নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাউসার ইকবাল

সাংবাদিক ও লেখক

কাউসার ইকবাল

সাংবাদিক ও লেখক

কাউসার ইকবাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্য ধর্ম মূলধর্ম

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:০০

সত্য ধর্ম মূলধর্ম



কাউসার ইকবাল



বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার পথে যে বিষয়গুলো অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো ধর্ম নিয়ে বিভেদ এবং এ প্রেক্ষিতে হিংসা-হানাহানি ও উগ্রতা। পাশাপাশি ক্ষমতা ও সম্পদের লোভে একশ্রেণীর রাজনীতিবিদের অমানুষ হয়ে ওঠা। মানুষ যদি মানুষ হতে পারে, তবে পৃথিবীব্যাপী এতো অশান্তি থাকার কোনো কারণ নেই। তার চেয়ে বড় কথা, ধর্মগুলোও মানুষকে মানুষ হিসেবে এক প্লাটফর্মে সমবেত করার চেষ্টা না করে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদি, জৈন, পৌত্তলিক ইত্যাদি সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে রেখেছে; যে প্রেক্ষিতে এক ধর্ম সম্প্রদায়ের লোক অপর ধর্ম সম্প্রদায়ের লোককে গণহারে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পারমাণবিক বোমার মতো বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিন্তু ধর্ম নিয়ে বিভেদটা ভুলে গেলে এবং যথার্থ মানুষ হলে কোনো পক্ষেরই পারমাণবিক বা এমন বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির কোনো প্রয়োজন পড়ে না। সেজন্য প্রয়োজন এমন এক ধর্মীয় শিক্ষা, যে শিক্ষায় মানুষ যথার্থই মানুষ হবে এবং হিংসা-হানাহানি ভুলে এক প্লাটফর্মে সমবেত হয়ে অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার তাগিদ অনুভব করবে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি মূল্যায়নে সমগ্র বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে মূলধর্মই মানুষের জন্য যথার্থ ধর্ম হবে। কেননা, মূলধর্ম সত্যকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে, অন্ধবিশ্বাসকে নয়। অন্ধবিশ্বাস মানুষকে বিভ্রান্ত ও মূর্খ করে দেয় এবং মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ বাড়িয়ে মানুষকে হিংসা-হানাহানিতে লিপ্ত করে, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আর সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভরসা করতে হয় না, অসত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্যই অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভর করতে হয়। যেহেতু মূলধর্ম সত্যের ওপর ভর করেই প্রতিষ্ঠিত হবে, সেহেতু মূলধর্মীদের কোনো প্রকার অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভরসা করার প্রয়োজন নেই।



মানুষের মূল হচ্ছেন প্রথম মানব ও প্রথম মানবী। তাদের দুজনকে যে যেই নামেই ডাকুক না কেন, একথা অস্বীকার করার কোনোই উপায় নেই যে, তারাই মানবজাতির মূল। তাদের বংশধর মানবজাতিকে এক প্লাটফর্মে সমবেত করার লক্ষ্যে যে মূলসূত্র বা মূলশিক্ষা যথার্থভাবে কার্যকর, তা-ই হচ্ছে মূলধর্ম। আর যারা মানবজাতিকে এক প্লাটফর্মে সমবেত করার লক্ষ্যে কাজ করবেন, তারাই হচ্ছেন মূলধর্মী। যেহেতু মূলধর্মীরা মানবজাতিকে এক প্লাটফর্মে সমবেত করার লক্ষ্যে কাজ করবেন, সেহেতু মূলধর্মীরাই পৃথিবীর মূল মানব ও মূল মানবীর চোখে শ্রেষ্ঠ ধার্মিক বলে বিবেচিত হবেন নিঃসন্দেহে। আর যারা পৃথিবীর মূল মানব ও মূল মানবীর চোখে শ্রেষ্ঠ ধার্মিক বলে বিবেচিত হবেন, তারা মানবজাতির অদৃশ্য স্রষ্টার চোখেও শ্রেষ্ঠ ধার্মিক বলে বিবেচিত হবেন, এতে কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না। আর মূলধর্মীরা স্রষ্টার চোখে শ্রেষ্ঠ ধার্মিক বলে বিবেচিত হলে মূলধর্মই স্রষ্টার চোখে শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে বিবেচিত হবে, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর শ্রেষ্ঠ ধার্মিকদের জন্য পরবর্তী জীবনে শ্রেষ্ঠ আবাসন প্রাপ্তি নিশ্চিত, এ বিষয়েও সন্দেহের কোনো অবকাশই থাকতে পারে না।



পৃথিবীর সকল মানব-মানবীকে এক প্লাটফর্মে সমবেত করার লক্ষ্যে যে মূলসূত্রটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে, তা হচ্ছে, ‘স্রষ্টা ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মানুষেরা সব তাঁর সৃষ্টি।’ এই মূলসূত্রের ওপর ভিত্তি করেই মানুষেরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক প্লাটফর্মে সমবেত হবার জন্য এগিয়ে আসতে পারে। আর ধর্মীয় মূলশিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে যে স্লোগানটি তা হচ্ছে, ‘মানুষ হওয়াই মানুষের ধর্ম, অমানুষ হওয়া পশুর কর্ম। মানুষ হলে তার জন্য পরবর্তী জীবনে শান্তিলাভ নিশ্চিত, অমানুষ হলে তাকে অবশ্যই যন্ত্রণাময় জীবনই ভোগ করতে হবে পরবর্তীকালে।’ সে কারণে অমানুষ হওয়া থেকে রেহাই পেতে সকল ধরনের পাপ কাজ এড়িয়ে চলবে মূলধর্মীরা। আর অন্যের দ্বারা ‘অমানুষ’ বিবেচিত হতে হয়Ñ এমন সকল কাজ এড়িয়ে চলবে মূলধর্মের অনুসারীরা। পাপী না হওয়াই পরবর্তী জীবনে শান্তিলাভের প্রধান শর্ত, একথাটি মূলধর্মের অনুসারীরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে নিয়ে সকল প্রকার পাপের পথ পরিহার করে চলবে। আর যে পাপী হবার মানসিকতা পরিহার করে চলবে, তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ধার্মিক অন্য ধর্মানুসারীরা কিছুতেই হতে পারে না। মূলধর্মের অনুসারীরা অন্য ধর্মানুসারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ধার্মিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবসময়ই প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাবে। এজন্য মূলধর্মের অনুসারীরা যেকোনো মূল্যে নিজেকে সৎ ও চরিত্রবান রাখবেন এবং মানবকল্যাণে কাজ করে যাবেন। মূলধর্মের অনুসারীরা এ জ্ঞানটি সবসময়ই নিজেদের মস্তিষ্কে ধারণ করবেন যে, যারা মানুষকে বিভিন্নভাবে ঠকায় ও ভোগায়, তারা পরবর্তী জীবনে শান্তি পাবেন না। পরবর্তী জীবনে শান্তিলাভের দাবিদার হবার জন্য মূলধর্মের অনুসারীরা কখনোই মানুষকে ঠকাতে ও ভোগাতে সচেষ্ট হবেন না। মূলধর্মের অনুসারীরা অল্পতেই তুষ্ট থাকার মানসিকতা রাখবেন এবং স্রষ্টাকেই তাদের জীবন ও জীবিকার মূল নিয়ামক বলে বিশ্বাস করে নেবেন। মানুষের মধ্যে কাউকে তার জীবন ও জীবিকার নিয়ামক বলে মনে করবেন না কখনোই। তবে মানুষের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবেন এবং এ বিশ্বাস রাখবেন যে, স্রষ্টা মানুষের মধ্যদিয়েই যার মাধ্যমে তার কল্যাণ করা সম্ভব, তার মাধ্যমে তার কল্যাণ করবেন। কিন্তু তাই বলে স্রষ্টার চেয়ে সেই মানবের প্রতি বেশি কৃতজ্ঞতা পোষণ করবেন না মূলধর্মীরা।



মূলধর্মের অনুসারীরা এ জ্ঞান রাখবেন যে, নিজ যোগ্যতাতে যদি পরবর্তী জীবনে শান্তিলাভের দাবিদার হওয়া না যায়, তবে অন্যের সুপারিশে শান্তিলাভের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই অন্যের সুপারিশ লাভের ঝুঁকি না নিয়ে নিজেরা সৎ ও পরোপকারী হওয়ার পাশাপাশি অপরের ক্ষতি করা থেকে নিজেদেরকে যেকোনো মূল্যে বিরত রাখতে সচেষ্ট থাকবেন মূলধর্মের অনুসারীরা। স্বার্থবাদিতা, হিংসা-হানাহানি, জুলুম, অন্যের সম্পদ জবরদখল, ব্যভিচার, নারী বা শিশু ধর্ষণ, পরকীয়া প্রেম, মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে নিজের সুখ-শান্তি, ভোগ-বিলাস নিশ্চিত করতে কখনোই সচেষ্ট হবেন না মূলধর্মের অনুসারীরা। মূলধর্মের অনুসারীরা এই জ্ঞানও রাখবেন যে, পাপী বা অমানুষ কখনোই মূলধর্মের অনুসারী বলে বিবেচিত হবে না। কেবল পুণ্যবান ও মানুষই মূলধর্মের অনুসারী বলে বিবেচিত হবেন। অতএব, মূলধর্মীরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধার্মিক বলে বিবেচিত হবেন স্রষ্টার কাছে। পাপীরা কখনোই স্রষ্টার দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ধার্মিক বলে বিবেচিত হবে না, এমনটাই বিশ্বাস করবেন মূলধর্মীরা।



মূলধর্মের অনুসারীরা স্রষ্টাকে শ্রদ্ধা জানাবেন আকাশের দিকে তাকিয়ে হৃদয়ের গভীর হতে। স্রষ্টা যেহেতু মানুষকে দুই পা-বিশিষ্ট আকার দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেহেতু দুই পা-বিশিষ্ট আকারেই স্রষ্টাকে শ্রদ্ধা জানানো মানুষের জন্য যুক্তিযুক্তÑ এমনটাই বিশ্বাস করবেন মূলধর্মের অনুসারীরা। চার পা-বিশিষ্ট প্রাণীর রূপ ধরে স্রষ্টাকে শ্রদ্ধা জানানো মানুষের জন্য মূর্খতা বলেই জ্ঞান রাখবেন মূলধর্মীরা। পাপী হয়ে মানুষকে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে স্রষ্টার প্রতি অবাধ্যতা প্রদর্শন করে যারা মাটিতে মাথা ঠুকে প্রমাণ করতে চানÑ তারা স্রষ্টার বাধ্য, মূলধর্মের অনুসারীরা তেমনটা করবেন না কখনোই। তারা বিশ্বাস করবেন যে, স্রষ্টা মূলধর্মের অনুসারীদের হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি বুঝতে পারবেন। যারা বলবেন যে, তিনি মূলধর্মের অনুসারীদের শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি বুঝতে পারবেন না, তাদের মত তাদের কাছেই থাক। স্রষ্টা বুঝবেন নাÑ এমন কথা বলা অজ্ঞতার প্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। মূলধর্মের অনুসারীরা যেহেতু পাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করবে ও যথার্থ মানুষ হবে, সেহেতু মূলধর্মী কাউকে স্রষ্টা পরবর্তী জীবনে কষ্টকর জীবনের মুখোমুখি করবেন না। কারণ, তিনিই যথার্থ ন্যায়বিচারক। ভালো কাজের জন্য ভালো ফল দিতে তিনি কখনোই দ্বিধান্বিত হবেন না। এরচেয়ে সত্য আর কিছুই নেই।’



মূলধর্মের অনুসারীদের মধ্যে কেউ রোজা বা উপবাস থাকার বিধান পালন করতে চাইলে দিবারাত্রি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো সময় আহার ও পানীয় গ্রহণ করে তার পরবর্তী ১২ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকলেই হবে। বছরে যে কয়দিন যার ইচ্ছা হয়, সে ততদিনই এমন বিধান পালন করতে পারবে। মূলধর্মের অনুসারীদের জন্য নিরীহ প্রাণী হত্যা করে কোরবানি দেয়ার কোনো বিধান থাকবে না। তবে মানুষের জন্য ক্ষতিকর প্রাণী বছরের যেকোনো সময়ই যে কেউ হত্যা করলে তা কোরবানি দেয়ার ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। কোনো দুর্গত বা রোগগ্রস্ত বা অসহায় ব্যক্তির কল্যাণে দূরে-কাছে যেকোনো যাত্রাই হজ্ব বা তীর্থযাত্রা বলে গণ্য হবে মূলধর্মের অনুসারীদের জন্য।



মূলধর্মের অনুসারীদের জন্য বছরের প্রতিটি দিনই ঈদের দিন। প্রতিটি দিনকে ঈদের দিন মনে করে মানুষের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে চলার চেষ্টা করবে মূলধর্মের অনুসারীরা। বছরে ২ দিন আনন্দের, আর ৩৬৩ দিন বেদনার, এমন চিন্তা মূলধর্মের অনুসারীরা করবে না। বছরে ১/২ মাস পবিত্র, আর বাকি ১০/১১ মাস অপবিত্র, এমন চিন্তাও মূলধর্মের অনুসারীরা করবে না। বছরে ১ মাস সংযমী হয়ে চলতে হবে, আর বাকি ১১ মাস অসংযমী হয়ে চলা যাবে, এমন চিন্তাও মূলধর্মের অনুসারীরা করবে না। পৃথিবীর কয়েকটি স্থান পবিত্র, আর বাকি পুরা পৃথিবী অপবিত্র, এমন চিন্তাও মূলধর্মের অনুসারীরা করবে না। জগতের কিছু কিছু স্থান স্রষ্টার ঘর, আর বাকি জায়গাগুলো শয়তান বা মানুষের ঘর, এমন কথা বলা স্রষ্টার সার্বভৌমত্বে অন্যকে অংশী স্থির করার শামিল, যা করা মহাপাপ। মূলধর্মের অনুসারীরা পৃথিবীর প্রত্যেক স্থান, প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত, প্রতিটি মাসকে পবিত্র বলে মনে করবে। এবং কোনো স্থান বা দিন বা রাতকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেবে না। আর স্রষ্টার কী রূপ বা কী নাম, তাও মূলধর্মের অনুসারীরা খুঁজতে যাবে না। মূলধর্মের অনুসারীরা বুঝে নেবে যে, ১০০ জন মানুষকে ডাকার বা চেনার জন্য প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন নাম দরকার। কিন্তু একজন স্রষ্টাকে ডাকার বা চেনার জন্য তার ভিন্ন ভিন্ন নাম দেয়ার দরকার নেই। তাকে স্রেফ ‘স্রষ্টা’ নামে ডাকলেই চলে। তবে মূলধর্মের অনুসারীরা এই জ্ঞান রাখবেন যে, স্রষ্টা ছাড়া যেহেতু সৃষ্টির অস্তিত্ব সম্ভব নয়, তাই স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে। আর যিনি অগণিত আকৃতিবিশিষ্ট সত্তা সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি নিরাকার বা আকৃতিহীন হতে পারেন না। আর তাঁর আকৃতি যে মানুষেরই, তা নিশ্চিত এজন্য যে, মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সত্তার বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিগুণ নেই। আর যেহেতু স্রষ্টার আগে অন্য কোনো মানুষের সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়, তাই যিশু বা রামকৃষ্ণ নয়, বরং মানুষ ঘুমের মধ্যে যেমন আলোকদেহসমেত তার আত্মার অন্যত্র বিচরণের দৃশ্য স্বপ্নে দেখে থাকেন, তেমনি মানবাকৃতির আলোকদেহের এক সত্তাই জগত ও জগতের সকল কিছুর স্রষ্টা। তবে যেহেতু তিনি যে কারণেই হোক, মানুষকে দর্শন দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না, সেহেতু তাঁর রূপ কল্পনা করে বিভ্রান্ত না হয়ে বরং কেবল তাঁর অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়ে তাঁকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জানানো বা আকাশের দিকে তাকিয়ে তাঁকে মুখ দেখিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে যাওয়াই মানুষের জন্য প্রজ্ঞাসম্মত কাজ হবে। আর তাঁর সৃষ্ট মানবের বংশধরকে মনুষ্যত্ববোধে বলীয়ান করে ‘মানুষ’ নামের এক প্লাটফর্মে সমবেত করার চেষ্টাই হবে মানুষের জন্য যথার্থ ধর্মীয় কাজ।



বিবাহ-বন্ধনের ক্ষেত্রে মূলধর্মের অনুসারীরা বর-কনের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া একাধিক বিয়ে মূলধর্মের অনুসারীদের জন্য নিষিদ্ধ। আর ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণী মূলধর্মের অনুসারী বলে কখনোই বিবেচিত হবে না। তবে যার সঙ্গে যে ব্যভিচার করেছে, তারা উভয়ে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হলে মূলধর্ম তাদের গ্রহণ করে নেবে। মূলধর্মের অনুসারীদের বিবাহ-বন্ধনের ক্ষেত্রে ২০-২৫ জন বা ততোধিক ব্যক্তি একত্র হয়ে ঘরোয়াভাবে বা কোনো অনুষ্ঠানস্থলে বর ও কনের মতামত নিয়ে ‘স্রষ্টার ও নিজেদের ইচ্ছায় তারা বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হলেন এবং এখন থেকে তারা একে অপরের স্বামী-স্ত্রীরূপে স্বীকৃত হলেন’ বলে উপস্থিতদের মধ্যে কেউ ঘোষণা করলেই হবে।



মূলধর্মের অনুসারী কেউ মারা গেলে ১০-১৫ জন বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে স্রষ্টার উদ্দেশে বলবেন যে, ‘মৃত ব্যক্তির আÍা তোমার কাছে পৌঁছে গেছে। আমরা তার দেহ সমাহিত করে যাচ্ছি। তার পার্থিব কৃতকর্মের জন্য যথোপযুক্ত বিচারই তুমি করবে, এমন বিশ্বাস আমাদের আছে। আমরা তাকে শান্তি বা শাস্তি দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে বা পরামর্শ দিলে তাতে তো তোমার বিবেকের প্রতি অসম্মান জানানো হয় এবং তুমি বিচার করতে জানো না, এমন কথা বলা হয়। অমরা তেমন কথা বলার স্পর্ধা দেখাতে চাই না। তুমি ন্যায়বিচারক বলেই আমরা বিশ্বাস করি এবং সেই বিশ্বাস রেখেই আমরা তোমায় শ্রদ্ধা জানাই।’



সংসারের কর্তা মারা গেলে সম্পত্তির বণ্টন করে পরিবারের সদস্যরা পৃথক হয়ে যাওয়া মূলধর্ম সমর্থন করে না। তবে বিশেষ কারণে সম্পত্তির বণ্টন যদি করতেই হয় তবে ভাইবোনের মধ্যে কার কতটুকু পাওয়া উচিত বা দরকার, তা সমঝোতার সাথে বণ্টন করলেই ভালো। সমঝোতায় পৌঁছাতে কোনো কারণে সমস্যা হলে সকল ভাই-বোনের মধ্যে সম্পত্তি সমানভাবে বণ্টন করাই যথার্থ হবে। সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে কাউকে ঠকালে কিংবা কারো ওপর জুলুম করলে সে তো তার পরবর্তীকালের শান্তিময় জীবনকেই অনিশ্চিত করে দেবে। মূলধর্মের অনুসারীদের বুঝতে হবে যে, মানুষের জন্য কোনো আইনের প্রয়োজন হয় নাÑ অমানুষের জন্যই আইনের প্রয়োজন হয়। মূলধর্মের অনুসারীদেরকে আইনের ওপর ভিত্তি না করে মনুষ্যত্ববোধের ওপর ভিত্তি করেই জীবনযাপন করতে হবে।



ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও মারামারি করা মূলধর্মের অনুসারীদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। ধর্ম যদি প্রেম বা বন্ধুত্বের মধ্যে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা উত্তম ধর্ম নয়, মূলধর্মের অনুসারীদেরকে একথা বুঝতে হবে। মূলধর্মের অনুসারীদের আরো বুঝতে হবে যে, মানুষের প্রাণ স্রষ্টার কাছে এবং তার প্রিয়জনের কাছেও খুবই মূল্যবান। অতএব, ধর্ম নিয়ে বাক-বিতণ্ডা করা বা ধর্মের নামে কাউকে হত্যা করা অমানুষেরই কাজÑ যা মূলধর্মে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। এমন অমানুষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে সে আর মূলধর্মের অনুসারী বলে বিবেচিত হবে না। আর যে মূলধর্মের অনুসারী বলে বিবেচিত হবে না স্রষ্টার কাছে, তার পরবর্তী জীবনে শান্তিলাভ অনিশ্চিত।



মোদ্দাকথায়, নীতিই ধর্ম, দুর্নীতি অধর্ম; সততাই ধর্ম, অসততা অধর্ম; সত্যবাদিতাই ধর্ম, মিথ্যেবাদিতা অধর্ম; নির্লোভ থাকাই ধর্ম, লোলুপতা অধর্ম; অপরের কল্যাণ করাই ধর্ম, স্বার্থবাদিতা বা কারো ক্ষতি করার চেষ্টা অধর্ম; সুবিচার করাই ধর্ম, অবিচার বা কারো প্রতি জুলুম করা অধর্ম; ন্যায়পরায়ণতাই ধর্ম, অন্যায় করা অধর্ম; চরিত্রবান থাকাই ধর্ম, ধর্ষণ-ব্যভিচার করা অধর্ম; অল্প মুনাফা করাই ধর্ম, অতি মুনাফা করার চেষ্টা অধর্ম; যানবাহন ও বাসাবাড়ির ভাড়া ন্যায়সঙ্গতভাবে নেয়াই ধর্ম, বেশি নেয়ার চেষ্টা করা অধর্ম; প্রকাশ্যে কিংবা অধুমপায়ীদের সামনে ধুমপান-গাঁজা সেবন-মদ্যপান থেকে বিরত থাকাই ধর্ম, এসব বদভ্যাস অধর্ম; ইত্যাদি শিক্ষাগুলো গ্রহণ করে নিয়ে যারা স্বীয় আত্মাকে সার্বিকভাবে বিশুদ্ধ আত্মায় পরিণত করতে সক্ষম হবেন এবং রক্তপাতমুক্ত শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবেন, তারাই মূলধর্মের অনুসারী বলে বিবেচিত হবেন। আর এদেরকে পরবর্তী জীবনে শান্তিময় আবাসস্থল লাভে কোনোপ্রকার দুশ্চিন্তা করতে হবে না।



পৃথিবীতে এ যাবৎ প্রতিষ্ঠিত সকল ধর্ম সম্প্রদায়ই পাপী ও অমানুষে ভরপুর। এমনকি প্রত্যেক ধর্ম সম্প্রদায়ের লোক এতোটাই অজ্ঞ যে, তারা বিভিন্নভাবে মানুষের ওপর জুলুম-অন্যায় করেও নিজেদেরকে মানুষ মনে করে। যে ডাক্তার জনসেবার চেয়ে বাণিজ্যিক মনমানসিকতা নিয়ে রোগীর ওপর জুলুম করছে, সে যে অমানুষের কাতারভুক্ত হয়ে পড়েছে, তা বোঝার জ্ঞান তার ধর্ম তাকে দেয় না। যে রিকশা বা টেক্সিচালক বা পরিবহন ব্যবসায়ী বা ঘরের মালিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে, সে যে পাপী ও অমানুষ হয়ে পড়েছে, তা বোঝার জ্ঞানও তার ধর্ম তাকে দেয় না। যে ছেলে বা পুরুষ একাধিক মেয়ে বা নারীর সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করছে, কিংবা প্রতারণা করছে, সে যে পাপী ও অমানুষ হয়ে পড়েছে, তা বোঝার জ্ঞানও তার ধর্ম তাকে দেয় না। যে পুরুষ বা নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হচ্ছে, সে যে পাপী ও অমানুষ হয়ে পড়েছে, তা বোঝার জ্ঞানও তার ধর্ম তাকে দেয় না। যে পুলিশ বা বিচারক নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করে তাকে ভোগাচ্ছে, সে যে পাপী ও অমানুষ হয়ে পড়েছে, তা বোঝার জ্ঞানও তার ধর্ম তাকে দেয় না। যে রাজনীতিবিদ স্বীয় বা দলীয় স্বার্থে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে, সে যে পাপী ও অমানুষ হয়ে পড়েছে, তা বোঝার জ্ঞানও তার ধর্ম তাকে দেয় না। যে ব্যক্তি বা শিক্ষক জ্ঞান প্রদান বিষয়েও অতি বাণিজ্য করছে, সে যে পাপী ও অমানুষ হয়ে পড়েছে, তা বোঝার জ্ঞানও তার ধর্ম তাকে দেয় না। অথচ, ধর্ম হচ্ছে এমন এক ঔষধ যার কাজই হচ্ছে মানুষকে পাপমুক্ত রাখা ও সমাজকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা। যে ধর্ম এ কাজটি করতে অপারগ, সেই ধর্ম মূলত অকার্যকর বা ভ্যালিডিটি ফুরিয়ে যাওয়া নষ্ট ঔষধজাতীয়। ভ্যালিডিটি ফুরিয়ে যাওয়া ঔষধ যেমন স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি মেয়াদোত্তীর্ণ ধর্মও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। অতএব, মেয়াদোত্তীর্ণ ধর্মের পাপী বা অমানুষের দলভুক্ত না থেকে মানুষের দলভুক্ত হতে মূলধর্ম গ্রহণ করা উচিত শান্তিকামীদের। অবশ্য এটাও ঠিক যে, মূলধর্ম গ্রহণের যোগ্যতা সকলের নেই। অমানুষদের অনেকেই চাইলেও মূলধর্মের অনুসারী হতে পারবেন না। কেবল যাদের সংশোধন হবার সুযোগ আছে এবং যারা মানুষ হবার জন্য সাধনা করার ইচ্ছা ও ধৈর্য্য রাখেন, তাদেরই মূলধর্ম গ্রহণের যোগ্যতা আছে।



মানুষের মধ্যে যারা উত্তম হতে চান কেবল তারাই উত্তম ধর্মের অনুসারী হবেন, এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশই থাকতে পারে না। অধমদের উত্তম ধর্ম গ্রহণের যোগ্যতা কোথায়?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.