নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাউসার ইকবাল

সাংবাদিক ও লেখক

কাউসার ইকবাল

সাংবাদিক ও লেখক

কাউসার ইকবাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঘ সিংহের ফুটক্রিক লড়াই

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১

বাঘ সিংহের ফুটক্রিক লড়াই

কাউসার ইকবাল



পুরো সুন্দরবন জুড়ে সাজ সাজ রব। বনের রাজা কে হবে তা নিয়ে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার আহবান করেছে সিংহের দল। তাদের কথা হচ্ছে, সারা পৃথিবী জুড়ে সিংহকেই বলা হয় বনের রাজা। আর সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা দেমাগ দেখিয়ে চলে। সিংহদের ড্যাম কেয়ার করে। নিজেরাই যেন একেকজন রাজা মহারাজা, এমন হাবভাব দেখায়। এতে সিংহের দল ভীষণ বিরক্ত বাঘদের উপর। বাঘদের-কে আচ্ছামতো জব্দ করার জন্য বনের সব সিংহ একাধিকবার সভা সমাবেশ করে। বিভিন্ন সিংহের মতামতের প্রেক্ষিতে ঠিক হয় যে, বাঘদেরকে ওপেন চ্যালেঞ্জ জানানো হবে। ১১টা সিংহ ১১টা বাঘের সাথে লড়াই করবে। এতে যারা জয়ী হবে তারাই হবে সুন্দরবনের রাজা। সিংহদের সভায় নেয়া এই সিদ্ধান্ত একে একে সুন্দরবনের সব বাঘকে জানানো হয়। বাঘেরা আবার একে অন্যকে জানিয়ে পশুর নদীর ধারে সভা আহবান করে। এই সভায় বাঘেরা সম্মিলিতভাবে সিংহদের চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে। তারা ঠিক করে সিংহদেরকে তারা জানাবে সিংহরা যেখানে তাদের সাথে লড়াই করতে চায়, সেখানেই সিংহদের সাথে লড়াইয়ে বাঘেরা রাজী। এদিকে বাঘ ও সিংহদের সভা-সমাবেশের খবর এবং সভার বিষয়বস্তু বনের বিভিন্ন পাখি ও বানরের মাধ্যমে মহিষ, গণ্ডার, হাতি, শুকর, চিতাবাঘ, ভালুক, ক্যাঙ্গারু, বনমানুষ, ভাল্লুক, শিয়াল, খরগোশ, জেবরা, ঘোড়া সকলের কানে পৌঁছে যায়।

মহিষেরা ভাবে, লড়াই করে যদি বনের রাজা নির্ধারণ হয়, তবে আমরা কম কিসে? আমাদের শিংয়ের গুতোয় আমরা সিংহ ও বাঘের পেট ফুটো করে দিতে পারব।

গণ্ডাররা ভাবে, আমাদের কি বাঘ ও সিংহের সাথে লড়াই করার শক্তি নাই?

হাতিরা ভাবে, আমাদের শরীর বাঘ ও সিংহের চেয়ে অনেক বড়। আমাদের শক্তিও বেশি। আমরা কি বাঘ ও সিংহকে হারিয়ে বনের রাজা হতে পারি না?

চিতাবাঘেরা ভাবে, আমাদের সৎ ভাই রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা যদি বনের রাজা হওয়ার জন্য লড়াই করতে পারে, তবে আমরা কেন পারব না? আমাদের শক্তি ও সাহস কি কম?

বনমানুষেরা ভাবে, আমরা যদি গাছের ডাল ভেঙে বাঘ ও সিংহকে পেটানো শুরু করি, তবে কি বাঘ ও সিংহ আমাদের সাথে পারবে? আমরা নিশ্চয়ই জয়ী হয়ে বনের রাজা হবো। শহর গ্রামের রাজা মানুষ, আর বনের রাজা বনমানুষ, এমন হলেই তা হবে যৌক্তিক কথা। অতএব, বাঘ ও সিংহকে বিনা লড়াইয়ে ছেড়ে দেয়া যাবে না।

খরগোশেরা ভাবে, লড়াইটা যদি শক্তির না হয়ে দৌড় প্রতিযোগিতার হতো, তবে বনের রাজা হবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারাও শামিল হতে পারতো।

ঘোড়ারা ভাবে, লড়াইটা যদি দৌড় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হতো, তবে তারাও বনের রাজা হবার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে পারতো।

শিয়ালেরা ভাবে, বনের রাজা হবার লড়াইয়ে তাদেরও শামিল হওয়া দরকার। কিন্তু কীভাবে শামিল হতে পারে, তা নিয়ে তারা বড় দুশ্চিন্তায় পড়ল। শিয়ালেরা একে অন্যকে বনের রাজা হবার উপায় বের করতে মাথা খাটাতে বলল। সেই থেকে শুরু হলো শিয়ালদের চিন্তা করা। এখানে সেখানে বসে শিয়ালরা চিন্তা করতে শুরু করল। কিন্তু বাঘ, সিংহ, গণ্ডার, হাতি এদের সাথে লড়াই করে কিভাবে বনের রাজা হতে পারবে, তা তাদের কারো ভাবনাতেই এলো না। শেষে শিয়ালদের দুজন বনে ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পেল চারজন তরুণ কাঠুরিয়া একটা খোলা জায়গায় তিনটা করে দুই ফুট সাইজের লাঠি মাটিতে কিছু ব্যবধানে পুঁতে রেখে এক পাশ থেকে একজন ছোট গোল বস্তু ছুঁড়ে মারছে। অপর পাশ থেকে আরেকজন চওড়া কাঠ দিয়ে সেই গোল বস্তুটাকে পেটাচ্ছে। আর আরেকজন বস্তুটাকে কুড়িয়ে আনার ফাঁকে দুজন দৌড়াদৌড়ি করছে। শিয়াল দুটি ভালো করে অনেকক্ষণ ধরে চার কাঠুরিয়ার এই খেলা দেখল। খেলা দেখতে দেখতে তাদের একজনের মাথায় এক বুদ্ধি এলো। যদি এ ধরনের খেলা বনের সকল পশুকে দেখিয়ে এ খেলার প্রতি সকল পশুকে উৎসাহী করে তোলা যায়, আর এই খেলার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বনের রাজা নির্ধারণের ব্যবস্থা করা যায়, তবে শিয়ালদের বনের রাজা হবার উপায় হতে পারে। কিন্তু এই খেলা শিয়ালরা ভালোভাবে রপ্ত করার পরই অন্যদেরকে এই খেলা সম্বন্ধে জানাতে হবে। তার আগে বনের রাজা হবার জন্য বাঘ ও সিংহের দলের লড়াইটা কোনো না কোনোভাবে দেরি করিয়ে দিতে হবে। আর বনের সকল পশুকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এই মতে যে, কেবল বাঘ ও সিংহের লড়াইয়ে বনের রাজা নির্ধারিত হতে পারে না। সকল পশুর মধ্যেই লড়াই হতে হবে। তবে তা শক্তি দিয়েই কেবল নয়, বুদ্ধি দিয়েও। আর তাতে যেন কোনো রক্তপাত না হয়, এমন ধরনের লড়াই হতে হবে। রক্তপাত হওয়া ভালো কথা নয়। এক প্রাণী অপর প্রাণীর রক্ত ঝরিয়ে কেন বড় হবে? কেন রাজা হবার জন্য অপর প্রাণীর রক্ত ঝরাতে হবে? তেমনটা করা চলবে না। মানুষ বুদ্ধি খাটিয়েই পৃথিবীর সেরা জীব হয়েছে। পশুদেরও বুদ্ধি খাটিয়ে বনের সেরা জীব অর্থাৎ বনের রাজকীয় শ্রেণী হতে হবে। সঙ্গী শিয়ালকে তার মাথায় আসা এই বুদ্ধির কথা জানাল সে। সঙ্গী শিয়ালটি তার বন্ধু শিয়ালের ভাবনাকে অতি উত্তম সিদ্ধান্ত বলে সমর্থন জানাল। তবে এই খেলাকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য লোকালয়ে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করল বন্ধু শিয়ালসহ। বন্ধু শিয়ালটি এতে সম্মত হলে দুজনে বনের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে সাতক্ষীরা জেলার রমজান নগর, মুন্সিগঞ্জ, ঈশ্বরিপুর হয়ে শ্যামনগর-এ পৌঁছল। মানুষের কথা বোঝা ও খেলাটি বোঝার সুবিধার্থে শিয়ালেরা দুটি ময়না পাখিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদের সাথে করে নিয়ে গেল। ময়না পাখি মানুষের কথা সহজে বুঝে ও বলতে পারে বলেই শিয়ালেরা বুদ্ধি করে ময়না পাখি দুটোকে সঙ্গে নিল। শিয়ালদের এই বুদ্ধি বেশ কাজে দিল। শ্যামনগরে পৌঁছে এক খেলার মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে শিয়াল দুটি যখন মানুষের ছেলেপেলেদের এই খেলা দেখছিল, তখন অল্পক্ষণ পরেই দুই দুষ্ট ছেলে তাদেরকে পাথর মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ময়না দুটিকে কেউ কিছু বলেনি। ময়না দুটি মাঠের মধ্যেই উড়ে উড়ে খেলাটি বোঝার চেষ্টা করে। আর শিয়ালেরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে খেলা দেখে। সন্ধ্যা হয়ে গেলে ছেলেপেলেরা খেলা বন্ধ করে দেয়। তখন তাদের একজন ময়নাদের ধরার চিন্তা করলে তারা উড়ে চলে আসে শিয়ালদের কাছে। শিয়ালেরা ময়নাদের প্রশ্ন করে কতটুকু কী বুঝেছে তারা এই খেলার ব্যাপারে। ময়নাদের একটি বলল, এই খেলার নাম ক্রিকেট। এগারজনের দুইটা দলের মধ্যে এই খেলা হয়। শিয়ালদের একটি বলল, তুমি কচু বুঝেছ। আমি তো গুনে দেখলাম, মাঠে মানুষ পনেরজন আছে। তার মধ্যে দুজন অদল বদল করে কাঠ দিয়ে একটা গোল বস্তু পেটাচ্ছে। আর দুজন আবার অদল-বদল করে কিছুক্ষণ পর পর জায়গা বদলিয়ে হাত পা নাড়ছিল। তারা কেন এমন করছিল সেটাইতো বুঝতে পারলাম না। তবে এগারজন করে দুই দলে বাইশজন যে মাঠে খেলছিল না, সেটা আমি দূর থেকেই বেশ বুঝতে পেরেছি, যা তুমি মাঠে থেকেও বুঝতে পারোনি। ময়নাটি বলল, না তুমি ঠিক বোঝনি। বাইশজনই এই খেলাটা খেলছে। তবে একসাথে নয়। মাঠে তের জন খেলছে। এক দলের এগার জন, আরেক দলের দুইজন। আর দুইজন বিচারক। তাদেরকে ওরা আম্পায়ার বলে ডাকছিল। তবে ওই আম্পায়াররা কেন যে কখনো এক হাত শূন্যে ভাসাচ্ছিল আবার কখনো দুই হাত, কখনো এক হাতকে ডান থেকে বাঁয়ে নাড়ছিল, আবার কখনো দুই হাত শূন্যে তুলছিল, তা বুঝতে পারিনি। খেলাটা বোঝা কঠিনই হবে। আরো ৩/৪ দিন খেলাটা দেখতে হবে। তবেই হয়তো বোঝা যাবে।

অপর ময়না পাখিটি বলল, আমি একটা জিনিস বুঝেছি।

শিয়ালদের একটি জিজ্ঞেস করল, কি বুঝেছ?

ময়নাটি বললÑ আম্পায়ার যদি ডান হাতের এক আঙ্গুল শুন্যে তুলে, তবে কাঠ হাতে থাকা একজনকে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হয়।

অপর শিয়ালটি বলল, বাহ! কী সুন্দর খেলা! রক্তপাত ছাড়াই মাঠ থেকে বিদায়!

অপর শিয়ালটি বলল- হাঁ, সুন্দর খেলা। এই খেলা দিয়েই সুন্দরবনের রাজা নির্ধারণের চেষ্টা করব আমরা। রক্তপাতহীন খেলায় রাজা নির্ধারণ। দারুণ ব্যাপার হবে!

প্রথম শিয়ালটি বলল- ঠিক বলেছ। তবে এই খেলাটি বোঝার জন্য আমাদেরকে আরো কয়েকদিন শ্যামনগরে থাকতে হবে। চলো মানুষের চোখের আড়ালে রাত কাটাবার জন্য আমরা জায়গা খুঁজে বের করি। শিয়ালেরা একটা নিরিবিলি জায়গা খুঁজে বের করার পর ময়না দুটি শিয়ালদের বললÑ তোমরা এখানে বিশ্রাম কর। আমরা একটু এলাকাটা ঘুরে দেখে আসি। শিয়ালেরা সম্মতি জানালে ময়না দুটি ঘুরতে ঘুরতে এক দোতলা বাড়ির বারান্দায় গিয়ে বসল। বারান্দায় বসে তারা দেখতে পেল একটা ছোট বাক্সের মধ্যে মানুষেরা ক্রিকেট খেলছে। এটা দেখে ময়নাগুলো যারপরনাই অবাক হলো। তাদের চোখকে নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারছিল না। ছোট একটা বাক্সের ভেতর আম্পায়ারসহ ছয়জন মানুষ প্রথমে দেখল তারা। ছোট বাক্সের মধ্যে ছয়জন মানুষ কীভাবে ঢুকল, তা ভেবে যখন কূল-কিনারা পাচ্ছে না, ঠিক তখনই দেখল বিরাট একটা মাঠের ভেতর পনরজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর মাঠের পাশে দেয়ালের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ বসে আছেÑ কেউ উদাম গায়ে, কেউ গেঞ্জি পড়ে। ছোট একটা বাক্সের ভেতর এত বড় বড় হাজার হাজার মানুষ ঢুকল কী করে, তা ভাবতে ভাবতে দুটি ময়নাই অজ্ঞান হয়ে গেল।



দুই



তিন ঘণ্টার মতো অতিবাহিত হয়ে গেলেও ময়না দুটি ফেরত আসছে না দেখে শিয়াল দুটি অস্থির হয়ে গেল। একটি বললÑ ময়নাগুলো কোনো বিপদে পড়ল নাতো?

অপরটি বললÑ কীভাবে বিপদে পড়বে? ওরাতো উড়াল দিয়ে মুহূর্তেই মানুষের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। ওদেরকে বিপদে ফেলা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

প্রথম শিয়াল বললÑ আমাদেরকে যেমন দুষ্ট ছেলেরা পাথর ছুড়ে মেরেছিল, সেরকম করে যদি কেউ ওদেরকে আঘাত করে মেরে ফেলে, তাহলে তো আমাদের ক্রিকেট খেলা বোঝা হবে না।

দ্বিতীয় শিয়াল কিছু বলতে যাবে তক্ষুণি ময়না দুটি হাজির হলো। তাদের দেখে দ্বিতীয় শিয়াল বললÑ কী ব্যাপার? তোমরা এতোক্ষণ কোথায় ছিলে ?

একটি ময়না বলল, আমরা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম।

প্রথম শিয়াল জিজ্ঞেস করল, কী কারণে তোমরা অজ্ঞান হলে?

সেই ময়না জবাব দিলÑ আমরা দেখলাম একটা ছোট বাক্সের ভেতর বিরাট একটা মাঠে তেরজন মানুষ ক্রিকেট খেলছে রঙিন পোশাক পরে। এগারজন হলুদ রঙের পোশাক পরে, আর দুইজন নীল রঙের পোশাক পরে। দুইজন আম্পায়ার ছিল কালোসাদা পোশাক পরে। আর মাঠের পাশে সাদা দেয়ালের ওপর হাজার হাজার মানুষ বসে খেলা দেখছে।

দ্বিতীয় শিয়াল অবাক হয়ে বলল, একটা ছোট বাক্সের ভেতর এতো মানুষ? আজগুবি কথা বলার আর জায়গা পাওনা? আমাদেরকে বোকা বানাতে চাও?

দ্বিতীয় ময়না বলল, না না তোমাদেরকে বোকা বানাচ্ছি না। এটা সত্য কথা। আমাদেরও বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার! আমরা এখনও বুঝতে পারছি না এতো মানুষ ছোট এক বাক্সে ঢুকল কী করে? এটা ভেবেইতো আমরা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম!

প্রথম শিয়াল জিঞ্জেস করল, বাক্সটা কত বড় হবে?

প্রথম ময়না আশপাশে তাকিয়ে দেড় ফুটের মতো একটা বাঁশের কঞ্চি পড়ে থাকতে দেখে তা শিয়ালদের দেখিয়ে বলল, বাক্সটা পাশে এত বড়ই ছিল। আর লম্বায় একটু ছোট হবে।

দ্বিতীয় ময়নাও প্রথম ময়নার কথা সমর্থন করে বললÑ হাঁ, অত বড়ই হবে। ময়নাদের কথা শেষ হতেই শিয়াল দুটি হাসতে হাসতে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল।

ময়না দুটি এতে অপমান বোধ করল। প্রথম ময়না বলল, আমাদের কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তো! চলো নিজ চোখে দেখবে তাহলে।

প্রথম শিয়াল বলল, অত বড় বাক্সে তোমাদের মতো ১৫টা ময়নাও তো ঢুকতে পারবে না। আর তোমরা বলছ ১৫ জন মানুষ তার ভেতরে ঢুকে ক্রিকেট খেলছে! আর হাজার হাজার মানুষ ওই বাক্সের ভেতরেই বসে ক্রিকেট খেলা দেখছে! কী আজগুবি কথা! তোমাদের মাথা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে দেখছি! তোমরা কী খেয়ে প্রলাপ বকছ তোমরাই জানো!

প্রথম ময়না আবারও আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলল, তবে তোমরা চলো আমাদের সাথে। নিজ চোখে দেখবে এই আজগুবি ব্যাপার!

দ্বিতীয় শিয়াল প্রথম শিয়ালের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, দেখেই আসি ওরা প্রলাপ বকছে, না সত্য বলছে।

শিয়াল দুটি ময়নাদের সাথে সেই দোতলা বাসার নিচে যেতে পারল বটে, তবে দোতলায় যেহেতু উঠতে পারল না, তাদের আর ময়নাদের কথার সত্যতা জানা হলো না।

তবে ময়না দুটি এবার দোতলার বারান্দা থেকে নেমে এসে যা বলল, তা শুনে শিয়ালেরা আবার হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খেল। ময়নাদের একটি এবার বলেছেÑ বাক্সের ভেতর তারা বারটি হাতিকে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে।

এমন কথা শুনলে কার না হাসি পাবে! এটা ভেবে অপর ময়নাটি এবার চুপ করে রইল। যদিও সে বাক্সের ভেতরে বারটি হাতিকে জঙ্গলে ঘুরতে দেখেছে অন্য ময়নার মতোই। এমন আজগুবি কাণ্ড ছোট বাক্সটার ভেতরে কীভাবে ঘটছে, তা ভেবে ভেবে তার মাথা সত্যিই খারাপ হবার জোগাড় হয়েছে। মানুষের বসতি এই এলাকায় গাছপালা কিছু থাকলেও একে জঙ্গল বলা যাবে না। কিন্তু বাক্সটার ভেতর হঠাৎ করে জঙ্গল এলো কোত্থেকে? আবার সেই জঙ্গলে বারটি হাতি এলো কোত্থেকে? দ্বিতীয় ময়নাটির মনে বিস্ময়ের শেষ নেই। তার বিস্ময় আরো বেড়ে গেল এটা ভেবে যে, জ্ঞান হারাবার আগে সে বাক্সের ভেতর পনরজনকে মাঠে খেলতে দেখেছে, আর হাজার হাজার মানুষকে খেলা দেখতে দেখেছে। তারা কোথায় গেল? ওই অতগুলো মানুষ কী কতক্ষণের মধ্যেই বারটা হাতিতে পরিণত হলো? আর মাঠটা ঘন জঙ্গল হয়ে গেল? দালানগুলো কোথায় গেল? ভাবতে ভাবতে আবারও অজ্ঞান হবার দশা ময়নাটির। এমন কথা বনে গিয়ে বনের ময়নাদের বললেও তারা বিশ্বাস করতে চাইবে না, শিয়ালেরা বিশ্বাস করবে কেন? তারা তো বনের সবচাইতে চালাক প্রাণী!

শিয়াল দুটির একটি হাসি থামিয়ে অপর শিয়ালকে বলল, ময়না দুটি মানুষের বসতিতে এসে কী চালাক হয়েছে দেখেছিস? তারা আমাদেরকে বোকা বানাতে চায়! বলে কিনা ছোট এক বাক্সে বারটা হাতি ঢুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে!

অপর শিয়ালও তাতে সায় দিয়ে বলল, সত্যিই তো! ময়না দুটি দেখি খুব সেয়ানা হয়ে গেছে। আর একদিন মানুষের বসতিতে থাকতে পারলে তো তারা বনে ফিরে গিয়ে নিজেদেরকে বনের রাজা বলে দাবি করবে।

প্রথম শিয়াল বলল, চলো ওদের নিয়ে এখনই বনে ফিরে যাই।

দ্বিতীয় শিয়াল বলল, কিন্তু আমাদের ক্রিকেট খেলা শেখার কী হবে? তাছাড়া ওদেরকে বনে ফিরে যেতে বললেই কী তারা আমাদের সাথে এখনই যেতে চাইবে! ওরা উড়তে জানে। আমাদের কথা কী তারা শুনবে?

প্রথম শিয়াল বললÑ তাই তো! কিন্তু ওরা যে আমাদের বোকা বানাতে চায়, তার কী হবে?

দ্বিতীয় শিয়াল বললÑ হাঁ, এই ব্যাপারটার একটা ফয়সালা করা দরকার।

প্রথম শিয়াল এবার ময়না দুটিকে জিজ্ঞেস করলÑ আচ্ছা, তোমরা আমাদের বোকা বানাতে চাও কেন বলতো দেখি!

দ্বিতীয় ময়না বললÑ আমরা তোমাদের মোটেই বোকা বানাতে চাইছি না। আসলে ওই বাক্সটা একটা জাদুর বাক্স হবে। ওই বাক্সে ঢুকলে মানুষ হাতি হয়ে যায়। ওই বাক্স থেকে আমাদের দূরে থাকাই উচিত।

প্রথম শিয়াল বললÑ আমরা তোমাদের কথা মোটেই বিশ্বাস করতে পারছি না। এমন জাদুকরী বাক্স থাকতেই পারে না।

দ্বিতীয় শিয়াল বলল- আমরা যে করেই হোক ওই জাদুকরী বাক্সটা দেখব। নিজের চোখে দেখেই আমরা বুঝতে চাই, তোমরা সত্য বলছ কিনা?

শিয়াল দুটি এবার সাহস করে ওই বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে যে রুমে জাদুর বাক্স আছে বলে ময়নাগুলো বলেছে, সেই রুমের দরজায় গিয়ে চুপি চুপি দাঁড়াল। প্রথম শিয়াল দরজার পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে রুমের ভেতরে দেখল। কাউকেই দেখতে না পেয়ে রুমের ভেতরে ঢুকল। দ্বিতীয় শিয়ালও তাকে অনুসরণ করে রুমে ঢুকল। রুমে কাউকে না দেখলেও কারো কথা শোনা যাচ্ছে বুঝে তারা প্রথমে অবাক হল। পরে যে দিক থেকে শব্দ আসছিল সেদিকে তাকিয়ে আরো অবাক হলো। সত্যিই তো ছোট এক বাক্সে অনেক মানুষ দেখা যাচ্ছে। মানুষেরা অনেকে দাঁড়িয়ে, অনেকে বসে হাততালি দিচ্ছে। ৫/৬ জনে ঘুরে ঘুরে নাচছে। নীল রঙের পোশাক পরা একজন মানুষ দড়ির পাশ থেকে লাল রঙের গোল এক বস্তু নিয়ে অনেক নীল রঙের পোশাক পরা মানুষের দিকে ছুড়ে মারল। সেখানে হলুদ রঙের পোশাক পরা দুইজন মানুষ হাতে চওড়া কাঠ ধরে আছে, আর মাথায় ও মুখে লোহার খাঁচা পরে আছে। ওরা যে ক্রিকেট খেলছে, শিয়ালেরা তা বুঝতে পারল। কিন্তু যারপরনাই অবাক হলো, একটা ছোট বাক্সের মধ্যে ময়নাদের কথামতো এত মানুষ দেখে। একটু পর তারা দেখল, একটা চিতাবাঘ ওই বাক্সের মধ্যে দৌড়াচ্ছে। এতক্ষণ যত মানুষ দেখা যাচ্ছিল, তাদের কেউ নেই। অন্য একজন সাইকেল চালিয়ে চিতাবাঘকে তাড়া করে সাইকেল থেকে লাফিয়ে বাঘটিকে ধরে ফেলল। এরপর সে চিতাবাঘের মুখে হাত ঢুকিয়ে চিতাবাঘের পেট থেকে একটা টিনের ডিব্বা বের করে আনল। এরপর নিজে সেই ডিব্বার পানি খেল। শিয়াল দুটি মানুষের এমন সাহস দেখে ভড়কে গেল। চিতাবাঘের মুখের ভেতর হাত ঢুকিয়ে পেটের ভেতর থেকে মানুষ চিতাবাঘের খেয়ে ফেলা জিনিস বের করে নিয়ে এসে খায়! বাবা! কি ডেঞ্জারাস ব্যাপার! মানুষের এত সাহস! তাদেরকে যদি ঘরের মানুষেরা দেখে ফেলে তবে তো কোপ্তা বানিয়ে খাবে! শিয়ালেরা ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ ভয়ে ভয়ে সেই জাদুর বাক্সের দিকে শেষবারের মতো তাকাল। এবার তারা দেখল, একজন মানুষ জাদুর বাক্সের ভেতর থেকে তাদের দিকেই বন্দুক তাক করেছে। এখনি যেন গুলি করে তাদের মারবে। এটা দেখে ভয়ে তারা দুজনই দিগি¦দিক জ্ঞান হারিয়ে ঘরের ভেতর দৌড়াতে লাগল। ঘরের ভেতর জিনিসপত্রের নড়াচড়ার আওয়াজ পেয়ে রান্নাঘর থেকে গৃহকত্রী ড্রয়ইং রুমের দিকে তাকিয়ে শিয়াল দুটিকে দেখেই চিৎকার শুরু করল। বাথরুম থেকে গৃহকর্তা সেই চিৎকারের আওয়াজ পেয়ে ‘কি হয়েছে কি হয়েছে’ বলে দরজা খুলে দুটি শিয়ালকে উš§াদের মতো ড্রয়ইং রুমে ছুটাছুটি করতে দেখে নিজেও ভয় পেয়ে গেল। তার স্ত্রীকে রান্না ঘরের দরজায় ফিট হয়ে পড়া অবস্থায় দেখে আরো ঘাবড়ে গেল।

শিয়াল দুটি এর মধ্যেই দরজার পর্দা ঠেলে বের হবার রাস্তা পেয়ে ছুটে পালাল। ছুটতে ছুটতে প্রথমে তারা যে জায়গায় ঠিকানা গেড়েছিল সেখানেই গেল। ময়না দুটিও শিয়ালদের পেছনে পেছনে সেখানে গেল। শিয়ালদের হন্তদন্ত হয়ে ছুটে পালানোর কারণ জিজ্ঞেস করল। জবাবে প্রথম শিয়াল বললÑ তোমাদের কথা যে পুরোপুরি সত্য তা দেখলাম। ওই জাদুর বাক্সের কাছে যে আমাদের যাওয়া উচিত নয়, তাও বুঝলাম। বাবাগো বাবা! আর একটু হলেই জাদুর বাক্সের ভেতরের মানুষটা আমাদের গুলি করে মেরেছিল আর কি!

ময়না দুটি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, জাদুর বাক্সের ভেতর থেকে মানুষেরা তোমাদের গুলি করেছিল?

প্রথম শিয়াল বলল, হাঁ। তবে একজন মানুষই গুলি ছুড়েছিল। ভাগ্যিস আমাদের গায়ে লাগেনি। বনে মানুষেরা পাখি, ভাল্লুক ও বাঘদের লক্ষ করে গুলি ছুড়ে, এখন দেখি শিয়ালদের লক্ষ করেও গুলি ছুড়ে! শিয়ালের মাংসও এখন খেতে চাইছে মানুষেরা! তবে একটা জিনিস আমি বুঝতে পারিনি।

প্রথম ময়না জিজ্ঞেস করল, কী বুঝতে পারনি?

প্রথম শিয়াল বলল, প্রথমে জাদুর বাক্সে দেখলাম অনেক মানুষ। তাদের মধ্যে দুইজনের হাতে চওড়া কাঠ। তারা যাতে খেলার সময় মাঠের ঘাস খেতে না পারে, সেজন্য বোধ হয় তাদের মুখ লোহার খাঁচা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সব মানুষ উধাও! একটা চিতাবাঘ সেইসব মানুষদের কারো কাছ থেকে এক ডিব্বা পানি নিয়ে খেয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিল বলে একজন মানুষ সাইকেল দিয়ে এসে চিতা বাঘটাকে ধরে তার পেটের ভেতর থেকে পানির ডিব্বা বের করে পানি খেল। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল সেই চিতাবাঘ আর মানুষটাও উধাও! আরেকটা মানুষ তখন আমাদেরকে গুলি করে মেরে খেতে চাইল। জাদুর বাক্সের মধ্য থেকে মানুষ হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায় কোথায়? আর হঠাৎ করে অন্য মানুষ বন্দুকসহ কোত্থেকে ঢোকে?

দ্বিতীয় শিয়ালটি বলল, এই ব্যাপারটা আমিও বুঝি নাই। তবে একটা জিনিস বুঝেছি।

প্রথম শিয়াল জিজ্ঞেস করল, কী বুঝেছ?

দ্বিতীয় শিয়ালটি বললÑ বুঝেছি যে, মানুষেরা হলো রাক্ষসজাতীয় প্রাণী। খালি খাইতে চায়। খেলার সময় যাতে খাইতে না পারে, সেজন্য তাদের মুখ খাঁচা দিয়ে বাইন্ধা রাখা হয়। আর যাদের মুখ খাঁচা দিয়া বাইন্ধা রাখা না হয়, তারা সাইকেল চালাইয়া চিতাবাঘের পেটের খাবার কাইড়া নিয়া খায়। জাদুর বাক্সে থাইকাও গুলি কইরা আমাগো মাইরা খাইতে চায়! জঙ্গলে গিয়া বাঘ, ভাল্লুক, খরগোশ ও পাখি মাইরা খায়। এই রাক্ষুসে প্রাণী থেইকা সাবধানে থাকা উচিত।

ময়নাদের একটি বলল, কিন্তু এই মানুষদের কাছ থেকেই তো তোমরা ক্রিকেট খেলা শিখতে চাও!

প্রথম শিয়ালটি বলল, রক্তপাতহীনভাবে বনের রাজা হওয়ার জন্য এই খেলাটা মানুষের কাছ থেকে শেখা দরকার। বনের অন্যান্য প্রাণীদেরও শেখানো দরকার। মানুষের কাছ থেকে ভালো কিছু শিখতে তো দোষের কিছু নাই। তাই লুকিয়ে হলেও এই খেলাটা শিখেই আমরা বনে ফিরতে চাই। আর এজন্য তোমাদের সহযোগিতা আমাদের খুবই দরকার। তোমরাই মাঠে থেকে বা মাঠের পাশে গাছের ডালে বসে সহজে এই খেলা দেখতে পারবে ও শিখতে পারবে। ওই জাদুর বাক্স থাকা ঘরের বারান্দায় বসেও রাতের বেলা লুকিয়ে এই খেলা দেখে শিখতে পারবে। আর আমাদের শেখাতে পারবে। আমরা বনে ফিরে অন্য শিয়ালদের এই খেলা শিখিয়ে তারপর অন্যান্য প্রাণীদেরও শেখাব। শেষে এই খেলার মাধ্যমেই সুন্দর বনের রাজা কোন প্রাণী হবে, তা নির্ধারণের ব্যবস্থা করব।

ময়নাটি বললÑ বেশ! রক্তপাতহীনভাবে রাজা নির্ধারণের জন্য এই খেলাটা আমরা শিখে তোমাদের শেখাব। শত হলেও বনের প্রতি আমাদেরও তো কিছু দায়িত্ব আছে।

প্রথম শিয়ালের মাথায় হঠাৎ করে একটা প্রশ্ন আসল। সে দ্বিতীয় শিয়ালকে উদ্দেশ করে প্রশ্নটা করলÑ আচ্ছা, মানুষেরাও কী রক্তপাতহীনভাবে রাজা নির্বাচনের জন্য ক্রিকেট খেলে?

দ্বিতীয় শিয়াল বললÑ তাতো জানি না। তবে মানুষেরাও যদি রাজা নির্ধারণের জন্য ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা করে, তাহলে তারা আমাদের মতোই বুদ্ধিমানের কাজ করবে। রক্তপাতহীনভাবে রাজা নির্ধারণের জন্য এরচেয়ে ভালো ব্যবস্থা আর থাকতেই পারে না।

প্রথম শিয়াল ময়নাদের উদ্দেশে এবার বলল, তোমরা কী এখন আবার যাবে জাদুর বাক্সে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে কিনা, দেখে আসতে?

ময়নারা একত্রেই বলল, বেশ যাচ্ছি।

প্রথম শিয়ালটি বলল, তবে সাবধানে লুকিয়ে ঘরের বাইরে থেকে দেখবে। জাদুর বাক্সের ভেতরের মানুষেরাও যেন তোমাদের না দেখে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে।

ময়নারা বলল, আমাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। আমাদের দিকে কেউ বন্দুক তাক করলেও আমরা মুহূর্তে উড়াল দিয়ে সরে পড়তে পারব। তাছাড়া বারান্দার অন্ধকার থেকে খেলা দেখি বলে আমাদেরকে ঘরের মানুষ, জাদুর বাক্সের মানুষ কেউই দেখতে পারে না। দেখতে পেলেও ধরতে পারবে না।

ময়নারা শিয়ালদের আশ্বস্ত করে সেই দোতলা বাড়িতে গেল। এরপর মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখতে লাগল ও শিখতে থাকল। দুই ঘণ্টার মতো গভীর মনোযোগ সহকারে খেলা দেখে তারা বুঝল, লাল রঙের যে বস্তুটা একজন মানুষ ছুড়ে মারে, তার নাম হচ্ছে বল, চওড়া কাঠটার নাম হচ্ছে ব্যাট। তিনটা লম্বা কাঠের নাম হচ্ছে স্টাম্প। স্টাম্পের ওপর ছোট দুই টুকরা কাঠের নাম বেল। তিনটা স্টাম্পকে আবার বলা হয় উইকেট। যে বল ছুড়ে মারে, তাকে বলা হয় বোলার। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে যে বোলারের করা বল ধরে, তাকে বলা হয় উইকেটকিপার। যে ব্যাট দিয়ে বল পেটায়, তাকে বলা হয় ব্যাটসম্যান। মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের বলা হয় ফিল্ডার। যে জায়গায় বল ছুড়ে মারা হয়, সে জায়গাকে বলা হয় পিচ। ব্যাটসম্যানেরা বল পিটিয়ে দুজনের মধ্যে একবার জায়গা বদলালে এক রান হয়। দুইবার জায়গা বদলালে দুই রান হয়। তিনবার জায়গা বদলালে তিন রান হয়। আবার বল যদি মাঠের চারপাশে গোল হয়ে থাকা রশির ভেতরে পড়ে রশির বাইরে চলে যায় তবে হয় চার রান। বল যদি ব্যাটের আঘাতে হাওয়ায় ভেসে রশির বাইরে চলে যায়, তবে হয় ছয় রান। আবার বল যদি বোলারের হাত থেকে ছুড়ে মারার পর উইকেটের কোনো স্টাম্পে আঘাত করে, তবে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায়। একে বলা হয় বোল্ড আউট। আর বল যদি ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লেগে কোনো ফিল্ডারের হাতের মুঠোয় চলে যায়, তাহলেও সেই ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায়। একে বলা হয় কট-আউট। বল যদি ব্যাটসম্যানকে ফাঁকি দিয়ে উইকেটকিপারের হাতে চলে যায়, আর ব্যাটসম্যান যদি তখন সাদা দাগের ভেতর না থাকেÑ যাকে ক্রিজ বলা হয়, তবে উইকেটকিপার বলসহ উইকেটে হাত ছোঁয়ালে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায়। একে স্টাম্প আউট বলে। বল যদি ব্যাটসম্যানের ব্যাটে না লেগে উইকেট বরাবর পায়ে লাগে, তাহলেও মাঝে মাঝে ব্যাটসম্যান আউট হয়Ñ যদি আম্পায়ার মনে করেন বলটি তার পায়ে না লাগলে উইকেটে লাগত। এমন ধরনের আউট হলে আম্পায়ার তার কাঁধের ওপরে হাত তুলে এক আঙ্গুল দেখায়। আবার রান নিতে গিয়ে যদি স্টাম্পের কাছে সাদা দাগের ভেতর ব্যাটসম্যান বা তার হাতে ধরা ব্যাট না পৌঁছাতে পারে, আর এর মধ্যেই ফিল্ডারদের কেউ সেই পাশের স্টাম্প ভেঙে দিতে পারে, তাহলেও ব্যাটসম্যান আউট হয়। একে ‘রান আউট’ বলা হয়। ময়না দুটি খেলা দেখা অবস্থাতেই হলুদ রঙের পোশাকের সাতজন ব্যাটসম্যান আউট হয়। কিন্তু তারপরও যে দুজন হলুদ রঙের পোশাক পরা ব্যাটসম্যান মাঠে ছিল, তাদের একজন বোলারের একটা বল মাঠের রশির বাইরে পাঠিয়ে ব্যাটকে শূন্যে নাড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগল। অপর ব্যাটসম্যানও খুশিতে তাকে জড়িয়ে ধরল। ময়নারা বুঝল, এই খেলায় হলুদ পোশাক পরারাই জিতেছে। জাদুর বাক্সে থেকে একজন মানুষ বলছিল, অস্ট্রেলিয়া উইন বাই থ্রি উইকেটস। ময়নারা বুঝল, জয়ী দলের নাম অস্ট্রেলিয়া। তারা ইংল্যান্ডকে তিন উইকেটে পরাজিত করেছে। কীভাবে তিন উইকেটে পরাজিত করেছে, তা ভালো করে বোঝার চেষ্টা করল। খেলা শেষে খেলার বিশ্লেষণ করা দুজন মানুষের কথা শুনে বুঝল, ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ২৬০ রান করেছিল ৫০ ওভারে। অস্ট্রেলিয়া ৪৯ ওভার ২ বলে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান করেছে। তাই তারা ৩ উইকেটে জিতেছে। অথচ পাঁচ রানের মাথায় তাদের প্রথম উইকেট পড়েছিল। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৬০ রানের পার্টনারশিপ তাদের জয়ের পথ সহজ করে দেয়। জাদুর বাক্সের ভেতরের দুজন মানুষের ইংরেজিতে বলা কথাগুলো ময়নারা সহজেই বুঝেছিল। তবে জাদুর বাক্সকে মানুষেরা কী নামে ডাকে, তা দুই ঘণ্টা ধরে জানতে ও বুঝতে না পেরে ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছিল। শেষ পর্যন্ত তাও তারা জানতে পারে। ঘরের মেয়ে মানুষটি পুরুষ মানুষকে বলে, তোমার খেলা শেষ হয়েছে, এবার টেলিভিশন বন্ধ কর। পুরুষ মানুষটি মেয়ে মানুষের কথা শুনে জাদুর বাক্সটির নিচের দিকের একটা জায়গায় একটা আঙ্গুল রাখলে তা বন্ধ হয়ে যায়। তাতে আর কোনো মানুষ বা অন্য প্রাণী দেখা যায় না। এতে ময়না দুটি বুঝে নেয়, জাদুর বাক্সের নাম তবে টেলিভিশন হবে।



তিন



শিয়ালদের কাছে ফিরে গিয়ে তারা জাদুর বাক্সের নাম এবং ক্রিকেট খেলা সম্বন্ধে যা বুঝেছে তা বলে। এতে শিয়ালরা খুবই উৎফুল্ল হয়Ñ একদিনেই ক্রিকেট খেলার অনেক কিছু জেনেছে বলে। তবে তারা ক্রিকেট খেলা আরো ভালো করে বোঝার জন্য পরদিন মাঠে গিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে খেলা দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। ময়নারা এই খেলার কতটুকু বুঝেছে, আর ময়নাদের কথা থেকে তারা খেলার কতটুকু বুঝেছে, তা যাচাই করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। রাতে ঘুমিয়ে সকালে ময়নারা শিয়ালদের বলল, তারা মানুষের এলাকাগুলো আরো ঘুরে দেখতে চায়। শিয়ালেরা সম্মতি দিলে ময়না দুটি ঘুরতে ঘুরতে পুরো শ্যামনগর এলাকাই মুখস্ত করে ফেলে। তারা বিশেষ করে খুঁজে দেখে একতলা কোনো বাসায় টেলিভিশন আছে কিনা এবং সেই টেলিভিশন শিয়ালেরা ঘরের বাইরে থেকে জানালা দিয়ে নিরাপদে দেখার ব্যবস্থা আছে কিনা। খুঁজতে খুঁজতে তারা পাঁচটি ঘর পেল যেসব ঘরের বাহির থেকে নিরাপদে রাতের বেলা টেলিভিশন দেখা যাবে। ময়নারা ঠিক করল, রাতের বেলা অন্ধকারে বসে যদি শিয়ালদের খেলা দেখিয়ে সাথে সাথে বুঝিয়ে দেয়া যায়, তবে শিয়ালরা তাড়াতাড়ি এই খেলা শিখে নিতে পারবে।

ঘুরাঘুরি শেষে ময়না দুটি যখন শিয়ালদের কাছে ফিরে আসছিল, তখন এক মাঠে কিছু ছেলেকে ক্রিকেট খেলতে দেখল। তারাও টেলিভিশনের মানুষদের মতো রঙিন পোশাক পরেছে। একদল হলুদ প্যান্ট লাল গেঞ্জি, আরেক দল সবুজ প্যান্ট সবুজ গেঞ্জি। মাঠের চারদিকে চিকন চিকন বাঁশে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনি কাপড় বেঁধে দেয়া হয়েছে। ময়না দুটি তা দেখে শিয়ালদের কাছে গিয়ে ওদের নিয়ে সেই মাঠে হাজির হলো। দুপুরবেলা বলে একপাশে খেলা দেখার কোনো লোক ছিল না। ময়না দুটি শিয়াল দুটির পিঠে বসে সেই পাশ থেকে খেলা দেখতে লাগল। আর শিয়ালদের সাথে-সাথে বুঝিয়ে দিতে লাগল কীভাবে রান হচ্ছে, কীভাবে আউট হচ্ছে। তবে আম্পায়ার কেন এক হাত ডান পাশে তুলে, এরপর মাথার ওপর কেন হাত ঘুরায়, আবার মাঝে মাঝে কেন দুই হাত দুই পাশে তোলে, শিয়ালদের এসব প্রশ্নের জবাব বোঝার জন্য ময়নাদের একটি একবার মাঠের ছেলেদের কাছাকাছি, আরেকবার একটা কালো বোর্ডে একজন বারবার সংখ্যা বদল করছে, তার কাজ দেখতে লাগল। এতে সে বুঝতে পারল, আম্পায়ার একপাশে হাত তুললেও রান বাড়ে, দুইপাশে হাত তুললেও রান বাড়ে। তবে কত রান করে বাড়ে, তা বুঝল না। আবার আম্পায়ার মাঝে মাঝে ডান পা-টা একটু তুলে হাঁটুতে হাত রাখে কেন, তাও বুঝল না। ময়নারা মনে মনে ভাবল, ক্রিকেট খেলাটা বোঝা বেশ কঠিনই। ক্রিকেট খেলায় কত নিয়ম আছে, আর সব শিখতে কয়দিন লাগবে, তা ভেবেও তারা মনে মনে হয়রান হলো। তবে শিয়ালদেরকে ক্রিকেট খেলা বোঝানোর জন্য তারা তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখার সংকল্পে অটল থাকল। বিকেল পর্যন্ত ছেলেদের খেলা দেখে ময়নারা বুঝল, ঈশ্বরিপুর একাদশ আতুলিয়া একাদশকে ২৬ রানে পরাজিত করেছে। প্রথমে ব্যাট করে ঈশ্বরিপুর একাদশ ৫০ ওভারে করে ২১৬ রান। আর পরে ব্যাট করে আতুলিয়া একাদশ করে ১৯০ রান। তারা ৪৪ ওভার খেলেই সকলে আউট হয়ে যায়। ময়নারা দেখেছিল অস্ট্রেলিয়া দল ২ উইকেটে জিতেছে। আজ তারা দেখল ঈশ্বরিপুর একাদশ ২৬ রানে জিতেছে। এতে তারা বুঝল যে, ক্রিকেট খেলায় দুইভাবে জয় নির্ধারিত হয়। উইকেট দিয়ে এবং রান দিয়ে।

রাতে তারা আবার খেলা দেখতে বের হলো একসাথে। ময়নাদের দেখে আসা পাঁচটি ঘরের প্রথম দুটি ঘরে তারা টেলিভিশনে খেলা হতে দেখল না। একটা ঘরের টেলিভিশনে একজন মহিলাকে খবর পড়তে দেখল। এরপর আরেকটা ঘরের টেলিভিশনে একজন পুরুষ ও একজন মহিলাকে গান গাইতে ও নাচতে দেখল। তৃতীয় একটা ঘরে গিয়ে ক্রিকেট খেলা হতে দেখল। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে খেলা হচ্ছে। পাকিস্তান ইতিমধ্যে ২৫ ওভার খেলে করেছে ১২৬ রান। উইকেট হারিয়েছে ৪টি। পাকিস্তান দলের সালমান ভাট করেছে ৪৩ রান। শহীদ আফ্রিদি করেছে ৩৭ রান। অতিরিক্ত হয়েছে ১৬ রান। অতিরিক্ত রান কীভাবে হয়, তা ময়না দুটি ভালো করে বোঝেনি এখনো। এক হাত ডানে মেললে এবং দুই হাত দুই পাশে মেললে অতিরিক্ত রান হয় তা বুঝেছে, কিন্তু কত রান করে অতিরিক্ত হয়, তা বোঝেনি। পাকিস্তানের ইনিংসের বাকি ২৫ ওভার মনোযোগ সহকারে দেখে ময়না দুটি বোঝে যে, বোলার আম্পায়ারকে অতিক্রম করে সাদা দাগের পরে পা ফেললে ‘নো বল’ হয়। তাতে অতিরিক্ত ১ রান বাড়ে ব্যাটসম্যানের দলের। আর বোলারকে একটা বল বেশি করতে হয় সেজন্য। এই বলে ব্যাটসম্যান ‘ফ্রি হিট’ করার সুযোগ পায়। ‘ফ্রি হিট’ বলে ব্যাটসম্যান বোল্ড হলেও আউট হবে না, কট হলেও আউট হবে না। কেবল সেই বলে শট খেলে বা লেগ-বাই হিসেবে দৌড়ে রান নিতে গেলেই রান আউট হতে পারে। এমনিতে প্রতি ওভারে বোলারকে ছয়বার বল ছুড়ে মারতে হয়। আবার বোলারের ছোড়া বল মাটিতে পড়ে যদি ব্যাটসম্যানের লেগ সাইডের বাইরে দিয়ে পেছনে যায়, যাতে ব্যাটসম্যান ব্যাট ছোঁয়াতে ব্যর্থ হয়, তবে সেটি ‘ওয়াইড’ বল হয়। আবার প্রতি ওভারের একটি বল কাঁধের ওপর দিয়ে যাবার ইশারা আম্পায়ার করলে তারপর কোনো বল যদি ফের কাঁধের ওপর দিয়ে যায়, তবে সেটি ‘ওয়াইড বল’ হয়। প্রতি ওভারে বোলার মাত্র একবার ব্যাটসম্যানের কাঁধের ওপর দিয়ে বল পাঠাতে পারবে, তবে তা মাটিতে পড়ে যেতে হবে। সরাসরি বল কাঁধের ওপর দিয়ে গেলে সেটি ‘নো বল’ হয়। আর এমন ‘নো বল’ একজন বোলার দু-বার করলে তাকে আর বল করতে দেয়া হয় না। ‘নো বল’ হলে আম্পায়ার তার ডান হাত কাঁধ বরাবর শূন্যে তুলে ‘নো বলের’ ইশারা দেয়। এমন ‘নো বলে’ ব্যাটসম্যান ব্যাট চালিয়ে কট হলেও আউট দেয়া হয় না। এজন্যও বাড়তি একটা বল করতে হয় বোলারকে। আবার বোলার যদি অফ স্টাম্প থেকে কিছুটা দূর দিয়ে বল ছুড়ে, তা হলেও একটি অতিরিক্ত রান হয়। একেও ‘ওয়াইড বল’ বলে। ‘ওয়াইড বল’ ছোড়ার জন্যও বোলারকে একটি বল বেশি করতে হয়। আবার ওয়াইড বল যদি উইকেট কিপার ধরতে না পারে এবং সেই বল যদি উইকেট কিপারের পেছন দিয়ে মাঠের সীমানার বাইরে চলে যায়, তবে মোট পাঁচ রান হয়। এজন্য বোলারকে অতিরিক্ত সেই একটি বলই করতে হয়, এর বেশি নয়। ‘ওয়াইড বল’ হলে আম্পায়ার তার দুই পাশে দুই হাত শূন্যে তুলে ‘ওয়াইড বলের’ ইশারা করে। আবার বোলারের ছোড়া বল যদি ব্যাটসম্যানের পায়ে বা গায়ে লেগে ফিল্ডারের আওতার বাইরে চলে যায় এবং ব্যাটসম্যানেরা সেই সুযোগে দৌড়ে যতবার জায়গা বদল করতে পারে, তত রান দলের মোট রানের সঙ্গে যোগ হয়। এই অতিরিক্ত রানকে ‘লেগবাই রান’ বলে। এজন্য বোলারকে অতিরিক্ত বল করতে হয় না। এ ধরনের অতিরিক্ত রান হলে আম্পায়ার এক পা একটু তুলে হাঁটুতে হাত রেখে ‘লেগবাই রানের’ ইশারা দেয়। আবার বল যদি ব্যাটসম্যানের ব্যাটে বা শরীরে না লেগে উইকেটকিপারের পাশ দিয়ে চলে যায় এবং তা ফিল্ডার মাঠ থেকে কুড়িয়ে উইকেটকিপার বা বোলারের কাছে পাঠানোর আগে দুই ব্যাটসম্যান যতবার জায়গা পরিবর্তন করতে পারে, তত রান হয়। যদি বলটি সীমানা ছাড়িয়ে যায়, তাতে চার রান অতিরিক্ত হয়। এ ধরনের রানকে ‘বাই রান’ বলে। এ ধরনের অতিরিক্ত রান হলে আম্পায়ার হাতের মুঠো খুলে এক হাত মাথার ওপরে তোলে। ময়নারা আরো বুঝল, বল ব্যাটসম্যানের ব্যাটের আঘাতে মাটি কামড়ে সীমানার বাইরে চলে গেলে তাকে ‘বাউন্ডারি’ হওয়া বলে। ‘বাউন্ডারি’ হলে চার রান হয়। আর বল ব্যাটসম্যানের ব্যাটের আঘাতে হাওয়ায় উড়ে সীমানার বাইরে চলে গেলে তাকে বলে ‘ওভার বাউন্ডারি’। ‘ওভার বাউন্ডারি’ হলে ছয় রান হয়।

ময়নারা এসব বুঝে শিয়ালদেরও বুঝিয়ে দিল খেলার ৪৫ মিনিট বিরতির সময়। শিয়ালরাও লুকিয়ে লুকিয়ে ভয়ে ভয়ে কিছুক্ষণ খেলা দেখার পর যখন কাউকে টেলিভিশন থেকে তাদের দিকে বন্দুক তাক করতে দেখল না, তখন সাহস করে বাকি সময় খেলা দেখে ময়নাদের তালিম অনুযায়ী খেলা শেখার বা বোঝার চেষ্টা করল। বুঝলও তারা ময়নারা যা শিখিয়েছিল, তার সবকিছু। ভারতের পুরো ৫০ ওভার খেলা দেখে তারা বুঝল, ভারতের ব্যাটসম্যানেরা পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের করা ২৮৩ রানের চেয়ে ১৬ রান কম করেছে। তাই ১৬ রানে হেরেছে ভারত। ময়না ও শিয়ালেরা ভারতের পুরো ৫০ ওভারের ব্যাটিং দেখে আরো বুঝেছে, উইকেটকিপারের পাশে যে দু-তিনজন ফিল্ডার দাঁড়িয়ে থাকে, তাদেরকে ‘¬িস্লপ ফিল্ডার’ বলা হয়। উইকেটকিপারের পাশের জনকে ‘ফার্স্ট স্লি¬প ফিল্ডার’, তার পাশের জনকে ‘সেকেন্ড স্লি¬প ফিল্ডার’, তার পাশের জনকে ‘থার্ড স্লি¬প ফিল্ডার’ বলা হয়। ¯ি¬প ফিল্ডারদের পেছনে মাঠের কোনাকুনি সীমানা বরাবর জায়গাকে ‘থার্ডম্যান’ বলা হয়। উইকেটকিপারের পেছনে অপর পাশের সীমানা বরাবর জায়গাকে ‘ডিপ ফাইন লেগ’ বলা হয়। তার বাম পাশে মাঠের কোণাকুণি জায়গাকে ‘লঙ লেগ’ বলা হয়। আর উইকেটকিপারের ঠিক পেছনে লঙ লেগ বরাবর কোণাকুণি জায়গাকে ‘শর্ট ফাইন লেগ’ বলা হয়। উইকেটকিপারের সামনে থাকা উইকেটের তিনটি স্টাম্পের ডান পাশেরটির নাম ‘অফ স্টাম্প’। মধ্যেরটির নাম ‘মিডল স্টাম্প’, বাম পাশেরটির নাম ‘লেগ স্টাম্প’। অফ স্টাম্পের সামনে যে ফিল্ডারটি দাঁড়িয়ে থাকে, সেই জায়গাটির নাম ‘শিলি মিড অফ’। অফ স্টাম্পের ডান পাশের সম্মুখভাগের পুরো এলাকাকে বলা হয় ‘অফসাইড’। আর লেগ স্ট্যাম্পের বাম পাশের সম্মুখভাগের পুরো এলাকাকে বলা হয় ‘অনসাইড’। আবার শর্ট ফাইন লেগ, ডিপ ফাইন লেগ ও লঙ লেগ এলাকাকে বলা হয় ‘লেগসাইড’। লেগ স্টাম্পের সম্মুখভাগে বামে ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি যে ফিল্ডারটি দাঁড়ায়, সেই এলাকাকে বলে ‘শিলি মিড অন’। লেগ স্টাম্পের বামে সমান্তরাল রেখায় কিছুটা দূরে যে ফিল্ডারটি দাঁড়ায় সেই এলাকাকে বলে ‘স্কোয়ার লেগ’। অফ স্টাম্পের প্রায় সমান্তরালে কিছুটা ডানে যে ফিল্ডারটি দাঁড়ায়, সেই জায়গাকে ‘গালি’ বলা হয়। অফ স্টাম্পের সমান্তরালে ডানে সীমানা বরাবর যে ফিল্ডারটি দাঁড়ায়, সেই জায়গাকে বলা হয় ‘ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট’। শিলি মিড অফের পেছনে যে ফিল্ডারটি দাঁড়ায়, সেই এলাকাকে বলা হয় ‘কভার’। কভার ফিল্ডারের আরো পেছনে যে ফিল্ডারটি দাঁড়ায়, সেই জায়গাকে বলা হয় ‘এক্সট্রা কভার’। এক্সট্রা কভারের পেছনের জায়গাকে বলা হয় ‘শর্ট এক্সট্রা কভার’। নন স্ট্রাইকিং ব্যাটসম্যানের ডান পাশে একটু দূরে যে ফিল্ডারটি দাঁড়ায়, সেই জায়গাকে বলা হয় ‘মিড অন’। মিড অনের পেছনে অনসাইডে সীমানা বরাবর যে ফিল্ডারটি দাঁড়ায়, সেই জায়গাকে বলা হয় ‘লঙ অন’। শিলি মিড অন ও মিড অনের সমান্তরালে সীমানা বরাবর জায়গাকে বলা হয় ‘মিড উইকেট’। আবার নন স্ট্রাইকিং ব্যাটসম্যানের বাম পাশে একটু দূরে যে ফিল্ডারটি দাঁড়ায় সেই জায়গাকে বলা হয় ‘মিড অফ’। মিড অফের পেছনে অফসাইডে কোণাকুণি সীমানা বরাবর এলাকাকে বলা হয় ‘লঙ অফ’। ব্যাটসম্যানেরা যে জায়গাটাতে দাঁড়ায়, সে জায়গাকে বলা হয় ‘ক্রিজ’। ব্যাটসম্যানের দলকে বলা হয় ‘ব্যাটিং সাইড’। আর ফিল্ডারদের দলকে বলা হয় ‘ফিল্ডিং সাইড’। এক দলের নির্ধারিত ওভারের খেলাকে বলা হয় ‘এক ইনিংস’। উভয় দলের ইনিংস শেষে যে খেলোয়াড়টি সবচেয়ে ভালো খেলেছে বলে বিবেচিত হয়, তাকে বলা হয় ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’। পাকিস্তান-ভারতের খেলা দেখে ময়না ও শিয়ালেরা এ বিষয়গুলো জানলেও তারা আরো ভালো করে এ বিষয়গুলো রপ্ত করার জন্য পরদিন বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা, তারপরের দিন কেনিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তারপরের দিন শ্রীলঙ্কা-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দেখে তারপর সুন্দরবনে ফিরে এলো।



চার



সুন্দরবনে ফিরে শিয়ালেরা শুনল, বনে তুলকালাম সব কাণ্ড ঘটে চলেছে। ইতিমধ্যেই গণ্ডার, মহিষ ও হাতির দল বাঘ ও সিংহদের জানিয়ে দিয়েছে, বনের রাজা নির্ধারণের লড়াইয়ে তারাও শামিল হবে। প্রথমে মহিষের দল বাঘদের একথা বললে বাঘেরা হুঙ্কার দিয়ে বলে, তোমাদেরকে আমরা ঘাড় মটকে খাই, আর তোমরা আমাদের সাথে লড়াই করে রাজা হতে চাও? খুবই হাস্যকর কথা বলছ তোমরা! জবাবে মহিষের দলনেতা বলে, আমাদের মধ্যে যারা দুর্বল, তাদের ঘাড় মটকে খেতে পারো বটে। তবে আমরা যখন লড়াইয়ে নামব, তখন কেবল সবলদের মোকাবেলাই তোমাদের করতে হবে। আমরা মনে করি, আমাদের সবল ১১ জনের সঙ্গে তোমাদের সবল ১১ জন ঠিকই পরাজিত হবে। পরে মহিষের দল সিংহের দলকে এ কথা বলতে গেলে সেখানে তুমুল বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। সিংহের দল এতে ভীষণ অপমানিত বোধ করে। তারা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকে, সারা দুনিয়ায় সিংহই হচ্ছে বনের রাজা। সুন্দরবনে বাঘেরা সংখ্যায় বেশি বলে তারা সিংহকে ড্যাম কেয়ার করে। তাই বলে মহিষের গর্জনও আমাদের শুনতে হবে! মহিষেরাও সিংহকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে চায়! এত বড় স্পর্ধা মহিষের! অতি উত্তেজিত হয়ে সিংহদের দলনেতা মহিষদের দলনেতার সঙ্গে তাৎক্ষণিক লড়াই শুরু করলে মহিষদের দলনেতা আহত হয়। এতে দুই দলের মধ্যে তাৎক্ষণিক লড়াই শুরু হলে গণ্ডারের দল এসে মহিষের পক্ষ নেয়। তারাও বলেÑ উš§ুক্ত লড়াইয়ের মাধ্যমেই বনের রাজা নির্ধারিত হতে হবে। কেবল সিংহ ও বাঘই বংশ পরম্পরায় বনের রাজত্ব করবে, তা হতে পারে না। নতুন শক্তির অভ্যুদয় ঘটাতে হবে। যদি বাঘ ও সিংহের বনের রাজত্ব করার যোগ্যতা থাকে, তবে লড়াই করেই তারা যোগ্যতা প্রমাণ করুক। কিন্তু রাজার ছেলেই রাজা হবেÑ এই নিয়ম আর চলতে দেয়া হবে না। অন্যান্য প্রাণীরও গণতান্ত্রিক অধিকার আছে রাজা হবার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার। সেই গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। যারা লড়াই করতে চায়, সকলের সঙ্গেই লড়াই করতে হবে।

গণ্ডারদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ঠিক হয় আগামী এক মাসের মধ্যেই সুন্দরবনে রাজা হবার লড়াই হবে। আর সেই লড়াইয়ে যেসব প্রাণী শামিল হতে চায়, তাদেরকে তাদের নাম পাঠাতে হবে সিংহদের দলনেতার কাছে। সিংহদের দলনেতাই এই লড়াইয়ের আয়োজন করবে।

শিয়াল দুটি বনে ফিরে শুনল, ইতিমধ্যেই বনের রাজা হবার প্রতিযোগিতায় শামিল হবার জন্য বাঘ ও সিংহ ছাড়াও গণ্ডার, হাতি, মহিষ, চিতাবাঘ ও বনমানুষ তাদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছে সিংহ দলনেতার কাছে। শিয়াল. ঘোড়া, ভাল্লুক, খরগোশ, ক্যাঙ্গারু ও জেবরার দলের বনের রাজা হবার ইচ্ছা থাকলেও বাঘ, সিংহ, মহিষ, গণ্ডার ও হাতিদের সাথে লড়াইয়ে তারা পারবে না বুঝে সেই পথে আর এগোয়নি। একথা শুনে শিয়ালেরা অন্য শিয়ালদের বললÑ বনের রাজা হবার লড়াইয়ে তাদেরও শামিল হবার সুযোগ আছে। শিয়ালেরা ময়নাদের সঙ্গে নিয়ে পাঁচদিন ধরে ক্রিকেট খেলা শেখার বিষয়টি সকল শিয়ালকে খুলে বলল। তাদের কথা শেষ হতেই এক শিয়াল বলল, কিন্তু আমরা ব্যাট-বল পাব কোথায়? পিচ বানাবো কীভাবে? উইকেট পাব কোথায়? যার ওপর বেল রাখা যায়। আরেক শিয়াল বলল, বানর এ কাজে আমাদের সহায়তা করতে পারে। বানর গিয়ে দোকান থেকে ব্যাট-বল-স্টাম্প তুলে নিয়ে আসতে পারে। আরেক শিয়াল বলল, খুব ভালো বুদ্ধি বের করেছ। বানরকে সঙ্গে নিয়ে ক্রিকেট খেলা শেখা দু-শিয়ালই ব্যাট-বল-স্টাম্প নিয়ে আসার জন্য গেলে ভালো হবে।

ক্রিকেট খেলা শেখা প্রথম শিয়াল বলল, কেবল আমরা দুজন গেলে চলবে না। অন্তত ১৪টা প্রাণীর দলের ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম আনার জন্য ১৪টা বানর, ১৪টা ক্যাঙ্গারু ও ১৪টা শিয়ালকে যেতে হবে।

আগের শিয়ালটি বললÑ ১৪টা প্রাণীর দলের সরঞ্জাম আনার কথা এখনই ভাবতে হবে না। আগে শিয়ালদের জন্যই নিয়ে আসো। শিয়ালরা প্রথমে খেলা শিখে নিলে এবং শিয়ালদের দেখে অন্য প্রাণীরা এই খেলা শিখতে আগ্রহী হলে তারপর অন্য প্রাণীদের জন্য সরঞ্জাম আনা যাবে।

ক্রিকেট খেলা শেখা প্রথম শিয়ালÑ যে টেলিভিশনে খেলা দেখে নিজের নাম রেখেছে আন্ডু, সে বললÑ যদি আমাদের খেলা দেখে প্রথমদিনই বাঘ বা সিংহ কারো এই খেলা পছন্দ হয়ে যায়, তবে তারা আমাদের সরঞ্জাম ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। তখন আবার মানুষের বসতিতে গিয়ে এই সরঞ্জাম আনা কঠিন হবে। কারণ, মানুষেরা তখন সাবধান হয়ে যাবে। তাই সরঞ্জাম সব একদিনেই নিয়ে আসা ভালো হবে।

ক্রিকেট খেলা শেখা দ্বিতীয় শিয়ালÑ যে নিজের নাম পছন্দ করেছে পিডাসেন, সে বললÑ তোমার চিন্তাই সঠিক। ১৪টা বানর, ১৪টা ক্যাঙ্গারু ও ১৪টা শিয়াল একসঙ্গে গিয়ে একদিনেই সব সরঞ্জাম নিয়ে আসতে পারলে ভালো হবে। ক্যাঙ্গারুদের পেটের থলেতে বল, বেল, গ্ল¬াভস এসব ছোটখাট জিনিস ঢুকিয়ে দিলে তারা সহজে তা নিয়ে আসতে পারবে। আর শিয়াল ও বানর ব্যাট, স্টাম্প এগুলো কামড়ে ধরে নিয়ে আসবে।

আন্ডু বললÑ আমরা তবে টেনিস বলই আনব। টেনিস বল দিয়েই আমরা খেলব, মাঠে খেলতে দেখা ছেলেদের মতো।



পরদিন ১৪টা বানর, ১৪টা শিয়াল আর ১৪টা ক্যাঙ্গারু মিলে রওনা দিল মানুষের বসতির উদ্দেশ্যে। শ্যামনগর গিয়ে তারা ক্রিকেট খেলার সামগ্রী বেচে এমন একটা দোকানে একসাথে ঢুকে পড়ল। একসাথে এত প্রাণীকে আসতে দেখে দোকানের কর্মচারী ও মালিক ভড়কে গেল। তারা ভয়ে টেবিলের নিচে লুকালো। আন্ডু আর পিডাসেন বাকি শিয়াল ও বানরদের দেখিয়ে দিল কী কী সরঞ্জাম তুলে নিতে হবে। শিয়ালেরা কেউ মুখে স্টাম্প কামড়ে ধরল কেউ কামড়ে ধরল ব্যাট, বানর দল দুই হাতে বল, বেল, গ্লাভস তুলে কিছু ক্যাঙ্গারুদের পেটের ওপরের থলেতে ঢোকালো আর কিছু নিজেদের হাতে রাখল। আন্ডু এরইমধ্যে ক্যাশ বাক্স থেকে মুখভর্তি কয়েন নিয়ে দুই ক্যাঙ্গারুর থলেতে ঢুকিয়ে দিয়ে মুখে ব্যাট কামড়ে ধরে ছুটল বনের দিকে। অন্য শিয়াল, বানর ও ক্যাঙ্গারুও তাকে অনুসরণ করে ছুটল। বনে ফিরে এলে তাদের দেখে অন্য শিয়াল, বানর ও ক্যাঙ্গারুরা ভীষণ আনন্দিত হয়ে উঠল। কারণ, তারা সফলভাবে ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম সংগ্রহ অভিযান শেষ করে ফিরে এসেছে।

আন্ডু ও পিডাসেন ক্রিকেট খেলা শিখতে আগ্রহী অন্য শিয়ালদেরও একে একে নাম ঠিক করে দিল। বলল, এই খেলা খেলতে হলে মানুষের মতো একেকজনের একেক নাম হতে হবে। কারণ, বোলিং কে কত ওভার করবে বা ব্যাটসম্যান কে কত রান করে, ফিল্ডিং করতে গিয়ে কার বলে কে ক্যাচ ধরে, এসব রেকর্ড করে রাখতে হবে। তাই যারা ক্রিকেট খেলবে, তাদের প্রত্যেকের একটা করে নাম থাকতে হবে। আন্ডু বলল, প্রত্যেক দলের একজন করে অধিনায়ক থাকতে হয়। অধিনায়ক ফিল্ডিং সাজায় এবং টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করবে, না ফিল্ডিং করবেÑ সেই সিদ্ধান্ত নেয়। এসব আমি ভালো করতে পারব বলে শিয়াল দলের অধিনায়ক আমি হতে চাই, তোমরা যদি সমর্থন করো। পিডাসেন বলল, তুমিই অধিনায়ক হওÑ আমি সমর্থন করছি। অন্য শিয়ালেরা বলল, আমরাও সমর্থন করছি।



আন্ডু এরপর অন্য শিয়ালদের মধ্যে যারা ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী, তাদের নাম দিল একে একে। অবশ্য তার আগে কে কে ব্যাটিং করতে চায়, আর কে কে বোলিং করতে চায়, তা জেনে নিল। যারা ব্যাটিং করতে চায় তাদের নাম দিল ম্যাটিপর, ইংবেল, কলিবুদ, ইংগান, পিডাসেন ও জোনাটট। আর যারা বোলিং করতে চায় তাদের নাম দিল আন্ডাসন, আজঝাদ, গামছা আন, জেমওয়েল, তুইবাদ, টিমনান, লুকট ও মাইহাড্ডি।



পাঁচ



আন্ডু ও পিডাসেন পরদিন অন্যদের নিয়ে একটা খোলা জায়গায় গেল। সেই জায়গাটাকে খেলার মাঠ হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিল। মাঠের লম্বা লম্বা ঘাস ছোট করার জন্য আন্ডুর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। বনের গরু, ছাগল, ভেড়াকে একদিন এই খোলা জায়গায় ঘাস খেতে লাগিয়ে দিলে তারা ঘাস খেয়ে জায়গাটিকে ঠিকই খেলার উপযোগী মাঠ বানিয়ে দেবে। আন্ডু অন্য শিয়ালদের তার এই বুদ্ধির কথা জানালে অন্য শিয়ালেরা গিয়ে বনের সব গরু, ছাগল ও ভেড়াকে সেই জায়গায় নিয়ে এসে ঘাস খেতে লাগিয়ে দিল। দেখতে দেখতে সন্ধ্যার মধ্যেই মাঠের ঘাস পুরো সাফ। পরদিন আন্ডু মাঠের মাঝখানে ২২ গজ জায়গার ঘাস তুলে পিচ বানানোর জন্য বানর, ক্যাঙ্গারু ও শিয়ালদের লাগিয়ে দিল। সবাই মিলে ঘাস তুলে পিচ তৈরি করল। মাঠকে খেলার উপযুক্ত বানাল। এরপর আন্ডু দুই বানরের দ্বারা দুইপাশে তিনটি করে স্টাম্প বসিয়ে তার উপর বেল রেখে উইকেট সাজাল। ময়না দুটিকে আম্পায়ার হবার কথা বলল আন্ডু। ময়নারা এতে রাজি হলো। এরপর পিডাসেন বোলিং করতে গিয়ে দেখে বল ছোড়ার ক্ষমতা তার নেই। আর আন্ডু ব্যাটিং করতে গিয়ে বোঝে ব্যাট ধরার যোগ্যতা শিয়ালদের নেই। তাহলে গতকাল তারা দোকান থেকে ব্যাট ও বল তুলে আনল কেমন করে? আন্ডু ও পিডাসেন ভেবে দেখল, গতকাল শিয়ালেরা আসলে মুখে করে কেউ স্টাম্প কেউ ব্যাট কামড়ে এনেছে, আর বানরেরা ব্যাট, বল তুলে এনেছিল। আন্ডু ও পিডাসেন আরো বুঝল যে, তারা গত কয়দিন আসলে পণ্ডশ্রম করেছে। কারণ, বনের প্রাণীদের মধ্যে কেবল বানর ও বনমানুষ ছাড়া আর কারোরই ব্যাট ধরার ও বল ছোড়ার ক্ষমতা নাই। হাতিরা তাদের শুঁর দিয়ে ব্যাট ধরতে ও বল ছুড়তে পারলেও তাদের জন্যও ক্রিকেট খেলাটা খুবই কষ্টকর হবে। এতো কষ্ট করে হাতিরা ক্রিকেট খেলতে রাজি হবে বলে মনে করল না তারা। আর হাতিরা রাজি হলেইবা কী! বাঘ-সিংহই যদি এ খেলা না খেলতে পারে, তবে বনের রাজা নির্ধারণে এ খেলা কোনো কাজেই আসবে না। আন্ডু ও পিডাসেন ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। তাদের পরিশ্রম বৃথা যাওয়া ছাড়াও সবাই যখন জানতে পারবে যে, শিয়ালদের বনের রাজা হওয়ার পরিকল্পনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছেÑ শিয়ালেরা ব্যাট ধরতে ও বল ছুড়তে পারে না বলে, তখন সবাই এ নিয়ে হাসাহাসি করবে। বহু চিন্তাভাবনার পর অবশেষে আন্ডুর মাথায় এক বুদ্ধি এলো। ব্যাট ছাড়াই তো কেবল বল দিয়ে এই খেলা সকল প্রাণীর পক্ষেই খেলা সম্ভব! বোলিং করার জায়গা থেকে শিয়াল বা যেকোনো প্রাণী পা দিয়ে বলকে লাথি মারবে উইকেট লক্ষ্য করে। আর উইকেটের সামনে দাঁড়িয়ে শিয়াল বা অন্য যেকোনো প্রাণী বোলিং পয়েন্ট থেকে আসা বলকে লাথি মারবে বাউন্ডারির দিকে। এ সময় ফিল্ডিং করা প্রাণীরা বল ফিরিয়ে উইকেটে না লাগানো পর্যন্ত দুই শিয়াল বা যেকোনো প্রাণী দৌড়ে যত রান নিতে পারবে তত রান সেই দলের সংগ্রহে জমা পড়বে। তবে এক বলে ৬ রানের বেশি নেওয়া যাবে না। আর বল বাউন্ডারির বাইরে গেলে ৪ রানই পাবে ব্যাটিং পয়েন্টে দাঁড়ানো খেলোয়াড়ের দল। এছাড়া বোলিং পয়েন্ট থেকে বলে লাথি মারা বল যদি উইকেটে আঘাত করে, তবে ব্যাটিং পয়েন্টে থাকা খেলোয়াড় আউট হয়ে যাবে। আন্ডু পিডাসেনকে তার এই চিন্তার কথা জানায়। পিডাসেন আন্ডুর এই চিন্তাকে সমর্থন জানিয়ে বলল, চমৎকার চিন্তা এসেছে তোমার মাথায়। আমাদের পরিশ্রম তাহলে পণ্ড হয়নি। আমরা বনের রাজা হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করতে পারব। তবে ক্রিকেট খেলার আইন-কানুনগুলো আমাদের উপযোগী করে প্রয়োগ করতে হবে। আন্ডু বলল, সে নিয়ে ভাবার সময় আমরা অনেক পাব। চলো এখন যে চিন্তাটা মাথায় এসেছে, সে অনুযায়ী আমাদের মতো করে ক্রিকেট খেলা প্রাকটিস করি। পিডাসেন বলল, ঠিক বলেছ। আমি বোলিং পয়েন্ট থেকে বলে লাথি মারছি। তুমি ব্যাটিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে বলে শট মারবে। আর কে কোথায় দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করলে ভালো হবে, তা অন্য শিয়ালদের দেখিয়ে দাও। ময়নাদেরও বুঝিয়ে দাও বনের প্রাণীরা কী নিয়মে ক্রিকেট খেলবে। কারণ, প্রথম প্রথম আম্পায়ারিং-এর দায়িত্ব ময়নাদেরই পালন করতে হবে। আন্ডু পিডাসেনের কথামতো ময়নাদেরকে বুঝিয়ে দেয়Ñ কোন নিয়মে প্রাণীরা ক্রিকেট খেলবে। এরপর শিয়ালদের মধ্যে কে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করবে, তা ৯ শিয়ালকে বুঝিয়ে দিল। কীভাবে কোন খেলোয়াড় আউট হবে, তাও সংক্ষেপে তাদের বুঝিয়ে দিল আন্ডু। ৯ শিয়ালকে খেলাটা বুঝিয়ে দেয়ার পর পিডাসেন বোলিং পয়েন্টে বল রেখে উইকেট বরাবর লক্ষ্য করে পা দিয়ে বলে লাথি মারল। আন্ডু ব্যাটিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ছুটে আসা বলকে লাথি মেরে মিড অফের দিকে পাঠাল। মিড অফে থাকা ফিল্ডার সেই বলকে উইকেটের দিকে লাথি মেরে পাঠানোর আগে আন্ডু ও কলিবুদ মিলে ৩ রান সংগ্রহ করল। দর্শক হিসেবে মাঠের চারপাশে থাকা শিয়াল, বানর ও ক্যাঙ্গারুরা এতে ভীষণ উৎফুল্ল¬ হয়ে আনন্দধ্বনি করতে লাগল। পিডাসেন ওভারের পরের বলে লাথি মারার পর বল আন্ডুর পা-কে ফাঁকি দিয়ে উইকেটে আঘাত করে বেল ফেলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে আন্ডু আউট হবার আনন্দে পিডাসেনসহ মাঠে থাকা ১০ শিয়াল আনন্দধ্বনি করল। দর্শক শিয়াল, বানর ও ক্যাঙ্গারুরাও আনন্দধ্বনি করে উঠল। একসঙ্গে অনেক প্রাণীর আনন্দধ্বনি শুনে বনের অন্য প্রাণীরাও ঘটনা কিÑ তা বুঝতে সেই মাঠের দিকে রওনা দিল।

আন্ডু আউট হবার পর ম্যাটিপরকে ব্যাটিং পয়েন্টে দাঁড়াতে বলল পিডাসেন। ম্যাটিপর ব্যাটিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে পিডাসেনের পরবর্তী বল থেকে কোনো রান সংগ্রহ করতে পারল না। তার পরের বলে পিডাসেন বোলিং পয়েন্ট থেকে লাথি মারার পর বল অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে গেলে আম্পায়ার ময়না তার দুই ডানা দুই দিকে মেলে ওয়াইড বলের ইশারা দিল। প্রথম স্লিপে থাকা ফিল্ডার শিয়ালটি সেই বল ঠেকাতে না পারলে বল থার্ডম্যান সীমানায় চলে গেল। সেখান থেকে ফিল্ডার লাথি মেরে বল উইকেটকিপারের কাছে ফেরত পাঠাবার আগে ম্যাটিপর ও কলিবুদ মিলে দুই রান তুলল। ফলে এই ‘ওয়াইড বল’ থেকে তাদের সংগ্রহ হলো ৩ রান। পিডাসেনের পরের লাথি মারা বলে শট করতে ব্যর্থ হলো ম্যাটিপর। কিন্তু বলটি উইকেটকিপার পা দিয়ে থামিয়ে দেয়ায় দৌড়ে রান নেয়ার চেষ্টা করল না ম্যাটিপর ও কলিবুদ। পরের বলটি থেকেও ম্যাটিপর রান নিতে পারল না। তবে ওভারের শেষ বলে মজার কাণ্ড ঘটল। পিডাসেন বলে লাথি মারার পর ম্যাটিপর ব্যাটিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে সেই বলে লাথি মারলে বল ‘মিড অন’ সীমানায় গেল। সেখান থেকে ফিল্ডাররা বল লাথি মেরে ফেরত পাঠাতে গিয়ে এক শিয়াল ‘মিড অফে’ নিয়ে যায়। আরেক শিয়াল সেখান থেকে লাথি মেরে বলকে ‘লং লেগ’ অঞ্চলে পাঠায়। এই ফাঁকে কলিবুদ ও ম্যাটিপর মিলে দৌড়ে ৬ রান যোগ করল। তারা চাইলে আরো রান নিতে পারতো। কিন্তু যেহেতু নিয়ম হচ্ছে ৬ রানের বেশি কোনো খেলোয়াড় নিতে পারবে না, সেহেতু কলিবুদ ও ম্যাটিপর এরচেয়ে বেশি রান নিল না। প্রথম ওভার থেকে রান উঠল ১২। এতে ম্যাটিপর ও কলিবুদ খুবই মজা পেল। দর্শক শিয়াল, বানর ও ক্যাঙ্গারুরাও ভীষণ আনন্দ পেল। বানর ও ক্যাঙ্গারুর কয়েকটি মাঠে নেমে পড়লÑ এবার তারা খেলবে, এই দাবি তুলে। আন্ডু ও পিডাসেন তাদের বোঝাল, এই খেলায় প্রথমে ব্যাটিং করা দল ৫০ ওভার খেলে। তাছাড়া অন্তত ১০ ওভার শিয়ালদের খেলা না দেখলে তারা এই খেলার কিছুই বুঝবে না। এতে বানর ও ক্যাঙ্গারুরা ধৈর্য্য ধরে খেলাটা শেখার সিদ্ধান্ত নিল। তারা মাঠের বাইরে গিয়ে এবার আন্ডুর বোলিং পয়েন্ট থেকে বলে লাথি মারার ও কলিবুদের তা থেকে রান সংগ্রহ করার দৃশ্য দেখতে মনোযোগী হয়ে মাঠে চোখ ফেলল।



ছয়



দশ ওভার শিয়ালদের খেলা দেখার পর বানর ও ক্যাঙ্গারুরা বলল, আমরা তোমাদের মতো দশ ওভার খেলব। শিয়ালেরা তখন বানর ও ক্যাঙ্গারু দলের খেলোয়াড়দের নাম ঠিক করে দেয়। ক্যাঙ্গারু দলের অধিনায়কের নাম দেয় লিকিপং। এরপর ব্যাটিং পয়েন্ট ও বোলিং পয়েন্টের খেলোয়াড়দের নাম দেয় যথাক্রমে শেনি ওসন, বাদদিন, মাইকাক, মাইকাশি, ডেডকাশি, কামে টাইট, টিমপন, ভিনশিথ, জনাস্টিং, মিছেসন, নাথারিজ, কেটলি, ছন ক্ষেত ও ডোলিজার। বানর দলের অধিনায়কের নাম দেয় ডরেসা। ব্যাটিং পয়েন্ট ও বোলিং পয়েন্টের খেলোয়াড়দের নাম দেয় যথাক্রমে কিচগে, রামসান, শিবপল, ডোবাভো, ডরেভো, কিরে পোলা, ডেভশিথ, সুলান, নিকিলার, কেমাচ, রবিজল, আরাসেল, কালবাগ ও আনবারা।

দশ ওভারের ম্যাচে প্রতি বোলার দুই ওভার করে বলে লাথি মারবে, আর ফিল্ডিং রেসট্রিকশন তিন ওভার পর্যন্ত থাকবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে খেলতে নামে বানর ও ক্যাঙ্গারুর দল। ময়না একটি কয়েন মুখে নিয়ে আকাশ থেকে নিচে ফেলে। এরমধ্যে বানর দলের অধিনায়ক ‘হেট’ কল করে। ময়না দেখে যে ‘টেল’ উঠেছে। অর্থাৎ ক্যাঙ্গারুর দল টসে জয়লাভ করেছে। ময়না এরপর ক্যাঙ্গারুর দল আগে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলবে না বোলিং পয়েন্ট থেকে খেলবে, তা জিজ্ঞেস করে ক্যাঙ্গারু দলের অধিনায়ক লিকিপংকে। লিকিপং ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার সিদ্ধান্ত জানালে বানরের দল ফিল্ডিং সাজায়। এরপর ডরেসা বল বোলিং পয়েন্টে বসিয়ে বলে লাথি মারার প্রস্তুতি নেয়। আর ক্যাঙ্গারু দলের শেনি ওসন ব্যাটিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে বলে লাথি মারার প্রস্তুতি নেয়। অপর প্রান্তে বাদদিন তার সঙ্গে খেলতে নামে। প্রথম ওভারের প্রথম বলে ডরেসা বলে লাথি মারলে তা ‘ওয়াইড বল’ হয়। প্রথম স্লি¬পে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডার তা ধরতে না পারায় বল সীমানার দিকে এগুতে থাকে। থার্ডম্যান সীমানা থেকে অপর ফিল্ডার দৌড়ে গিয়ে বল থামিয়ে লাথি মেরে ব্যাটিং পয়েন্টে পাঠানোর ফাঁকে শেনি ওসন ও বাদদিন মিলে তিন রান সংগ্রহ করে। ওয়াইড বল মিলে তাদের মোট চার রান আসে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী কোনো বলই তখন খেলা হয়নি। অতিরিক্ত থেকেই আসে চারটি রান। বোলিং পয়েন্ট থেকে ডরেসার লাথি মারা দ্বিতীয় বলে বাদদিন সজোরে লাথি মারলে বল মিড অন সীমানা দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়। অর্থাৎ ক্যাঙ্গারু দলের সংগ্রহে এই বলটি থেকে চার রান যোগ হয়। পরের বলে বাদদিন রান নিতে পারেনি। তারপরের বলটি বাদদিন লাথি মারলে বল লেগ সাইড দিয়ে সীমানার দিকে যেতে থাকে। লেগ সাইডে থাকা ফিল্ডার সে বল থামিয়ে লাথি মেরে ব্যাটিং পয়েন্টে পাঠানোর আগ পর্যন্ত শেনি ওসন ও বাদদিন মিলে দুই রান সংগ্রহ করে। পরের বলে বাদদিন লাথি মারলে ডরেসা তা থামায়। ফলে এ বল থেকে কোনো রান সংগ্রহ করতে পারেনি তারা। তারপরের বলে ডরেসার লাথি মারা বল বাদদিনের পায়ের ফাঁক দিয়ে স্টাম্পে গিয়ে আঘাত হানে। সঙ্গে সঙ্গে ডরেসা লাফিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। অন্য বানরেরাও ভীষণ আনন্দ পায় এতে। মাঠের বাইরে থাকা দর্শকরাও আনন্দে বিভিন্ন ধরনের শব্দ করে। বাদদিন আউট হওয়ার পর মাঠে নামে অধিনায়ক লিকিপং। লিকিপং ডরেসার পরের বল পা দিয়ে লাথি মারলে তা মিডঅফে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডার বরাবর পৌঁছে। তবুও তারা দৌড়ে এক রান সংগ্রহ করে। প্রথম ওভার থেকে ক্যাঙ্গারু দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ১১ রান।



দ্বিতীয় ওভারে বোলিং পয়েন্ট থেকে বলে লাথি মারতে আসে কেমাচ। এ সময়ে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে বলে লাথি মারার প্রস্তুতি নেয় লিকিপং। কেমাচ বলে লাথি মারার পর লিকিপং সেই বলকে লাথি মেরে কেমাচের পায়ের কাছ দিয়েই সীমানার বাইরে পাঠায়। এর পরের বলটিতে কেমাচের লাথি মারার পর লিকিপং বলে লাথি মারলে বল থার্ডম্যান অঞ্চলের দিকে যায়। ফিল্ডার লাথি মেরে ব্যাটিং পয়েন্টে বল পাঠানোর আগে লিকিপং ও শেনি ওসন মিলে দুই রান সংগ্রহ করে। পরের বলে লিকিপং কোনো রান সংগ্রহ করতে পারে না। তারপরের বলে কেমাচ লাথি মারার পর লিকিপং মিড অন সীমানা বরাবর বল পাঠায়। সেখান থেকে ফিল্ডার বলে লাথি মেরে বোলিং পয়েন্টে পাঠানোর আগে শেনি ওসন ও লিকিপং মিলে তিন রান তুলতে গেলে লিকিপং রান আউট হয়ে যায়। এতে বানরের দল দলবদ্ধভাবে ভীষণ আনন্দ প্রকাশ করে। লিকিপংয়ের পরে মাঠে খেলতে নামে মাইকাক। এ সময় ব্যাটিং পয়েন্টে বলে লাথি মারার জন্য প্রস্তুত হয় শেনি ওসন। কেমাচের পরের বল শেনি ওসন মিড অফ অঞ্চল দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠায়। পরের বলটি থেকে শেনি ওসন রান সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। এতে ২য় ওভার শেষে ক্যাঙ্গারু দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ২৩ রান।



পরের ওভারের প্রথম বল মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হয় মাইকাক। ডরেসা বোলিং পয়েন্ট থেকে বলে লাথি মারার পর মাইকাক লাথি মারলে বল পয়েন্ট অঞ্চলে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারের কাছে যায়। ফলে কোনো রান তুলতে পারে না শেনি ওসন ও মাইকাক। পরের বলে ডরেসা লাথি মারার পর মাইকাক বলটিকে বোলিং পয়েন্টের পাশ দিয়েই সীমানার দিকে পাঠায়। সেখানে ফিল্ডিং করা খেলোয়াড় বল থামিয়ে ফেরত পাঠানোর আগে মাইকাক ও শেনি ওসন মিলে দুই রান সংগ্রহ করে। পরের বলে ডরেসা লাথি মারার পর মাইকাক তা মিড অফ অঞ্চল দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠায়। তারপরের বলে ডরেসার লাথি মারা বল মাইকাকের পায়ের ফাঁক দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে বানর দলের খেলোয়াড় ও মাঠের বাইরে উপস্থিত থাকা দর্শক বানর, শিয়াল ও দুই-চারটি ভাল্লুক আনন্দ প্রকাশ করে ওঠে। মাইকাক আউট হওয়ার পর মাঠে নামে মাইকাশি। ওভারের পরের দুটি বল থেকে মাইকাশি কোনো রান সংগ্রহ করতে পারে না। পরের বলে মাইকাশি সজোরে লাথি মারলে বল এক্সট্রা কভার অঞ্চলের ফিল্ডারের কাছে হাওয়ায় ভেসে যায়। সেখানে ফিল্ডিং করা রামসান বলটি লুফে নিলে মাইকাশি আউট হয়ে যায়। এতে ৩ ওভার শেষে ক্যাঙ্গারু দলের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ২৯।



তিন ওভারের ফিল্ডিং রেসট্রিকশন শেষ হওয়ার পর বানর দলের অধিনায়ক তার খেলোয়াড়দের মাঠের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফিল্ডিং সাজান। পরের ওভারে বোলিং পয়েন্ট থেকে বলকে লাথি মারার জন্য প্রস্তুত হন কেমাচ। তাকে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হন শেনি ওসন। কেমাচ বোলিং পয়েন্ট থেকে বলে লাথি মারার পর শেনি ওসন সেই বলে লাথি মারলে তা কেমাচের গায়ে লেগে থেমে যায়। ফলে রান নিতে ব্যর্থ হয় শেনি ওসন ও মাইকাশির আউট হওয়ার পর মাঠে নামা কামে টাইট। তারপরের বলে কেমাচ লাথি মারার পর শেনি ওসন বলকে থার্ডম্যান অঞ্চলে পাঠায়। সেখান থেকে ফিল্ডার বোলিং পয়েন্টে বল ফেরত পাঠাতে লাথি মারলে বল চলে যায় লং লেগ অঞ্চলে। লং লেগ ফিল্ডার সেই বল থামিয়ে ব্যাটিং পয়েন্টে ফেরত পাঠানোর আগে শেনি ওসন ও কামে টাইট মিলে ৫ রান সংগ্রহ করে।



এদিকে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে বানর ও ক্যাঙ্গারুর খেলা দেখতে দেখতে শিয়াল দলের অধিনায়ক আন্ডুর মাথায় একটা ভিন্ন চিন্তা আসে। টিভিতে সে ও পিডাসেন একদিন দেখেছিল মানুষেরা বড় একটা বলকে দৌড়ে দৌড়ে লাথি মেরে খেলে। সেই খেলাটার নাম হচ্ছে ফুটবল। আন্ডু চিন্তা করেÑ তারা যেই নিয়মে ক্রিকেট খেলছে, তাকে আধা ক্রিকেট ও আধা ফুটবল বলা যায়। তাহলে এই খেলাটার একটা নতুন নাম দিলেই ভালো হবে। ফুটবল ও ক্রিকেটের আধা আধা নাম নিয়ে এই খেলাটার নাম ‘ফুটক্রিক’ দিলেই যথার্থ হবে। আন্ডু তার এই চিন্তার কথা পিডাসেনকে জানালে পিডাসেনেরও আন্ডুর চিন্তা পছন্দ হয় এবং তারা ঠিক করে যে, এই খেলার নাম ফুটক্রিক-ই বলা হবে। বানরদের আবার উল্ল¬াস প্রকাশে আন্ডু ও পিডাসেনের চিন্তা থামল। মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখল শেনি ওসনের স্টাম্প ভাঙা। আর সে মাঠের বাইরের দিকে চলে আসছে। অর্থাৎ শেনি ওসন যে আউট হয়ে ফিরে আসছে, তা তারা সহজেই বুঝতে পারল। শেনি ওসন আউট হবার পর মাঠে প্রবেশ করল ডোলিজার। ডোলিজার গিয়ে ব্যাটিং পয়েন্টে দাঁড়ানোর পর বোলিং পয়েন্ট থেকে নিকিলার বলে লাথি মারল। ডোলিজার সেই বলে লাথি মেরে বলকে মিডঅফ অঞ্চলে পাঠাল। সেখান থেকে ফিল্ডার বল লাথি মেরে ফেরত পাঠানোর আগে ডোলিজার ও কামে টাইট মিলে দুই রান তুলল।



১০ ওভার শেষে ক্যাঙ্গারু দল বানর দলের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট হারিয়ে ১০১ রান সংগ্রহ করে। ১০২ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বানরের দল নির্ধারিত ১০ ওভারে করতে পারে ৪ উইকেটে ৭৫ রান। ফলে ২৬ রানে জিতে যায় ক্যাঙ্গারুর দল। বানর দলের শিবপল ২০, রামসান ১৫, ডোবাভো ১৫, ডরেভো ১২ ও কিচগে ৮ রান করে। অতিরিক্ত থেকে আসে ৫ রান। ক্যাঙ্গারু দলের কেটলি, ছন ক্ষেত ও ডোলিজার প্রত্যেকে ১টি করে উইকেট লাভ করে।

এরপর শিয়াল ও ক্যাঙ্গারু দলের খেলায় শিয়াল দল জেতে ৫ উইকেটে।



তিনটি দল পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলে ১টি করে জয় পেয়ে ভাবল, এই খেলার মাধ্যমেই যদি বনের রাজা নির্ধারণের ব্যবস্থা করা হয়, তবে শিয়াল, ক্যাঙ্গারু, বানর এদের মধ্যেও কেউ বনের রাজা হতে পারে। শিয়াল, বানর ও ক্যাঙ্গারুর দল ঠিক করল, পরদিন থেকে তারা ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলবে। আর ৫০ ওভারের ম্যাচ শিয়াল ও ক্যাঙ্গারুর ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে।



সাত



এদিকে শিয়াল, ক্যাঙ্গারু ও বানরের মধ্যে ফুটক্রিক খেলা হবার কথা একে একে বাঘ, সিংহ, গণ্ডার, মহিষ, হাতি এদের কানেও গেল সেই রাতের মধ্যেই। পরদিন যখন শিয়াল ও ক্যাঙ্গারু দল ফুটক্রিক খেলা শুরু করল, তখন একে একে বাঘ, সিংহ, গণ্ডার, হাতি, মহিষ, বনমানুষ, চিতাবাঘ হাজির হলো দর্শক হিসেবে। ক্যাঙ্গারু দল টসে জয়ী হয়ে প্রথমে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলতে নামল। ২০ ওভার ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলে ক্যাঙ্গারু দল বিনা উইকেটে ১০৬ রান তোলার পর যখন শিয়াল দলের মাথা খারাপ হবার জোগাড়, তখন দেখা গেল আসলে মাথা খারাপ হয়ে গেছে বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ, গণ্ডার, মহিষ ও বনমানুষদের। তারা মাঠে ঢুকে হৈ চৈ শুরু করলÑ এই খেলা তারাও খেলবে। বনের শক্তিশালী প্রাণী তারা। অতএব, এই খেলা খেলার অধিকার বনে তাদেরই বেশি। তাদের বাদ দিয়ে বনের ছোটখাট প্রাণীরা এই খেলা খেলবে, তা তারা কিছুতেই মেনে নেবে না।



আন্ডু, পিডাসেন, লিকিপং ও ডরেসা তখন বাঘ, সিংহ, মহিষ, গণ্ডারদের বোঝাতে শুরু করল যে, এই খেলা খেলতে হলে প্রথমে এই খেলা ভালো করে বুঝতে হবে। আর ভালো করে বুঝতে হলে এই খেলা মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে ৪/৫ দিন। অন্তত ৩ দিন শিয়াল-ক্যাঙ্গারু, শিয়াল-বানর ও বানর-ক্যাঙ্গারুর ম্যাচ তারা দেখলে এই খেলার অনেককিছু বুঝতে পারবে। বাকিটা তখন শিয়াল, বানর ও ক্যাঙ্গারুরা তাদেরকে বুঝিয়ে দেবে। আন্ডু, পিডাসেন, ডরেসা ও লিকিপংয়ের কথা বাঘ, সিংহ, মহিষ, গণ্ডাররা শুনল। তারা এরপর মাঠের বাইরে গিয়ে খেলা দেখতে শুরু করল।



মাঠে ফিরে এসে আন্ডু বোলিং পয়েন্ট থেকে বলে লাথি মারার দায়িত্ব দিল আন্ডাসনকে। আন্ডাসন সেই ওভারেই প্রথম বলে বাদদিন এবং ৫ম বলে শেনি ওসনের উইকেট তুলে নিল। শেনি ওসন ২৮ বল খেলে ৪২ রান করে বোল্ড হলেও বাদদিন মাঠ ছাড়ে ৫৬ রান করে কট হয়ে। এরপর আন্ডাসনের লাথি মারা বলে ৩০তম ওভারে শট করে লিকিপং (৬০) ধরা পড়ে কলিবুদের হাতে মিড উইকেটে। দলীয় স্কোর তখন ৩ উইকেটে ১৬৬। ৩৩তম ওভারে শিয়াল দল আবার আঘাত হানে। এবার আন্ডাসনের বলে ২৫ রান করে ইংগানের হাতে ধরা পড়ে মাইকাক। ৩৫তম ওভারে মাইকাশি ফিরে যায় নিজের নামের পাশে ৩ রান যোগ করে। তার উইকেটটি নেয় তুইবাদ। কামে টাইট সাত নম্বরে নেমে পিডাসেনের লাথি মারা বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে তার রানের খাতা খোলে। অপর প্রান্তে তখন ভিনশিথ ২০ রান সংগ্রহ করে অপরাজিত। তারা দুইজনে ২৫ রান যোগ করার পর ৪১তম ওভারে ভিনশিথকে বোল্ড করে দেয় কলিবুদ। ভিনশিথ ৩১ রান করে আউট হয়। দলীয় স্কোর দাঁড়ায় ৪১ ওভারে ২২২ রান। শেষ ৯ ওভারে কামে টাইট ও কেটলি মিলে যোগ করে ৫২ রান। ফলে দলীয় স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৬৪ রান। কামে টাইট ৩৩ ও কেটলি ১৪ রানে অপরাজিত থাকে। অতিরিক্ত রান হয় ৫।

২৬৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শিয়াল দল শেষ পর্যন্ত ৪৫ ওভার খেলতে পারে। ৪৫ ওভারে ২১০ রান করে অলআউট হয়ে যায় তারা। ফলে ৫৫ রানে হেরে যায় শিয়াল দল। আন্ডু ও ম্যাটিপর উদ্বোধনী জুটিতে ১৫ ওভারে ৭০ রান করে। আন্ডু ৩৯ রান করে কেটলি’র লাথি মারা বলে বোল্ড হয়। এরপর ইংবেল ও ম্যাটিপর ৫০ রান যোগ করে পরের ১৫ ওভারে। ৩০ ওভারে দলীয় স্কোর যখন ১২০, তখন ব্যক্তিগত ৫৪ রানে ইংবেল বোল্ড হয়ে যায় কেটলি’র লাথি মারা বলে। তারপর ছোটখাট একটা ধস নামে শিয়ালদের ইনিংসে। ২ উইকেটে ১২০ থেকে ৫ উইকেটে ১৩০ রানে পরিণত হয় শিয়ালদের দলীয় স্কোর। ম্যাটিপর ২২ রান করে প্রথমে ছন ক্ষেতের বলে এলবি হয়। এরপর ২ বল খেলেই পিডাসেন শূন্য রানে মাঠের বাইরে চলে যায় ছন ক্ষেতের বলে লাথি মেরে শর্ট ফাইন লেগে মাইকাকের থলেবন্দি হয়ে। জোনাটট (৮) পরের ওভারে ডোলিজারকে পর পর দুই বলে প্রথমে কভার অঞ্চল দিয়ে সীমানা ছাড়া করার পর মিড অন দিয়ে বল সীমানার বাইরে পাঠায়। তার পরের বলেই বোল্ড হয়ে যায়। আন্ডাসন ও আজঝাদ পরবর্তী ৫ ওভারে ১৯ রান যোগ করে। ৪০ ওভার শেষে শিয়াল দলের স্কোর দাঁড়ায় ১৪৯ রান। এরপর রানের গতি বাড়াতে আন্ডাসন (১১) থার্ডম্যান দিয়ে মিছেসনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মাইকাশির থলেবন্দি হয়। আজঝাদ জয়ের লক্ষ্যে এরপর দুর্দুমার লাথি চালাতে থাকে। ৩টি ছক্কা ও ২ টি চারে ৩২ বলে ৪৫ রান করলেও অপর প্রান্ত আগলে রাখার জন্য কেউ থাকে না ৪৫ ওভার পর। ৪৫তম ওভারের শেষ বলে আজঝাদ বোল্ড হলে ২১০ রানে গুটিয়ে যায় শিয়াল দল। ফলে ৫৫ রানে জিতে যায় ক্যাঙ্গারু দল।

খেলা শেষে বাঘ, সিংহ, মহিষ, গণ্ডার, চিতাবাঘ, বনমানুষেরা শিয়াল ও ক্যাঙ্গারুদের ঘিরে ধরল খেলার নিয়ম-কানুন জানার জন্য।



আন্ডু তখন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাইল। সে বাঘ, সিংহ, মহিষদের উদ্দেশে বললÑ খেলার নিয়ম-কানুন তোমাদের শেখাতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে।

সিংহরা বলল, কী শর্ত?

আন্ডু বলল, বনের রাজা নির্ধারণ করতে হবে ফুটক্রিক খেলার মাধ্যমেই।

বাঘরা বলল, সেটা কেমন কথা?

পিডাসেন বলল, মানুষেরা তাদের মধ্যে সেরা কারা, তা নির্ধারণ করে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে। তাছাড়া ফুটক্রিক খেলায় রক্তপাতের কোনো সম্ভাবনা নাই। রক্তপাত ছাড়াই বনের রাজা কারা হবে, তা নির্ধারণ করা যাবে। রক্তপাত ছাড়াই বনের রাজা নির্ধারণের ব্যবস্থা যেহেতু করা যায়, সেহেতু রক্তপাত কেন করবে তোমরা? ফুটক্রিক খেলার মাধ্যমেইতো বনের মধ্যে কোন জাতি সেরা, তা নির্ধারণ করা যাবে। তাছাড়া বনের সকল প্রাণী এই খেলার মাধ্যমে রাজা হওয়ার প্রতিযোগিতায় শামিল হলে জয়ীদের অন্যরা স্বতস্ফূর্তভাবে রাজা মেনে নিতে আপত্তি করবে না। আর দুই বছর পর পর রাজা হবার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে সকল প্রাণীরই ভবিষ্যতে রাজা হবার সম্ভাবনা থাকবে। কিংবা যারা যোগ্য, কেবল তারাই প্রতিবার রাজা হবে। তবুও রাজা হবার প্রতিযোগিতা চালু হলে কে কতটা যোগ্য, তা নিরূপণ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া এই খেলার মাধ্যমে বনের প্রাণীদের বিনোদনের ব্যবস্থাও হবে। বিনোদনের মাধ্যমে বনের প্রাণীদের পশুধিকার প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হবে তাহলে। এখন বনের প্রাণীদের পশুধিকার বলে কিছু নেই। বনের প্রাণীদের পশুধিকার রক্ষা করা হচ্ছে না কোনোভাবেই। শক্তিশালী প্রাণীরা যে যেমন করে যাকে পারে ঘাড় মটকে খাচ্ছে। বনের বর্তমান রাজাগোষ্ঠী ক্ষুদ্র প্রাণীদের পশুধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই ফুটক্রিক খেলার মাধ্যমেই পশুধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হতে হবে সকল প্রাণীকে।

সিংহরা বলল, তোমাদের প্রস্তাবটা মন্দ নয়। বাঘেরা রাজি হলে আমাদের কোনো আপত্তি নাই।

বাঘেরা বলল, আমরা কোনো কিছুতেই ভয় পাই না। আমরা মুষ্টিযুদ্ধে লড়তেও রাজি, ফুটক্রিক খেলতেও রাজি। সিংহরা যেভাবেই চায়, সেভাবেই আমরা বনের রাজা হবার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে রাজি আছি।

সিংহরা বলল, ঠিক আছে। ফুটক্রিক খেলার মাধ্যমেই বনের রাজা নির্ধারণের ব্যবস্থা করা হোক।

সিংহরা গণ্ডার ও চিতাবাঘদের জিগ্যেস করল, তোমাদের কী মত?

সকলেই সম্মত হলো ফুটক্রিক খেলার মাধ্যমেই বনের রাজা নির্ধারণের ব্যাপারে। তারা বলল, রক্তপাত ছাড়াই বনের রাজা নির্ধারণের ব্যবস্থা যেহেতু আছে, সেহেতু কেন রক্ত ঝরানোর পথ তারা এড়িয়ে চলবে না!

আন্ডু বলল, বেশ! তাহলে ১ মাস সকল দল ফুটক্রিক খেলা প্রাকটিস করার পর বনের রাজা হবার লড়াই হবে।

সকলে এতে সম্মত হলো।

পিডাসেন তখন বলল, তাহলে প্রাকটিসের সুবিধার্থে সুন্দরবনে আরও ৮/৯টি মাঠ তৈরি করতে হবে। যাতে প্রত্যেক দল একেক মাঠে প্রাকটিস করতে পারে। অন্তত ৭টি মাঠ তৈরি হলেও এক মাঠে দুইটি করে দল প্রাকটিস করতে পারবে।

পিডাসেনের কথা বাঘ, সিংহ, মহিষ, গণ্ডার, চিতাবাঘ, হাতি, ঘোড়া, বনমানুষ, ষাঁড়, ভাল্লুক, বানর, ক্যাঙ্গারু সবার মনে ধরল। পরদিন তারা এ রকম আরো ৬টি মাঠ তৈরি করার কাজে নেমে পড়ল। ক্যাঙ্গারু, শিয়াল ও বানরেরা তাদের কাছে থাকা স্টাম্প, বেল, ব্যাট ও বল বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ, মহিষ, বনমানুষ, গণ্ডার, হাতি, ঘোড়া, জেব্রা, বনমানুষদের সরবরাহ করল। আরেকদিন শ্যামনগরে গিয়ে তারা মাঠের চারপাশের সীমানার জন্য কয়েক বান্ডেল মোটা রশিও নিয়ে এলো। এক মাস ধরে বাঘ, সিংহ, মহিষ, গণ্ডার, হাতি, ঘোড়া, জেব্রা, ষাঁড়, চিতাবাঘ, বনমানুষ, শিয়াল, ভাল্লুক, ক্যাঙ্গারু ও বানরেরা নিজেদের মধ্যে এবং আরো ৪/৫টি অন্য জাতের দলের সঙ্গে ম্যাচ প্রাকটিস করে চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য তৈরি হলো।



আট



চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য বানর, শিয়াল, ক্যাঙ্গারু, বাঘ, সিংহ, মহিষ, গণ্ডার, হাতি, ঘোড়া, চিতাবাঘ, ষাঁড়, জেব্রা, ভাল্লুক ও বনমানুষ দলের ১৫ জন খেলোয়াড়ের নাম ঠিক করে দিল ময়না দুটি।

দলগুলোর খেলোয়াড় তালিকা নিম্নরূপ:



বাঘ দল: শাক আর হাঁস আন (অধিনায়ক), দামি কপাল, ইমুন খায়েস, জোনাকী জ্বলে ধিকি ধিকি, শাহী ফিস, মৌফুল, রকি বল আন, মুসাফির আমি, মামু দুধ-ভাত, নাই মিস, আবার রাজা, সর্দী শুরু, সপি আইলাম, নাচমু আসেন ও বেল হোন।



চিতাবাঘ দল: বন্ধ সিকি-আনি (অধিনায়ক), বিরানে হাগ, চীন অন্ধকার, খাইতাম ক্ষীর, সুরে বাজেনা, রাজা চিন, রাত পোহালি, সুপ পান, ঝইরা যান, ওরে ভাইজাদিন, হইছিস নেড়া, পারভিন ঘুমার, মনে ফাটল, চান্দে আসীন ও পিশলা।



মহিষ দল: শাহী পদি(অধিনায়ক), মিসাইল বক, ইস কান, কামান কল, মরার কল, মোফিজ, আবার জাগ, তুম ঠুল, আমান, আদাফিক, ওয়াজ, আমসাদ, শো-কথার, শইল তাইনর ও আইজ আজাদ।



সিংহ দল: কুমড়ার চারা (অধিনায়ক), মালা বনে, পুল ভাঙা, রতœ আন, দিল তার অন্ধ, রাঙা হাত, চামড়া পোড়া, নুন কুলা, লাঠি মাঙ্গা, জেলি মাছ, অজানায় মন দিস, মুলা ধরা, থোরা পোড়া, আন চামড়া ও চামড়া নিবা।



বানর দল: ডরেসা (অধিনায়ক), কিচগে, রামসান, শিবপল, ডোবাভো, ডরেভো, কিরে পোলা, ডেভশিথ, সুলান, নিকিলার, কেমাচ, রবিজল, আরাসেল, কালবাগ ও আনবারা।



গণ্ডার দল: গায়ে শীত (অধিনায়ক), হাস কামলা, বিলাই, জা কালি, পিডামুনি, ফালতু চিজ, কলি গ্রাম, মইরা আক্কেল, ওই নীল, রনে ফিরসন, দেশটেন, ইমান তার, লন সবে, মরন হউক ও ইয়ান কথা।



ক্যাঙ্গারু দল: লিকিপং (অধিনায়ক), শেনি ওসন, বাডডিন, মাইকাক, মাইকাশি, ডেডকাশি, কামে টাইট, টিমপন, ভিনশিথ, জনাস্টিং, মিছেসন, নাথারিজ, কেটলি, ছন ক্ষেত ও ডোলিজার।



জেব্রা দল: ডাইল ভাতপুরি (অধিনায়ক), হাসবেন, জেংলি, জয় রাম, মাটির পাতিল, জেলি খাও, কট রিচ, রসের ঠিলা, বেন্ডি মাখলাম, নান মাখলাম, ক্যান আনসন, সিডর, কাই মিশ, টিনদি ও লুটকক।



শিয়াল দল: আন্ডু (অধিনায়ক), ম্যাটিপর, ইংবেল, কলিবুদ, ইংগান, পিডাসেন, জোনাটট, আন্ডাসন, আজঝাদ, গামছা আন, জেমওয়েল, তুইবাদ, টিমনান, লুকট ও মাইহাড্ডি।



ভাল্লুক দল: পিঠা বারেন (অধিনায়ক), দিল মজা, ওরে মুচি, মুরদা বুড়ি, আসেম্যান, টমপার, টড গ্র“প, আলু ভাজি, বাড সুগার, বানা জুস, পিঠা ছিড়, এক হুইস্কি, রান দুই সেট, কারেন্ট দিক ও বাসা রেন্ট।



বনমানুষ দল: পরছায়া (অধিনায়ক), রে বাবা, আন্ধা বু, বেন্ডি লর, চিচিঙ্গা দিজা, একটন চিরা, চাল কটি, গায়ে ক্রিম, কেবিন, গেলাম, কিফু, রেইস, এইফুড, আন্দা বু ও শইল মাছ।



ষাঁড় দল: ঝি কান্দে (অধিনায়ক), সেন তাস, লেজ বান্দা, ডেড বুয়া, কল বুয়া, শিব কালো, তমমিশ, রাফ তেল, মর বউমা, মাছ ধোয়া, নেই মায়াদয়া, ইলিশ পেটি আনো, পিঠা ঠান্ডা, সেগেছে ও যেগেছে।



ঘোড়া দল: উইকলি মর্টার ফিট (অধিনায়ক), আন বেটা, আলেস্যা থাক, নিও বান, কেও বান, ঝগরেল, টেনটন, নাই জুস, যাইমুনি, ভয়ে সঙ্গিন, পরলিংক, আধার মারি, গাড়িআইল (উইকেটরক্ষক), আন্ডু টাইট ও এইসস।



হাতি দল: আসিছ বাঘ (অধিনায়ক), রিয়াল কিমা, হারবি ক্যান, নিশি ঘুমার, হিরা ফাটে, তাইন গন, হেরি কান্দে, জনডিস, রন্দু সেকা, পাদশাই, কালথাম, খুরা আন, মিনহাস, জুস কারি ও ভাজি দাও।



বানর, শিয়াল, ক্যাঙ্গারু, বাঘ, সিংহ, মহিষ, গণ্ডার, হাতি, ঘোড়া, চিতাবাঘ, ষাঁড়, জেব্রা, ভাল্লুক ও বনমানুষ দলের সকলে মিলে ঠিক করল, প্রথমে ১৪টি দল দুই ভাগ হয়ে খেলবে। প্রতি খেলায় জয়ের জন্য একটি দল ২ পয়েন্ট করে পাবে এবং খেলা ড্র হলে ১ পয়েন্ট পাবে। এভাবে দুই গ্র“পের সেরা ৪টি দল নিয়ে মোট ৮টি দল কোয়ার্টার ফাইনালে পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলবে। নক আউট ফরম্যাটে সেই ৪টি ম্যাচের জয়ী দল সেমিফাইনালে খেলবে। সেমিফাইনালে জয়ী দুই দল ফাইনালে খেলবে। ফাইনালে যারা জিতবে, তারাই হবে বনের রাজা। এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিক হলো, এ গ্র“পে খেলবে সিংহ, মহিষ, ক্যাঙ্গারু, জেব্রা, বনমানুষ, ষাঁড় ও হাতির দল। আর বি গ্র“পে খেলবে বাঘ, চিতাবাঘ, শিয়াল, বানর, ঘোড়া, গণ্ডার ও ভাল্লুক দল। সকলে মিলে আরও সিদ্ধান্ত নেয়, বাঘ ও চিতাবাঘের ম্যাচ দিয়েই এই লড়াই শুরু হবে। প্রতিদিন একটি বা দুটি মাঠে হবে খেলাগুলো। একটি মাঠের নাম দেয় তারা দক্ষিণ মাঠ। আরেকটি মাঠের নাম দেয় উত্তর মাঠ। প্রথম দিন দক্ষিণ মাঠে বি গ্র“পের বাঘ ও চিতাবাঘের লড়াইয়ের পর দ্বিতীয় দিন দক্ষিণ মাঠে এ গ্র“পের জেব্রা ও ষাঁড় দল এবং উত্তর মাঠে এ গ্র“পের সিংহ ও হাতির দলের লড়াই হবে। তৃতীয় দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে ক্যাঙ্গারু ও বনমানুষ দল। চতুর্থ দিন উত্তর মাঠে খেলবে শিয়াল ও ভাল্লুক দল। পঞ্চম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে মহিষ ও ষাঁড় দল। ষষ্ঠ দিন উত্তর মাঠে খেলবে গণ্ডার ও বানর দল। সপ্তম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে বাঘ ও ঘোড়া দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে ক্যাঙ্গারু ও জেব্রা দল। অষ্টম দিন উত্তর মাঠে খেলবে মহিষ ও সিংহ দল। নবম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে চিতাবাঘ ও শিয়াল দল। দশম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে হাতি ও বনমানুষ দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে বানর ও ভাল্লুক দল। এগারতম দিন উত্তর মাঠে খেলবে সিংহ ও ষাঁড় দল। বারতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে শিয়াল ও ঘোড়া দল। তেরতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে গণ্ডার ও ভাল্লুক দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে মহিষ ও হাতির দল। চৌদ্দতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে জেব্রা ও বনমানুষ দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে বাঘ ও বানর দল। পনরতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে ক্যাঙ্গারু ও সিংহ দল। ষোলতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে গণ্ডার ও শিয়াল দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে চিতাবাঘ ও ঘোড়া দল। সতেরতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে ষাঁড় ও হাতির দল। আঠারতম দিন উত্তর মাঠে খেলবে মহিষ ও জেব্রা দল। উনিশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে চিতাবাঘ ও ভাল্লুক দল। বিশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে সিংহ ও বনমানুষ। একুশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে বানর ও ঘোড়া দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে বাঘ ও শিয়াল দল। বাইশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে চিতাবাঘ ও গণ্ডার দল। তেইশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে জেব্রা ও হাতির দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে ক্যাঙ্গারু ও ষাঁড় দল। চব্বিশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে বাঘ ও ভাল্লুক দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে মহিষ ও বনমানুষ দল। পঁচিশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে গণ্ডার ও ঘোড়া দল। ছাব্বিশতম দিন উত্তর মাঠে খেলবে ক্যাঙ্গারু ও হাতির দল। সাতাশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে শিয়াল ও বানর দল। আটাশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে ঘোড়া ও ভাল্লুক দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে সিংহ ও জেব্রা দল। ঊনত্রিশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে গণ্ডার ও বাঘ দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে মহিষ ও ক্যাঙ্গারু দল। ত্রিশতম দিন দক্ষিণ মাঠে খেলবে বনমানুষ ও ষাঁড় দল এবং উত্তর মাঠে খেলবে চিতাবাঘ ও বানর দল।



প্রথম পর্বে গ্র“প পর্যায়ের এই খেলাগুলো শেষে দুইদিন বিরতির পর নক আউট পর্বে প্রথম দিন এ গ্র“প চ্যাম্পিয়ন দল ও বি গ্র“পের ৪ নম্বর দল পরস্পরের মোকাবেলা করবে। দ্বিতীয় দিন এ গ্র“পের রানার্স-আপ দল ও বি গ্র“পের ৩ নম্বর দল পরস্পরের মোকাবেলা করবে। তৃতীয় দিন এ গ্র“পের ৩ নম্বর দল ও বি গ্র“পের রানার্স-আপ দল পরস্পরের মোকাবেলা করবে। চতুর্থ দিন এ গ্র“পের ৪ নম্বর দল ও বি গ্র“পের চ্যাম্পিয়ন দল পরস্পরের মোকাবেলা করবে। নক আউট পর্বের এই চারটি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ শেষে আবার ২দিন বিরতি দিয়ে তারপর প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচ হবে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ১ম কোয়ার্টার ফাইনালের বিজয়ী দল ও ৩য় কোয়ার্টার ফাইনালের বিজয়ী দল। পরদিন ২য় সেমিফাইনাল ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ২য় কোয়ার্টার ফাইনালের বিজয়ী দল ও ৪র্থ কোয়ার্টার ফাইনালের বিজয়ী দল। সেমিফাইনালে বিজয়ী দুই দল ২দিন বিরতির পর ফাইনাল খেলবে। ফাইনালে যে দল জিতবে, তারাই হবে সুন্দরবনের রাজা।



নয়



বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অবশেষে শুরু হলো সুন্দরবনের রাজা হবার লড়াই। এ উপলক্ষে মাঠকে বর্ণিল সাজে সাজানো হলো নানা রঙ্গের পতাকা দিয়ে। ক্যাঙ্গারু, শিয়াল ও বানরের দল আবার শহরে গিয়ে চিকন বাঁশ ও নানা রঙ্গের পতাকা নিয়ে এলো এজন্য। উদ্বোধনী ম্যাচ খেলার জন্য নির্ধারিত সময়েই বাঘ ও চিতাবাঘ দল মাঠে নামল। তার আগে কিছুক্ষণ সকল প্রাণী মাঠে হাজির হয়ে উš§াতাল নেচে তাদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল।



টসে জিতল বাঘ দল। বাঘ দলের অধিনায়ক শাক আর হাঁস আন প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিল। চিতাবাঘ দলকে তারা আমন্ত্রণ জানাল ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে বলে লাথি মেরে খেলার জন্য। চিতাবাঘ দল নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৪ বল বাকী থাকতেই ১৫২ রান করে অলআউট হয়ে যায়। চিতাবাঘ দলের বিরানে হাগ সর্বোচ্চ ৪৩ রান করে। এছাড়া সুরে বাজেনা ২৬, রাজা চিন ২২, বন্ধ সিকি-আনি ১৩, সুপ পান ৮ রান করে। অতিরিক্ত থেকে আসে ১২ রান। অন্যরা কেউ দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেনি। বাঘ দলের আবার রাজা ৩টি, শাক আর হাঁস আন ৩টি এবং নাচমু আসেন ও সপি আইলাম ২টি করে উইকেট লাভ করে।



১৫৩ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাঘ দল সহজেই জিতে যায় কেবল ১ উইকেট হারিয়ে। দামি কপাল সর্বোচ্চ ৮৭ রান করে অপরাজিত থাকে। ইমুন খায়েস ২০ রান করে উদ্বোধনী জুটিতে ৬২ রান তোলার পর আউট হলেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দামি কপাল ও জোনাকী জ্বলে ধিকি ধিকি ৯১ রানের জুটি গড়ে দলকে সহজ জয় উপহার দেন। জোনাকী জ্বলে ধিকি ধিকি ৩৫ রান করে অপরাজিত থাকে। অতিরিক্ত থেকে আসে ১১ রান। চিতাবাঘ দলের হইছিস নেড়া একমাত্র উইকেটটি লাভ করে। প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয় দামি কপাল।

বাঘ-সিংহসহ জীব-জন্তুদের যে এনিম্যাল বলে, তা ময়নারা টেলিভিশন দেখেই শিখে নিয়েছিল। আর খেলোয়াড়দের যে ইংরেজিতে প্লেয়ার বলে, তাও তারা শিখেছে। সেই মোতাবেক বনের যে দলের যে খেলোয়াড় যেদিন ভালো খেলবে, সেদিন সে-ই প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচ হবে, এমনটাই ঠিক করেছিল তারা।



দ্বিতীয় ম্যাচে জেব্রা ও ষাঁড়ের লড়াইয়ে টসে জয়ী হয়ে জেব্রা দল ষাঁড় দলকে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার আমন্ত্রণ জানায়। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ষাঁড় দল ২২৩ রান করে ৬ উইকেট হারিয়ে। ষাঁড় দলের ডেড বুয়া ৫৮, সেন তাস ৬২, শিব কালো ৩৫, তমমিশ ৩৩ ও ঝি কান্দে ২২ রান করে। অতিরিক্ত রান আসে ১২। জেব্রা দলের ডাইল ভাতপুরি ও কাই মিশ ২টি করে উইকেট পায়। রান আউট হয় শিব কালো ও ঝি কান্দে। ২২৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে জেব্রা দল অলআউট হয়ে যায় ১১২ রানে। ষাঁড় দলের সেগেছে, পিঠা ঠান্ডা ও শিব কালো ৩টি করে উইকেট নিয়ে ষাঁড়দের জয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখে। জেব্রা দলের ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলা কোনো খেলোয়াড়ই বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকে থাকতে পারেনি। হাসবেন সর্বোচ্চ ২৯ রান করে। এছাড়া মাটির পাতিল ১২, রসের ঠিলা ১৪, জয় রাম ১০, বেন্ডি মাখলাম ১৮, ক্যান আনসন ৭ ও কাই মিশ ৬ রান করে। অতিরিক্ত থেকে আসে ১২ রান।



তৃতীয় ম্যাচে সিংহ ও হাতির লড়াইয়ে হাতির দল টসে জয়ী হয়ে প্রথমে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারিত ৫০ ওভারে তারা তুলতে পারে ৮ উইকেটে ২২০ রান। হাতি দলের রিয়াল কিমা সর্বোচ্চ ৬২ রান করে। এছাড়া হিরা ফাটে ৩৫, হারবি ক্যান ৩২, আসিছ বাঘ ৩০, তাইন গন ১৭, জনডিস ১২, রন্দু সেকা ১০ ও খুরা আন ৮ রান করে। অতিরিক্ত খাত থেকে আসে ১৪ রান। সিংহ দলের লাঠি মাঙ্গা ২টি, অজানায় মন দিস ৩টি এবং দিল তার অন্ধ, মুলা ধরা ও থোরা পোড়া ১টি করে উইকেট পায়। ২২১ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে সিংহ দল ৪৫ ওভার ২ বলেই টার্গেটে পৌঁছে যায় ৫ উইকেট হারিয়ে। ফলে ৫ উইকেটে জয়ী হয় সিংহ দল। সিংহ দলের পুল ভাঙ্গা ৫৬, রতœ আন ৪৬, মালা বনে ৪৫, কুমড়ার চারা ২৬, চামড়া পোড়া ১৭ ও জেলি মাছ ১৬ রান করে। অতিরিক্ত খাত থেকে আসে ১৫ রান। হাতির দলের জুস কারি ৩টি ও ভাজি দাও ২টি উইকেট পায়। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয় পুল ভাঙ্গা।



চতুর্থ ম্যাচে বনমানুষ ও ক্যাঙ্গারু দলের লড়াইয়ে টসে জিতে বনমানুষ দল প্রথমে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। ৪৫ ওভার ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলে তারা তুলে ২৪৬ রান। বনমানুষ দলের রে বাবা ৫৬, বেন্ডি লর ৫৩, চাল কটি ৩৪, একটন চিরা ৩২, আন্ধা বু ১৭, পরছায়া ১১, গায়ে ক্রিম ৮, কিফু ৬, শইল মাছ ৫ ও রেইস ৩ রান করে। অতিরিক্ত খাত থেকে আসে ২১ রান। চিচিঙ্গা দিজা আউট হয় শূন্য রানে। ক্যাঙ্গারু দলের ডোলিজার ৪টি, কেটলি ৩টি, ছন ক্ষেত ২টি ও মাইকাক ১টি উইকেট লাভ করে। ২৪৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ক্যাঙ্গারু দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলে ৮ রানে হারে। ৪৯.২ ওভারে ২৩৮ রান তুলে অলআউট হয় তারা। ক্যাঙ্গারু দলের লিকিপং ১৫, শেনি ওসন ৫০, বাদদিন ৪৮, মাইকাশি ৩৫, মাইকাক ৩৪, কামে টাইট ১২, ভিনশিথ ১৬, নাথারিজ ৫, কেটলি ৮, মিছেসন ৮ ও ছন ক্ষেত ৩ রান করে। অতিরিক্ত খাত থেকে আসে ১৪ রান। বনমানুষ দলের একটন চিরা, পরছায়া, গায়ে ক্রিম, কিফু ও রেইস ২টি করে উইকেট পায়। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হয় রে বাবা।



পঞ্চম ম্যাচে শিয়াল ও ভাল্লুক দলের লড়াইয়ে টসে জিতে শিয়াল দলের অধিনায়ক আন্ডু ভাল্লুক দলকে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার আমন্ত্রণ জানায়। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ভাল্লুক দল সব উইকেট হারিয়ে ২৩০ রান করে। সর্বোচ্চ রান করেন পিঠা বারেন ৭০। অন্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রান আসে দিল মজা (৫৩), ওরে মুচি (৪০) ও মুরদা বুড়ির (২২) কৃতিত্বে। অতিরিক্ত থেকে আসে ১৫ রান। শিয়াল দলের আন্ডাসন ২টি, আজঝাদ ২টি, গামছা আন ৩টি ও কলিবুদ ২টি উইকেট পায়। জবাবে শিয়াল দল নির্ধারিত ৪৫ ওভারেই ৭ উইকেটে ২৩৫ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে। ফলে শিয়াল দল জয়ী হয় ৩ উইকেটে। শিয়াল দলের আন্ডু সেঞ্চুরি ইনিংস (১১২ রান) খেলে। অন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে ইংবেল (৪৫), কলিবুদ (৩২) ও পিডাসেনের (২৪) রানই উল্লেখযোগ্য। শিয়াল দলের আন্ডু প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়।



ষষ্ঠ ম্যাচে মহিষ ও ষাঁড় দলের লড়াইয়ে টসে জয়ী হয়ে ষাঁড়ের দল ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে তারা তুলতে পারে ২৪৬ রান। লেজ বান্দা ৮২, শিব কালো ৬৪, ডেড বুয়া ২৮, মাছ ধোয়া ২৪, কল বুয়া ৮ রান করে। অতিরিক্ত থেকে আসে ১৪ রান। মহিষ দলের শাহী পদি ৩৫ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট পায়। এছাড়া শো-কথার ও শইল তাইনর ২টি করে উইকেট পায়। ২৪৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মহিষ দল ৪৭ দশমিক ৪ বলেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৬ উইকেট হারিয়ে। ফলে ৪ উইকেটে জয়ী হয় মহিষ দল। মহিষ দলের কামান কল ৪৮ রান করে রান আউট হয়। বাকী খেলোয়াড়দের মধ্যে ইসকান ৫১, মোফিজ ৩৯, মরার কল ৩৭, মিসাইল বক ৩৫ ও শাহী পদির ৬৩ রান উল্লেখযোগ্য। অতিরিক্ত থেকে আসে ২১ রান। ষাঁড় দলের কল বুয়া ৪টি উইকেট লাভ করে ৪৫ রানের বিনিময়ে। এছাড়া শিব কালো ও ইলিশ পেটি আনো ১টি করে উইকেট পায়। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয় শাহী পদি।



সপ্তম ম্যাচে গণ্ডার ও বানরের খেলায় টসে জয়ী হয়ে গণ্ডার দল বানরের দলকে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার আমন্ত্রণ জানায়। বানর দল শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে। ১৫ রান তুলতেই ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে। এরপর রামসান ও ডোবাভো চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৫২ রান যোগ করলে বানর দল বড় ইনিংস গড়তে সক্ষম হয়। ৪০তম ওভারে ডোবাভো ৮৭ রান করে আউট হলে কিরে পোলা এরপর ৩৫ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললে বানর দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটের বিনিময়ে ২৯২ রান। রামসান শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকে ১১০ রান করে। বানর দলের অন্য খেলোয়াড়ের মধ্যে কিচগে ১০, শিবপল ২ ও আনবারা ১ রান করে। অতিরিক্ত থেকে আসে ১৩ রান। গণ্ডার দলের দেশটেন ৩টি ও মইরা আক্কেল ২টি উইকেট পায়। ২৯৩ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে গণ্ডার দলের গায়ে শীত ও হাস কামলা দুর্দুমার লাথি মেরে ৪৮ ওভারেই দলকে জয় এনে দিতে বড় ভূমিকা রাখে। গায়ে শীতের ১০৭ ও হাস কামলার ১০৩ রানের সুবাদে গণ্ডার দল ২ ওভার হাতে রেখেই ২৯৫ রান তুলে ফেলে ৫ উইকেট হারিয়ে। গণ্ডার দলের অন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে বিলাই ২৯, জা কালি ২১ ও পিডামুনি ১৮ রান করে। অতিরিক্ত রান হয় ১৭। বানর দলের কেমাচ ও নিকিলার ২টি করে উইকেট পায়। ডরেসা পায় ১ উইকেট। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয় গায়ে শীত।



অষ্টম ম্যাচে বাঘ ও ঘোড়ার লড়াইয়ে বাঘ দল টসে জিতে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। বাঘ দলের দামি কপাল ও ইমুন খায়েস উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ রান তুলে ১০ দশমিক ২ ওভারে। ৩৫ রান করে দামি কপাল আউট হলে জোনাকী জ্বলে ধিকি ধিকি এসে বাউন্ডারিতে বল পাঠিয়ে রানের খাতা খোলে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে ৪২ রান যোগ করার পর জোনাকী জ্বলে ধিকি ধিকি আউট হয় নিও বানের বলে। তারপর চার নম্বরে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলতে নামে শাহী ফিস। দুর্দুমার লাথি মেরে ৩৬ বলে ৩৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে এইসসের বলে এলবি হলে মাঠে নামে শাক আর হাঁস আন। শাক আর হাঁস আন ৪৫ রানের এক ইনিংস খেলে রান আউট হলে ৬ নম্বরে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলতে নামে মুসাফির আমি। মুসাফির আমি ১০ রান করে মাঠের বাইরে চলে গেলে ৭ নম্বরে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলতে পাঠানো হয় মামু দুধ-ভাত। শেষ ১০ ওভারে মামু দুধ ভাত ও ইমুন খায়েস মিলে ৯৫ রান যোগ করে দলীয় স্কোরে। শেষ পর্যন্ত বাঘ দল নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩১৬ রান তুলতে সক্ষম হয়। ইমুন খায়েস ৬৭ ও মামু দুধ-ভাত ৪৬ রান করে অপরাজিত থাকে। অতিরিক্ত থেকে আসে ১০ রান। ৩১৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ঘোড়া দল অল আউট হয়ে যায় ১৯৭ রানে। ৪০ ওভার ১ বল খেলতে সক্ষম হয় ঘোড়া দলের খেলোয়াড়েরা। উইকলি মর্টার ফিট ৫৭, আন বেটা ৩৫ এবং টেনটন ৩২ রান করলেও বাকিদের রান তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।



গ্র“প পর্বের সবগুলো খেলা শেষে দেখা যায় এ গ্র“প থেকে ক্যাঙ্গারু দল গ্র“প চ্যাম্পিয়ন, মহিষ দল রানার্স আপ, সিংহ দল তৃতীয় এবং বনমানুষ দল চতুর্থ হয়। আর বি গ্র“প থেকে শিয়াল দল চ্যাম্পিয়ন, বাঘ দল রানার্স-আপ, চিতাবাঘ দল তৃতীয় এবং গণ্ডার দল চতুর্থ হয়।



কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় এ গ্র“প চ্যাম্পিয়ন ক্যাঙ্গারু ও বি গ্র“পের চার নম্বর দল গণ্ডার। এই ম্যাচে ক্যাঙ্গারু দল প্রথমে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে দুর্দান্ত খেলে ২৮০ রান সংগ্রহ করার পরে গণ্ডার দলকে ১৬৫ রানে অল আউট করে দিলে ১১৫ রানের বিশাল জয় পায়।



কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় এ গ্র“প রানার্স-আপ মহিষ দল ও বি গ্র“পের তিন নম্বর দল চিতাবাঘ। এই ম্যাচে চিতাবাঘ দল প্রথমে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলে ২৫০ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। ২৫১ রান করার জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪৭ ওভারেই মহিষ দল লক্ষ্যে পৌঁছে যায় মোফিজ (৭৫), মিসাইল বক (৫৬) ও আবার জাগের (৫৩) রানের সুবাদে ৭ উইকেট হারিয়ে। ফলে ৩ উইকেটে জয় পেয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় মহিষ দল।

কোয়ার্টার ফাইনালের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় এ গ্র“পের ৩ নম্বর দল সিংহ ও বি গ্র“পের রানার্স আপ দল বাঘ। এই ম্যাচে বাঘ দল প্রথমে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে দুর্দান্ত খেলে ২৯৮ রান সংগ্রহ করার পরে সিংহ দলকে ২৬৫ রানে অল আউট করে দিলে ৩৩ রানের জয় পায়।



কোয়ার্টার ফাইনালের চতুর্থ ম্যাচে মুখোমুখি হয় এ গ্র“পের ৪ নম্বর দল বনমানুষ ও বি গ্র“পের চ্যাম্পিয়ন দল শিয়াল। এই ম্যাচে শিয়াল দল প্রথমে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে দুর্দান্ত খেলে ২৭৮ রান সংগ্রহ করার পরে বনমানুষ দলকে ২৫৫ রানে অল আউট করে দিলে ২৩ রানের জয় পায় এবং সেমিফাইনালে পৌঁছে যায়।



প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় ১ম কোয়ার্টার ফাইনালের বিজয়ী দল ক্যাঙ্গারু ও ৩য় কোয়ার্টার ফাইনালের বিজয়ী দল বাঘ। এই ম্যাচে ক্যাঙ্গারু দলের খেলোয়াড়েরা টসে জয়ী হয়ে প্রথমে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাঘ দলের বোলিং পয়েন্ট থেকে লাথি মারা খেলোয়াড়দের প্রচণ্ড সব শটে বলসহ স্টাম্প নিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকলে ৯৮ রানেই অল আউট হয়ে যায়। এরপর বাঘ দলের ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলা খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত সব লাথিতে ২০ ওভারেই ১০০ রান তুলে ফাইনালে পৌঁছে যায়।



দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় ২য় কোয়ার্টার ফাইনালের বিজয়ী মহিষ দল ও ৪র্থ কোয়ার্টার ফাইনালের বিজয়ী শিয়াল দল। এই ম্যাচে শিয়াল দলের খেলোয়াড়েরা টসে জয়ী হয়ে প্রথমে বোলিং পয়েন্ট থেকে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে মহিষ দলের খেলোয়াড়দের ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু মহিষ দল প্রথমে দ্রুত ৪ উইকেট হারালেও ৫ম উইকেট জুটিতে মিসাইল বক ও মরার কলের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত ২২৬ রান তুলতে সমর্থ হয়। জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলতে নেমে জোনাটট (৯৩) ও কলিবুদের (৫৪) দৃঢ়তায় ৫ উইকেট হাতে রেখেই ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে শিয়াল দল।



ফাইনাল ম্যাচের দিন সমগ্র সুন্দরবন জুড়েই টান টান উত্তেজনা চলতে থাকে সকাল থেকেই। কে হবে বনের রাজা তা দেখার জন্য সব পশুপাখি ভিড় জমায় মাঠের পাশে। নির্ধারিত সময়ে আম্পায়ার ময়না দুটির একটি আকাশ থেকে ৫ টাকার একটা কয়েন নিচে ফেলে টস করল। বাঘ দলের অধিনায়ক শাক আর হাঁস আন হেট বললে অপর ময়না কয়েন দেখে রায় দিল টসে জয়ী হয়েছে বাঘ দল। বাঘ দল টসে জয়ী হয়ে প্রথমে ব্যাটিং পয়েন্ট থেকে খেলার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাঘ দলের দামি কপাল (৯৭), ইমুন খায়েস (৪৫), মৌফুল (৪৮), শাহী ফিস (৬৩) ও শাক আর হাঁস আনের (৫২) প্রচণ্ড সব শটে ৫০ ওভারে ৩২০ রান তুলে নিলে শিয়াল দলের ফুটক্রিক খেলার মাধ্যমে বনের রাজা হওয়ার স্বপ্ন বড় ধরনের আঘাত খায়। তারপর আবার শাক আর হাঁস আন (৫) ও আবার রাজার (৪) কৌশলী শটে ১৭৬ রানেই শিয়ালরা অল আউট হয়ে গেলে বাঘ দল উল্লাসে ফেটে পড়ে। অর্থাৎ ১৪৪ রানের বিশাল জয়ের মধ্য দিয়েই সুন্দরবনে নিজেদের রাজত্ব কায়েম রাখে বাঘের দল।



ফাইনাল ম্যাচে দুর্দান্ত খেলার জন্য প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয় শাক আর হাঁস আন। আর প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয় বাঘ দলের দামি কপাল।



সুন্দরবনের রাজার কর্তৃত্ব ফুটক্রিক খেলার মাধ্যমেও ধরে রাখার জন্য বাঘেরা এরপর সারা বন জুড়ে কয়েকদিন ধরে আনন্দ উৎসব করতে থাকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.