![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আল্লামা শফি ও বাবুনগরীর কাছে প্রশ্ন
মিথ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকাই কি ধর্ম?
কাউসার ইকবাল
সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের লোকজনই এ বিষয়ে বিশ্বাস রাখেন যে, সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকাই ধর্ম। যদিও সত্য কি, সে বিষয়ে একেক স¤প্রদায়ের লোকজনের ধারণা একেকরকম। তবে, লক্ষণীয় যে, মানুষের এসব ধারণার মূল উৎস ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস; যার অনেককিছুই যুক্তির আলোকে মিথ্যে বলে প্রমাণিত করা সম্ভব। আর অন্যের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করা যাবে না, এমন চিন্তা থেকে পত্রিকা বা গ্রন্থ প্রকাশকেরাও এ সত্যগুলো তুলে ধরতে চান না বা তুলে ধরার সাহস রাখেন না। তবুও একজন সত্যপ্রেমী লেখক হিসেবে সত্যগুলো তুলে ধরার চেষ্টা, যদি কোন পত্রিকার সম্পাদক বা প্রকাশক ‘সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারাবদ্ধ’ প্রতিজ্ঞার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সত্য প্রকাশের সাহস দেখান, এ প্রত্যাশায়।
১২ এপ্রিল চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে হেফাজত ইসলামি আয়োজিত রেসালত সম্মেলনে দলটির মহাসচিব বাবুনগরী শাহবাগীদের নাস্তিক আখ্যায়িত করে বলেন, ‘শাহবাগীরা তোমরা তওবা করে পুনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ কর। তোমরা শাহবাগ ত্যাগ করে কাকরাইলের পথ ধরো, তাবলীগের পথ ধরো।’
আমি মনে করি না, শাহবাগী সবাই নাস্তিক। তবে শাহবাগীরা ইসলামের নাম নিয়ে বাণিজ্যকারীদের বিরোধী, এটা তাদের কার্যক্রমে ফুটে উঠেছে। সরকারের জামাতবিরোধী রাজনীতির সঙ্গেও তারা একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তবে তাদের অনেকেই ধর্মীয় অন্ধত্বে গা ভাসাতে রাজী নয়, এটা বলা যায়। তাদের ধর্মীয় অন্ধত্বে গা না ভাসানোর প্রবণতাকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি। কারণ, ধর্মীয় অন্ধত্ব মেধাগত নাবালগত্বেরই শামিল। মেধাগত নাবালগদের যেমন ভূতের ভয়, কিংবা পরীর লোভ দেখিয়ে শান্ত রাখতে হয়, ধর্মগুলো একই পলিসিতে গড়ে উঠেছে। স্রষ্টা মানুষকে মেধাগত নাবালগ বানিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন নাকি ধর্ম প্রবর্তকেরা, এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ধর্মতত্ত্বই বাস্তবতার আলোকে ঈশপের গল্পের আদি সংস্করণ ছাড়া কিছুই নয়। কারণ, বেশিরভাগ ধর্মবিশ্বাস যুক্তির আলোকে মিথ্যে বলে প্রমাণিত হবে। যেমন, যিশু স্রষ্টার পুত্র, একথা প্রমাণিত কোন সত্য নয়। মোহাম্মদ বোরাক নামক যন্ত্রযানে চড়ে সপ্তম আকাশে আল্লাহর আরশে গিয়েছিলেন, এ কথার সপক্ষে এখনো কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সীতার পবিত্রতায় বিশ্বাস রাখতে সীতা আগুনে হেঁটেও পুড়ে যাননি এমন গল্পে বিশ্বাসী। কিন্তু আগুনের ধর্ম হচ্ছে পোড়ানো। আগুনে হাঁটলে পুড়তে হবে, এটাই বাস্তবতা। আর মানুষের সহজাত ধর্ম হচ্ছে, মানুষ নতুন কিছু দেখলে তা নেড়েচেড়ে দেখবে; নতুন দেখা বস্তুটির কাজ বা বৈশিষ্ট্য কি, তা বোঝার চেষ্টা করবে। কিন্তু কোরআনে মানুষের জন্ম-বৃত্তান্ত নিয়ে যে কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, গন্ধম ফল খাওয়ার পর প্রথম মানব আদম (আ.) ও প্রথম মানবী হাওয়া (রা.) যখন একে অপরকে নগ্ন অবস্থায় দেখলেন, তারা নাকি একে অপরের দিকে তাকিয়ে না থেকে এবং একে অপরকে জড়িয়ে না ধরে গাছের লতাপাতা খুঁজতে শুরু করেন। বর্তমানে ৭-১০ বছরের শিশুরাও যেখানে স্কুলশিক্ষক কিংবা মাদ্রাসা শিক্ষকের দ্বারাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে কাপড়-চোপড় পরে চলাচলের পরও, সেখানে গন্ধমের তাজা প্রভাব সত্ত্বেও তরুণ আদম (আ.) নাকি তার তরুণী সঙ্গী হাওয়া (রা.)কে নগ্ন দেহে দেখার পরও সেদিকে তাকিয়ে না থেকে এবং কোন প্রকার কাজকর্ম ছাড়াই গাছের লতাপাতা খুঁজতে গেছেন। আদম (আ.) ও হাওয়া (রা.) একে অপরের শরীরের নতুন দেখা বস্তুগুলির ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য বিষয়ে নাকি কিছুই জানতে বা বুঝতে চাননি। একথা মানুষের সহজাত ধর্মবিরোধী কথা। মানুষকে এতোটা নির্বোধ মনে করার কোন কারণ নেই। তাছাড়া যুক্তির আলোকে বলা যায়, একজন মুসলিম সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ধর্মপালনকালেই সবচেয়ে বেশি মিথ্যে কথা বলেন। যেমন, একজন মুয়াজ্জিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে আজান দেন। ‘আল্লাহু আকবর’ শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে, ‘আল্ল¬াহ সর্বশক্তিমান’। ইসলাম প্রচারের যুগে আল্লাহ তৎকালীন মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে মূর্তি পূজারকদের পরাজিত করতে ভূমিকা রাখায় সেই সময়ের জন্য কথাটা সত্য হলেও বর্তমানে আমরা দেখতে পাই যে, মুসলিমরাই পরাজিত হচ্ছে ভিন্নধর্মীয় লোকদের শক্তির কাছে। অর্থাৎ, বর্তমানে ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’ কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। বাস্তবতার আলোকে বর্তমানে আল্লাহর চেয়ে খ্রিস্টানদের বিশ্বাসকৃত ঈশ্বরই অধিক শক্তিমান। এমনকি বাংলাদেশের আলোকেও আমরা দেখতে পাই যে, ইসলামের হেফাজতকারী দাবিদারদের রক্ষা করার ব্যাপারে আল্লাহ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে পরাজিত হয়েছেন। অর্থাৎ, বাংলাদেশের আলোকে ‘হাসিনাহু আকবর’ এটাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। অতএব, মুসলিমরা দিনে পাঁচ ওয়াক্তে অন্তত ৩০ রাকাত নামাজ পড়লে নিয়ত বাঁধার সময় থেকে শুরু করে নামাজে বহুবার এ মিথ্যে উচ্চারণ করছেন। আবার প্রতি রাকাত নামাজের নিয়ত বাঁধার পর সুরা ফাতেহার প্রথম বাক্যে উচ্চারণ করছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। এ কথাও বাস্তবতার আলোকে মিথ্যে বলে প্রমাণিত। কেননা, বিশ্বের বড় জোর ২৫ শতাংশ মানুষ নিরাকার আল্লাহর প্রশংসা করছে। বাকি ৭৫ শতাংশ মানুষ আকারসম্পন্ন শ্রী কৃষ্ণ, যিশু, গৌতম বুদ্ধসহ অন্য অনেকের প্রশংসায় লিপ্ত। ১৪৩৫ বছর পরও যেহেতু পৃথিবীর সমস্ত মানুষ আল্লাহর প্রশংসা করছে না, সেহেতু সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এমন দাবি মিথ্যে ছাড়া আর কি? আবার দিনের শুরুতে ফজর নামাজের আজান দেয়ার সময় মুয়াজ্জিন বলছে, আস সালাতু খাইরুম মিনান নউম (ঘুম হতে নামাজ উত্তম)। কিন্তু ঘুমের চেয়ে উত্তম বাস্তবে কিছুই নেই।
যেহেতু আল্লাহর দাবিকৃত প্রমাণসাপেক্ষ কথাগুলোই মিথ্যে বলে প্রমাণিত, সেহেতু অপ্রমাণসাপেক্ষ কথাগুলো সত্য বলে গ্রহণ করার কোন যুক্তি নেই। একইভাবে, কোরআনের সুরা আলাক্বে ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করি রক্তপিন্ড হতে’ এ কথাও মিথ্যে বলে প্রমাণিত। কেননা, মানুষ সৃষ্টি হয় মূলত পুরুষের বীর্য হতে, যা সাদা বর্ণের। রক্তপিন্ড মানুষের শরীরে অনেক কিছুই আছে, যা মানুষ সৃষ্টির মূল উপাদান নয়। এছাড়া আল্লাহর ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু, এ কথাও বাস্তবতার আলোকে মিথ্যে। কেননা, মানুষের জন্ম হয় মানুষের ইচ্ছেতেই। মানুষ ইচ্ছে না করলে জন্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, এমনকি ভ্র“ণ হত্যা করেও জন্মদানের প্রক্রিয়া ঠেকিয়ে দেয়। আবার মানুষের মৃত্যুর জন্যও মানুষই দায়ী। আল্লাহর ইচ্ছায় ও ক্ষমতায় মানুষের মৃত্যু হলে তো আদালতের কোন খুনিকেই দন্ড প্রদান করা ঠিক নয়। আদালত খুনিকে শাস্তি দেয় খুনের জন্য সেই মানুষটিকেই দায়ী করা হয় বলে।
অর্থাৎ, স্রষ্টা বা ধর্ম প্রবর্তক মানুষকে ঈশপের গল্পের আদি সংস্করণ শুনিয়ে ন্যায়-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে সমাজে শান্তি বজায় রাখতে চেয়েছেন। ধর্মের এটুকু সারমর্ম বুঝে মানুষ সমাজে শান্তির সঙ্গে বসবাস করলেই স্রষ্টার বা ধর্মপ্রবর্তকের মূল ইচ্ছা পূর্ণ হয়ে যায়। এর বাইরে ধর্ম নিয়ে যে উগ্রতা ও গোঁড়ামি বিভিন্ন সংগঠন করে চলেছে, তা ধর্মীয় দৃষ্টিতেই মহাপাপ। ধর্ম স্রেফ মানুষের আত্মিক উন্নতি ও সামাজিক শান্তির লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠিত। তাছাড়া কে বেহেস্তে যেতে চান আর কে নরকে, সেটা যার যার ব্যক্তিগত বিবেচনা। বেহেস্তে নেয়ার জন্য কাউকে ইসলাম বা অন্য ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করতে চাওয়া, কিংবা নাস্তিক-মুরতাদ বলে কারো প্রতি অন্যদের মনে ঘৃণা জন্মানোর চেষ্টা করা বড় ধরনের পাপ। কেউ ইসলাম ধর্মের বিরোধিতা করলে, তার সেই বিরোধিতা আল্লাহর পছন্দ না হলে কেয়ামতের দিনে বিচারে আল্লাহ তাকে নরকে ঠেলে দেবেন। সে দায়িত্বটা আল্লাহর ওপরই থাক। মুসলিমদের ব্যক্তিগত বা দলগত বাণিজ্যে অসুবিধা না হলে নাস্তিক-মুরতাদদের নিয়ে তাদের এতো বিরোধিতা কেন? আর ব্যক্তিগত বা দলগত বাণিজ্যের জন্য তো কোন ধর্মেরই সৃষ্টি হয়নি। ধর্ম প্রবর্তকরা ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করেছেন, প্রত্যেকের নৈতিক উন্নতি ও সামাজিক শান্তির লক্ষ্য নিয়ে। এ কথাটাই সকলকে বুঝতে হবে। এর বাইরে অন্য কোন চিন্তা বা অহমিকাই ঠিক নয়। কারণ, যুক্তির আলোকে যা সত্য, তাতে প্রতিষ্ঠিত থাকাই ধর্ম। অন্ধবিশ্বাসে মিথ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা ধর্ম নয়।
মানুষ অন্ধবিশ্বাসে মিথ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলেই মানুষের এমন মিথ্যাচারের প্রভাব সার্বিকভাবেই সমাজের সর্বক্ষেত্রে পড়ছে। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ বিএনপি-আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদেরা যেমন মিথ্যে বলে চলেছেন অনর্গল, একইভাবে জুলুম-অন্যায় সমাজে বেড়ে গেছে সর্বত্র। তাইতো সমাজে মিথ্যে বলাতেই সম্মান, মিথ্যেতেই পুণ্য, মিথ্যেতেই বিত্ত-বৈভব। আর সত্যে দুর্গতি, সত্যে অসম্মান, সত্যে জীবনের প্রতি হুমকি। যেন সত্য বলা মহাপাপ, এটাই এ যুগের শিক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
©somewhere in net ltd.