![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হওয়াই মানুষের ধর্ম
কাউসার ইকবাল
পৃথিবীর প্রথম মানবের বংশধর হিসেবে মানুষেরা প্রত্যেকেই একে অপরের আত্মার আত্মীয়। কিন্তু কোটি কোটি বছর ধরে মানুষের জন্য ভীষণ পরিহাসের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, মানুষেরা নিজেদেরকে মানুষ বলে পরিচয় দেয়ার সাহস রাখে না। হিন্দু, মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈনÑ এসব পরিচয়ের বৃত্তে আটকে আছে মানবজাতি। এসব বৃত্ত ভেঙে তারা নিজেদেরকে মানুষ বলে পরিচিত করতে চেষ্টাও করে না। কোন মানুষকে তার পরিচয় সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে সে নিজেকে হিন্দু, মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন এভাবেই পরিচিত করতে পছন্দ করে। অর্থাৎ মানুষেরা নিজেদেরকে মানবজাতির খণ্ডিত অংশের প্রতিনিধি বলেই পরিচিত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এর মাধ্যমে যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠে তা হচ্ছেÑ বর্তমান পৃথিবীর মানুষের মধ্যে হিন্দুত্ববোধ, মুসলমানিত্ববোধ, ইহুদিত্ববোধ, ক্রিশ্চিয়ানত্ববোধ, বৌদ্ধত্ববোধ, জৈনত্ববোধ কাজ করে বেশি; কিন্তু মনুষ্যত্ববোধ কাজ করে কম। আর যাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ কাজ করে কম, গোষ্ঠীবোধ কাজ করে বেশিÑ তারা কেউ নিজেকে মানুষ বলে পরিচিত করার সাহস রাখেন না সঙ্গত কারণেই।
মানুষেরা বোঝার চেষ্টা করে না যে, নিজেদেরকে হিন্দু, মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন বলে পরিচিত করলে তারা মানবজাতির একাংশের প্রতিনিধি বলে বিবেচিত হন। কিন্তু নিজেদেরকে মানুষ বলে পরিচিত করে তারা গোটা মানবজাতির প্রতিনিধি হবার চেষ্টা করলে তা হতো আরো বেশি গৌরবের বিষয়। মানবতার কল্যাণের লক্ষ্যে তখন তারা আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারতেন। মানুষেরা বোঝার চেষ্টা করুক, হিন্দু, মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ইত্যাদি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পশুদের মতো একে অপরের রক্ত ঝরানোর খেলায় মেতে থাকা মানুষের জন্য শোভনীয় নয়।
মানুষেরা বোঝার চেষ্টা করুক যে, যারা ইহজীবনে মানুষের শান্তির জন্য কাজ করবেন, তাদের পরবর্তী জীবনে অশান্তিতে ভোগার কোনো কারণ থাকতে পারে না। একইভাবে যারা পৃথিবীতে মানুষের জন্য অশান্তিময় কাজ করবেন, তাদের পরবর্তী জীবনে শান্তিলাভের কোনো কারণ থাকতে পারে না। শান্তির বিনিময়ে শান্তি, আর অশান্তির বিনিময়ে অশান্তিপ্রাপ্তিই নিশ্চিত প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে।
মানুষের মধ্যে যারা পরজগতে শান্তিলাভের আকাক্সক্ষা নিয়ে ধর্মকর্ম করেন, তারা একটা কথা বোঝার চেষ্টা করুক যে, পুরস্কারের লোভ বা শাস্তির ভয়ে ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করা মানুষের বিবেকের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের শামিল। মানুষকে মানুষ হতে হবে নিজের বিবেককে কাজে লাগিয়ে। তাহলেই মানুষ যে বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী, তা মূল্যায়িত হয়। আর বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে কোনোকালেই কোথাও অশান্তিতে ভুগতে হবে না। কিন্তু নিজের বিবেকের মৃত্যু ঘটিয়ে ধর্মান্ধ হয়ে গেলে তার প্রতিক্রিয়ায় বিভেদ ও দলাদলির মাধ্যমে হিংসা-হানাহানিতেও লিপ্ত হয় মানুষেরা। এতে মানুষের ইহকালের শান্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরবর্তী আলোকদেহময় জীবনেও বিভেদ সৃষ্টিকারীদের অশান্তিময় জীবনলাভ নিশ্চিত হয়ে যায়। এ কথাও মানুষেরা বোঝার চেষ্টা করে বিভেদ ও দলাদলি প্রভাবক ‘সম্প্রদায়গত পরিচয়ের’ বৃত্ত ভেঙে ‘মানুষ পরিচয়ে’ মানুষের কাতারে দলে দলে শামিল হোক, যে পরিচয়টা মানুষের আসল পরিচয়। মানুষেরা বোঝার চেষ্টা করুক যে, মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়ে নিজেদেরকে ‘মানুষ’ বলে পরিচয় দেয়ার সাহস না করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় অধর্ম। আর ‘মানুষ’ বলে পরিচয় দেয়ার সাহস দেখানোটাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম।
©somewhere in net ltd.