![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হতে হবে নৈতিক দায়বদ্ধতায়
কাউসার ইকবাল
মানুষকে মানুষ হতে হবে নৈতিক দায়বদ্ধতায়, বেহেশতের লোভ কিংবা দোজখের ভয়ে নয়। তাহলেই কেবল একজন মানুষ নিজেকে যথার্থ মেধাসম্পন্ন মানুষ বলে দাবি করতে পারে। আর যে বেহেশতের লোভ কিংবা দোজখের ভয়ে সৎ পথে চলে, তার বুদ্ধি তো ৫/৬ বছর বয়সী সেই শিশুর মতো, যাকে চকলেট বা খেলনা গাড়ির লোভ দেখিয়ে কিংবা ভূত-পেতœী বা বেতের আঘাতের ভয় দেখানোর মাধ্যমে দুষ্টুমি থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে অভিভাবকেরা। পরিণত বয়সের মানুষকে যদি এমন করে লোভ ও ভয় দেখানোর মাধ্যমে সৎ পথে চলা বা নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হয়, তবে তো তা তার বুদ্ধিশূন্যতাকেই প্রকট আকারে উপস্থাপন করে। যেহেতু মানুষ বিবেকসম্পন্ন প্রাণী, সেহেতু মানুষকে তার বিবেকের প্রকাশ ঘটাতে হবে স্বীয় নৈতিকতাবোধকে জাগ্রত করে এবং সকল প্রকার ধর্মীয় নির্দেশের ঊর্ধ্বে উঠে। কেননা, যে বেহেশতের লোভ কিংবা দোজখের ভয় দ্বারা প্রভাবিত হয়, সে নিজস্ব নীতিবোধ দ্বারা প্রভাবিত থাকে না। যে কারণে ধর্মীয় গুরু বা স্বধর্মের কারো নির্দেশে তার দ্বারা মানুষ হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও সংঘটিত হতে পারে, যেমনটা ঘটে আসছে পৃথিবীতে বহুকাল ধরে।
ধর্মগুলো মানুষকে নৈতিকতা শেখানোর জন্য যেমন চেষ্টা করেছে, তেমনি স্বীয় ধর্মের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে উগ্রপন্থা অবলম্বনের শিক্ষাও দিয়েছে। যে কারণে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠী পর্যায়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যুদ্ধ-বিগ্রহও কম ঘটেনি পৃথিবীতে এবং এই জাতীয় ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু মানুষেরা যদি স্বীয় নৈতিকতাবোধকে জাগ্রত করে চলত পৃথিবীতে, তবে এ জাতীয় ঘটনাগুলো এড়িয়ে চলতে পারত।
ধর্মীয় নির্দেশ মোতাবেক ধর্মাচারকে মানুষ বেশি প্রাধান্য দেয়াতে সর্বযুগেই একশ্রেণীর লোক তা নিয়ে অতি বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। এছাড়া মানুষের নিত্যদিনকার প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী নিয়েও অতিবাণিজ্য চলেছে ও চলছে হরদম। ধর্মীয় নির্দেশ এ থেকে মানুষকে নিবৃত্ত রাখতে পারেনি। এ থেকেই প্রমাণিত যে, মানুষের নিজস্ব নীতিবোধ জাগ্রত না হলে ধর্মীয় নির্দেশে মানুষ আসলে যথার্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ হতে পারে না। তাইতো অতি মুনাফার প্রবণতা থেকে ধর্মীয় নির্দেশ পালনকারীদের অতীতেও নিবৃত্ত করা যায়নি, বর্তমানেও যাচ্ছে না। বরং লবণ ব্যবসায়ী সমিতি, মাছ ব্যবসায়ী সমিতি, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি, চাল ব্যবসায়ী সমিতি, চিনি ব্যবসায়ী সমিতি, কাগজ ব্যবসায়ী সমিতি, পোশাক বিক্রেতা ব্যবসায়ী সমিতির ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট করে অতি মুনাফা আদায়ের প্রবণতা ধর্মীয় নির্দেশ পালনকারীদের মধ্যে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমনকি বাস, টেক্সি, টেম্পু. রিকশা, অটো রিকশা মালিক ও চালক সমিতির ছত্রছায়ায় বেশি ভাড়া আদায়ের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। মানুষের নিত্যদিনের জীবিকা অর্জন এবং প্রয়োজনীয় অর্থের চেয়ে অতি মাত্রায় অর্থ রোজগারের প্রবণতা আজ সমাজের সর্বস্তরে পরিলক্ষিত হচ্ছে। পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে পঞ্চাশ থেকে শতভাগ, এমনকি দুইশতভাগ মুনাফা করার প্রবণতাও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
শতভাগ মুনাফা করে মানুষের ওপর জুলুম যারা করছেন, তারা আড়াই শতাংশ অর্থ জাকাত দিলে, কিংবা কিছু অর্থ দান-খয়রাত করলে বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিলে বা রাষ্ট্র কর্তৃক ধার্যকৃত কর যথার্থভাবে দিলে তার অর্থ আয় রাষ্ট্র ও ধর্মীয় দৃষ্টিতে এবং সমাজের অনেকের কাছে বৈধতা পেলেও নৈতিকতার মাণদণ্ডে তাকে বিবেকসম্পন্ন মানুষ বা মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন মানুষ বলা যায় না কিছুতেই। আর নিজস্ব নীতিবোধকে জাগ্রত না করতে পারলে এ কথার মর্মার্থও বোঝা সম্ভব নয় তাদের পক্ষে।
নিজস্ব নীতিবোধ যাদের মধ্যে জাগে না, গীতা বেদ ইঞ্জিল তাওরাত যবুর কোরআন পড়েও তারা যথার্থ মানুষ হতে পারে না। বর্তমান পৃথিবীই তার জ্বলন্ত স্বাক্ষী। মানুষের যদি এই বিবেকবোধ না থাকে যেÑ কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায়; কী কাজ করা উচিত, কী কাজ করা অনুচিত; তবে সে নিজেকে মানুষ বলে দাবি করার যোগ্যতা রাখে কোথায়? তাছাড়া অমানুষ কোনো ধর্মীয় বিচারেই যথার্থ ধার্মিক নয়। কেবল মানুষই ধর্মীয় বিচারে যথার্থ ধার্মিক। অতএব, নিজস্ব নীতিবোধকে জাগ্রত করে মানুষ হওয়ার সাধনা করাই মানুষের জন্য উত্তম। মানুষেরা বুঝতে চাইলে বুঝতে পারবে যে, বেহেশতের লোভ ও দোজখের ভয়ে মানুষ হওয়ার চেয়ে নিজস্ব নীতিবোধ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যারা মানুষ হয়, তাদের চেয়ে উত্তম মানুষ অন্যরা হতে পারে না। আর মানুষ হওয়াই মানুষের জন্য যথার্থ শিক্ষা। অমানুষ হওয়ার শিক্ষা কুশিক্ষা ছাড়া কিছু নয়। কুশিক্ষা বর্জন করে মানুষ হওয়ার শিক্ষাই গ্রহণ করুক মানুষেরা।
©somewhere in net ltd.