নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি \n

কাওসার পারভীন

সাহিত্য চর্চায় নিবেদিত থাকাই উদ্দেশ্য।

কাওসার পারভীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"বাংলাদেশের শ্রমজীবী নারী"

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৯


নারী।প্রথমে কন্যা সন্তান।তারপর স্ত্রী,বউ,মা, দাদী ,নানী এভাবে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে পর্যায়ক্রমে পরিপূর্ণ হতে থাকে একটি মেয়ের নারী সত্তা।প্রত্যেক নারীই চায় নিজেকে বিকশিত করতে। কেউ পারে , কেউ পারেনা।


আমাদের দেশে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নারী শিক্ষা আনুপাতিক হারে কম। ফলে নারীর স্বীকৃতি মিলছে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমজীবী হিসেবে।

নারী শ্রমিকরা আজ নানামুখী কাজ করছে। সাধারণত আমরা নারী শ্রমিকদের গৃহকর্মী হিসেবেই দেখে অভ্যস্ত । একটা সময় ছিল যখন তারা কেবল বাসা বাড়িতে ঠিকে ঝি এর কাজ করেই আয় রোজগার করেছে। কিন্তু বর্তমানে তাদের আয়ের পথ হয়েছে ভিন্নমুখী। এদেশের গার্মেন্টস শিল্পে নারী শ্রমিকদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে যা অনস্বীকার্য। গার্মেন্টসে কাজ করা শ্রমিকদের শতকরা ৯৮ ভাগই নারী। কৃষিকাজেও আজকের দিনে নারীরা এগিয়ে আছে অনেকাংশে। আজকের নারীরা ইটভাটায়ও কাজ করছে। সর্বস্তরেই কোন কাজে তারা পিছিয়ে নেই। তবে দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি যে , কৃষি শিল্প,গৃহ নির্মাণ, গার্মেন্টস শিল্প সহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকের অবদান বেড়ে যাওয়া সত্তেও তা্দেরকে পুরুষের সমান পারিশ্রমিক ও মর্যাদা দেয়া হচ্ছে না।
১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে নারী শ্রমিকদের প্রতি সম আচরণ ও সমান সুযোগের ঘোষণা গৃহীত হলেও নারী শ্রমিকরা কার্যত সেই সুবিধা ভোগ করতে পারেননি।
এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি শ্রম দিয়েও নারী শ্রমিকেরা পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে কম পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ।

বেসরকারি সংস্থা অক্সফামের হিসাবে, গত এক দশকে শ্রমবাজারে নারী শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধ কোটিরও বেশী। যার ৭৮ শতাংশই গ্রামীণ নারী শ্রমিক। আর এদের অধিকাংশই মজুরি বৈষম্যের শিকার।

ইটভাটা, পোশাক শিল্প, কৃষিকাজ, গৃহশ্রম, নির্মাণ কাজ ও চাতালের কাজসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাজেই নারীরা পুরুষের সমান মজুরি পান না। ঢাকার বাইরে এ পার্থক্য আরও প্রকট। পুরুষদের তুলনায় নারীরা কম মজুরি পান। নারীর শ্রমকে কাজে লাগিয়ে অন্যায়ভাবে প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দেন। দিনমজুর থেকে সব ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বেশি।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের যৌথ এক গবেষণাপত্রে বলা হয়,

“নারীর জন্য অর্থনৈতিক ন্যায্যতা’ থেকে জানা যায়, শতকরা ৬১ জন নারী শ্রমিক দৈনিক ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন এবং শতকরা ৩২ জন দৈনিক ১০০ টাকার কম মজুরি পান”।

অন্যদিকে, শতকরা ৫৬ জন পুরুষ শ্রমিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান। শহরে উৎপাদনমুখী কারখানা, পোশাক খাত, খাদ্য ও কোমল পানীয় তৈরি, বিড়ি শিল্প ইত্যাদিতে কম মূল্যে শ্রম পাওয়া যায় বলেই নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া হয় বেশি।
তবে গার্মেন্টস খাতে অবস্থা এখন তুলনামূলক ভালো। ৩৫ লক্ষ নারী শ্রমিক সহ ৪২ লক্ষ গামের্ন্টস শ্রমিক অথর্নীতির চাকা সচল রেখেছে। সেখানে মজুরি বৈষম্য কম।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ২০ লাখ গৃহশ্রমিক কাজ করছেন। যার অর্ধেকের বেশি বেতনই পান না।এমন কি গৃহশ্রমিকের অধিকাংশই কোনো বেতন পান না। কেবল মাত্র থাকা খাওয়ার বিনিময়েও অনেক গৃহ শ্রমিকেরা দিনাতিপাত করে থাকেন।

নারী শ্রমিকদের দুঃখের শেষ নেই। যে কোনো কাজেই তারা বৈষম্যের শিকার। যেহেতু শিক্ষার হার কম, সেহেতু পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারী শ্রমিকরাই প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনাচারণ, পারস্পরিক সম্পর্ক ও মূল্যবোধ। আর শ্রম দেয়ার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে নির্মাণকাজেও নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত দরিদ্র পরিবারের গৃহবধূ থেকে শুরু করে , ঘরের কিশোরী মেয়েরাও নারী শ্রমিক হিসেবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ভবন নির্মাণেরর কাজে নিজেকে যুক্ত রাখছে। কাজের এই ক্ষেত্রগুলোতে দেখা যায়, নারীরা অধিকতর শ্রম দেয়ার পরও বৈষম্যের শিকার হয়ে পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পাচ্ছে। উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করার সাহসও নেই। প্রতিবাদ করলে অনেক সময় প্রাপ্য মজুরি থেকেও বঞ্চিত হতে হয়।


বর্তমানে নারীশ্রম বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে।প্রশিক্ষিত নারী শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়া বেড়েছে। তবে এর মধ্যে প্রতারিত হবার ঘটনাই ঘটছে বেশি। বিদেশে প্রথম নারী শ্রমিক যাওয়া শুরু হয় ১৯৯১ সালে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং কুয়েতে।এর মধ্যে বেশীর ভাগ শ্রমিক গৃহকর্মী হিসেবে গেছেন। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয়ে বহু নারী বঞ্চনা ও শোষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ইরাক, জর্ডান ওমান ,কাতারে নারী শ্রমিকদের সপ্তাহের ছয় দিনই ৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।

এছাড়া আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত বঞ্চনা ,শোষণ এবং প্রতারণার স্বীকার হতে হচ্ছে শ্রমজীবী নারীদের।
বর্তমানে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহন বেড়েছে ।কৃষিক্ষেত্রেও নারীরা প্রতারিত হচ্ছে নানাভাবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে পুরুষ কৃষকের জন্য সুনির্দিষ্ট ডাটাবেজ থাকলেও নারী কৃষকদের নেই।

শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে যেখানে কৃষিক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে, সেখানে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। মাঠভিত্তিক কৃষিকাজ ও গৃহভিত্তিক কৃষিকাজ ,এ দুটি পর্যায়েই নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে কিন্তু বাস্তবে কৃষিতে নারীর অবদান এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি পায়নি।

জমি প্রস্তুত করা, সার ফেলা, বীজ বপন, আগাছা বাছাই, ফসল কাটার পর ফসল উত্তরণ প্রক্রিয়ায় মাড়াই, বাছাই, শুকানো ও আহারযোগ্য করে তোলার কাজের বেশির ভাগ দায়িত্বই পালন করেন নারী। এ ছাড়া গবাদিপশু পালন ও কৃষি সরঞ্জামাদি তৈরি যেমন- ডালি, ঝাড়ু, কুলা, চালুনি ইত্যাদি তৈরিতে নারীদের রয়েছে বিশেষ অবদান।

কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণের ফলে যেমন দেশের খাদ্য উৎপাদন ,খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ছে ঠিক তেমনি অন্যদিকে মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের অবদান ও স্বীকৃতির বিষয়টি কীভাবে আরও নিশ্চিত করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে অনেক দিন ধরেই , তবে তা বাস্তবায়ন কতটা হবে তা অনিশ্চিত ।

বাংলাদেশের মৃত্তিকা শিল্পেও রয়েছে নারীর অবদান।

গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত মেয়েরাও আশে পাশের দু’ চারটি শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষাদান করে কম বেশী আয় করছে। মোট কথা ,বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা যে যেভাবে পারছে, গৃহকর্ম , গবাদি পশুপালন ,গার্মেন্টস শিল্প, গৃহ নির্মাণ, কৃষি শিল্প , মৃত্তিকা শিল্প সর্বস্তরেই আজ গর্ববোধ করার মত অবদান রাখছে। অপেক্ষা শুধু স্বীকৃতির ,অপেক্ষা কেবল একটি সোনালী সূর্যোদয়ের ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.