নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাউসার ইকবাল

সাংবাদিক ও লেখক

কাউসার ইকবাল

সাংবাদিক ও লেখক

কাউসার ইকবাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইয়াহিয়া খান বিজেনজো সালেকী ও তারেক রহমান: কে বড় মিথ্যেবাদী

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৭

ইয়াহিয়া খান বিজেনজো সালেকী ও
তারেক রহমান: কে বড় মিথ্যেবাদী

কাউসার ইকবাল

‘জাতির পিতা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে শ্রদ্ধেয় শেখ মুজিবুর রহমানকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে আয়োজিত সভায় ‘পাকবন্ধু’ বলে আখ্যায়িত করায় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ দলটির নেতৃবৃন্দ ভীষণ উষ্মা প্রকাশ করে চলেছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে এ প্রেক্ষিতে। তবে তারেক রহমানের মতো একই অপরাধে অপরাধী আরো কিছু ব্যক্তিত্বও রয়েছেন, যারা তাদের বর্ণনাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানপ্রেমিক বলে বোঝানোর চেষ্টা করে গেছেন। তারাও যদি তারেক রহমানের মতো মিথ্যাবাদী হয়ে থাকেন, তবে কে সেরা মিথ্যাবাদী, তা যাচাইয়ের সুবিধার জন্যই এ লেখা।
দৈনিক প্রথম আলো ‘মুক্তিযুদ্ধের বই’ কলামে ‘পাঞ্জাব সেটা সহ্য করবে না’ শিরোনামে গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ সংখ্যার ১১ নং পৃষ্ঠায় পাকিস্তান স্টাডি সেন্টার, করাচি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২০০৯ সালে প্রকাশিত মীর গাউস বখশ বিজেনজো রচিত ‘ইন সার্চ অব সলিউশন: অ্যান বায়োগ্রাফি অব মীর গাউস বখশ বিজেনজো’ গ্রন্থ থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা ছেপেছে। গ্রন্থটির লেখক মীর গাউস বখশ বিজেনজো ছিলেন অবিভক্ত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা। ১৬ মার্চ থেকে ইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠক শুরুর আগে তিনি স্বেচ্ছায় ঢাকা এসে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিদ্যমান বরফ গলানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনায় প্রথম আলোতে প্রকাশিত লেখার একাংশে তিনি ১৪ মার্চ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে লিখেছেন, ‘পরের দিন ১৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। তিনি গভর্নমেন্ট হাউসে ওয়ালি খান ও আমাকে তার সঙ্গে দেখা করতে আহ্বান করেন। আমরা তাকে বলি, শেখ মুজিবের মনে পাকিস্তান ভাঙার কোন অভিপ্রায় নেই।’ একই লেখার সর্বশেষ প্যারায় যা উল্লে¬খ রয়েছে তা হলো, “তারপর ২৪ মার্চ শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করলে তিনি সেই ভয়ংকর খবরটি দেন, ‘সেনাবাহিনী আগামী দুইদিন আমাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে। আপনাদের আর কাজ নেই, আপনারা চলে যান। হতভম্ব ও নির্বাক হয়ে আমরা তার বাড়ি ছেড়ে আমাদের জায়গায় চলে আসি।”
লেখাটির মধ্যে বাংলাদেশের অধিবাসীদের জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ বা সংবাদ রয়েছে তা হচ্ছে এই যে, পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ বাঙালিদের স্বাধীনতার আন্দোলন দমাতে দুইদিন অভিযান চালাবে, একথা শেখ মুজিবুর রহমান ২৪ মার্চই জানতেন এবং বিজেনজোকে পাকিস্তানে চলে যাবার পরামর্শ দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কিংবা ঢাকাবাসীকে তিনি এ সামরিক অভিযানের ব্যাপারে কোন সতর্কবার্তা দেননি; যাতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারে। অর্থাৎ, স্বাধীনতা আন্দোলন দমানোর জন্য পাক বাহিনীর সামরিক অভিযানের প্রতি তারও সায় ছিল। কারণ, তিনি তো ১৬ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানের ক্ষমতালাভের ব্যাপারেই ইয়াহিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেন-দরবার করছিলেন। আর তার ক্ষমতালাভের পথের বাধা সেই আন্দোলনকারীদের আন্দোলন না দমালে যে তার পাকিস্তানের ক্ষমতালাভের পথ খোলা থাকে না। তাই তো তিনি এ কাজে পাক বাহিনীকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তবে তিনি আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর ছাত্রনেতাদের মধ্যে যারা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর হয়ে কাজ করছিল, তারা স্বাভাবিকভাবেই হামলার বিষয়ে জানতে পেরেছিল এবং নিরাপদে সরে যেতেও পেরেছিল। কিন্তু ২৫ মার্চ পাক সেনারা তাদের অভিযান শুরু করলে প্রাণ দিতে হয়েছিল সেদিন স্বাধীনতাকামী সাধারণ ছাত্র-শিক্ষক-জনতাকে। যাদের একমাত্র অপরাধ ছিল তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছিল।
স্বাধীনতা আন্দোলন দমাতে শেখ মুজিবুর রহমান যে পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করেছিলেন, তা বোঝা যায় ইয়াহিয়া খানের মৃত্যুর আগে করে যাওয়া এফিডেভিট থেকেও। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান মৃত্যুর ২ বছর পূর্বে ২৯ মে ১৯৭৮ ইং পাকিস্তানের লাহোর কোর্টে এক গোপন এফিডেভিটে (ক্রমিক নং: ২৪৪/১৯৭৮। ১৯৮০ সালের আগস্ট মাসে ইয়াহিয়া খানের মৃত্যুর ২৫ বছর পর ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান সরকার এফিডেভিটটি জনসমক্ষে প্রকাশ করে) বলে যান যে, ‘শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর চেয়ে বড় দেশপ্রেমিক (পাকিস্তানপ্রেমিক) ছিলেন। ভুট্টো যেখানে ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে সংসদ অধিবেশন তলব করা নিয়ে বারবার বাধার সৃষ্টি করেছেন, সেখানে শেখ মুজিব ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ অনুসরণের পক্ষে।’ (দ্রষ্টব্য: সাপ্তাহিক প্রতিচিত্র, সংখ্যা: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ইং, পৃষ্ঠা: ৩০-৩১)
পাকিস্তানি মেজর সিদ্দিক সালেকীর লেখা ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থের ৫২ নং পৃষ্ঠায় জি. ডবি¬উ চৌধুরী লিখিত ‘দি লাস্ট ডেস অব ইউনাইটেড পাকিস্তান’ গ্রন্থের ১৫৩ নং পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে: ‘৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন, তাকে এ বিষয়ে বোঝাতে যে, এমন কোন পদক্ষেপ যেন তিনি গ্রহণ না করেন, যেখান থেকে ফেরত আসার পথ থাকবে না।’ এরপর ৬ মার্চ প্রায় মধ্যরাতে শেখ মুজিবের জন্য একটা টেলিপ্রিন্টার ম্যাসেজ পাঠান ইয়াহিয়া খান ঢাকার মার্শাল ল’ হেড কোয়ার্টার্স-এ। লেখক মেজর সিদ্দিক সালেকী তখন হেড কোয়ার্টার্স-এ কর্মরত থাকায় তৎক্ষণাৎই ম্যাসেজটি পড়েন। পরে তার স্মৃতি থেকে ডায়েরিতে টুকে নেন ম্যাসেজের কথা। ম্যাসেজটি ছিল এ রকম: ‘অনুগ্রহ করে দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি শিগগিরই ঢাকা আসব এবং আপনার সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করব। আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আপনার উচ্চাকাক্সক্ষা এবং জনগণকে দেয়া ওয়াদার প্রতি পূর্ণ সম্মান জানাতে পারব। আমার মনে একটা পরিকল্পনা আছে, যা আপনার ছয় দফার চেয়ে অধিক সন্তোষজনক হবে। আমি আপনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি, দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না।’ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের হেড কোয়ার্টার থেকে একজন ব্রিগেডিয়ার ব্যক্তিগতভাবে ম্যাসেজটি শেখ মুজিবের ধানমন্ডীর বাসায় নিয়ে যান। ৬ মার্চ রাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রসঙ্গে মেজর সিদ্দিক সালেকীর একই গ্রন্থের ৫৩ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে: ‘ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের জিওসি রাত ২টায় ঘুম থেকে জাগেন তার ইন্টেলিজেন্স অফিসার দ্বারা। ইন্টেলিজেন্স অফিসারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ২ জন প্রতিনিধি ছিল। মুজিবের গুপ্ত সংবাদ নিয়ে আসা প্রতিনিধি জিওসিকে বলেন: ‘শেখ সাহেব উগ্রপন্থিদের দ্বারা বিশাল চাপে আছেন। তারা তাকে পূর্ব পাকিস্তানের একপক্ষীয় স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য চাপ দিচ্ছে। তিনি তাদের প্রত্যাখ্যান করার মতো শক্ত যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, তাকে সেনা তত্ত্বাবধানে নেয়ার।’
ইয়াহিয়া খান, বিজেনজো ও মেজর সিদ্দিক সালেকীর তথ্য মোতাবেক, মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের ভূমিকা ১৯৭১ সালে কেমন ছিল, তা বোঝা বুদ্ধিমানদের জন্য কষ্টকর হওয়ার কথা নয়। তারপরও যদি আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন যে, এ ব্যক্তিরা শেখ মুজিবুর রহমান সম্বন্ধে মিথ্যা তথ্যই দিয়েছেন, তবে তাদের মধ্যে কে সেরা মিথ্যাবাদী বলে বিবেচিত হতে পারেন, তা যাচাইয়ের জন্য তথ্যগুলো তাদের ও সাধারণ পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.