![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দানবরা মানবে রূপান্তরিত হোক
কাউসার ইকবাল
বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একপক্ষ অপরপক্ষকে দানব হিসেবে আখ্যায়িত করে চলেছে। আবার ধর্মীয় জঙ্গীরাও দানবের মতো রক্ত ঝরিয়ে চলেছে বিশ্বব্যাপী। সামাজিকভাবেও নানা প্রকার লোভে মানুষ দানবে পরিণত হয়ে খুন-খারাবি-ডাকাতি-ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধ করে চলেছে। এসব দানব মানবে রূপান্তরিত না হলে বিশ্বব্যাপী সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা অনিশ্চিত।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ইসলাম ধর্ম প্রবর্তক হযরত মোহাম্মদ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন যে, পৃথিবী একসময় দানবের নিয়ন্ত্রণে চলবে। তখন সাধারণ মানুষ ভীষণ অসহায় অবস্থায় পৃথিবীতে জীবনযাপন করবে। তিনি এই দানবদের নাম দিয়ে গিয়েছিলেন ইয়াজুজ-মাজুজ। বলেছিলেন, এ স¤প্রদায়ের আবির্ভাব যখন ঘটবে, তখন তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করবে। হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ভবিষ্যদ্বাণী মোতাবেক সেই ইয়াজুজ-মাজুজ কারা, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, যাদের কারণে পৃথিবীতে মানুষেরা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনে ব্যর্থ হচ্ছে তারাই হচ্ছে রাসুল (সা.) বর্ণিত ইয়াজুজ-মাজুজ বা দানব স¤প্রদায়ের লোক। অর্থাৎ, রাজনীতিবিদ-ধর্মীয় উগ্রপন্থি-স্বার্থান্ধ যেসব ব্যক্তি শক্তি বা ক্ষমতার দাপটে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে, জুলুম-নিপীড়ন চালাচ্ছে, এরা সবাই হযরত মোহাম্মদ (সা.)এর ভবিষ্যদ্বাণী মোতাবেক ইয়াজুজ-মাজুজ। ধর্মীয় বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করলেও তাকে হত্যা করার নির্দেশনা নেই ইসলাম ধর্মে। তাহলে তো মক্কা বিজয়ের পর হযরত মোহাম্মদ (সা.) স্বহস্তে ভিন্নমত পোষণকারীদের হত্যা করতে পারতেন। ধর্মীয় ভিন্নমতের অধিকারী কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত অস্ত্র হাতে কাউকে প্রাণে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা ইসলামি বিধানমতে পাপ। আর হযরত মোহাম্মদ (সা.) তাদেরকেই প্রকৃত মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন, যাদের হস্ত ও জিহ্বা থেকে মানবজাতি নিরাপদ। সঙ্গত কারণেই যাদের হস্ত ও জিহ্বা থেকে মানবজাতি নিরাপদ নয়, তারা হচ্ছে হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ভেজাল উম্মত। আর ভেজাল জিনিসকে যেমন আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করতে হয়, তেমনি ইসলামের ভেজাল অনুসারীদের আল্লাহ আগুনে পুড়িয়েই নষ্ট করবেন। ভিন্নমতের নিরস্ত্র মানুষকে যারা ইসলামের রক্ষক সেজে হত্যা করছে, তারাও নরকের আগুনে পোড়া থেকে রেহাই পাবে না। কারণ, হযরত মোহাম্মদ (সা.) মুসলিমদের মানুষ হবার শিক্ষাই দিয়ে গেছেন, ইয়াজুজ-মাজুজ হবার শিক্ষা তিনি দেননি। আর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় মুসলিমদের উৎসাহিত করতে জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজনে চীনে যেতে বলে গেছেন তিনি। অর্থাভাবে চীনে যেতে না পারলেও চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের উক্তি ‘অন্যের যেরূপ আচরণে তুমি নিজে ক্রুদ্ধ হও, অন্যের প্রতি ভুলেও তেমন আচরণ করতে যেও না’ পাঠ করে নিজেকে মানুষের তালিকায় রাখতে পারতো রাজনীতিবিদ-ধর্মীয় উগ্রবাদীসহ ইয়াজুজ-মাজুজ হয়ে ওঠা ভেজাল মুসলিমরা। শক্তি ও ক্ষমতা আছে বলেই নিরস্ত্র কাউকে যে হত্যা করে, সে কিছুতেই হযরত মোহাম্মদ (সা.)এর অনুসারী মুসলিম থাকে না। এমনকি কোনভাবেই তাকে মানবের সংজ্ঞাতেও ফেলা যাবে না। সে হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর বর্ণনামতেই স্রেফ ইয়াজুজ-মাজুজ বা দানব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। আর দানব সম্প্রদায়ের লোকদের স্রেফ নিজের বা দলের বা গোষ্ঠীর স্বার্থ ছাড়া সাধারণ মানুষের স্বার্থ কখনো নজরে আসে না। তারা চড়া গলায় স্রেফ নিজেদের স্বার্থের পক্ষেই বলে যায়; মানুষের জীবন-মরণের বিষয় তাদের কাছে গৌণ। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও বিএনপি-আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে আমরা এমন চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ দেখছি। শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়নি, তাহলে খালেদা জিয়াকে এখন কেন শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে, এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের চড়া গলার জবাবই দেশের মানুষকে শুনতে হচ্ছে। এটা মানবীয় রাজনীতির প্রতিফলন নয়। মানব তাকেই বলা যায়, যে নৈতিক ও আত্মিকভাবে সৎ। আওয়ামী লীগ নেতারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নৈতিক বা আত্মিকভাবে সৎ না থেকে নিজেদের প্রকৃতপক্ষে দানবীয় সত্তায় রূপান্তরিত করেছেন। সেইসঙ্গে দেশের বর্তমান সংঘাতময় রাজনীতির প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছেন; যেজন্য দেশবাসীর অনেককে মৃত্যুবরণ করে কিংবা আগুনে পুড়ে যন্ত্রণাময় জীবনের ভার বইতে হচ্ছে। যদিও এজন্য তারা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে দায়ী করছেন, কিন্তু দেশের মানুষ কাকে দায়ী করবে এ দানবীয় রাজনীতির জন্য, তা যাচাইয়ের পথ কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। দেশের মানুষ যদি বিএনপি নেতাদেরই বড় দানব বলে মনে করে, তবে তো শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকেই পুনরায় ক্ষমতায় বসাবে। সে পরীক্ষা দিতেও ভয় কেন আওয়ামী লীগ নেতাদের, যদি তারা সত্যই মানবীয় রাজনীতি করে থাকেন!
মানবের দানব হয়ে ওঠায় কোন কৃতিত্ব নেই। বরং একসময় মানুষ দানবদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়েই নিক্ষিপ্ত হয় দানবরা। আর স্রষ্টা সব সময়ই ‘সেরের ওপর সোয়া সের’ সৃষ্টিতে তৎপর থাকেন, ইতিহাসই এর সাক্ষী। হযরত মোহাম্মদও (সা.) যেসব দানব বা ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, তাদের ধ্বংস হবে প্রলয়ের মাধ্যমে, এমন কথাই বলেছেন। সেই মোতাবেক, যেসব এলাকায় ইয়াজুজ-মাজুজদের আধিক্য রয়েছে, সেসব এলাকায় ভূমিকম্পসহ প্রলয়ের আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশও প্রাকৃতিকভাবেই ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে আছে, এমন কথা ভূতত্ত্ববিদরা ইতিমধ্যেই বলে যাচ্ছেন। অতএব, যদি স্রষ্টার শাস্তি শীঘ্রই ইয়াজুজ-মাজুজদের ওপর আসে, তবে দানবদের সঙ্গে সঙ্গে নিরীহ অনেকেরও প্রাণহানি ঘটবে। নিরীহ মানুষের প্রাণরক্ষার স্বার্থেই আমরা কেবল এটা কামনা করতে পারি যে, দানবেরা দ্রুত মানবে রূপান্তরিত হোক; যাতে ইয়াজুজ-মাজুজ নির্মূল প্রক্রিয়ার শিকার না হন দেশের নিরীহ মানুষ।
©somewhere in net ltd.