করলো ভাবটা এমন।
‘ ও ভালোই। প্রতিদিন দেরি করে এসেও কিছু হয়না। আমরা একদিন দেরি করলে দেখতিশ কি হয়!’ পাশ থেকে সন্ধ্যা বলল।
হুম। ছাই...!
সেদিন রাতে ১০ টার পরে খুব বৃষ্টি নামলো। বাইরে ঝড়ো হাওয়া। শনশন শব্দ শোনা যাচ্ছে। তন্দ্রা বিছানায় ঘাপটি মেরে পড়ে আছে।অদ্ভুত সুন্দর সময়। তন্দ্রার মনে হচ্ছে ও ১ টা অসাধারণ লেভেলের আলস্য অনুভব করছে। এই সময় মোস্তাকের কল এলো। তন্দ্রা কিছুটা খুশিই হল। কথা বলার জন্য এরকম সময় অসাধারণ। ও খুব খুশি গলায় কথা বলা শুরু করলো। এলোমেলো কথাবার্তা। ওর কোন স্কুলের বন্ধু গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ভাগসে। সেই দেখে ও অনুপ্রাণিত। বন্ধু হিসেবে তন্দ্রারা যেন তখন একটু সাপোর্ট দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি। তন্দ্রা এখন বেশ মজাই পাচ্ছে। কথার মাঝখানে মোস্তাক ধুম করে বলে বসলো, ‘তুমি প্রেম করছো না কেন ? তুমি তো মনে মনে অনেক রোম্যান্টিক।‘
রোম্যান্টিক! কে বলল? হাহ।
হুম। অবশ্যই। বঝা যায় তো। পুতুপুতু রোম্যান্টিক ফিল্ম দেখো। লাস্ট টাইম A walk to remember দেখতে গিয়ে তো কানতে কানতে কানা হয়ে গেসিলা।
আরে না। কই! আর আমার বাস্তবে এসব ফিলিংস নাই। শুধু মুভি দেখলেই একটু ইমোশনাল হয়ে যাই আর কি। .........................................................................................
সকালে প্রচণ্ড আরামের ঘুম ছেড়ে উঠতেই ইচ্ছা হচ্ছিলো না। বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল ১টা মেসেজ। ও মেসেজটা ওপেন করলো। মোস্তাক পাঠিয়েছে। লিখেছে- সত্যিই কি তোমার বাস্তবে ওইসব ফিলিংস নাই? কখনো মনেও হয় নাই তুমি কারো প্রেমে পড়তে পারো? কিংবা এখনো মনে হয় না???
ও কিছুক্ষন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মেসেজটা দেখে অদ্ভুত লাগছে। কিন্তু মোস্তাক আসলে কখনও সিরিয়াস হতেই পারে না, তন্দ্রা ভাবলো। তন্দ্রার কাছে মোস্তাকের সবকিছুই ভাঁড়ামি মনে হয়। ও চেক করে দেখলো মেসেজটা রাত সাড়ে তিনটায় এসেছে। ও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবলো ছেলেটার ইনসমনিয়া আর গেলো না। ও প্রত্তুত্তরে লিখে সেন্ড করে দিলো। এদিকে ঘরে চিৎকার শোনা যাচ্ছে। ও খাবার ঘরে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো। ওর বোন আর দুলাভাই এসেছে । তাদেরেই ২বছরের ছেলেটা ঘরে শোরগোল বাঁধিয়ে দিয়েছে।তন্দ্রার তো আর খুশী ধরে না।
ওদের সাথে সারাদিন যে কীভাবে কেটে গেলো তন্দ্রা নিজেও জানে না। রাতে দুই বোন এক বিছানায় ঘুমুতে গেল।কথায় কথায় বড় আপু জিজ্ঞেস করলো, কিরে তুই কি এখনো সিঙ্গেল নাকি রে? তন্দ্রা বলল , হুম।
আপূ বলল, মোস্তাক ছেলেটার খবর কি রে?
কি আর হবে! তেমনি। ওর সাথে কিছুই হোলো না। আমরা খুব ভালো ফ্রেন্ড ও হতে পারলাম না আবার অপরিচিতও না। ফোনে অনেক গল্প হয়। কিন্তু সামনাসামনি তেমন ই। কাল কি মেসেজ করেছে জানো ! আমি সত্যই প্রেমে পড়েছি নাকি কখনো !
আমার মনে হয় ও তোকে নিয়ে অন্যভাবে ভাবে। ভেবে দেখ কিছুদিন পরই তোদের অনার্স ফাইনাল। এই চার বছরেও তোদের সম্পর্কটা তেমনি আছে। তুই বলছিস তোরা ভালো ফ্রেন্ড হস নি। কিন্তু আমার তো মনে হয় তদের সম্পর্ক আসলে অনেক ভালো। তুই তো আমাকে বলেছিলি একবার যে ও কিছু করলে, জানলে আগে তোকে বলে। প্রয়োজনে সবই করে। কিন্তু সামনাসামনি যেটা হয় সেটা মে বি ও কোন কারণে uncomfortable feel করে। এটা কখনো ভেবে দেখেছিস?
আপু তুমি যেভাবে বলছ সেরকম না। ও আমাকে কখনও কিছু বলেই নাই...
আহা। বলতে পারলে তো আর সামনাসামনি অমন আচরণ করত না। আর তুই তো কখনও ওর রাগ ভাঙাস না। নিজে থেকে খুব বেশী যোগাযোগও করিস না। সেই থেকে হয়ত ও আর এসব বলতে পারেনি। দেখ, আমি তোকে কনফিউসড করতে চাচ্ছি না। আমি জানি তুই সহজে কনফিউসড হবিও না। বাট ছেলেটাকে যদি তুই সেভাবে কখনও না ভাবিস তবে শুধু শুধু ছেলেটা কষ্ট পাবে।
আরে ধুর। সরো ঘুমাই। তুমি যে কি সব বলতেসো !!!- তন্দ্রা পাশ ফিরে শুলো। কিন্তু ওর মাথায় বিষয়টা ঘুরতে লাগলো। আসলেই কি তাই ? তবে এটা তো ঠিক ছেলেটা ওর সাম্নেই অদ্ভুত আচরণ করে। ২/১বার মোস্তাকের আচরণে তন্দ্রা নিজেও টাশকি খেয়ে গেসিলো। ওর বন্ধুদের সঙ্গে এক ফাল্গুনে ক্যাম্পাসেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। ওর স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড ছিল ওরা। মোবাইলে কল দিয়ে প্রথমে ওকে একপাশে ডেকে এনেছিল ও।
তারপর বন্ধুদের কথা বলেছিল।আর শুধু ওকেই ওদের সাথে দেখা করতে নিয়ে গিয়েছিল। বন্ধুগুলোও ছিল একেকটা ছাগল! একজন তো দেখা মাত্রই বলে উঠলো, “ আরও কাছাকাছি দাড়া না তোরা।“ তার একটু পরেই অবশ্য তন্দ্রা চলে এসেছিলো। আর এসব নিয়ে ওরা দুজনই আর কখনও কোন কথা তোলেনি। সেই ফার্স্ট ইয়ারের কথা। দুজনই দুজন কে space দিয়েছিলো বলা যায়। আর ভুলেই গিয়েছিল সেই দিনের ওইটুকু সময়।আজ আপুর কথায় আবার মনে হল। আর মনে হল আরও কিছু প্রশ্ন। সত্যিই কি আপু যা বলছে তাই! মস্তাক কখনই ওর রূপ সঙ্ক্রান্ত কোন প্রসংশা করেনি। এমন কি ফেসবুকেও কখনও ওর কোন ছবিতে লাইক দেয়নি! কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্যে মোবাইলে অনেক পিড়াপীড়ি করলেও সামনাসামনি জিজ্ঞেসও করে না। তন্দ্রা মনে মনে রেগে যায় এবং ঘুরতে যেতে চাইলেও অনেক সময় যায় না। এটা অবশ্য মোস্তাক গাধাটা বুঝতে পারে বলে মনে হয় না। তন্দ্রা সবাইকেই তুমি করে বলে। ওকেও বলে। মোস্তাক সবাইকে তুই করে বলে কিন্তু ওকে তুমি বলে। তন্দ্রার ধারণা ও তুমি বলে বলেই মোস্তাক এটা করে; যদিও অন্যরা তুই করেই বলে। আরও একটা বিষয়ও তো অদ্ভুত। ওরা মোবাইলে কিংবা চ্যাটে অনেক কথা বললেও সামনাসামনি চুপ করে থাকে। কারণ তখন মোস্তাকের কোন কথা থাকে না। আর তন্দ্রা তো এমনিতেই কম কথা বলে। এভাবে ভেবে দেখলে ওদের সম্পর্কটা অদ্ভুত সত্যি। কিন্তু সেটা কি আসলেই ভালবাসার মতো কিছুর দিকে ইঙ্গিত করে ? আচ্ছা তন্দ্রা নিজে কি ভাবে ওকে নিয়ে। ও কি মোস্তাকের মতো একটা ছেলেকে পছন্দ করতে পারে? যাকে ওর হাফ লেডিস, নটাঙ্কি, গাধা ইত্যাদি টাইপ ছেলে মনে হয়! তন্দ্রার মনে হল, না!
কখনই না। তবু সাথে সাথে আরেকটা বিষয় ওর মাথায় এলো। মোস্তাক যদি সত্যি ওকে কখনও প্রপোজ করে ও কি না বলতে পারবে? পরিচিত হয়েও ওদের সম্পর্কটা বেড়ে উঠেছে মোবাইলে, ফেসবুকে। আর এভাবে তৈরি সম্পর্কে তো ওরা একজন আরেকজনের অনুভুতি, চিন্তা-চেতনাকে অনেক গুরুত্বই দিয়েছে। ওইখান থেকে তন্দ্রা সরে আসতে পারবে বলে মনে হয় না। অনেক সময় এই ছেলেটার জন্যে কারণে অকারণে ও সহানুভুতি দেখিয়েছে। তন্দ্রা অনেক বিরক্ত হয়েছে, রাগ দেখিয়েছে। কিন্তু সে কারণেও ওদের সম্পর্ক ভেঙে যায়নি। আর সেটা হয়েছে মোস্তাকের নটাংকি আচরণের জন্যেই। যতই নাটক করুক রাগ ভুলে ওই তো ফোন দেয়। তন্দ্রা বলে ওর মন খারাপ। মোস্তাক যেন নিজে থেকেই ওই সময় অনেক কথা বলার দায়িত্ব নিয়ে নিত। সেই ছেলেটা এসে যদি তার ভালবাসার কথা কনফেস করে ও কি না করতে পারবে! পারবে না বোধ হয়। সম্পর্ক টা আরও জটিল হয়ে যাবে। কিংবা ওরা সুখী দম্পতি হয়ে যাবে। তন্দ্রা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ভাবলো, আপু দিলো আজকের ঘুমটা নষ্ট করে!
..................................................................
তবে তন্দ্রার এই ভয় টা কখনও সত্যি ওকে face করতে হয়নি। ভয়টাকে এড়ানোর জন্য ও প্রথমে মোস্তাকের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিলো। আর তখনই খেয়াল করলো ওর আসলে মোস্তাকের প্রতি ভিন্ন ধরণের অনুভুতি কাজ করে! প্রথম প্রথম ও এটা স্বীকার করতে চাইত না। কিন্তু পড়ে মেনে নিয়েছিলো। সেই সময় যদি মোস্তাক ওকে প্রপোজ করত ও হয়ত খুশী মনেই প্রেম করা শুরু করে দিত! কিন্তু এমনটি হয় নি। সন্ধ্যা একদিন বলছিল নোমান বলেছে মোস্তাক তন্দ্রাক নিয়ে অনেক পকপক করে। হয়ত বা ওদের কিছু হতে পারে! তন্দ্রা শুনে খুব হেসেছিল। যেন খুবই হাস্যকর কথা! তখন কয়েকদিন মোস্তাকের কল ধরার আগে নিজেকে কিছুটা প্রস্তুত করে নিত। মোস্তাক সবসময়ই মেয়েদের সাথে মজা করত। আর সেটা নিয়ে তন্দ্রা খোঁটা দিলে যখন মোস্তাক কৈফিয়ত দেওয়ার ভান করত , আশ্চর্যজনক হলেও সত্য তন্দ্রা সে কথা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী মনযোগ দিয়ে শুনত এবং অনেককিছু বিশ্বাসও করত। অথচ সাভাবিকভাবে ওর এরকম কথাবার্তা পছন্দ হতো না।কিন্তু মোস্তাক এই সময়টা কাজে লাগায়নি। বরং যেন তন্দ্রার কাছ থেকে একটু দুরেই সরে গিয়েছিলো। তন্দ্রা অবাক হতো। কখনো কখনো ভাবতো, কেনো এমন হচ্ছে ? কোন উত্তর পেতো না। এই নিরুত্তর পরিবেশ তন্দ্রার মধ্যে এক ধরণের হাহকার তৈরি করেছিল। ওর মনে হতো ওর বন্ধু মোস্তাকও আর নেই। ধীরে ধীরে তন্দ্রাও ওই অবস্থা হতে সরে আসলো। ওর মনে হল আপুর কারণে ওর মধ্যে যে চিন্তাটা ঢুকেছে তার জন্যেই এমন হচ্ছে। মোস্তাক এসব কিছু ভাবেই না। কিন্তু ওর কোন আচরনেই হয়ত ওর তরল ভাবটা প্রকাশ হয়ে গেছে। তাই ফোন কমে গেছে, মেসেজ কমে গেছে। ও ভাবল, কিছুই নাই ওদের মাঝে। হয়ত খুব ভালো বন্ধুও নয় ওরা।
..............................................................................
মাস্টার্সের শেষ পরিক্ষার দিন মোস্তাক তন্দ্রা কে ডেকে বলেছিলো, মাঝে মাঝে আমার সাথে দেখা করো। কখনও কখনও তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে বলেই তো জোর করি এখানে চলো ওখানে চলো।– মোস্তাক মুচকি হাসলো। তন্দ্রা ভাবলো হয়ত বলবে। কিন্তু এতদিন পর! এখন তো সব পালটে গেছে। ওর আংটি বদলের কথা হচ্ছে। ছেলেটা কে সবাই পছদ করে। ও নিজেও দেখে, কথা বলেই হ্যাঁ বলেছে। কিন্তু মোস্তাক...! ও রুদ্ধশ্বাসে মোস্তাকের দিকে তাকিয়ে রইলো।
মোস্তাক বলল, জানি এটা খুবই অদ্ভুত। তবু...।
আশ্চর্য মোস্তাক আর কিছু বলল না! ও চলে গেলো উল্টো ঘুরে। তন্দ্রা তাকিয়ে থাকলো। ওর লজ্জা লাগছিলো। ও কি ভাবছিলো! কিন্তু মোস্তাক তো তার আশেপাশে দিয়েও গেলো না। যথাসময়ে ওর আংটি বদল হয়েছিলো। মালা বদলের সময়ও হয়ে এলো। মোস্তাক কিছু বলে নাই ওকে। মোবাইলে যোগাযোগটা এখনো বেশ আছে। তবে তন্দ্রা ওর বিয়ে সংক্রান্ত কোন কথা বলত না যদিও ও জানতে পারতো। engagement এর কথা শুনে নাকি বলেছে, তন্দ্রার বরের তো বারোটা বাজবে। এই মেয়ে কারো ফিলিংস পাত্তা দেয় না। নোমান এই কথা বলার কারণ জানতে চেয়ে জোর করলে ও নাকি রেগে আড্ডা ভেঙে চলে গিয়েছিলো। নোমানকে নাকি পরে বলেছিলো তন্দ্রা বুঝতে পেরেও ওকে গ্রীন সিগন্যাল দেয়নি। ও নাকি তন্দ্রাকে ভালোবাসতো। কিন্তু চাইতো এই কথা তন্দ্রাই সবার আগে জানুক, বুঝুক। কারণ তন্দ্রা প্রায়ই বলত ছেলেরা ভালবাসার কথা সবাইকে বলে এটাও পাবলিক করে দেয়। এটা তো বোঝার ব্যাপার। তন্দ্রা শুনেছে সন্ধ্যার কাছে। মোস্তাক ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারেই অনেক চেষ্টা করেছে বুঝাতে। পরে হাল ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ওর সাথে যোগাযোগ না করে থাকতে পারত না।
বিয়ের ২দিন বাকি। তন্দ্রা ছাদে বসে একা একা ভাবছে আসলে কি হয়েছিলো ওদের মধ্যে। কেন কেউ কাউকে কখনোই বলতে পারল না,’ভালবাসি’। কিছু পরে হলেও তন্দ্রাও তো এই কথাটা শুনতে চেয়েছে। কিন্তু ও তো বলেনি।অথচ সবসময়ই যোগাযোগ ছিল। তন্দ্রার চোখে জল। সত্যি বলতে কোন কারণই নাই যে জন্যে ওরা বলবে এই জন্যে বলতে পারি নাই। আরে গাধা! ভালবাসা বোঝার বিষয় হলেও মুখে তো একবার বলতে হয় নাকি! তন্দ্রার হাসি পেলো। আর একটা কথা-তন্দ্রা তো এখনও শুনতে চায়! তন্দ্রা ঠিক করলো মোস্তাকের সাথে কথা বলবে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে মোস্তাকের নাম্বারটা ডায়াল করলো। পর পর দুবার রিং হল। কেউ কলটা ধরল না।তন্দ্রা তৃতীয় বার ডায়াল করলো। তন্দ্রার নিঃশ্বাস গাঢ় হচ্ছে। বুক ঢিপঢিপ করছে। ওর মনে হল কেউ আর কল রিসিভ করবে না। ঠিক এমন সময় অপাশ থেকে বলে উঠলো, ‘ হুম, কি অবস্থা ?’
©somewhere in net ltd.