নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাউসার ইকবাল

সাংবাদিক ও লেখক

কাউসার ইকবাল

সাংবাদিক ও লেখক

কাউসার ইকবাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্রষ্টা নির্বোধ নয়

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪

স্রষ্টা নির্বোধ নয়



কাউসার ইকবাল



স্রষ্টা নির্বোধ নয়। বোধবুদ্ধিসম্পন্ন বিচক্ষণ সত্তা। কিন্তু মানুষের মধ্যে কেউ কেউ নিজের নির্বুদ্ধিতা কিংবা মেধাগত নাবালগত্বের কারণে স্রষ্টাকে নির্বোধ বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। এটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছুও নয়। মানুষের মধ্যে কেউ স্রষ্টা নয় যে, তার পক্ষে কোন ভুল হওয়া সম্ভব নয়। মানুষের প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে ভুল করতে পারে। এমন ভুলই করে কেউ কেউ স্রষ্টাকে নির্বোধ বলে প্রতীয়মানের চেষ্টা করেছে। তবে বিবেকবান মানুষের উচিত, স্রষ্টাকে বুদ্ধিমান স্রষ্টা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্যই অতীতের শিক্ষা থেকে বেরিয়ে আসা।

মানুষের মধ্যে যারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, তাদের অনেকেরই এ কাহিনীটা জানা যে, স্রষ্টা যখন মানুষ সৃষ্টির অভিপ্রায় ফেরেশতাদের জানালেন, তখন ফেরেশতারা স্রষ্টাকে মানুষ সৃষ্টি করতে বারণ করেছিলেন এই যুক্তিতে যে, মানুষ পৃথিবীতে রক্তারক্তি করবে। আর স্রষ্টা ফেরেশতাদের বারণ উপেক্ষা করে মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন এই যুক্তিতে যে, মানুষ পৃথিবীতে রক্তারক্তি করবে না। অর্থাৎ, স্রষ্টা ও ফেরেশতাদের মধ্যে এখানে একটা চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান আছে ও থাকবে, যতদিন পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকবে। এই চ্যালেঞ্জে জিততে মানুষ যাতে হিংসা-হানাহানির ঊর্ধ্বে থেকে মিলে-মিশে পৃথিবীতে বসবাস করে, স্রষ্টা তো সেটাই চাইবেন এবং মানুষে মানুষে ভেদাভেদের, বিশেষ করে রক্তারক্তির ক্ষেত্র কোনভাবে সৃষ্টি হোক, স্রষ্টা সেটা কোনমতেই চাইবেন না। পক্ষান্তরে ফেরেশতারা চাইবে, মানুষ যাতে হিংসা-হানাহানিতে লেগেই থাকে, তেমন ক্ষেত্র পৃথিবীতে প্রস্তুত করে দিতে। এমন অবস্থায় স্রষ্টা মানুষকে কোন দিকনির্দেশনা দিতে চাইলে সেটা সরাসরি মানুষের মধ্যে কাউকে দিয়ে দেবেন। মানুষের মধ্যে তিনি কাউকে না কাউকে তার কথা বোঝার যোগ্য করে তুলবেন যুগে যুগে। কিন্তু কিছুতেই কোন ফেরেশতাকে তিনি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে যাবেন না। কেননা, তার চ্যালেঞ্জটা তো ফেরেশতাদের সঙ্গেই! স্রষ্টাতো নির্বোধ নন যে, যাদের সঙ্গে মানুষের বিষয়ে তার চ্যালেঞ্জ, তাদের প্রতিনিধিকে ব্যবহার করে তিনি চ্যালেঞ্জে হেরে যাবার ঝুঁকি নেবেন। দ্বিতীয়ত বর্ণিত কাহিনী মোতাবেক, স্রষ্টা মানুষকে এই বলে সতর্ক করেছেন যে, ইবলিস মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। সে মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। সেই ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। আর এটা মনে রাখতে হবে যে, ইবলিসকে চেনার একমাত্র উপায় হচ্ছে, সে কখনো মানুষকে সিজদা করবে না। আর স্রষ্টাভক্ত ফেরেশতা জীবরাইল কিংবা আযরাইল প্রত্যেকেই মানুষকে সিজদা করবে। যদি কোন ফেরেশতা নিজেকে জীবরাইল বা আযরাইল বা মিকাইল বলে পরিচয় দিতে চায়, তবে সে প্রকৃতপক্ষেই স্রষ্টাভক্ত ফেরেশতা কিনা, তা যাচাইয়ের একমাত্র উপায় হচ্ছে, তাকে মানুষকে সিজদা করতে বলা। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মানুষকে সিজদা করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে ছদ্মবেশী ইবলিস বা ইবলিসের দলে যোগ দেয়া ফেরেশতা বলেই প্রমাণিত। এমন ফেরেশতার কাছ থেকে কোন বাণী স্রষ্টার বাণী বলে গ্রহণ করলে তাতে মানুষের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। আর ইবলিসের এ কৌশলেই অসতর্ক হয়ে মানুষের মধ্যে কেউ কেউ নিজের মূর্খতা কিংবা মেধাগত নাবালগত্বের কারণে পৃথিবীতে নানা ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করে মানুষে মানুষে রক্তারক্তির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে গেছেন। অর্থাৎ, স্রষ্টাকে ফেরেশতাদের সঙ্গে করা চ্যালেঞ্জে হারানোর জন্যই ভূমিকা রেখে গেছেন তারা। শুধু তাই নয়, ইবলিসের কূটকৌশল বুঝতে না পেরে ‘ঈমান’ নামক এমন এক বিবেকনাশক ইনজেকশন প্রয়োগের ব্যবস্থাও করে গেছেন যে, মানুষ যাতে নিজের বিবেককে কাজে লাগিয়ে কখনো ফেরেশতাদের কিংবা ইবলিসের কূটকৌশল ধরতে না পারে। এভাবেই কিছু মানুষের ভুলে ফেরেশতারা আজ পর্যন্ত স্রষ্টার সঙ্গে করা চ্যালেঞ্জে জয়ী অবস্থায় আছে। সেইসঙ্গে মানুষ নিজেদের নির্বুদ্ধিতার কারণে স্রষ্টাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে কেউ কেউ মূর্তিকে, আবার কেউ কেউ কালো পাথরকে অংশীদারিত্ব স্থির করে; যদিও স্রষ্টা কোনভাবেই অংশীদারিত্বের কোন শ্রদ্ধা গ্রহণ করেন না। তিনি চান, মানুষ সর্বক্ষেত্রে তার ওপরই ভরসা করবে এবং তাকে অন্তর থেকে অন্তরে সরাসরি শ্রদ্ধা জানাবে। কারণ, তিনি প্রত্যেকের অন্তরেই বসবাস করেন এবং অন্তর থেকে জানানো শ্রদ্ধা বুঝতে সক্ষম। যারা স্রষ্টাকে অন্তরের মাধ্যমে শ্রদ্ধা না জানিয়ে ফেরেশতাদের ফাঁদে পড়ে মূর্তি বা পাথরকে অংশীদার বা মাধ্যম স্থির করে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, তারাতো স্রষ্টার বিরাগভাজনই হচ্ছে। আর এদের মধ্যে যারা ফেরেশতাদের কৌশলে প্রভাবান্বিত হয়ে পৃথিবীতে মানুষে মানুষে রক্তারক্তিতে লিপ্ত, তারা তো নরকবাসীই। স্রষ্টাকে ফেরেশতাদের কাছে পরাজিত হওয়ার অসম্মানের জন্য যারা দায়ী, তারা তাদের কৃতকর্মের সাজা ভোগ করবে না, এমনটাতো হতেই পারে না।

ফেরেশতাদের সৃষ্ট ধর্ম হতে মানবসৃষ্ট ধর্ম যে উত্তম, তার বড় প্রমাণ হচ্ছে বৌদ্ধধর্ম। বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা হচ্ছেÑ ‘জীবহত্যা মহাপাপ এবং অহিংসা পরম ধর্ম’। তবে বৌদ্ধ ধর্মে যেহেতু স্রষ্টাকে অন্তর থেকে সরাসরি শ্রদ্ধা জানানোর শিক্ষা নেই, সেজন্য বৌদ্ধ ধর্মও সর্বোত্তম ধর্ম নয়। মানুষের জন্য বর্তমানে সর্বোত্তম ধর্ম হচ্ছে, মূলধর্ম। স্রষ্টাকে জানার ও বোঝার এবং স্রষ্টার প্রিয়পাত্র হবার প্রকৃত শিক্ষা রয়েছে মূলধর্মে। মূলধর্মের মূলকথাÑ মানবজাতির একতা। মানুষকে হিংসা-হানাহানির ঊর্ধ্বে উঠে মিলে-মিশে পৃথিবীতে বসবাস করতে হবে এবং স্রষ্টাকে অন্তর থেকে অন্তরে সরাসরি শ্রদ্ধা জানাতে হবে, এটাই মূলধর্মের শিক্ষা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.