নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাউসার ইকবাল

সাংবাদিক ও লেখক

কাউসার ইকবাল

সাংবাদিক ও লেখক

কাউসার ইকবাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গশক্রুর মিত্র বঙ্গবন্ধু: অঙ্কে বাঙালি কত বুদ্ধু!

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:১৪

বঙ্গশক্রুর মিত্র বঙ্গবন্ধু: অঙ্কে বাঙালি কত বুদ্ধু!



কাউসার ইকবাল

‘এই জানোয়ারকে হত্যা করতে হবে’ শিরোনাম দিয়ে আঁকা পটুয়া কামরুল হাসানের চিত্রটি দেখেন নাই, এমন বাঙালি কম পাওয়া যাবে ইতিহাস-সচেতনদের মধ্যে। আর চিত্রটিতে ‘জানোয়ার’ হিসেবে যার চিত্র আঁকা হয়েছে, তিনি ১৯৭১ সালে বাঙালিদের কাছে মহাশক্রু বলেই বিবেচিত ছিলেন এবং এখনো আছেন সচেতন বাঙালিদের কাছে। তিনি হচ্ছেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান। এই জেনারেল ইয়াহিয়া খান মৃত্যুর ২ বছর আগে লাহোর হাইকোর্টে ১৯৭১ সালের ঘটনা নিয়ে গোপন এফিডেভিট করে যান। তার মৃত্যুর ২৫ বছর পর ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান সরকার এ গোপন এফিডেভিটটি প্রকাশ করে। প্রকাশিত এফিডেভিটে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলেন পাকিস্তানি জান্তা ইয়াহিয়া খান। কয়েকবার তিনি সে সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। আর যিনি কাউকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন, তার চেয়ে ভালো বন্ধু অন্যরা হতে পারে না। আবার পাকিস্তানের ভাঙনের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকেই দায়ী করেছেন ইয়াহিয়া খান। তার মতে, ভুট্টোর চেয়ে বড় দেশপ্রেমিক (পাকিস্তানপ্রেমিক) ছিলেন শেখ মুজিব। বঙ্গশক্রু ইয়াহিয়ার দৃষ্টিতে যিনি ভুট্টোর চেয়ে বড় পাকিস্তানপ্রেমিক ছিলেন, তিনি কি করে ‘বঙ্গবন্ধু’ হন, তা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট অবকাশ আছে বৈ কি। ভুট্টোর চেয়ে বড় পাকিস্তানপ্রেমিককে ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে গ্রহণ করা বাঙালিদের বুদ্ধির দৈন্যতাকেই প্রকট করে তোলে। আর ‘বুদ্ধি প্রতিবন্ধী’ জাতির উন্নতি করা সম্ভব নয়।

ইয়াহিয়া খানের এ এফিডেভিটটি সাপ্তাহিক প্রতিচিত্রের ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ সংখ্যায় মূলত বাংলাদেশি পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হয়। তার কিছু চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো: ‘মুজিব নন, ভুট্টোই পাকিস্তান ভেঙ্গেছেন। একাত্তরে ভুট্টো যেসব কথা বলেছেন, যে গোয়ার্তুমি করেছেনÑ পাকিস্তানের সংহতি বিনষ্টে নিঃসন্দেহে তা ছিল শেখ মুজিবের ৬ দফার তুলনায় অনেক বেশি আত্মঘাতী। তখন ক্ষমতালিপ্সায় ভুট্টো এতোটাই পাগল হয়ে উঠেছিলেন যে, এক পাকিস্তানে দুই প্রধানমন্ত্রী তত্ত্ব দাঁড় করাতেও তিনি জেদ ধরেছিলেন। তার উচ্চাভিলাষ এবং একরোখা ও কঠিন মনোভাবের কারণেই পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্্েরাহের আগুন জ্বলে উঠেছিল এবং বাঙালির মন বিষিয়ে তুলেছিল। আর এসব কারণেই পাকিস্তানের সংহতি ধরে রাখা যায়নি। পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে যায়।’

ইয়াহিয়া খান তার এফিডেভিটে আরো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান জুলফিকার আলী ভুট্টোর চেয়ে দেশপ্রেমিক ছিলেন। ভুট্টো যেখানে ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে সংসদ অধিবেশন তলব করা নিয়ে বারবার বাধা সৃষ্টি করেছেন, সেখানে শেখ মুজিব ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ অনুসরণের পক্ষে। পিপিপি চেয়ারম্যান ভুট্টো ১৯৭০ সালের অক্টোবরে নির্ধারিত নির্বাচন বাতিল করে ঘোষণা দেয়ার জন্যও জোরালো চাপ প্রয়োগ করেন। মূলত রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ পদের জন্য ভুট্টোর সীমাহীন উচ্চাভিলাষ এবং এ ব্যাপারে কাউকে ন্যূনতম ছাড় দিতে রাজি না হওয়ার মানসিকতাই পাকিস্তানের সংহতি বিনষ্ট করেছে। নিজ স্বার্থ হাসিলে ভুট্টো সব ধরনের অপকৌশল প্রয়োগে ন্যূনতম দ্বিধা করেননি। তিনি চেয়েছিলেন নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, পাকিস্তানের কর্তৃত্ব। যে কোন বিবেচনাতেই বলা যায়, নিঃসন্দেহে ভুট্টো ছিলেন একজন বড়মাপের ষড়যন্ত্রকারী।

জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার দীর্ঘ এফিডেভিটের বড় অংশ জুড়েই এমন মন্তব্য করেছেন। পাকিস্তানের ক্রান্তিকালে মূল ভিলেইন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোকে। পাশাপাশি তারই নিয়ন্ত্রণাধীন সামরিক জান্তার বেশ ক’জন জেনারেলকেও দায়ী করেছেন পর্দার আড়ালে ভুট্টোর হয়ে ষড়যন্ত্র পাকানোর দায়ে। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মতে, ১৯৭১ সালের জটিল পরিস্থিতিতে যখন জাতীয় সংহতি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তখন রাজনীতির পাশা খেলায় ভুট্টোর কুটিল চাল যারপরনাই এক পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে। পিপিপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে পাক প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তিনি (ভুট্টো) ছিলেন চরম অ্যালকোহলিক। সবসময় হুইস্কিতে আসক্ত থাকতেন। এমনকি কোন জনসভায় যাবার আগেও কয়েক পেগ হুইস্কি পান করতে ভুলতেন না।

(১৯৭০ সালের) নির্বাচনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতেও জুলফিকার আলী ভুট্টো মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। নির্ধারিত সময়ে পার্লামেন্ট সেশন বসার ক্ষেত্রেও তিনি বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এ ব্যাপারে এফিডেভিটে বলা হয়েছে যে, মুজিব পাক প্রেসিডেন্টকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংসদ অধিবেশন ডাকার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদ দিবসের পূর্বেই অধিবেশন অনুষ্ঠিত না হলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারেÑ এমন আশঙ্কার কথা ইয়াহিয়াকে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ প্রধান। অপরপক্ষে সংসদ অধিবেশন পিছিয়ে দেয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিলেন পিপিপি চেয়ারম্যান। তিনি প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, যদি এখনি সংসদ অধিবেশন ডাকা হয়, তাহলে মুজিব কোন সমঝোতায় যেতে চাইবেন না। তবে তারপরও তাকে (ভুট্টো) ঢাকায় আসার জন্য ইয়াহিয়া অনুরোধ করেছিলেন বলে এফিডেভিটে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু পিপিপি চেয়ারম্যান ঢাকায় আসতে অস্বীকৃতি জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নরদের নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক আহ্বান করেন ইয়াহিয়া খান। সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এডমিরাল আহসান সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, পরিস্থিতি খুবই জটিল এবং বাঙালিরা কোনভাবেই সংসদ অধিবেশন বাতিল করাটাকে মেনে নেবে না। তারপরও যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে যেন একইসঙ্গে অধিবেশনের নতুন তারিখ জানিয়ে দেয়া হয় সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে। এডমিরাল আহসানের কথা গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও ভুট্টোর একরোখা মনোভাবের বিষয়টি উল্লেখ করে ইয়াহিয়া ওই বৈঠকে বলেন, এই অবস্থায় সংসদ অধিবেশন ডাকা হলে পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কোন সদস্য ঢাকায় যাবেন না। ফলে সংসদ সদস্যদের একটি বড় অংশ সংসদের বাইরে থেকে যাবে। সৃষ্টি হবে নতুন জটিলতার। তাই অধিবেশন বাতিল না করে কোন উপায় নেই।

এফিডেভিটে ইয়াহিয়া খান বলেন, ভুট্টো যদি গোয়ার্তুমি ও একরোখা মনোভাব ত্যাগ করে ঢাকায় পার্লামেন্ট সেশনে যোগ দিতেন, তাহলে পূর্ব পাকিস্তানিরা পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক কিছুই অকপটে মেনে নিতেন। এতে এক পাকিস্তান না হোক, অন্তত একটি কনফেডারেশনের আওতায় থাকার ব্যাপারে আপত্তি তোলা হতো না। ওই সময় মুজিব অনেক অসত্য বলেছেন ঠিক, তবে ভুট্টো ছিলেন অতি চালাক। আমি বলব, অমসৃণ ত্বকবিশিষ্ট বিষাক্ত ব্যাঙ জাতীয় প্রাণী ছিলেন ভুট্টো।

উল্লেখ্য, লাহোর হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট মনজুর আহমাদ রানার মাধ্যমে ইয়াহিয়া খান তার এ এফিডেভিট করে যান। এতে রয়েছে ৫৭টি টাইপ করা পাতা। কোর্টে এফিডেভিটটি নথিভুক্ত করার আগে ২৯ মে ’৭৮ তারিখে রাওয়ালপিন্ডির বাড়িতে বসে ইয়াহিয়া প্রতিটি টাইপ করা পাতা পড়ে দেখেন এবং বেশ কিছু জায়গায় নিজ হাতে কিছু সংশোধন করে সবকিছু সত্য বলে স্বাক্ষর দেন। এফিডেভিটের প্রতিটি পাতাতেই তার অনুস্বাক্ষর রয়েছে। লাহোর কোর্টে এফিডেভিটের ক্রমিক নম্বর দেয়া হয় ২৪৪/১৯৭৮।

এফিডেভিটে আরো বলা হয়, শেখ মুজিবকে জীবিত বা মৃত ধরে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন টিক্কা খান। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল টিক্কা খান নির্দেশ দিয়েছিলেন, ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবিত অথবা মৃত, যেভাবেই হোক ধরে নিয়ে আসতে হবে। টিক্কা এই আদেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের অজান্তে। যখন ইয়াহিয়া এ সম্পর্কে জানতে পারেন, তখনি তিনি মুজিবকে হত্যার যেকোন প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন ও তাকে জীবিত ধরে নিয়ে আসার জন্য নতুন আদেশ জারি করেন।

অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে এফিডেভিটে ইয়াহিয়া বলেন, কারো পরামর্শে বা ইন্ধনে নয়Ñ সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে তিনি ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া তার সামনে আর কোন বিকল্প পথ খোলা ছিল না। সে সময় পরিস্থিতি এমনি পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার জন্য সামরিক অ্যাকশন অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। পাক আর্মির এই পদক্ষেপকে পিপিপি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো সাদরে সমর্থন করেছিলেন এবং শেখ মুজিবের গ্রেফতারে তাকে সেসময় বিশেষ উৎফুল্ল হয়ে উঠতে দেখা গেছে।

এদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো রাজনৈতিক অঙ্গনে অচলায়তন তৈরির মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে অ্যাকশনে যেতে ‘বাধ্য’ করার পর তার প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ মুজিবুর রহমানকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন বলেও উল্লেখ করেন ইয়াহিয়া খান। এ প্রসঙ্গে তিনি এফিডেভিটে বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দি থাকাবস্থায় বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলেও তিনি শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন এই শর্তে যে, তিনি (মুজিব) ক্ষমাপ্রার্থী হবেন ও পাকিস্তানের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করবেন। এক্ষেত্রে কোন লিখিত হলফনামা ছাড়াই মুজিবকে মুক্তি দেয়ার ইচ্ছা ছিল ইয়াহিয়ার। অন্যদিকে ভুট্টো চেয়েছিলেন সামরিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত করে শেখ মুজিবকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলাতে। ইরানের পাহলভী রাজবংশের ২৫০০তম জয়ন্তীতে যোগ দিতে ইয়াহিয়ার ইরান যাত্রার প্রাক্কালে ভুট্টো মুজিবকে শেষ করে দেয়ার পরামর্শ দেন। তার (ভুট্টো) যুক্তি ছিলÑ ইরানসহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরা মুজিবকে মুক্তি দেয়ার জন্য ইয়াহিয়ার উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। তাই সেখানে যাওয়ার আগেই মুজিবকে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। এ ব্যাপারে এফিডেভিটে ইয়াহিয়া বলেন যে, ভুট্টোর প্ররোচনায় তিনি রাজি হননি। কারণ তিনি আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাননি, চেয়েছেন বিচারকার্য স্বচ্ছ হোক। অবশ্য শুধু সেবারই নয় আরো বেশ ক’বার ভুট্টো সামরিক আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে মুজিবকে হত্যার জন্য ইয়াহিয়াকে উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু জান্তা প্রধান পিপিপি চেয়ারম্যানের কথায় কর্ণপাত করেননি বলে দাবি করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা শক্রুতামূলক আচরণে প্রধান শক্রকে কখনো ছাড় দেয় না কেউই। কিন্তু ইয়াহিয়া খান বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা করার নির্দেশ দিলেও শেখ মুজিবুর রহমানকে রক্ষা করেছিলেন ভুট্টোর সকল প্রকার ষড়যন্ত্র থেকে। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিদের প্রতি নয়Ñ বরং এক পাকিস্তানের অস্তিত্বের প্রতিই অধিক বিশ্বাসী, একথা বাঙালিরা অতি আবেগের কারণে না বুঝলেও ইয়াহিয়া খান ঠিকই বুঝে নিয়েছিলেন। তাই পাকিস্তানকে এক রাখার স্বার্থে তিনি মুজিবের মৃত্যু কামনা করেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ মুজিবের এই উচ্চারণ যে বাঙালিদের বোকা বানিয়ে পাকিস্তানকে অটুট রাখার এক কৌশল, তাও ইয়াহিয়া ভালো করেই বুঝেছিলেন। কারণ, সেদিন মুজিব ইচ্ছা করলেই পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দিতে পারতেন। ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমাদের যার যা কিছু আছে, তা নিয়ে শক্রুর মোকাবেলা করবে’ মুজিবের এসব ঘোষণা যে স্রেফ রাজনৈতিক ভাওতাবাজির মাধ্যমে বাঙালিদের বোকা বানানোর চেষ্টা, তা বুঝতেও ইয়াহিয়া ভুল করেননি। কারণ, বাঙালির যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই সেদিন বাঙালিরা রেসকোর্স ময়দানে হাজির হয়েছিল এবং মুজিবের হুকুম দেবার পথে কোন বাধা ছিল না। মুজিব সেদিন চাইলেই লাখো জনতাকে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করার হুকুম দিতে পারতেন এবং পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সরাসরি অ্যাকশনে যেতে পারতেন। কিন্তু এক পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বস্ত বলেই মুজিব তেমন পদক্ষেপ নেয়নি, একথা বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি ইয়াহিয়ার। তাই নিরীহ বাঙালিদের হত্যার জন্য তিনি অপারেশন সার্চলাইটের নির্দেশ দিলেও মুজিবের জীবন রক্ষার্থে তার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। অতএব, একথা স্পষ্ট যে, বাঙালির মহাশক্রু ইয়াহিয়া খানের পরম বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকৃতপক্ষে বাঙালিদের বন্ধু ছিলেন না। বরং ইয়াহিয়া খানকে বাঙালিদের হত্যায় সৈন্য মজুতের সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি আলাপ-আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে। এতে করে প্রায় ৬৫ হাজার অতিরিক্ত সৈন্য মজুতের সুযোগ পেয়েছিল ইয়াহিয়া খান। আর ৩০ লক্ষ বাঙালি হত্যায় ও ২ লক্ষ মা-বোনের সতীত্ব নষ্ট করায় ভূমিকা রাখতে পেরেছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা। ইয়াহিয়া খানকে এতো বাঙালি হত্যা ও বাঙালি মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করার সুযোগ তৈরি করে দিয়ে হলেও পাকিস্তানকে এক রাখার জন্য সকল আর্মি অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য মুজিব ইয়াহিয়া খানের বন্ধু না হয়ে শক্রু হবেন কোন বিবেচনায়? তাইতো বন্ধুর প্রাণ রক্ষায় ইয়াহিয়া চেষ্টার কোন ত্রুটি করেননি। স্বদেশী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সকল ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়ে মুজিবকে রক্ষা করেছিলেন ইয়াহিয়া। তাই মুজিবকে বাঙালিদের বন্ধু বা জাতির পিতা ভাবা বাঙালিদের বুদ্ধির দৈন্যতা ছাড়া কিছু নয়। বাঙালিদের প্রকৃত বন্ধু আসলে ইয়াহিয়ার শত্রু ছাত্র-জনতা এবং এ জাতির পিতাও সেই সময়ের দেশের আম-জনতা। ছাত্র-জনতা চেয়েছিল বলেই বাঙালিরা পাকিস্তানিদের যুদ্ধে পরাজিত করে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পেরেছিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.