![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খালেদা-হাসিনার বাঘিনী-সিংহী লড়াই আর কতকাল?
কাউসার ইকবাল
পশুদের মলদ্বারের পাশে যেমন লেজ থাকে, মানবাকৃতির কারো আজ পর্যন্ত তেমন লেজ দেখা যায়নি। তবে কোরআনের সুরা কাউসার’এ স্রষ্টা ‘ইন্না শা’নিয়াকা হুয়াল আবতার’ বলে মানবাকৃতির অধিকারীদের লেজ কর্তনের কথা বলেছেন। স্রষ্টার এমন কথার তাৎপর্য কি, তা আলোচনার দাবি রাখে।
স্রষ্টা কোরআনের সুরা কাউসার’এ মানবাকৃতির অধিকারীদের যে লেজ থাকার কথা জানিয়েছেন, সেই লেজ প্রকৃতপক্ষে অদৃশ্য। বাহ্যচোখ দিয়ে সেই লেজ দেখার উপায় নেই। সেই লেজ দেখতে হলে অন্তরের চোখকে জাগাতে হবে; তথা অন্তরের চোখ মেলতে হবে। অন্তরের চোখ বন্ধ করে রাখলে সেই লেজ দেখা সম্ভব নয়। সাহিত্যিকরা অন্তরের এই চোখের নাম দিয়েছেন ‘অন্তর্দৃষ্টি’। কপালের নিচে থাকা বাহ্যদৃষ্টি দিয়ে যা দেখা যায় না, অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তা দেখা যায়। অন্তর্দৃষ্টিকে জাগালে আপনি ‘বোরাক’ নামক যন্ত্রযানকে দেখতে পাবেন; তার আকার-আকৃতি কি ধরনের এবং এ যন্ত্রযান কেন সৃষ্টি করা হয়েছে, তা বুঝতে পারবেন। কিন্তু বাহ্যদৃষ্টিতে বোরাক নামক কোন যন্ত্রযান দেখতে পাবেন না। বোরাক দিয়ে স্রষ্টা ইসরায়েল বা আমেরিকার কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তির মাথা ফাটিয়েছেন, এমন রেকর্ডও পাবেন না। কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি মেললে পরিষ্কার দেখতে পাবেন বোরাক নামক যন্ত্রযান কি কাজে ব্যস্ত। তেমনি অন্তর্দৃষ্টি জাগালে আপনি বুঝতে পারবেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বাঙালির প্রাণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কি কারণে দশটি শব্দ ব্যবহার করে বলেছিলেন, ‘আমাদের এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, আমাদের এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। তিনিতো ৫টি শব্দেই বলতে পারতেন, ‘আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম’। সেদিন তিনি এ প্রসঙ্গে ৫টি শব্দ কম বললেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘জিয়াউর রহমান’ ও ‘বেগম খালেদা জিয়া’ এই ৫টি শব্দ ঢোকার কোন সুযোগ থাকতো না। সন্দেহাতীতভাবেই তাহলে তিনি ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বলে বিবেচিত হতেন। ‘স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জিয়াউর রহমান’ এমন বাক্য উচ্চারণের কোন অবকাশই থাকতো না এবং এ নিয়ে বিতর্কেরও কোন সুযোগ ঘটতো না তাহলে কখনো। কিন্তু তিনি সেদিন কেন ৫টি শব্দ ব্যবহার না করে এ প্রসঙ্গে দশের অধিক শব্দ ব্যবহার করেছেন, তা ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি বুঝবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তর্দৃষ্টিকে না মেলবেন। আর স্রষ্টার দৃষ্টিতে অন্তর্দৃষ্টি মেলতে অক্ষমরাই হচ্ছে লেজবিশিষ্ট। কারণ, মানুষকে তিনি অন্তর্দৃষ্টি মেলবার সক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। লেজবিশিষ্ট পশুদের তিনি এ ক্ষমতা দেননি। তাই লেজবিশিষ্ট পশুরা দুর্বলের রক্ত ঝরানোর খেলা খেলবে, ব্যভিচার করবে এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষকে যেহেতু অন্তর্দৃষ্টি মেলবার সক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সেহেতু মানুষ কাউকে ‘লেজকাটা’ বলে বিদ্রুপ করবে অথবা মতের ভিন্নতার কারণে কাউকে নিয়ে রসিকতা করবে, এমনটা কামনা করেন না স্রষ্টা। যারা এমনটা করবে তাদেরকে তিনি লেজবিশিষ্ট পশুদের সঙ্গেই তুলনীয় করেছেন। আর স্রষ্টার বিবেচনামতে, রাজনীতি নিয়েও যারা বিদ্বেষ-বিদ্রুপে নিয়োজিত বিভিন্ন দেশে, এরাও লেজবিশিষ্ট। বাংলাদেশেতো দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা বাঘিনী-সিংহীর লড়াই চালিয়ে রেখেছেন বছরের পর বছর ধরে। তাদের অনুসারী বিভিন্ন পেশার লোকজনও এ প্রেক্ষিতে লেজবিশিষ্ট হয়ে পড়েছেন। আর দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিয়মিত চলছেই সে কারণে। কিন্তু তারা যদি অন্তর্দৃষ্টি মেলার চেষ্টা করে মনুষ্য দলে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করতেন, তাহলে এ বিবেচনা তাদের জাগতো যে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হাতবদল হওয়াটাই প্রজ্ঞাসম্মত। আর এতে একদল অন্যদলকে পরাজিত করতে শঠতা ও হঠকারিতার আশ্রয় নেয়া কখনোই উচিত নয়। সমঝোতার মাধ্যমেই রাষ্ট্রের জনগণের নিরাপত্তা বিধানে যা করণীয়, তা করতেই কাজ করা উচিত।
রাজনীতিবিদেরা যদি তাদের অন্তর্দৃষ্টি না জাগিয়ে যথার্থ কাজ করতে ব্যর্থ হন, তবে দেশের মানুষেরই তাদের অন্তর্দৃষ্টি জাগিয়ে করণীয় ঠিক করতে হবে। খালেদা-হাসিনার বাঘিনী-সিংহী লড়াই আর কতকাল চলতে দেবে দেশবাসী?
©somewhere in net ltd.