![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙালি জাতীয়তাবাদ পূর্ণতা পাক
কাউসার ইকবাল
১৯৭১ সালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এসেছে। আর সেই স্বাধীনতা লাভে সহায়তা করেছে ইন্ডিয়ার সরকার। কিন্তু বাংলার জয় প্রকৃতপক্ষে এখনো হয়নি। কেননা, বাংলার বড় একটা অংশ এখনো বাংলাদেশের বাইরে। সেই অংশটুকু বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তো ‘জয় বাংলা’ স্লোগান পূর্ণতা পাবে না। ৪০ বছর পর স্লোগানটা যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কণ্ঠ থেকেই পুনরায় জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে, সেহেতু ১৯৭১ সালের মতোই এবার এই স্লোগানটা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সম্পূর্ণ করুক।
বাংলা এক রাষ্ট্র বা প্রদেশ হোক, তা তৎকালীন সংকীর্ণ চিন্তার রাজনীতিবিদেরা চায় নাই বলেই হিন্দুইজম ও মুসলিমইজমকে তারা উস্কে দিয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে এই এলাকার ৯০ শতাংশ মুসলমান হিন্দুইজমে প্রভাবিত ভারতীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে এক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে বসবাস করতে চায়নি বলেই তারা ১৯৪৭ সালে বাঙালিদের এক রাষ্ট্র গড়ার চিন্তা না করে বরং দূরবর্তী পাঞ্জাবি-সিন্ধিদের সাথে এক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল বলে ১৯৭১ সালে ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। এটা করে যদি তারা ভুল করে থাকে, তবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বাঙালি তথা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীভিত্তিক যে রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে, তাতে সকল বাঙালির অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা জরুরি। কেননা, ধর্মভিত্তিক নয় ভাষাভিত্তিক ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে সোচ্চার হয়েই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম। আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে যে গানটি মর্যাদা পেয়েছে, সেই গানটিতেও পশ্চিম বঙ্গসহ পুরো সোনার বাংলাকে ভালবাসার কথা বলা হয়েছে। আর পুরো সোনার বাংলাকে নিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গড়ে না উঠলে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণটাও তো যথার্থ হয় না। এখন যেটুকু বাংলাকে নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে, তাকে ‘অর্ধ বাংলাদেশ’ নামকরণ করাটাই যৌক্তিক। আর জয় বাংলা স্লোগানটা যেহেতু আবার উঠেছে এবং ধর্মান্ধতাও বর্তমানে যেহেতু অনেক কম, সেহেতু বাঙালিরা হিন্দুইজম ও মুসলিমইজমকে তুচ্ছ করে বাঙালিজম ও মনুষ্যইজমকে বড় করে দেখে বাংলা ভাষাভাষি সকলে এক রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চিন্তা করুক। তাহলে পাকিস্তান থেকে যেমন অর্ধেক বাঙালি স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে, তেমনি ভারত থেকে বাকি অর্ধেক বাঙালি স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে বাংলাদেশকে এবং এদেশের জাতীয় সঙ্গীতকে পূর্ণতা দিতে পারে। শাহবাগের তরুণরা এ বিষয়ে পশ্চিম বঙ্গ, আসামসহ বাংলার বাকি অংশের তরুণদের উজ্জীবিত করতে পারে। কারণ, তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের যথার্থ উত্তরসূরি। তারা ভারতীয় অংশের বাঙালিদের দ্বারা ইন্ডিয়ান সরকারের কাছে এই দাবিটা জোরালোভাবে উত্থাপন করুক যে, ব্রিটিশরা যেমন বিনা যুদ্ধে ভারতের রাষ্ট্র পরিচালনার ভার ভারতীয়দের কাছে হস্তান্তর করেছিল ১৯৪৭ সালে, তদ্রুপ বর্তমান ভারত সরকার বিনা যুদ্ধে বাংলার বাকি অংশটুকু পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের হাতে হস্তান্তর করুক।
বাঙালিরা যতদিন পর্যন্ত ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’কে কেন্দ্র করে এক রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে না উঠবে, ততদিন পর্যন্ত তারা পৃথিবীতে মীরাক্কেল-আক্কেল চ্যালেঞ্জার-এর সবচেয়ে বড় জোকস বনে থাকবে। কেননা, অর্ধেক বাঙালিকে বাইরে রেখেই বাংলা নামে দেশ; আর সেই দেশের জাতীয় সঙ্গীত আবার সম্পূর্ণ বাংলাকে কেন্দ্র করেÑ এমন হাস্যকর বিষয় পৃথিবীর আর কোন জাতির ক্ষেত্রে ঘটেছে বলে উদাহরণ মিলবে না। যদি মেলে, তবে বুঝতে হবে সে জাতিও মীরাক্কেল-আক্কেল চ্যালেঞ্জারের জোকস।
অতএব, বাংলার জয় না হওয়া পর্যন্ত তথা স্লোগানের সার্থক প্রয়োগ না ঘটা পর্যন্ত বাঙালি তরুণদেরকে কিছুতেই ক্লান্তি স্পর্শ করা উচিত নয়। বাংলাভাষীরা এক হলে বর্তমান ভারতীয় বাঙালিরাও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদী’ স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে নিজেদের নিয়ে গর্ববোধ করতে পারবে এবং তাদের জীবন-জীবিকার মানও বৃদ্ধি পাবে। এ লক্ষ্যে বর্তমান ভারতবাসী বাঙালিদের মধ্যে স্লোগান ছড়িয়ে পড়–কÑ ‘বাঙালি বাঙালি ভাই ভাই, বাংলাদেশের নাগরিক হতে চাই’; ‘বাঙালি বাঙালি ভাই ভাই, ধর্ম নিয়ে বিভেদ নাই’; ‘বাঙালি বাঙালি ভাই ভাই, সকল বাঙালির ঐক্য চাই’; ‘বাঙালি বাঙালি ভাই ভাই, এক দেশেই থাকতে চাই’।
১৯৭১ সালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের বাঙালিরা এক ধাপ এগিয়েছে বটে; কিন্তু ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা পায়নি আজো। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা পাবে সেদিনইÑ যেদিন বাংলা ভাষাভাষি সকল মানুষ এক রাষ্ট্রের অধীনে আসবে। যেহেতু ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার দাবি বাংলাদেশেই প্রথম উঠেছিল ১৯৭১ সালে, সেহেতু সেই ধারাবাহিকতায় পশ্চিম বঙ্গ, আসামসহ বাংলা ভাষাভাষি সকল অঞ্চলকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করতে সংগ্রামটা শুরু করতে হবে বাংলাদেশ থেকেই। বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করতে এগিয়ে আসবে কি?
©somewhere in net ltd.